সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান, শনিবার দুর্গাপূজা উদযাপনে গৃহীত নিরাপত্তা ব্যবস্থা অবলোকনে ঢাকেশ্বরী মন্দির পরিদর্শন করেন। পরিদর্শনকালে সেনাবাহিনী প্রধান বাংলাদেশি হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা উপলক্ষে হিন্দু ধর্মাবলম্বী সকলকে শুভেচ্ছা জ্ঞাপন করেন।
এ সময় তিনি উপস্থিত মহানগর সর্বজনীন পূজা কমিটি এবং বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি ও অন্যান্য সংশ্লিষ্ট সকলের সঙ্গে মতবিনিময় করেন। তিনি বলেন, অন্তর্র্বর্তীকালীন সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী বাংলাদেশ সেনাবাহিনী আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রেখে হিন্দু
ধর্মাবলম্বীদের শারদীয় দুর্গোৎসব উদযাপনে সকলের নিরাপত্তা নিশ্চিতকল্পে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। এর অংশ হিসেবে দেশব্যাপী জেলায় জেলায় সেনাবাহিনী মোতায়েন থেকে পূজামন্ডপসমূহের নিরাপত্তা নিশ্চিতকল্পে সদা তৎপর রয়েছে। সেই সঙ্গে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন যে, হিন্দু ধর্মাবলম্বী প্রত্যেক বাংলাদেশি অত্যন্ত উৎসাহ উদ্দীপনার সঙ্গে উৎসবমুখর পরিবেশে শারদীয় দুর্গোৎসব উদযাপন করবেন। পাশাপাশি, তিনি অন্য সব ধর্মাবলম্বীর সহযোগিতা ও সম্প্রীতি প্রদর্শনের মাধ্যমে অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের শারদীয় দুর্গোৎসব উদযাপনে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।
রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ
বাসস জানায়, রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেছেন সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান। সেনাপ্রধান শনিবার সকালে বঙ্গভবনে যান।
রাষ্ট্রপতির প্রেস সচিব মো. জয়নাল আবেদীন বলেন, সাক্ষাৎকালে সেনাপ্রধান বাহিনীর সার্বিক কার্যক্রম সম্পর্কে রাষ্ট্রপতিকে অবহিত করেন।
রাষ্ট্রপতি ও সশস্ত্র বাহিনীর সর্বাধিনায়ক মো. সাহাবুদ্দিন বলেন, সেনাবাহিনী দেশের মানুষের কল্যাণে এবং জান-মালের নিরাপত্তা প্রদানে প্রশংসনীয় ভূমিকা পালন করছে।
রাষ্ট্রপ্রধান আশা করেন, আগামী দিনে প্রাকৃতিক দুর্যোগসহ দেশ ও যেকোনো প্রয়োজনে সেনাবাহিনী জনগণের পাশে থাকবে।
সেনাপ্রধান রাষ্ট্রপতিকে জানান, বেসামরিক প্রশাসনকে সহায়তার জন্য দেশব্যাপী সেনাবাহিনীর বিভিন্ন ইউনিট কাজ করে যাচ্ছে।
সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান সবশেষ গত ৯ সেপ্টেম্বর রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেছিলেন।
দুই লাখ আনসার মোতায়েন
এদিকে দুর্গাপূজার নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সারাদেশে আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ২ লাখ সদস্য মোতায়েন করা হবে।
এরমধ্যে অধিক গুরুত্বপূর্ণ মন্ডপে ৮ জন এবং গুরুত্বপূর্ণ ও সাধারণ মন্ডপে ৬ জন করে আনসার-ভিডিপি সদস্য মোতায়েন করা হবে।
শনিবার বিকালে রাজধানীর খিলগাঁওয়ে বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর সদর দপ্তরে মহাপরিচালক (ডিজি) মেজর জেনারেল আবদুল মোতালেব সাজ্জাদ মাহমুদ এসব তথ্য জানান।
তিনি বলেন, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির এই দেশে প্রতি বছরের মতো সনাতন ধর্মাবলম্বীদের আসন্ন শারদীয় দুর্গাপূজা-২০২৪ উদযাপন উপলক্ষে ৬ থেকে ১৩ অক্টোবর পর্যন্ত আট দিন, সারাদেশের ৩২ হাজারের বেশি পূজামন্ডপে ২ লাখ ১২ হাজার ১৯২ জন প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত আনসার ও ভিডিপি সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নির্দেশের পরিপ্রেক্ষিতে এরই মধ্যে সদস্যদের দিকনির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে। দেশের সব বিভাগ, জেলা, উপজেলা পর্যায়ে আইনশৃঙ্খলা কমিটি এবং সর্বস্তরের নাগরিক কমিটির সঙ্গে প্রয়োজনীয় সমন্বয় সম্পন্ন হয়েছে।
আনসার বাহিনীর মহাপরিচালক বলেন, চলমান পরিস্থিতির আলোকে সব নিরাপত্তা সংস্থার মূল্যায়নের ভিত্তিতে নিরাপত্তা ঝুঁকি বিবেচনায় পূজামন্ডপগুলোতে অধিক গুরুত্বপূর্ণ, গুরুত্বপূর্ণ এবং সাধারণ হিসেবে আনসার সদস্যদের মোতায়েন করা হবে।
তিনি বলেন, অধিক গুরুত্বপূর্ণ মন্ডপে আটজন, গুরুত্বপূর্ণ ও সাধারণ মন্ডপে ছয়জন করে আনসার-ভিডিপি সদস্য মোতায়েন করা হবে। তারা ৮ থেকে ১৩ অক্টোবর পর্যন্ত ছয়দিন পূজামন্ডপের নিরাপত্তায় নিয়োজিত থাকবেন।
এছাড়া সারাদেশে ৬৪টি জেলায় যে কোনো পরিস্থিতি মোকাবিলায় ব্যাটালিয়ন আনসারদের মোট ৯২টি টিম মোবাইল স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে কাজ করবে। প্রতিটি টিমে ছয়জন করে সদস্য থাকবেন। এসব স্ট্রাইকিং ফোর্স টিম আগামী ৬ থেকে ১৩ অক্টোবর পর্যন্ত মোট আট দিন নিয়মিত নিরাপত্তা টহলের মাধ্যমে পূজামন্ডপে নিরাপত্তা সমন্বয়ে দ্রম্নত ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
তিনি জানান, প্রথমবারের মতো মোতায়েন করা সদস্যদের প্রাপ্য ভাতা পূজা শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই বিতরণ করা হবে, যা গুরুত্বপূর্ণ ডিউটি সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে আনসার ও ভিডিপি সদস্যদের আরও বেশি উৎসাহ ও মনোবল বৃদ্ধিতে সহায়তা করবে।