সার্বিক বন্যা পরিস্থিতি

ময়মনসিংহে অবনতি, শেরপুরে উন্নতি

নেত্রকোনায় বন্ধ ১৮৬ বিদ্যালয় পানিবন্দি দুই লাখের বেশি মানুষ তিন নদীর পানি বিপৎসীমার ওপরে সপ্তাহজুড়ে বৃষ্টি ঝরার আভাস

প্রকাশ | ০৮ অক্টোবর ২০২৪, ০০:০০

যাযাদি ডেস্ক
অতিবৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে ময়মনসিংহের হালুয়াঘাট, ধোবাউড়া ও ফুলপুর উপজেলার বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে। ছবিটি সোমবার তোলা -স্টার মেইল
গত দুদিন বৃষ্টি না হওয়া এবং মহারশি ও সোমেশ্বরী নদীর পানি কিছুটা কমায় শেরপুরের সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে। তবে নতুন করে পানি বেড়ে ময়মনসিংহ জেলার ৫০টি ও নেত্রকোনা জেলার ১২৩টি গ্রামের নিম্নাঞ্চল পস্নাবিত হয়েছে। এতে দুই জেলার ৪৮ ইউনিয়নের দুই লাখের বেশি মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে নেত্রকোনার ১৮৬টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। তিন জেলার বিভিন্ন আশ্রয়কেন্দ্রে ঠাঁই নিয়েছেন প্রায় আড়াই হাজার মানুষ। পানির তোড়ে বিলীন হয়েছে শতাধিক ঘরবাড়ি। কংস নদ, উব্দাখালী নদী ও ময়মনসিংহে সোমেশ্বরীর পানি বিভিন্ন পয়েন্টে বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। দুর্গম এলাকায় মানুষের সুপেয় পানি ও খাদ্যসংকট বেড়েছে। তবে জেলা প্রশাসন সূত্র জানিয়েছে, বন্যাকবলিত এলাকায় ত্রাণ তৎপরতা অব্যাহত আছে। এদিকে, আবহাওয়া অধিদপ্তরের বরাতে পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা সতর্কীকরণ ও পূর্বাভাস কেন্দ্র জানিয়েছে, মৌসুমি বায়ু বাংলাদেশের ওপর মোটামুটি সক্রিয়। এর অক্ষের বর্ধিতাংশ ভারতের বিহার, পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশের মধ্যাঞ্চল হয়ে আসাম পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে। বঙ্গোপসাগরে এটি মাঝারি অবস্থায় আছে। এর ফলে আগামী এক সপ্তাহ রাজশাহী ছাড়া দেশের সব বিভাগেই কম-বেশি বৃষ্টি হতে পারে। সেইসঙ্গে বাড়তে পারে তাপমাত্রাও। পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সূত্রে জানা গেছে, রোববার দুপুরের পর থেকে শেরপুরে বৃষ্টি হয়নি। এ ছাড়া মহারশি ও সোমেশ্বরী নদীর পানি অনেকটাই কমেছে। এর ফলে সোমবার ঝিনাইগাতী, শ্রীবরদী, শেরপুর সদর ও নকলা উপজেলার ২০টি ইউনিয়নে সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছে। এসব ইউনিয়নের শতাধিক গ্রাম থেকে বন্যার পানি ধীরে ধীরে নিম্নাঞ্চলে নেমে যাচ্ছে। বর্তমানে প্রায় ২০ হাজার মানুষ পানিবন্দি। তবে নকলা উপজেলার ধনাকুশা উচ্চবিদ্যালয় ও তারাকান্দা দাখিল মাদ্রাসা বন্যা আশ্রয়কেন্দ্রে এখনো শতাধিক মানুষ অবস্থান করছে। পাউবোর শেরপুর কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, সোমবার সকাল ৯টায় জেলার ভোগাই নদের পানি বিপৎসীমার ১৩৮ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে, চেলস্নাখালী নদীর পানি ৭৭ সেন্টিমিটার ও ব্রহ্মপুত্র নদের পানি বিপৎসীমার ৫৪০ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এ ছাড়া ঝিনাইগাতী ও শ্রীবরদী উপজেলার