শেরপুর-ময়মনসিংহে ভয়াবহ বন্যা, মৃতু্য বেড়ে পাঁচ

প্রকাশ | ০৬ অক্টোবর ২০২৪, ০০:০০

যাযাদি ডেস্ক
পাহাড়ি ঢল আর টানা ভারী বর্ষণে নালিতাবাড়ীসহ শেরপুরের কয়েকটি উপজেলা পস্নাবিত হয়েছে। আশ্রয়ের সন্ধানে একটি পরিবার। ছবিটি শনিবার তোলা -সংগৃহীত

উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল আর টানা ভারী বর্ষণে নালিতাবাড়িসহ শেরপুরের কয়েকটি উপজেলা ও ময়মনসিংহ জেলার ধোবাউরা-হালুয়াঘাটসহ কিছু এলাকা ব্যাপকভাবে পস্নাবিত হয়ে ভয়াবহ পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। শেরপুরে পানিতে ডুবে ৫ জন মারা গেছেন। এছাড়া বন্যার পানিতে ভেসে এসেছে এক অজ্ঞাতনামার লাশ। তলিয়ে গেছে উঠতি আমন ফসল ও সবজি ক্ষেত। ভেসে গেছে মাছের খামার। দুই জেলায় পানিবন্দি হয়েছে প্রায় আড়াই লাখ মানুষ। রান্না বন্ধ থাকায় চরম বিপাকে পড়েছেন পানিবন্দিরা। স্থানীয়রা বলছেন, '৮৮ সালের বন্যার চেয়েও এবারের পরিস্থিতি অত্যন্ত ভয়াবহ। এদিকে, আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, উত্তর-পশ্চিম বঙ্গোপসাগরে লঘুচাপের প্রভাবে সারাদেশে ভারী বর্ষণ অব্যাহত আছে। এ পরিস্থিতি আগামী এক সপ্তাহ অব্যাহত থাকতে পারে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র জানিয়েছে, টানা বর্ষণে দেশের বিভিন্ন নদ-নদীর পানি বাড়ছে। লঘুচাপের কারণে উত্তাল রয়েছে সাগর। চার সমুদ্রবন্দরে জারি ৩ নম্বর সতর্কতা সংকেত বহাল রাখা হয়েছে। বৈরী আবহাওয়ায় উপকূলীয় তিন জেলার ৬ রুটে নৌযান চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে। এ ছাড়া চাঁদপুরে এক দিনে দেশের সর্বোচ্চ ও জেলায় দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ২৭৭ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করেছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। এতে তলিয়ে গেছে জেলা সদরসহ বিভিন্ন উপজেলা। শেরপুরে পরিস্থিতির অবনতি : শেরপুর জেলার ঝিনাইগাতী, নালিতাবাড়ী ও শ্রীবরদী উপজেলার কমপক্ষে ১৮টি ইউনিয়নের অধিকাংশ রাস্তাঘাট, বিস্তীর্ণ এলাকার ফসলের মাঠ তলিয়ে গেছে। অসংখ্য বাড়িঘর পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে। তিন দিন ধরে টানা বৃষ্টির কারণে স্থানীয় পাহাড়ি নদ-নদীর পানি বেড়েছে। সেই সঙ্গে উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল যোগ হয়ে শেরপুরের এই বন্যা দেখা দিয়েছে। শনিবার সকাল থেকে থেমে থেমে ফের বৃষ্টি হওয়ায় এসব ইউনিয়নের বানভাসি মানুষের দুর্ভোগ আরও বেড়েছে। শনিবার দুপুরে পাহাড়ি ঢলের প্রবল স্রোতে শেরপুর থেকে তিনআনী হয়ে নালিতাবাড়ী আঞ্চলিক মহাসড়কের রানীগাঁও সেতুর কাছে সড়ক ভেঙে যাওয়ায় যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। অনেক স্থানে পাহাড়ি ঢলের পানির প্রবল তোড়ে ভেঙে গেছে ঘরবাড়ি, গাছপালা। তলিয়েছে ফসলের খেত, ভেসে গেছে মাছের পুকুর ও ঘের। অনেক বাড়িতে রান্না-খাওয়া বন্ধ রয়েছে। শেরপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক কৃষিবিদ ড. সুকল্প দাস বলেন, 'অতি বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলের কারণে সৃষ্ট বন্যায় জেলার রোপা আমনের ব্যাপক ক্ষতির শঙ্কা তৈরি হয়েছে। এর মধ্যেই ৭ হাজার ৬৯৬ হেক্টর জমির রোপা আমন ধান সম্পূর্ণ নিমজ্জিত, ৯ হাজার ৬৯৩ হেক্টর জমির রোপা আমন আংশিক নিমজ্জিত হয়েছে।' বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তরা বলছেন, প্রতি বছরই অতি বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলের কারণে আকস্মিক বন্যা হলেও তা বেশি স্থায়ী হয়নি। কিন্তু এবারের চিত্র সম্পূর্ণ ভিন্ন। এবার পানির পরিমাণ আগের চেয়ে বেশি এবং তা বেশি স্থায়ী হওয়ায় মানুষের দুর্ভোগ বেশি হচ্ছে এবং ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ আগের তুলনায় অনেক বেশি। তাই এবারের বন্যা অতীতের রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে। অনেকেই বলেছেন 'আটাশির বন্যার চেয়েও এবার ভয়াবহ'। শনিবার শেরপুর পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্র জানিয়েছে, নালিতাবাড়ী ভোগাই নদীর পানি বিপৎসীমার ৫৭ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। চেলস্নাখালী নদীর পানিও বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তবে সেখানে ওয়াটার গেজ উঠে যাওয়ায় সঠিক পরিমাপ জানা সম্ভব হয়নি। শনিবার সকাল ১০টা পর্যন্ত শেরপুর পয়েন্টে ৩৭ মিলিমিটার, নালিতাবাড়ী পয়েন্টে ১৭০ মিলিমিটার ও নাকগাঁও পয়েন্টে ১০০ সেন্টিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। এদিকে নালিতাবাড়ী উপজেলায় বন্যার পানিতে ডুবে দুই নারীসহ তিনজন মারা গেছেন এবং নিখোঁজ রয়েছেন আরও তিনজন। ঝিনাইগাতী সন্ধ্যাকুড়া এলাকা থেকে বন্যার পানিতে ভেসে আসা এক অজ্ঞাতনামার লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। ঝিনাইগাতী থানার ওসি মো. আল আমীন জানান, বন্যার পানির সঙ্গে উপজেলার সন্ধ্যাকুড়া এলাকায় অজ্ঞাতনামা এক ব্যক্তির গলিত লাশ ভেসে এলে তা উদ্ধার করা হয়েছে। লাশটি ভারত থেকে ভেসে এসেছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করছে পুলিশ। নালিতাবাড়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মাসুদ রানা ও নালিতাবাড়ী থানার ওসি মো. ছানোয়ার হোসেন শনিবার সকালে জানান, নালিতাবাড়ী উপজেলায় শুক্রবার বিকালে বন্যার পানিতে ডুবে খালিসাকুড়া গ্রামে ইদ্রিস আলী নামে ৬৫ বছরের এক বৃদ্ধ এবং শুক্রবার রাতে বাঘবের গ্রামের ৪৫ বছর বয়সি আম্বিয়া খাতুন মারা গেছেন। এ ছাড়া আরও এক নারীর মৃতু্যর খবর পাওয়া গেলেও তার নাম-পরিচয় এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি। পানিবন্দি মানুষকে উদ্ধারের জন্য কাজ করছে উপজেলা প্রশাসন, বিজিবি সদস্য, ফায়ার সার্ভিসের সদস্য ও বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন। জেলা বিএনপির সভাপতি সাবেক সংসদ সদস্য মো. মাহমুদুল হক রুবেল ঝিনাইগাতী উপজেলার ১০টি পয়েন্টে বন্যার্তদের মধ্যে চাল-ডাল, লবণ, তেলসহ বিভিন্ন ত্রাণসামগ্রীর প্যাকেট বিতরণ করেছেন। এ ছাড়া ঘাটাইল সেনা নিবাস থেকে পর্যাপ্ত স্পিডবোট এনে