গত কয়েক দিনের অস্থিরতা কাটিয়ে আশুলিয়া ও গাজীপুরে শিল্পাঞ্চলে স্বস্তি ফিরেছে। বৃহস্পতিবার সকাল ৮টা থেকে শ্রমিকরা শান্তিপূর্ণভাবে কাজে যোগ দিলে উৎপাদনে ফিরতে শুরু করে কারখানাগুলো। তবে বেতন পরিশোধে ব্যর্থতা ও নিরাপত্তার শঙ্কাসহ নানা কারণে আশুলিয়ায় ১৫টি ও গাজীপুরে ৮টি কারখানা বন্ধ রাখা হয়। এদিকে আন্দোলনের ডাকে সাড়া না দেওয়ায় গাজীপুরে দুটি কারখানার শ্রমিকদের মধ্যে পাল্টাপাল্টি ধাওয়া ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। শিল্পপুলিশ ও সংশ্লিষ্টরা বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
বৃহস্পতিবার দুপুরে আশুলিয়া শিল্প পুলিশ-১ এর পুলিশ সুপার মোহাম্মদ সারোয়ার আলম বলেন, 'আশুলিয়ায় বেশিরভাগ পোশাক কারখানায় শ্রমিকরা
শান্তিপূর্ণভাবে কাজে যোগ দিয়েছেন। তবে কয়েকটি পোশাক কারখানায় শ্রমিক অসন্তোষ ও বকেয়া বেতনের জন্য মোট ১৫টি কারখানা বন্ধ আছে। এছাড়া কোথাও কোনো বিশৃঙ্খলার খবর পাওয়া যায়নি। তবে কারখানার নিরাপত্তায় পুলিশ ও সেনাবাহিনী মোতায়েন আছে।'
বাংলাদেশ গার্মেন্টস ও সোয়েটার্স শ্রমিক টেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের আইন বিষয়ক সম্পাদক খায়রুল মামুন মিন্টু জানান, বেশিরভাগ পোশাক কারখানায় শ্রমিকরা আজ (বৃহস্পতিবার) কাজে যোগ দিয়েছেন। তবে সাউদার্ন, মন্ডল, ম্যাংগোটেক্সসহ বেশ কয়েকটি কারখানা বন্ধ আছে। এছাড়া বেশ কিছু কারখানা সরকারের সিদ্ধান্তে ১৮ দফা দাবি মেনে নিতে চাইছে না। এতে কারখানার শ্রমিকদের ভেতরে চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে বলেও জানান তিনি।
গাজীপুর প্রতিনিধি জানান, মহানগরীর জিরানি এলাকায় রেডিয়্যাল ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেড কারখানার শ্রমিকদের আন্দোলনের ডাকে সাড়া না দেয়ায় আইরিশ ফ্যাশন লিমিটেড কারখানার শ্রমিকদের সঙ্গে ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। এ সময় শ্রমিকরা কালিয়াকৈর-নবীনগর সড়কে অবস্থান নিয়ে বেশ কিছু সময় অবরোধ করে রাখেন।
শিল্প পুলিশ ও শ্রমিকরা জানান, জিরানী এলাকার রেডিয়্যাল ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেড কারখানার শ্রমিকরা বিভিন্ন দাবি-দাওয়া নিয়ে বিক্ষোভ করেন। এ সময়ে তারা পাশের আইরিশ ফ্যাশন লিমিটেড কারখানার শ্রমিকদের তাদের সঙ্গে শামিল হতে বলেন। কিন্তু ওই কারখানার শ্রমিকরা তাদের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ না করায় আইরিশ ফ্যাশন লিমিটেড কারখানায় হামলা চালায়। হামলা চালিয়ে বেশ কিছু মালামাল ভাঙচুর করে। ওই ঘটনার প্রতিবাদে বৃহস্পতিবার সকালে আইরিশ কারখানার শ্রমিকরা রেডিয়াল কারখানায় হামলা চালিয়ে ব্যাপক ভাঙচুর চালান।
এনিয়ে দুই কারখানার শ্রমিকদের মধ্যে ব্যাপক উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। একপর্যায়ে উত্তেজিত শ্রমিকরা চন্দ্রা-নবীনগর সড়কে অবস্থান নিয়ে অবরোধ সৃষ্টি করেন। খবর পেয়ে শিল্প পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা গিয়ে শ্রমিকদের সড়ক থেকে সরিয়ে নিলে সকাল দশটা থেকে যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক হয়।
গাজীপুর শিল্পাঞ্চল পুলিশ সুপার মো. সারোয়ার আলম বলেন, 'ঘটনাস্থলে শিল্প পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা রয়েছেন। তারা শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলে বিষয়টি সমাধান করার চেষ্টা করছেন। চন্দ্রা-নবীনগর সড়কে এই মুহূর্তে যান চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে। জেলার ৮টি কারখানা বন্ধ আছে।'
গত আগস্টের শেষ দিকে অস্থির হয়ে ওঠে শিল্পাঞ্চল। শ্রমিকরা বিভিন্ন দাবি নিয়ে রাস্তায় নেমে আসের। শিল্প মালিকরা শ্রমিকদের অধিকাংশ যৌক্তিক দাবি পূরণে সম্মত হলেও থামেনি সহিংস অস্থিরতা। বিশেষ করে তৈরি পোশাক শিল্প এবং কিছু কিছু ভোগ্যপণ্যের কারখানায়। এরপর শ্রমিকরা ১৮ দাবি জানান। সরকার ও মালিকপক্ষ দাবিগুলো মেনে নিলে পরিস্থিতি ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ভোগ্যপণ্য প্রস্তুতকারী একজন উদ্যোক্তা বলেন, 'শ্রমিকরা কাজে না ফিররে বাজারে পণ্য সরবরাহ করা আমাদের পক্ষে খুব কঠিন হবে। রপ্তানিমুখী উৎপাদকরা চরম উদ্বেগের মধ্যে আছেন। কারণ তাদের নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে পণ্য পাঠাতে হবে।'
'যদি শ্রমিকদের অস্থিরতা অব্যাহত থাকে এবং এটি উৎপাদন ব্যাহত করে তাহলে ক্রেতারা ছাড় চাইবেন কিংবা উড়োজাহাজের মাধ্যমে তাদের পণ্য পাঠাতে হবে।' এতে তাদের আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হতে হবে বলে দাবি করেন এ ব্যবসায়ী।