পাহাড়ি নদ মহারশি ও সোমেশ্বরী নদীর পানি বিপৎসীমার নিচে আছে। পাউবো শেরপুরের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. নকীবুজ্জামান সোমবার সকালে বলেন, 'নদ-নদীর পানি দ্রম্নত হ্রাস পাচ্ছে। বৃষ্টি না হলে বন্যা পরিস্থিতির আরও উন্নতি হবে বলে আশা করা যায়।' অন্যদিকে, বন্যার পানি কমার সঙ্গে সঙ্গে বেহাল গ্রামীণ সড়কের চিত্র ভেসে উঠছে। ঝিনাইগাতী উপজেলার ঝিনাইগাতী-ফাকরাবাদ সড়কের বিভিন্ন অংশ ঢলের পানিতে ভেঙে যাওয়ায় ওই সড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ আছে। ঝিনাইগাতী উপজেলার সদর ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য মো. জাহিদুল হক বলেন, 'বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হলেও বন্যাকবলিত মানুষের দুর্ভোগ কমেনি। এখনো দুর্গম এলাকায় মানুষের খাদ্যসংকট আছে। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ত্রাণ কার্যক্রম শুরু করা হয়েছে। বিএনপি, জামায়াতসহ রাজনৈতিক দল ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের পক্ষ থেকে ত্রাণ বিতরণ করলেও প্রয়োজনের তুলনায় তা অপ্রতুল।' জেলা প্রশাসক তরফদার মাহমুদুর রহমান বলেন, 'জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বন্যাকবলিত সব এলাকায় ত্রাণ কার্যক্রম চালানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। এ কাজে সেনাবাহিনীর সদস্যরা সার্বিক তৎপরতা চালাচ্ছেন ও সহযোগিতা করছেন। পুলিশ, ফায়ার সার্ভিস, বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন, ব্যবসায়ীসহ সবাই এগিয়ে এসেছেন।' ময়মনসিংহে নতুন করে পস্নাবিত ৫০ গ্রাম অতিবৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে ময়মনসিংহের হালুয়াঘাট, ধোবাউড়া ও ফুলপুর উপজেলার বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে। নতুন করে পস্নাবিত হয়েছে আরও অন্তত ৫০টি গ্রাম। এতে তিন উপজেলার ২৩ ইউনিয়নের প্রায় দেড় লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। সোমবার দুপুরে জেলা ত্রাণ ও দুর্যোগ পুনর্বাসন কর্মকর্তা মো. সানোয়ার হোসেন বলেন, 'তিন উপজেলার প্রাথমিক বিদ্যালয়, মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলোকে আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। আশ্রয় কেন্দ্রগুলোতে এখন নারী-শিশুসহ দুই হাজার মানুষ আশ্রয় নিয়েছে। এসব উপজেলায় ৬৩ মেট্রিকটন চাল ও নগদ সাত লাখ টাকা সহায়তা দেওয়া হয়েছে। দুর্গতদের মধ্যে ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রম চলছে। এছাড়া রান্না করা খাবারও দেওয়া হচ্ছে।' ধোবাউড়ার পোড়াকান্দুলিয়া এলাকার রফিকুল ইসলাম বলেন, 'ধোবাউড়ায় বন্যাদুর্গতদের মধ্যে শুকনো খাবার ও বিশুদ্ধ পানির চরম সংকট দেখা দিয়েছে। তবে কিছু এলাকায় খাবারের ব্যবস্থা করছে প্রশাসন। এ ছাড়া নেতাই নদীর আশপাশের এলাকায় অন্তত অর্ধশত ঘরবাড়ি বিলীন হয়ে গেছে। পানিবন্দি অনেকে বাড়ি ছেড়ে অন্য কোথাও আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতে আশ্রয় নিচ্ছেন। উজানের পানি নেমে পস্নাবিত হচ্ছে নিম্নাঞ্চল। সব