আন্দোলনের সময় হেলিকপ্টার থেকে গুলি হয়নি র্:যাব
প্রকাশ | ০৩ অক্টোবর ২০২৪, ০০:০০
যাযাদি ডেস্ক
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কমপিস্নট শাটডাউন কর্মসূচির সময় হেলিকপ্টার থেকে কেবল না,র্ যাব সদস্যরা কোনো গুলিই করেনি বলে জানিয়েছেন বাহিনীটির মুখপাত্র। তিনি বলেছেন, সরকার পতনের পর তার বাহিনীর সদস্যদের কেউ আত্মগোপনেও যাননি।
বাঙালি হিন্দু সম্প্রদায়ের প্রধান ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজাকে ঘিরে উসকানি আছে জানিয়ে বিশৃঙ্খলা ঠেকাতের্ যাবের নানা প্রস্তুতি আছে বলেও জানিয়েছেন তিনি।
বুধবার রাজধানীর কারওয়ান বাজারের্ যাবের মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে এসে এসব কথা বলেন বাহিনীর আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মুনীম ফেরদৌস।
ছাত্র-জনতার আন্দোলনের্ যাবের হেলিকপ্টার থেকে গুলি ছোড়া হয়েছিল কিনা- এক সংবাদ কর্মীর এই প্রশ্নে তিনি বলেন, র্'যাবের সদস্যরা ছাত্র-জনতার ওপর কোনো গুলি চালায়নি। আপনারা দেখবেন অনেক বাহিনী ও সংস্থার অনেক সদস্য পালিয়ে গেলেও,র্ যাবের কেউ কোথাও পালায়নি। হেলিকপ্টার থেকে কেবল টিয়ারগ্যাস ছোড়া হয়েছে। হেলিকপ্টার থেকে গুলি ছোড়া হয়েছে এ রকম কোনো ভিডিও নেই। আপনাদের কারও কাছে যদি গুলি করার
কোনো ভিডিও থাকে, আপনারা সেগুলো দিলের্ যাব তা যাচাই করবে।'
গত ১৮ জুলাই কমপিস্নট শাটডাউন কর্মসূচিতে সংঘর্ষ ও পুলিশের গুলিতে বেশ কয়েকজনের প্রাণহানির পরদিনর্ যাবের হেলিকপ্টার আকাশে উড়তে দেখা যায়। আকাশ থেকে আন্দোলনকারীদের গুলি করা হয়েছে, এমন অভিযোগও উঠতে থাকে। সে সময়ের আওয়ামী লীগ সরকার এই বিষয়টি অস্বীকার করে।
র্
যাব মুখপাত্র বলেন, 'এর মধ্যে ছাত্র-জনতার অভু্যত্থানের সময় তাদের ওপর হামলার যেসব ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে সেগুলোকে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।র্ যাবের বিভিন্ন অভিযানিক ও গোয়েন্দা দল এই ভিডিও ও ছবিগুলো যাচাই-বাছাই করেছে। এই ভিডিওগুলোতে অনেকের হাতে অস্ত্র ছিল এমনকি তাদের কারও হাতে একে-৪৭ এর মত অস্ত্রও দেখা গেছে। বিভিন্ন জায়গায় দেশীয় অস্ত্র দিয়েও তারা ছাত্র-জনতাকে জখম করেছে।'
ছবি-ভিডিওতে দেখের্ যাব ১০ জনকে গ্রেপ্তার করেছে জানিয়ে লেফটেন্যান্ট কর্নেল মুনীম ফেরদৌস বলেন, 'এ রকম আরও ৩০ থেকে ৪০ জনের তথ্য আমাদের কাছে রয়েছে। এ ছাড়া বিভিন্ন পর্যায়ের যে নেতা রয়েছেন যারা হুকুমদাতা হিসেবে মামলা হয়েছে। এ রকম ৩৯ জন বড় পর্যায়ের নেতাকে গ্রেপ্তার করেছের্ যাব।'
থানা থেকে লুট হওয়া এবং অবৈধ অস্ত্র অভিযানে ২১৯টি আগ্নেয়াস্ত্র, ৪৫টি ম্যাগাজিন ও ১০ হাজার গোলাবারুদ উদ্ধারের কথাও জানানো হয় সংবাদ সম্মেলনে। ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর থেকে হাতেনাতে গ্রেপ্তার হওয়া মানুষের সংখ্যা ১ হাজার ১৭০ জন জানিয়ে বলা হয়, 'অবৈধ অস্ত্র, ডাকাতি, ছিনতাই মাদকসহ বিভিন্ন অপরাধে এদের গ্রেপ্তার করা হয়।'
দুর্গাপূজাকে ঘিরে 'উসকানির' তথ্য