উদ্ধার কাজ চালাচ্ছে সেনাবাহিনী। বানভাসি মানুষ উঁচু স্থানে ও বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আশ্রয় নিয়েছে। শেরপুরের জেলা প্রশাসক তরফদার মাহমুদুর রহমান শনিবার সকালে বলেন, 'বন্যার্তদের সহায়তার জন্য সব ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে শুকনো খাবার বিতরণের কাজ চলছে।' ময়মনসিংহে পানিবন্দি দেড় লাখ মানুষ জেলার হালুয়াঘাট এবং ধোবাউড়া উপজেলায় ৮০টি গ্রাম পস্নাবিত হয়েছে। এতে পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন দেড় লাখ মানুষ। তলিয়ে গেছে মাছের খামার, কয়েক হাজার একর জমির ফসল। ধোবাউড়ায় নেতাই নদীর বাঁধ ভেঙে রাস্তাঘাট ডুবে গিয়ে বাড়িঘরে পানি ঢুকেছে। বড় বন্যার আশঙ্কায় আতঙ্কে সাধারণ মানুষ। হঠাৎ বাড়িঘরে পানি উঠে যাওয়ায় রান্নাবান্না বন্ধ হয়ে গেছে। হঠাৎ বন্যায় সাধারণ মানুষ রয়েছেন চরম বিপাকে। ধোবাউড়া উপজেলার দক্ষিণ মাইজপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান হুমায়ুন কবির জানান, নেতাই নদীর বাঁধ ভেঙে রাস্তাঘাট তলিয়ে গিয়ে মানুষের ঘরবাড়িতে পানি উঠে গেছে। সাধারণ মানুষ কষ্টের মধ্যে পড়েছেন। এখন পর্যন্ত সরকারি কোনো সহায়তা পাওয়া যায়নি। ধোবাউড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নিশাত শারমিন জানান, ধোবাউড়া উপজেলার সাতটি ইউনিয়নের ৪০টি গ্রাম এখন বন্যাকবলিত। বাড়িঘরে পানি ওঠে যাওয়ায় স্কুলসহ বিভিন্ন আশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থান নিচ্ছেন মানুষ। পানিবন্দি অবস্থায় আছেন ৮০ হাজার মানুষ। এদিকে হালুয়াঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এরশাদ আলী জানান, উপজেলার বারোটি ইউনিয়নের প্রায় ৪০টি গ্রাম বন্যাকবলিত। বন্যায় ৭০ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। তারা এখন বিভিন্ন আশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থান নিচ্ছেন। বন্যাদুর্গত মানুষের পাশে প্রশাসনসহ স্থানীয় নেতারা দায়িত্ব পালন করছেন বলে জানান তিনি। জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা সানোয়ার হোসেন জানান, হঠাৎ ভারী বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে ময়মনসিংহের হালুয়াঘাট ও ধোবাইড়া উপজেলার বেশ কিছু গ্রাম পস্নাবিত হয়ে সাধারণ মানুষ কষ্টের মধ্যে পড়েছেন। দুই উপজেলার বন্যাদুর্গত মানুষের সাহায্যের জন্য সরকারিভাবে ১০ মেট্রিক টন করে ২০ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। নদ-নদীর পানি বাড়ছে সমতলে শনিবার পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র জানিয়েছে, দেশের ভেতরে ও তৎসংলগ্ন ভারতের রাজ্যগুলোয় অতিভারী বৃষ্টিতে ভোগাই, কংস, জিঞ্জিরাম, সোমেশ্বরীর পানি কুল ছাপিয়ে লোকালয় পস্নাবিত করেছে। এতে ময়মনসিংহ বিভাগে সবক'টি জেলার নিম্নাঞ্চলে দেখা দিয়েছে বন্যা পরিস্থিতি, যা সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে বিস্তার হচ্ছে। পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী সরদার উদয় রায়হান