মিলিয়ে চার দিনের টানা দুর্ভোগে দিশেহারা মানুষ।' ধোবাউড়ার উপজেলা সদর থেকে কলসিন্দুর পাকা রাস্তা, ঘোষগাঁও ধোবাউড়া পাকা রাস্তা, ঘোষগাঁও বালিগাঁও পাকা রাস্তা, মুন্সিরহাট বাজার থেকে শালকোনা পাকা রাস্তা বন্যার পানিতে তলিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ধোবাউড়া সদর ইউনিয়নের তারাকান্দি গ্রামের কুলসুম আক্তার বলেন, 'চার দিন ধরে পানিবন্দি আছি। বাড়ির উঠান ও চারপাশে হাঁটুপানির কারণে রান্নাও করা যাচ্ছে না। হাঁস-মুরগিগুলো মরে গেছে। কেউ একটু সহযোগিতাও করেনি।' ধোবাউড়া উপজেলা প্রকৌশলী আবু বকর ছিদ্দিক বলেন, 'টানা বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে ১২৭ কিলোমিটার রাস্তা পানির নিচে নিমজ্জিত হয়েছে। এর মধ্যে ৫০ কিলোমিটার রাস্তা চলাচলের একেবারে অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। পানি কমলে পুরো ক্ষতিগ্রস্ত রাস্তা নির্ণয় করে মেরামতে উদ্যোগ নেওয়া হবে।' ধোবাউড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইইএনও) নিশাত শারমিন বলেন, 'সোমবার নতুন করে উপজেলার দুটি ইউনিয়নের ২৬টি গ্রাম পস্নাবিত হয়েছে। তবে উজানের পানি কিছুটা কমছে। আশা করা যাচ্ছে, দুই-এক দিনের মধ্যে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে।' এদিকে ফুলপুর উপজেলার ছনধরা, রামভদ্রপুর, সিংহেশ্বর, ফুলপুর ইউনিয়নের অধিকাংশ ও অন্যান্য ইউনিয়নের ২৫টি গ্রাম পস্নাবিত হয়েছে। এসব এলাকার আমন ফসল ও সবজি ক্ষেত তলিয়ে গেছে; ভেসে গেছে মাছের খামার। ফুলপুর সিংহেশ্বর গ্রামের রুহুল কাজী বলেন, 'রোববার বিকাল থেকে আমাদের এলাকায় পানি প্রবেশ করায় দুর্ভোগ বাড়ে। ধান তলিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি পুকুরের মাছ পানিতে ভেসে গেছে। ঘুরে দাঁড়ানোর কোনো পথ দেখছি না।' হালুয়াঘাটের প্রায় ১২টি ইউনিয়ন শুক্রবার থেকে পস্নাবিত হয়েছিল। ওইসব এলাকা থেকে পানি নামতে শুরু করেছে। তবে নতুন করে আরও ১০টি গ্রাম পস্নাবিত হয়েছে। তলিয়ে গেছে কয়েক হাজার হেক্টর জমির ধান, সবজি ক্ষেত। সঙ্গে পুকুরের মাছও। হালুয়াঘাটের আমতৈল গ্রামের সুরুজ আলী বলেন, 'গত শুক্রবারের টানা বৃষ্টিতে আমাদের বাড়িঘরে পানি প্রবেশ করে। সোমবার সকাল থেকে বৃষ্টি না হলেও পানি কমার কোনো লক্ষণ দেখছি না। কয়েকদিন ধরে বাচ্চা-কাচ্চা নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছি।' হালুয়াঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এরশাদুল আহমেদ বলেন, 'উজানে পস্নাবিত হওয়া গ্রামের পানি নামতে শুরু করেছে। উপজেলার নড়াইল, কৈচাপুর, ধুরাইল এবং আমতৈল ইউনিয়ন দিয়ে পানি ফুলপুর হয়ে ব্রহ্মপুত্র নদে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে নতুন কয়েকটি গ্রাম পস্নাবিত হলেও সার্বিক পরিস্থিতি ভালো।' নেত্রকোনায় বন্ধ ১৮৬ প্রাথমিক বিদ্যালয় অকস্মাৎ বন্যায় নেত্রকোনা সদর, দুর্গাপুর, কলমাকান্দা, পূর্বধলা ও বারহাট্টা উপজেলার অন্তত ২৫টি ইউনিয়নের ১২৩টি গ্রামের নিম্নাঞ্চল পস্নাবিত হয়েছে। এতে প্রায় ৫৮ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। ৩টি