আগস্ট মাসের মাঝামাঝিতে দেশের পূর্বাঞ্চলের বন্যায় ১১ জেলায় ১৪ হাজার ৪২১ কোটি ৪৬ লাখ টাকা বা প্রায় ১ দশমিক ২০ বিলিয়ন ডলার ক্ষতি হয়েছে। বেসরকারি এ গবেষণা প্রতিষ্ঠান বলছে, ক্ষতির ওই অংক ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জাতীয় বাজেটের ১ দশমিক ৮১ শতাংশ। সবচেয়ে বেশি আর্থিক ক্ষতি হয়েছে নোয়াখালী জেলায়। আর সরকারি খাতের চেয়ে বেশি আর্থিক ক্ষতি হয়েছে বেসরকারি খাতে।
রোববার রাজধানীর ধানমন্ডিতে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) কার্যালয়ে 'পূর্বাঞ্চলে সাম্প্রতিক বন্যায় ক্ষয়ক্ষতি ও পুনর্বাসন প্রক্রিয়া : সিপিডির বিশ্লেষণ' শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানানো হয়।
দেশের দক্ষিণের ১১ জেলায় আগস্টের বন্যা অন্তত ১৪ হাজার ৪২১ কোটি টাকার ক্ষতি করে দিয়ে গেছে বলে ধারণা দিয়েছে সিপিডি। বেসরকারি এ গবেষণা প্রতিষ্ঠান বলছে, ক্ষতির ওই অংক ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জাতীয় বাজেটের ১ দশমিক ৮১ শতাংশ।
রোববার ধানমন্ডিতে সিপিডি কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে বন্যায় ক্ষয়ক্ষতির চিত্র তুলে ধরে বলা হয়, দুর্গত জেলাগুলোর ৪৬ লাখ মানুষ এ দুর্যোগে ক্ষতির মুখে পড়েছেন।
প্রবল বৃষ্টি আর উজানের ঢলে আগস্টের মাঝামাঝি সময়ে সিলেট, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ, ফেনী, খাগড়াছড়ি, কক্সবাজার, কুমিলস্না, নোয়াখালী, চট্টগ্রাম, লক্ষ্ণীপুর ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া নজিরবিহীন বন্যার কবলে পড়ে।
সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন সংবাদ সম্মেলনে বলেন, বন্যায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে কৃষি ও বনায়ন খাতে। আপাত হিসাবে তার পরিমাণ ৫ হাজার ১৬৯ কোটি টাকা, যা মোট ক্ষতির ৩৫ দশমিক ৮৫ শতাংশ। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৪ হাজার ৬৫৩ কোটি টাকা ক্ষতির মুখে পড়েছে অবকাঠামো খাত,
যা সার্বিক ক্ষতির ৩২ দশমিক ২৭ শতাংশ। এছাড়া আবাসন বা ঘরবাড়ির ক্ষতির পরিমাণ দুই হাজার ৪০৭ কোটি টাকা, যা মোট ক্ষতির মধ্যে ১৬ দশমিক ৬৯ শতাংশ।
মোট ক্ষতির মধ্যে ২৮ দশমিক ৬৮ শতাংশ সড়কের, ২০ দশমিক ৯৯ শতাংশ শস্যের, ১৬ দশমিক ৬৯ শতাংশ আবাসনের, ১০ দশমিক ৯১ শতাংশ মৎস্যের এবং ৮ দশমিক ৫৩ শতাংশ ক্ষতি হয়েছে অন্যান্য খাতে।
বন্যা সবচেয়ে বেশি ক্ষতি করেছে নোয়াখালী জেলায়। সেখানে ক্ষতির অংক ৪ হাজার ১৯১ কোটি টাকা, যা মোট ক্ষতির ২৯ শতাংশ।
এছাড়া কুমিলস্না জেলায় ৩ হাজার ৩৯০ কোটি টাকা, ফেনীতে দুই হাজার ৬৮৩ কোটি টাকা, চট্টগ্রামে এক হাজার ৬৭৬ কোটি ৯৪ লাখ টাকা, লক্ষ্ণীপুরে এক হাজার ৪০৩ কোটি ৯১ লাখ টাকা, মৌলভীবাজারে ৫০৬ কোটি টাকা, ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ১৪৪ কোটি টাকা, হবিগঞ্জে ১৪৩ কোটি ৫৯ লাখ টাকা, খাগড়াছড়িতে ১২৭ কোটি ২৩ লাখ টাকা, কক্সবাজারে ১০০ কোটি টাকা এবং সিলেট জেলার ২০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে হিসাব করেছে সিপিডি।
এ গবেষণা সংস্থা বলছে, ক্ষতিগ্রস্ত জেলাগুলোর মধ্যে লক্ষ্ণীপুরে মাথাপিছু সরকারি সাহায্যের পরিমাণ ছিল ৬২ টাকা ১০ পয়সা, নোয়াখালীতে ৯২ টাকা ১০ পয়সা, কুমিলস্নায় ১৩৬ টাকা ৭০ পয়সা ও সিলেটে সর্বোচ্চ ১৫ হাজার ৩২০ টাকা।
সরকারি অর্থ বণ্টনে এমন ব্যবধান নিয়ে প্রশ্ন তুলে সিপিডি বলেছে, হয় এটা বণ্টনে সমস্যা, নয়তো তথ্য সংরক্ষণ পদ্ধতিতে বড় ধরনের ত্রম্নটি আছে।
সিপিডির গবেষক মুনতাসির কামাল বলেন, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় প্রকাশিত তথ্যের ভিত্তিতে মাথাপিছু সাহায্যের ওই হিসাব তারা করেছেন।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় ত্রাণ হিসেবে চাল, খাবার, শিশুখাদ্য, পশু খাবার ও নগদ অর্থ সহায়তা দেওয়ার তথ্য দিয়েছে। এই চারটি বিষয় নিয়েই প্রতিবেদনটি করেছে সিপিডি।
সংস্থাটি বলছে, বন্যায় নোয়াখালী জেলা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হলেও সরকারি উদ্যোগে সবচেয়ে বেশি ত্রাণ গেছে ফেনী জেলায়, যার আর্থিক পরিমাণ ১৬ কোটি ৬০ লাখ টাকা।
ফেনীতে বন্যাদুর্গত মানুষের সংখ্যা ১০ লাখ, আর নোয়াখালীতে ১৬ লাখ চার হাজার ৩০০ জন। নোয়াখালীতে ত্রাণ গেছে ১৪ কোটি ৯০ লাখ টাকার, যা জেলাগুলোর মধ্যে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ।
কুমিলস্নায় ১০ লাখ ৯০ হাজার মানুষ বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে; এ জেলা ১৪ কোটি ৯০ লাখ টাকার ত্রাণ সহযোগিতা পেয়েছে।
সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত তিন জেলার মধ্যে ফেনীতে মাথাপিছু সহায়তার পরিমাণ ১৬৫ টাকা ৮০ পয়সা, কুমিলস্নায় ১৩৬ টাকা ৭০ পয়সা, নোয়াখালীতে ৯২ টাকা ৯০ পয়সা।
অপেক্ষাকৃত কম ক্ষতিগ্রস্ত জেলা হবিগঞ্জে মাথাপিছু সহযোগিতার পরিমাণ ৬ হাজার ৪৫০ টাকা। এ জেলায় ২০ হাজার ৮৪০ জন বন্যাদুর্গত হয়েছিলেন। আর ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় মাথাপিছু সহযোগিতার পরিমাণ এক হাজার ৮৪ টাকা, চট্টগ্রামে তিন হাজার ৯৪৭ টাকা, আর সিলেটে সর্বোচ্চ ১৫ হাজার ৩২০ টাকা।
ত্রাণ বিতরণে সমন্বয়হীনতার অভিযোগ তুলে ফাহমিদা খাতুন বলেন, 'নোয়াখালীতে ১৬ লাখ ৪৩ হাজার মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ক্ষতির পরিমাণ ৪ হাজার ১৯২ কোটি টাকা। বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ১৪ কোটি ৯০ লাখ টাকা। সে হিসাবে প্রতিজন মানুষ পেয়েছেন গড়ে প্রায় ৯৩ টাকা। অথচ সিলেটে বন্যাদুর্গতের সংখ্যা সাড়ে ৯ হাজার, ক্ষতির পরিমাণ ২০ কোটি ৫০ লাখ টাকা। সেখানে ত্রাণ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ১৪ কোটি ৬০ লাখ টাকার। প্রতিজনে গড়ে ত্রাণ পেয়েছে ১৫ হাজার ৩২০ টাকা।'