জানিয়েছেন, ময়মনসিংহ বিভাগের কংস, সোমেশ্বরী, জিঞ্জিরাম ও পুরাতন ব্রহ্মপুত্র নদীসমূহের পানি সমতল বৃদ্ধি পাচ্ছে। অপরদিকে ভোগাই নদীর পানি সমতল হ্রাস পাচ্ছে। বর্তমানে শেরপুর জেলার ভোগাই নদী নাকুয়াগাঁও ও জামালপুর জেলার জিঞ্জিরাম নদী গোয়ালকান্দা পয়েন্টে বিপৎসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। আবহাওয়া সংস্থাসমূহের তথ্যানুযায়ী, আগামী ২৪ ঘণ্টা পর্যন্ত ময়মনসিংহ বিভাগ ও তৎসংলগ্ন উজানে ভারী বৃষ্টিপাতের (৪৪-৮৮ মি.মি/২৪ ঘণ্টা) প্রবণতা রয়েছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে, আগামী ২৪ ঘণ্টা পর্যন্ত ভোগাই- কংস, জিঞ্জিরাম ও সোমেশ্বরী নদীসমূহের পানির সমতল ধীরগতিতে বৃদ্ধি পেতে পারে। এর পরিপ্রেক্ষিতে, আগামী ২৪ ঘণ্টা পর্যন্ত ভুগাই-কংস ও জিঞ্জিরাম নদী তীরবর্তী শেরপুর, জামালপুর ও ময়মনসিংহ জেলার নিম্নাঞ্চলের বন্যা পরিস্থিতি স্থিতিশীল থাকতে পারে এবং নেত্রকোনা জেলার কংস নদের পানির সমতল বিপৎসীমা অতিক্রম করে কতিপয় নিম্নাঞ্চল পস্নাবিত হতে পারে।?পরবর্তী ২ দিনে নদীসমূহের পানির সমতল হ্রাস পেয়ে বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হতে পারে এবং জেলাসমূহের নিম্নাঞ্চলের বন্যা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসতে পারে। সিলেট বিভাগের সুরমা ও কুশিয়ারা নদীর পানির সমতল বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। আবহাওয়া সংস্থাসমূহের তথ্যানুযায়ী, আগামী ২৪ ঘণ্টা পর্যন্ত সিলেট বিভাগ ও তৎসংলগ্ন উজানে ভারী বৃষ্টিপাতের (৪৪-৮৮ মি.মি/২৪ ঘণ্টা) প্রবণতা রয়েছে, যার পরিপ্রেক্ষিতে আগামী দুই দিন সুরমা ও কুশিয়ারা নদীসমূহের পানির সমতল বৃদ্ধি পেতে পারে, তবে বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হতে পারে। পরবর্তী একদিন সুরমা ও কুশিয়ারা নদীসমূহের পানির সমতল স্থিতিশীল থাকতে পারে। সিলেট বিভাগের অন্যান্য প্রধান নদীগুলো- সারিগোয়াইন ও যাদুকাটা নদীসমূহের পানির সমতল বৃদ্ধি পাচ্ছে, অপরদিকে মনু, খোয়াই ও ধলাই নদীসমূহের পানির সমতল হ্রাস পাচ্ছে এবং বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। আগামী ২৪ ঘণ্টা পর্যন্ত সিলেট বিভাগ ও তৎসংলগ্ন উজানে ভারী বৃষ্টিপাতের (৪৪-৮৮ মি.মি/২৪ ঘণ্টা) প্রবণতা রয়েছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে, আগামী ২৪ ঘণ্টা পর্যন্ত সিলেট বিভাগের এই সব নদীসমূহের পানির সমতল বৃদ্ধি পেতে পারে, পরবর্তী এক দিন স্থিতিশীল এবং পরবর্তী একদিন হ্রাস পেতে পারে, তবে বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হতে পারে। চট্টগ্রাম বিভাগের গোমতী, সাঙ্গু, মুহুরি, হালদা, ফেনী ও মাতামুহুরি নদীসমূহের পানির সমতল হ্রাস পাচ্ছে এবং বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। আবহাওয়া সংস্থাসমূহের তথ্যানুযায়ী, আগামী ২ দিন পর্যন্ত চট্টগ্রাম বিভাগ ও তৎসংলগ্ন উজানে ভারী বৃষ্টিপাতের (৪৪-৮৮ মি.