বিন্দুবিসর্গের সত্যতা নেই বললেন জনপ্রশাসন সচিব
ডিসি নিয়োগে লেনদেন তদন্তে তিন উপদেষ্টার কমিটি
প্রকাশ | ০৪ অক্টোবর ২০২৪, ০০:০০
যাযাদি রিপোর্ট
ডিসি নিয়োগে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিবের বিরুদ্ধে ওঠা ঘুষের অভিযোগ তদন্তে তিন উপদেষ্টাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় এবং মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা শারমীন এস মুরশিদ। বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এই তথ্য জানান।
ডিসি নিয়োগে ঘুষ লেনদেনের অভিযোগ সরকার তদন্ত করবে কি না জানতে চাইলে উপদেষ্টা বলেন, 'অবশ্যই আমরা এটার তদন্ত করব, সরকার (তদন্ত) করবে। কিন্তু এখানে দুটি জিনিস মিডিয়াকে মাথায় নিতে হবে। এটাও কিন্তু আমরা তলিয়ে দেখছি যে, ক্লিপটা সোশ্যাল মিডিয়ায় বহুল প্রচারিত হয়ে গেল, সেটা কতখানি এআই (কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা) প্রডিউসড। সেটা কতখানি রিয়েল, কতখানি ফেক আমাদের মতো সাধারণ মানুষ বলতে পারে না। ইমিডিয়েটলি যে সিদ্ধান্তটা হয়েছে এটার টেকনিক্যাল ইন্টিগ্রিটিটা কী সেটা জানার জন্য কেবিনেটে (উপদেষ্টা পরিষদে) কথা হয়েছে।'
উপদেষ্টা শারমীন এস মুরশিদ বলেন, 'সেটা ইনভেস্টিগেট করে ইমিডিয়েটলি দেখতে হবে। আমরা অবশ্যই তদন্ত করব।'
উপদেষ্টা বলেন, 'অত্যন্ত দায়িত্বশীল জায়গায় প্রতিষ্ঠিত কর্মকর্তাদের কোনো ধরনের দায়িত্বহীনতা মেনে নেওয়া যাবে না। এটাও আমাদের অনুশাসনের অধীনে আনতে হবে।'
তিনি আরও বলেন, ইতোমধ্যে এ বিষয়ে তিনজন উপদেষ্টাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে, তারা হলেন- ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্য-প্রযুক্তি উপদেষ্টা, আইন উপদেষ্টা এবং স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা। এই তিনজনের কথা বলা হয়েছে, এর মানে এই নয় যে অন্যরা এতে যুক্ত হতে পারবেন না। একটি কমিটি করে এটা তদন্ত করা হবে।
এক প্রশ্নের জবাবে উপদেষ্টা বলেন, 'একজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাকে নিয়ে এ রকম কথা। এটি নিয়ে অবশ্যই আমরা উদ্বিগ্ন। এ কথাটা (ঘুষ লেনদেনের অভিযোগ) কেন উঠল, এটার সূত্র কী, এটার কারণ
\হকী- সেটা তলিয়ে (খতিয়ে) দেখতে হবে। আমরা তো এখন এনালগ যুগে নেই, এজন্য আমাদের বাড়তি কষ্টটা হচ্ছে। সোশ্যাল মিডিয়ায় যেটাই আসছে, আমরা লাফ দিয়ে ধরে নিতে পারছি না- এটাই সত্য। আমাদের এটাকে যাচাই করতে হয়।'
বিন্দুবিসর্গের সত্যতা নেই : জনপ্রশাসন সচিব
এদিকে, সম্প্রতি গণহারে জেলা প্রশাসক বদলাতে গিয়ে বিপুল অংকের আর্থিক লেনদেনের যে অভিযোগ সংবাদমাধ্যমে এসেছে, তাকে 'মূলহীন' বলছেন জনপ্রশাসন সচিব মো. মোখলেস উর রহমান।
বৃহস্পতিবার সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, 'বিন্দুবিসর্গের সত্যতা নেই। এই প্রশ্ন করার আগে আপনারা নিজেকে প্রশ্ন করেন, আমাকে এই প্রশ্ন করা কতটুকু যৌক্তিক হচ্ছে।'
ডিসি নিয়োগের ক্ষেত্রে আর্থিক লেনদেনের অভিযোগ নিয়ে দৈনিক কালবেলা পর পর দুটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। বৃহস্পতিবার প্রকাশিত দ্বিতীয় প্রতিবেদনে হোয়াটসঅ্যাপে বার্তা আদান-প্রদানের কিছু স্ক্রিনশট প্রকাশ করে বলা হয়েছে, ওই আলাপচারিতা দুজন যুগ্মসচিবের সঙ্গে জনপ্রশাসন সচিবের। ডিসি নিয়োগে '৫ থেকে ১০ কোটি টাকা' লেনদেনের কথা হয়েছে সেখানে।
প্রতিবেদন প্রকাশের কয়েক ঘণ্টার মধ্যে বৃহস্পতিবার দুপুরে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন জনপ্রশাসন সচিব।
