কিছুতেই নিয়ন্ত্রণে আসছে না ডিমের বাজার। চাহিদার শতভাগ উৎপাদন সত্ত্বেও লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে অতিপ্রয়োজনীয় এই খাদ্যপণ্যের দাম। মাত্র ৫ দিনের ব্যবধানে ডজনে প্রায় ২০ টাকা বেড়ে বৃহস্পতিবার বিক্রি হয়েছে ১৮০ টাকা দরে। যা সাম্প্রতিক সময়ের মধ্যে সর্বোচ্চ। ডিমের এমন রেকর্ড দামে রীতিমতো বিস্মিত খোদ বিক্রেরাও। এদিকে অন্তর্বর্তী সরকার ডিমের দাম বেঁধে দিলেও তা বাজারে কার্যকর করতে পারেনি।
বৃহস্পতিবার রাজধানীর বাজারে প্রতি ডজন ডিম বিক্রি হয়েছে ১৮০ টাকা দরে। কল্যাণপুর বাজারে ডিম কিনতে আসা ক্রেতারা বলেন, 'একটা ডিমের দাম কীভাবে ১৫ টাকা হয়। তাহলে মানুষ কি খাবে। সবজির বাজারে আগুন, মাছের বাজারে আগুন, দামের কারণে গরুর মাংস কেনার অবস্থাও নেই। এখন ডিমের এমন দাম হলে সাধারণ মানুষ কি খাবে'। অন্যদিকে ডিম বিক্রেতা শাহীন বলেন, এর আগে তিনি এত দামে ডিম বিক্রি করেননি।
বাংলাদেশ পোলট্রি অ্যাসোসিয়েশন অভিযোগ, করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলো সিন্ডিকেটের কারণে ডিমের দাম অস্বাভাবিক হারে বাড়ছে। অন্যদিকে সরকারের বাজার নিয়ন্ত্রণে দুর্বলতায় নির্ধারিত মূল্য কার্যকর করা যাচ্ছে না। তবে করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলো বলছে, বন্যার কারণে ডিমের সরবরাহ কমে যাওয়ার কারণে দাম বেড়েছে।
যদিও প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর গত ১৫ আগস্ট প্রতিটি ডিমের দাম ১১.৮৭ টাকা নির্ধারণ করে দেয়। তবে বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে ডিম উৎপাদনকারীরা দুই অংশের দুই ধরনের যুক্তি দিচ্ছে।
প্রান্তিক
খামারিরা বলছেন, এই দাম বেঁধে দেওয়ায় খামারিদের লোকসান হচ্ছে, কারণ ফিড ও মুরগির বাচ্চার চড়া মূল্যের কারণে প্রান্তিক খামারিদের উৎপাদন খরচ আরও বেড়ে গেছে।
অন্যদিকে করপোরেট শ্রেণির
উৎপাদনকারীরা বলছেন, বন্যায় অনেক খামারের মুরগি মরে যাওয়ার কারণে ডিম ও মুরগির সরবরাহে ঘাটতি তৈরি হয়েছে। এ কারণে দাম কমছে না। তবে ফিডের দাম ঠিক আছে।
কিন্তু বাংলাদেশ পোলট্রি অ্যাসোসিয়েশনসহ সরকারি কয়েকটি নিয়ন্ত্রক সংস্থা বলছে, ফিডের দাম নিয়ে আরও পর্যালোচনা করার জায়গা রয়েছে। প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, পশুসম্পদ খাতে বন্যায় ৪৩৫.৩২ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে, যেখানে খামারের অবকাঠামো, মুরগি ও মুরগির খাবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
বাংলাদেশ পোলট্রি অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সুমন হাওলাদার বলেন, 'বন্যার কারণে যদি ২০-২৫ লাখ ডিমের উৎপাদন কমও হয়, এতেও সমস্যা নেই। কারণ, প্রতিদিন চার কোটি পিস চাহিদার বিপরীতে দেশে এর আগে সাড়ে চার কোটি পিস ডিমের উৎপাদন ছিল'।
করপোরেট উৎপাদনকারীদের সমালোচনা করে সুমন বলেন, তারা প্রান্তিক খামারিদের কাছে এক বস্তা (৫০ কেজি) ফিড বিক্রি করে তিন হাজার ৫০০ থেকে তিন হাজার ৬০০ টাকায়; কিন্তু নিজেদের চুক্তিবদ্ধ খামারির কাছে বিক্রি করে দুই হাজার ৭০০ টাকায়। একইভাবে দ্বিগুণ দামে বিক্রি করে মুরগির বাচ্চা। এ কারণে সরকার দাম বেঁধে দিয়ে করপোরেট উৎপাদনকারীদের বাড়তি লাভ করার সুযোগ করে দিয়েছে।