মি/২৪ ঘণ্টা) প্রবণতা রয়েছে, যার পরিপ্রেক্ষিতে চট্টগ্রাম বিভাগের এই সব নদীসমূহের পানি সমতল বৃদ্ধি পেতে পারে, তবে বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হতে পারে। পরবর্তী এক দিন এই সব নদীর পানির সমতল হ্রাস পেতে পারে। রংপুর বিভাগের ব্রহ্মপুত্র নদ ও তার ভাটিতে যমুনা নদীর পানির সমতল বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। আগামী ৫ দিন পর্যন্ত নদ-নদীসমূহের পানি সমতল বৃদ্ধি পেতে পারে, তবে বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হতে পারে। রাজশাহী বিভাগের গঙ্গা নদীর ও তার ভাটিতে পদ্মা নদীর পানির সমতল বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। আগামী ২৪ ঘণ্টা পর্যন্ত গঙ্গা-পদ্মা নদীর পানির সমতল ধীরগতিতে বৃদ্ধি পেতে পারে, পরবর্তী ২ দিন স্থিতিশীল এবং পরবর্তী দুদিন হ্রাস পেতে পারে, তবে বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হতে পারে। রংপুর বিভাগের তিস্তা, ধরলা ও দুধকুমার নদীসমূহের পানি সমতল স্থিতিশীল আছে এবং বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। আগামী ২৪ ঘণ্টা পর্যন্ত তিস্তা নদীর পানির সমতল ধীরগতিতে বৃদ্ধি পেতে পারে এবং পরবর্তী এক দিন স্থিতিশীল এবং পরবর্তী এক দিন হ্রাস পেতে পারে, তবে বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হতে পারে। অন্যদিকে, আগামী ২৪ ঘণ্টায় ধরলা ও দুধকুমার নদীসমূহের পানির সমতল স্থিতিশীল থাকতে পারে এবং পরবর্তী দুদিন ধীরগতিতে হ্রাস পেতে পারে, তবে এ সময়ে নদীসমূহ বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হতে পারে। রাজশাহী, রংপুর বিভাগ ও তৎসংলগ্ন উজানে, আবহাওয়া সংস্থাসমূহের তথ্যানুযায়ী, আগামী দুদিন পর্যন্ত ভারী বৃষ্টিপাতের (৪৪-৮৮ মি.মি/২৪ ঘণ্টা) প্রবণতা রয়েছে, যার পরিপ্রেক্ষিতে এ সময়ে রাজশাহী, রংপুর বিভাগের অন্যান্য প্রধান নদীসমূহ- আপার আত্রাই, আপার করতোয়া, পূনর্ভবা, ঘাঘট, ইছামতি-যমুনা, টাঙন ও যমুনেশ্বরী নদীসমূহের পানির সমতল বৃদ্ধি পেতে পারে, তবে বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হতে পারে। চাঁদপুরে এক দিনে সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত চাঁদপুর প্রতিনিধি জানান, এক দিনে দেশের সর্বোচ্চ ২৭৭ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে চাঁদপুরে। শুক্রবার রাত থেকে শুরু হওয়া বৃষ্টি শনিবারও থেমে থেমে চলে। চাঁদপুর আবহাওয়া অফিসের উচ্চ পর্যবেক্ষক শাহ্‌ মো. শোয়াইব বলেন, 'শুক্রবার সকাল ৯টা থেকে শনিবার সকাল ৬টা পর্যন্ত চাঁদপুর জেলায় ২৫০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। যা গত ২৪ ঘণ্টায় দেশের মধ্যে সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত ছিল। এর মধ্যে শনিবারই ভোর ৬টা থেকে ৯টা পর্যন্ত আরও ২৭ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। তবে এই বৃষ্টি বছরের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। এর আগে গত ২৭ মে জেলায় সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয় ২৫৭ মিলিমিটার।' এদিকে রেকর্ড বৃষ্টিপাতে তলিয়ে গেছে চাঁদপুর শহরসহ বিভিন্ন উপজেলা। ঘরবাড়ি, মসজিদ ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বৃষ্টির পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে। শনিবার সকালেও বৃষ্টির মধ্যে শহর ঘুরে দেখা গেছে অধিকাংশ মহলস্নার সড়কে পানি উঠে গেছে। বিশেষ করে শহরের নাজির পাড়া, মিশন রোড আশ্রম এলাকা, প্রফেসর পাড়া, মমিন পাড়া, গুয়াখোলা, চিত্রলেখা মোড়, পালপাড়া, আলিম পাড়া, আদালত পাড়া, রহমতপুর আবাসিক এলাকা, গাজী সড়ক, মাদ্রাসা সড়কে জলাবদ্ধতা তৈরি হয়েছে। এসব এলাকার সড়কের বাসাবাড়িতে পানি প্রবেশ করে চরম দুর্ভোগের সৃষ্টি হয়েছে। নাজিরপাড়া এলাকার বাসিন্দা নয়ন জানান, টানা বৃষ্টিতে পুরো এলাকা নিমজ্জিত হয়ে গেছে। মানুষ ঘর থেকে বের হতে পারছে না। এখানকার ড্রেনেজ ব্যবস্থা খুবই খারাপ। পানি নামতে সময় লাগছে। মসজিদের ভিতরেও হাঁটুপানি জমে আছে। পানি মাড়িয়েই পেশাগত কাজে যেতে হচ্ছে। মিশন রোড এলাকার অটোরিকশা চালক রেদওয়ান ইসলাম বলেন, ভোর ৬টায় তিনি সড়কে নেমেছেন। কিন্তু বৃষ্টির কারণে লোকজন বাসাবাড়ি থেকে নামেনি, তাই যাত্রী পাচ্ছেন না। সড়কে যানবাহন সংখ্যা খুবই কম, তার মধ্যেও যাত্রীর অপেক্ষায় আছেন তিনি। পালপাড়া এলাকার মাজহারুল ইসলাম জানান, চলতি বছর টানা বৃষ্টি হলেও শুক্রবার রাত থেকে বৃষ্টির পরিমাণ ছিল অনেক বেশি। তাদের বাসায়ও পানি হাঁটু পরিমাণ। বৃষ্টি হতে পারে এক সপ্তাহ ৬ রুটে নৌযান চলাচল বন্ধ এদিকে, দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ায় দেশের সব সমুদ্রবন্দরে জারি করা স্থানীয় তিন নম্বর সতর্ক সংকেত শনিবারও বহাল রাখা হয়েছে। এতে উপকূলীয় তিন জেলার ছয় রুটে নৌযান চলাচল বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহণ কর্তৃপক্ষ-বিআইডবিস্নউটিএ। নোয়াখালী রুটে ঢাকা-হাতিয়া, দ্বীপ জেলা ভোলা রুটের ঢাকা-বেতুয়া, ঢাকা-মনপুরাগামী, পটুয়াখালী জেলা রুটে ঢাকা-খেপুপাড়া, ঢাকা-চরমোন্তাজ ও ঢাকা-রাঙ্গাবালী উপকূলীয় এলাকায় সব ধরনের নৌ-চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে। বিআইডবিস্নউটিএ'র জনসংযোগ কর্মকর্তা আবু ছালেহ মোহাম্মদ এহতেশামুল পারভেজ বলেন, 'পরবর্তী নির্দেশনা না আসা পর্যন্ত এসব রুটে নৌযান চলাচল বন্ধ থাকবে। তবে এই ছয় রুটে নৌযান চলাচল বন্ধ আছে গত বৃহস্পতিবার থেকে।' আবহাওয়ার সতর্কবার্তায় বলা হয়, 'মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে উত্তর বঙ্গোপসাগর ও বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকায় গভীর সঞ্চালনশীল মেঘমালা সৃষ্টি হচ্ছে। এর প্রভাবে উপকূলীয় এলাকা, উত্তর বঙ্গোপসাগর ও সমুদ্র বন্দরের ওপর দিয়ে ঝড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে। এ পরিস্থিতিতে চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মোংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরসমূহকে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। সেই সঙ্গে উত্তর বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে উপকূলের কাছাকাছি থেকে সাবধানে চলাচল করতে বলা হয়েছে। বৃষ্টি পরিস্থিতি আগামী এক সপ্তাহ অব্যাহত থাকতে পারে।