বাঙালি হিন্দুদের প্রধান ধর্মীয় উৎসব শারদীয়া দুর্গাপূজার নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কার কথা জানিয়ের্ যাব বলছে তারা এ বিষয়ে সতর্ক আছে। দেশব্যাপী ৩১ হাজার ৪৬১টি পূজামন্ডপ ঘিরে নিরাপত্তা পরিকল্পনাও হাতে নিয়েছে পুলিশের এলিট ফোর্সটি। গুজব ঠেকাতে অনলাইনে নজরদারির ঘোষণাও দেওয়া হয়েছে যাকে বাহিনীটি বলছে 'সাইবার প্যাট্রোলিং'।
বাহিনীর মুখপাত্র বলেন, 'পূজাকে ঘিরে একটু উসকানি আছে। কেউ কেউ বিশৃঙ্খলা তৈরি করার চেষ্টা করতে পারে। কিন্তু আমরা অত্যন্ত দৃঢ়ভাবে বলতে চাই, আমরা প্রত্যেকটি বিষয়কে অত্যন্ত সচেতনভাবে দেখব যাতে কেউ কোনো বিশৃঙ্খলা তৈরি করতে না পারে।'
হিন্দু সম্প্রদায়ের নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করে একটি রূপরেখা তৈরির কথা জানিয়ে তিনি বলেন, 'বাংলাদেশে ৩১ হাজার ৪৬১টি মন্ডপে পূজা হয়। সারাদেশের্ যাবের ১৫টি ব্যাটালিয়ন পূজা মন্ডপগুলোর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ব্যবস্থা নিয়েছে।'
গত ৫ অগাস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর এবার দুর্গাপূজার নিরাপত্তা নিয়ে আগে থেকেই বাড়তি শঙ্কার কথা বলা হচ্ছে। অন্তর্র্বর্তী সরকারের ধর্ম-উপদেষ্টা আ ফ ম খালিদ হোসেন মন্ডপের নিরাপত্তায় মাদ্রাসা ছাত্রদের সম্পৃক্ত করার বিষয়ে কথা বলেছেন। বিএনপির পক্ষ থেকে স্বেচ্ছাসেবক দল গঠনের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে, এর মধ্যে দেশের নানা প্রান্তেই প্রতিমা ভাঙচুরের খবর আসছে এবং এই বিষয়গুলো অন্য বছরের তুলনায় বেশি, সেটি স্পষ্ট।
পূজার নিরাপত্তায়র্ যাব স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে কাজ করবে জানিয়ে মুনীম ফেরদৌস বলেন, 'গোয়েন্দা নজরদারি থাকবে, সার্বিক টহলের পাশাপাশির্ যাবের ডগ স্কোয়াড, কমান্ডো ফোর্স থাকবে। কন্ট্রোল রুমের মাধ্যমে সার্বক্ষণিকভাবে নজরদারি করা হবে।'
পূজার তিথির যে সময় সকাল ও সন্ধ্যার দিকে টহল জোরদার করা হবে জানিয়ে তিনি বলেন, 'প্রতিমা বিসর্জনের দিন নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও জোরদার করা হবে।'
সাগর-রুনি হত্যার তদন্ত প্রসঙ্গ
এক যুগেও সাংবাদিক দম্পতি সাগর সরওয়ার ও মেহেরুন রুনি হত্যার তদন্ত শেষ করতে না পারার বিষয়ে গণমাধ্যমকর্মীদের প্রশ্নের মুখে পড়েনর্ যাবের মুখপাত্র।
তিনি বলেন, 'উচ্চ আদালতের আদেশে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে একটি টাস্কফোর্স গঠন করা হয়েছে। তদন্তকে বেগবান করতেই এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।'
তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের সময় শতাধিকবার পেছানো প্রসঙ্গে তিনি বলেন, 'তদন্ত করার জন্য আরও অভিজ্ঞদের নিয়োগ করা হয়েছে।'
আওয়ামী লীগ সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ও কয়েকজন আওয়ামী লীগ নেতাকে কলকাতায় দেখা যাওয়ার বিষয়ে এক প্রশ্নের্ যাব কর্মকর্তা বলেন, 'সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বৈধভাবে নাকি অবৈধভাবে সেখানে গেছেন, সে সম্পর্কের্ যাবের কাছে কোনো তথ্য নেই। আমরাও আপনাদের মতো টিভিতে দেখেছি।'
'এখানের্ যাবের কোনো ধরনের উদাসীনতা বা গাফিলতির বিষয় নেই। আমাদের যে দায়িত্ব ও কর্মপরিধি, সে অনুযায়ী সর্বোচ্চটাই করে যাচ্ছি।'