বাংলাদেশ-ভারত আজ প্রথম টি২০
প্রকাশ | ০৬ অক্টোবর ২০২৪, ০০:০০
ক্রীড়া ডেস্ক
দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজে হারের দুঃস্মৃতি পেছনে ফেলে নতুন লক্ষ্য নিয়ে আজ ভারতের বিপক্ষে তিন ম্যাচের টি২০ সিরিজ শুরু করতে যাচ্ছে সফরকারী বাংলাদেশ দল। গোয়ালিয়রে সিরিজের প্রথম ম্যাচটি আজ শুরু হবে বাংলাদেশ সময় সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায়। বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যকার এই ম্যাচটি সরাসরি সম্প্রচার করবে গাজী টিভি ও টি স্পোর্টস। তিন ম্যাচের টি২০ সিরিজ নিয়ে সংবাদ মাধ্যমকে বাংলাদেশ অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত বলেছেন, 'এই সিরিজে আমাদের খেলোয়াড়রা অন্য এক অ্যাপ্রোচ নিয়ে খেলার চেষ্টা করবে। সবাই জয়ের জন্য খেলবে।'
এর আগে দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজে হোয়াইটওয়াশ হয়েছিল টাইগাররা। চেন্নাইতে প্রথম টেস্ট ২৮০ রানের ব্যবধানে হারে টাইগাররা। দ্বিতীয় টেস্ট আড়াই দিনের বেশি সময় বৈরী আবহাওয়ায় ভেস্তে যাওয়ার পরও পঞ্চম দিনের দ্বিতীয় সেশনে এসে ৭ উইকেটে হেরে যায় বাংলাদেশ। তাই তো দুই টেস্টেই লজ্জাজনক হারের
কারণে ভারতের বিপক্ষে বড় সংস্করণে প্রথম জয়ের অপেক্ষা আরও দীর্ঘ হলো বাংলাদেশের।
তার ওপর আবার টি২০ ফরম্যাটেও ভারতের বিপক্ষে বাংলাদেশের রেকর্ড ভালো নয়। ১৪ ম্যাচের ১৩টিতেই হার ও ১টিতে জিতেছে টাইগাররা। ২০১৯ সালে ভারতের মাটিতে সর্বশেষ সফরে একমাত্র জয়টি পেয়েছিল বাংলাদেশ। ওই সময় তিন ম্যাচের টি২০ সিরিজ ৭ উইকেটের জয় দিয়ে শুরু করেছিল বাংলাদেশ। কিন্তু রাজকোট এবং নাগপুরে শেষ দুই ম্যাচ যথাক্রমে ৮ উইকেটে ও ৩০ রানে হেরেছিল টাইগাররা। ফলে সিরিজে দারুণ সূচনার পরও ২-১ ব্যবধানে হারতে হয় টাইগারদের।
টেস্ট সিরিজে সাফল্য না পেলেও টি২০-তে জয়ের ভালো সুযোগ বাংলাদেশের সামনে আছে। কারণ দলের দুই সেরা তারকা রোহিত শর্মা এবং বিরাট কোহলির অবসরের পর ভারতের টি২০ দল একটি বড় পরিবর্তন প্রক্রিয়ার মধ্যে আছে। টেস্ট সিরিজ খেলা বাংলাদেশের বেশিরভাগ খেলোয়াড় টি২০ দলে থাকলেও ভারতের টেস্ট দলের কোনো খেলোয়াড়েরই টি২০ স্কোয়াডে জায়গা পায়নি।
তাই তো টাইগার দলপতি শান্ত জানিয়েছেন ২০২৬ সালের টি২০ বিশ্বকাপকে লক্ষ্য করে এখন থেকেই প্রতিটি সিরিজের পরিকল্পনা সাজানো হবে। এই বিষয় প্রসঙ্গে বাংলাদেশ অধিনায়ক বলেন, 'আমি বিশ্বাস করি বর্তমানে দলে থাকা খেলোয়াড়দের পাশাপাশি আরও চার-পাঁচজন যোগ হবে, তারাই ২০২৬ সালে বিশ্বকাপে খেলতে পারে। আমি মনে করি এই সিরিজ থেকে আমাদের বিশ্বকাপের প্রস্তুতি শুরু হবে। এখন থেকে অবশ্যই ২০২৬ সালে টি২০ বিশ্বকাপের কথা আমরা পরিকল্পনায় রাখব। এই দলে ১৫ জন খেলোয়াড় আছে এবং এর বাইরে আরও ৪-৫ জন আছে। এই ২০-২২ জন খেলোয়াড়কে নিয়ে আমরা প্রস্তুতি নিব। ভবিষ্যতে তারাই খেলবে। এজন্য এখন থেকে প্রস্তুতি শুরু হচ্ছে আমাদের।'
আর এই সিরিজ দিয়ে সাকিব আল হাসানকে ছাড়াই টি২০ ফরম্যাটে পথচলা শুরু করবে বাংলাদেশ দল। সম্প্রতি ছোট সংস্করণ থেকে অবসর নিয়েছেন সাকিব। অলরাউন্ডার সাকিবের জায়গা পূরণের জন্য মেহেদী হাসান মিরাজকে দলে ফিরিয়েছে বাংলাদেশ। টি২০-তে সাকিবের অভাব মিরাজ পূরণ করতে পারবেন বলে বিশ্বাস শান্তর, 'সাকিব ভাই এতদিন ধরে আমাদের দলের সঙ্গে ছিলেন। স্বাভাবিকভাবেই তার জায়গা পূরণ করতে কিছুটা সময় লাগবে।'