আশ্রয়কেন্দ্রে ঠাঁই নিয়েছে ৩৯টি পরিবার। বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে ১৮৬টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাঠদান। সোমবার সকালে কলমাকান্দায় উব্দাখালী নদীর পানি বিপৎসীমার ১০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। সোমেশ্বরী ও কংস নদের পানি কিছুটা কম ছিল। তবে ধনু, নেতাই, মহাদেও, মঙ্গলেশ্বরী, মগড়াসহ বিভিন্ন ছোট-বড় নদ-নদীর পানি স্থিতিশীল আছে। নেত্রকোনা পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী পরিচালক মো. সাওয়ার জাহান বলেন, 'উব্দাখালীর পানি কলমাকান্দা ডাকবাংলো পয়েন্টে বিপৎসীমার ১০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। ওই পয়েন্টে বিপৎসীমা ৬ দশমিক ৫৫ মিটার। কংস নদের পানি জারিয়া পয়েন্টে গতকাল রোববার রাত ৯টার দিকে বিপৎসীমার ১৩ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হলেও আজ সকাল ৭টা থেকে কমতে থাকে। এখন এ পয়েন্টে বিপৎসীমার ৮ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। আশা করা হচ্ছে, নদ-নদীর পানি এখন দ্রম্নত কমে যাবে। এসব পানি খালিয়াজুরির ধনু নদ হয়ে মেঘনায় চলে যাবে।' জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, গত বুধবার থেকে শনিবার রাত পর্যন্ত ভারী বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা ঢলের কারণে জেলার ছোট-বড় সব নদ-নদীর পানি বাড়তে থাকে। শেরপুরের ভোগাই ও কংস নদের পানি জারিয়া এলাকা হয়ে কলমাকান্দায় উব্দাখালী নদীতে প্রবাহিত হয়। এতে ৫টি উপজেলায় ১২৩টি গ্রামের নিম্নাঞ্চল পস্নাবিত হয়েছে। বন্যায় বেশি ক্ষতি হয়েছে দুর্গাপুরের কুলস্নাগড়া, কাকৈইগড়া ও গাঁওকান্দিয়া; কলমাকান্দার লেঙ্গুরা, খারনৈ, কৈলাটি, পোগলা ও বড়খাপন; পূর্বধলার জারিয়া ধলামূলগাঁও; নেত্রকোনা সদরের কালিয়ারাগাবরাগাতি, মৌগাতি, মেদনি; বারহাট্টার বাউসী ও রায়পুর ইউনিয়ন। এসব ইউনিয়নের ঘরবাড়ি, রাস্তাঘাট, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, পুকুরসহ আমনের খেত ডুবে গেছে। আজ সকালে সর্বশেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত প্রায় ৫৮ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। জারিয়া ইউনিয়নের জামিয়া নাটেরকোনা মাদ্রাসা ও নাটেরকোনা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ১৯টি এবং কুলস্নাগড়ার পশ্চিম কাকড়াকান্দা সরকারি প্রথমিক বিদ্যালয় আশ্রয়কেন্দ্রে ২০টি পরিবার ঠাঁই নিয়েছে। পানিতে তলিয়ে গেছে ১৮ হাজার ১০৪ হেক্টর জমির আমন ধান। জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. মোফাজ্জল হোসেন বলেন, বন্যার পানির কারণে ১৮৬টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাঠদান বন্ধ রাখা হয়েছে। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. নুরুজ্জামান বলেন, জেলার ১০টি উপজেলায় ১ লাখ ৩৫ হাজার ৯০০ হেক্টর জমিতে আমন আবাদ করা হয়। আকস্মিক বন্যার কারণে ৫টি উপজেলায় ১৮ হাজার ১০৪ হেক্টর জমির ফসল তলিয়ে গেছে। জেলা প্রশাসক বনানী বিশ্বাস বলেন, 'বন্যা মোকাবিলায় সব প্রস্তুতি আছে। কলমাকান্দা, দুর্গাপুর, পূর্বধলা ও নেত্রকোনা সদর উপজেলার জন্য বরাদ্দ করা নগদ ৩ লাখ টাকা, ২ হাজার ৫০০ প্যাকেটে শুকনো খাবার ও ৬০ মেট্রিক টন চাল বিতরণ করা হচ্ছে।' সপ্তাহজুড়ে 'থাকবে' বৃষ্টি সোমবার দুপুরে আবহাওয়াবিদ আবুল কালাম মলিস্নক বলেন, 'রাজশাহীতে একটু কম বৃষ্টি হতে পারে। এ ছাড়া সব বিভাগেই আগামী ১১ অক্টোবর পর্যন্ত প্রতিদিনই এক পশলা-দুই পশলা করে বৃষ্টিপাত হবে। এরপর কিছুটা গরম পড়বে। তবে, বৃষ্টির পরপরই শীত পড়ার আভাস নেই। নভেম্বরের মাঝামাঝি সময় থেকে দেশে শীত নামতে শুরু করবে।' সোমবার আবহাওয়ার নিয়মিত বুলেটিনে বলা হয়েছে, মৌসুমি বায়ু বাংলাদেশের ওপর মোটামুটি সক্রিয়। এর অক্ষের বর্ধিতাংশ ভারতের বিহার, পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশের মধ্যাঞ্চল হয়ে আসাম পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে। বঙ্গোপসাগরে এটি মাঝারি অবস্থায় আছে। এর প্রভাবে ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগের অনেক জায়গায় এবং রংপুর, রাজশাহী, ঢাকা, খুলনা, বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগের কিছু-কিছু জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি বা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। দুই নদীর পানি বিপৎসীমার ওপরে ময়মনসিংহে গত কয়েকদিন ধরে বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়া ভুগাই নদীর পানি নিচে নামলেও নতুন করে সোমেশ্বরী নদী বিপৎসীমার ওপর দিয়ে বইছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের নিয়মিত বুলেটিনে বলা হয়েছে, ময়মনসিংহ বিভাগের জিঞ্জিরাম ও পুরাতন ব্রহ্মপুত্র নদ-নদীর পানি বাড়ছে। অপরদিকে, ভুগাই ও সোমেশ্বরী নদীর পানি সমতল কমছে এবং কংস নদীর পানি স্থিতিশীল রয়েছে। সোমবার সকাল ৯টায় নেত্রকোনা জেলার সোমেশ্বরী নদীর পানি ২৪ ঘণ্টায় ৩৪ সেন্টিমিটার বেড়ে কলমাকান্দা পয়েন্টে বিপৎসীমার ৯২ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। এ ছাড়া জামালপুর জেলার জিঞ্জিরাম নদীর পানি ২৪ ঘণ্টায় ২১ সেন্টিমিটার বেড়ে গোয়ালকান্দা পয়েন্টে বিপৎসীমার ১০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। কেন্দ্রের তথ্য বলছে, রংপুর বিভাগের ব্রহ্মপুত্র নদ ও তার ভাটিতে যমুনা নদীর পানি বাড়ছে এবং বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। আগামী পাঁচ দিন পর্যন্ত নদ-নদীর পানি বাড়তে পারে, তবে বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হতে পারে। চট্টগ্রাম বিভাগের সাঙ্গু এবং মাতামুহুরী নদীর পানি বাড়ছে। অপরদিকে গোমতী, মুহুরী, ফেনী নদীর পানি কমছে এবং হালদা নদীর পানি সমতল স্থিতিশীল রয়েছে এবং বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। বৃষ্টিপাতের প্রবণতা কম থাকায় আগামী তিন দিন চট্টগ্রাম বিভাগের এই সব নদীর পানি কমতে পারে। আবহাওয়া অধিদপ্তরের বরাত দিয়ে কেন্দ্র বলছে, আগামী দুই দিন পর্যন্ত অমাবস্যার কারণে বরিশাল, খুলনা ও চট্টগ্রাম বিভাগের উপকূলীয় নদীসমূহে স্বাভাবিকের চেয়ে কিছুটা বেশি জোয়ার পরিলক্ষিত হতে পারে।