হোয়াটসঅ্যাপ কথোপকথনের বিষয়ে প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, 'আমার মোবাইলটা হলো স্যামসাং, ওখানে (কালবেলার প্রতিবেদনে) যেটা শো করছে সেটা হলো আইফোন। উনারা কী দেখাইল, সেটা উনাদের জিজ্ঞেস করবেন। আমি এইটা সম্পর্কে কিছুই জানি না। আমি মধ্যবিত্ত পরিবারের মানুষ। সরকার যে মোবাইল দিয়েছে সেটাও আমি ব্যবহার করি না। আমার আগের যে নম্বর সেটাই আমি ব্যবহার করতেছি।'
ওই কথোপকথনের সত্যতা আছে কি না- এমন প্রশ্নে জনপ্রশাসন সচিব বলেন, 'যদি স্টান্টবাজি নিউজ করতে চান, তাহলে এগুলো প্রশ্ন করতে পারেন।'
খবর যদি মিথ্যা হয়, তাহলে কী ব্যবস্থা নেবেন- সেই প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ইতোমধ্যে আমরা তিনটি পদক্ষেপ নিয়েছি। পত্রিকটির নাম উলেস্নখ করে আমরা তথ্যসচিবকে চিঠি দিয়েছি। এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য সরকারি চিঠি দেওয়া হয়েছে। প্রেস কাউন্সিল আছে, অন্যান্য যে নিয়ম-কানুন আছে সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
তিনি আরও বলেন, 'যে ভুয়া লোককে কেন্দ্র করে এত কিছু, তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য স্বরাষ্ট্রসচিবকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। আগামী দু-এক দিনের মধ্যে তাকে গ্রেপ্তার করা হবে। যে ব্যাংকারের ভুলের কারণে এ ধরনের একটা অ্যাকাউন্ট খোলা হয়েছে, তার বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে।'
এদিকে, ক্ষমতার পটপরিবর্তনের পর মাঠপ্রশাসনেও ব্যাপক রদবদল আনে অন্তর্র্বর্তী সরকার। এর ধারাবাহিকতায় ৫৯ জেলায় নতুন কর্মকর্তাদের জেলা প্রশাসক হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হয়।
কিন্তু ১০ সেপ্টেম্বর সচিবালয়ে দিনভর হট্টগোল করেন আগের সরকারের আমলে 'বঞ্চিত' উপসচিবরা; শেষ পর্যন্ত প্রজ্ঞাপন বাতিলের আশ্বাসে তারা মন্ত্রিপরিষদসচিবের কার্যালয় ত্যাগ করেন।
নতুন দায়িত্ব পাওয়া ৫৯ জন জেলা প্রশাসকের মধ্যে আটজনকে পরদিনই প্রত্যাহার করে নেয় জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। সেই সঙ্গে চারজনের কর্মস্থল বদলে দেওয়া হয়। আর একজন উপসচিবকে করা হয় ওএসডি। হট্টগোলের ঘটনা তদন্তে গঠন করা হয় কমিটি।
এর মধ্যে এক যুগ্মসচিবের কক্ষ থেকে তিন কোটি টাকার একটি চেক এবং ডিসি নিয়োগসংক্রান্ত কিছু চিরকুট উদ্ধারের খবর দিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে দৈনিক কালবেলা। সেই প্রতিবেদন নিয়ে তোলপাড় তৈরি হলে নড়েচড়ে বসে প্রশাসন। ঘটনা তদন্তে একটি কমিটি গঠন করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।
তবে গত ৩০ সেপ্টেম্বর সংবাদ সম্মেলন ডেকে কালবেলার ওই প্রতিবেদনকে 'গুজব', 'সম্পূর্ণ ভুয়া' এবং 'উদ্দেশ্যপ্রণোদিত' আখ্যায়িত করেন মোখলেস উর রহমান।
এরপর বৃহস্পতিবারের প্রতিবেদনে খোদ মোখলেস উর রহমানের বিরুদ্ধেই আর্থিক লেনদেন নিয়ে আলোচনার অভিযোগ তুলে ধরে কালবেলা।
প্রতিবেদনে লেখা হয়েছে, 'একটি মেসেজে সচিব নিজেকে নির্লোভ দাবি করে মাত্র ৫ কোটির একটি আবদার করেন। জিয়া (যুগ্মসচিব জিয়াউদ্দিন আহমেদ) তাকে সুখবর দিয়ে বলেন, ১০ কোটি রাখার কথা। এতে সন্তুষ্ট হয়ে সচিব তাকে বলেন, "আচ্ছা ঠিক আছে, তোমার যেটা ভালো মনে হয়।" তবে টাকা-পয়সার প্রতি নিজের তেমন লোভ নেই বলেও জিয়াকে জানান সচিব।'
এ বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নে জনপ্রশাসন সচিব মো. মোখলেস উর রহমান বলেন, 'যারা এটা করেছে তাদের আমরা কতটুকু গুরুত্ব দেব? একটা রাস্তার লোক আমাকে অনেক কিছু বলতে পারে, আমি কি রাস্তার লোকের পেছনে দৌড়াব? আমরা সরকারের পজিশনে থেকে জনগণের স্বার্থে কাজ করি। যেভাবে আছি সেভাবেই কাজ করব। যতদিন আলস্নাহ হায়াতে রেখেছেন নিয়ম অনুযায়ী কাজ করব।'
অভিযোগের বিষয়ে কোনো তদন্ত কমিটি হবে কি না জানতে চাইলে মোখলেস উর রহমান বলেন, 'এই অভিযোগকারী আমার বিবেচনায় নেই এবং এই অভিযোগকে আমি মূল্যহীন মনে করি। ইটস আ ফেইক নিউজ।'