তিনি আরও বলেন, 'আমি এটাকে বড় সমস্যা বলব না। তবে তাকে ছাড়া একাদশ সাজাতে কিছুটা অসুবিধা হবে। ব্যাটিং ও বোলিং দুই বিভাগেই ভালো কম্বিনেশন দিতেন সাকিব ভাই। আমরা মিরাজকে নিয়ে এসেছি এবং আশা করি ওই জায়গায় দ্রম্নত মানিয়ে নেবেন মিরাজ।'
এদিকে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যকার প্রথম টি২০ কোনো ঝামেলা ছাড়াই আয়োজনের জন্য গোয়ালিয়রে কঠোর অবস্থান নিয়েছে স্থানীয় প্রশাসন। সেই ধারাবাহিকতায় নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে মোতায়েন করা হবে বিপুল সংখ্যক পুলিশ সদস্য। তারা আজ ম্যাচের দিন দুপুর ২টা থেকে রাস্তায় অবস্থান করবেন।
ভারতীয় গণমাধ্যম এনডিটিভি তাদের এক প্রতিবেদনে এই খবর দিয়েছে। মধ্য প্রদেশের অন্তর্গত গোয়ালিয়রে ২৫০০ পুলিশ মোতায়েন করা হবে। এর আগে সেখানে সব ধরনের বিক্ষোভ সমাবেশ ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে উস্কানিমূলক প্রচারণা নিষিদ্ধ করেছেন জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ও কালেক্টর রুচিকা চৌহান। এই নিষেধাজ্ঞা চলবে আগামী সোমবার পর্যন্ত।
গোয়ালিয়র জোনের ইন্সপেক্টর জেনারেল অরবিন্দ সাক্সেনা বলেছেন, 'ম্যাচের দিন পুলিশ সদস্যরা দুপুর ২টা থেকে রাস্তায় অবস্থান করবেন। ম্যাচ শেষ হওয়ার পর দর্শকরা বাড়ি ফিরে যাওয়া পর্যন্ত তারা দায়িত্ব পালন করবেন। নিষেধাজ্ঞা জারির পর নজরদারি জোরদার করা হয়েছে। পাশাপাশি আমরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও চোখ রাখছি।'
আজ রোববার গোয়ালিয়রে ভারত-বাংলাদেশ ম্যাচ আয়োজনের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে অখিল ভারত হিন্দু মহাসভা। তাদের দাবি, গত ৫ আগস্ট গণআন্দোলনের মুখে শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর বাংলাদেশে হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর 'নিপীড়ন' করা হচ্ছে। সেটার প্রতিবাদে প্রথম টি২০'র দিন শহরটিতে 'বনধ' ডেকেছে ভারতের ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দলটি। এ ছাড়া আরও কয়েকটি সংগঠন বিক্ষোভ কর্মসূচির ডাক দিয়েছে।
এতে নিরাপত্তা পরিস্থিতি নিয়ে তৈরি হয়েছে শঙ্কা। তবে স্থানীয় প্রশাসন নির্বিঘ্নে ম্যাচটি আয়োজন করতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। তাই সতর্ক অবস্থানে রয়েছে স্থানীয় প্রশাসন। গত বুধবার থেকে যে দুটি হোটেলে বাংলাদেশ ও ভারতের ক্রিকেটাররা অবস্থান করছেন, সেগুলোকে নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে রাখা হয়েছে।
আজ রোববার গোয়ালিয়রের মাধবরাও সিন্ধিয়া ক্রিকেট স্টেডিয়ামে হবে বাংলাদেশ ও ভারত এই দুই দলের তিন ম্যাচ সিরিজের প্রথম টি২০। ১৪ বছর পর জেলাটিতে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের প্রত্যাবর্তন ঘটতে যাচ্ছে। আর এই ম্যাচ দিয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে যাত্রা শুরু হবে ৩০ হাজার ধারণক্ষমতা বিশিষ্ট গোয়ালিয়রের মাধবরাও সিন্ধিয়া ক্রিকেট স্টেডিয়ামটির।