বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন চলাকালে রাজধানীর যাত্রাবাড়ী এলাকায় নিহত যুবক ইমন হোসেন গাজী নামের একজনকে গুলি করে হত্যার ঘটনায় করা মামলায় গ্রেপ্তার এক্সিম ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম মজুমদারকে ৭ দিনের রিমান্ড দিয়েছে আদালত। বুধবার ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক এ আদেশ দেন।
এদিকে, শেখ হাসিনার উপদেষ্টা ও সাবেক মুখ্য সচিব কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী, সাবেক যুব ও ক্রীড়া সচিব মেজবাহ উদ্দীন আহমেদ এবং বসুন্ধরা গ্রম্নপের কো-অর্ডিনেটর আদনানকেও রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে। পুলিশ জানিয়েছে, তাদের প্রত্যেকের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট মামলা রয়েছে।
অন্যদিকে, ঢাকার নবাবগঞ্জ ও দোহার থানায় দায়ের করা পৃথক দুটি হত্যাচেষ্টার মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান
এফ রহমানকে মোট সাত দিন রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করার অনুমতি দিয়েছেন আদালত। এছাড়া, একটি হত্যা মামলায় নোয়াখালী-৪ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য মোহাম্মদ একরামুল করিম চৌধুরীকে গ্রেপ্তারের পর আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
আদালত সূত্রে জানা যায়, যুবক ইমন হোসেন গাজী হত্যা মামলার সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে বুধবার এক্সিম ব্যাংকের
সাবেক চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম মজুমদারকে ১০ দিনের রিমান্ডে নিতে আবেদন করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পুলিশের উপপরিদর্শক মো. মাহাবুল ইসলাম। আসামিপক্ষের আইনজীবী দাবি করেন, মামলার সঙ্গে আসামির কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই। রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী 'স্বৈরাচারের দোসর' হিসেবে আসামিকে তুলে ধরেন। উভয়পক্ষের যুক্তিতর্ক শেষে বিচারক আরিফুর রহমান ৭ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন।
এর আগে মঙ্গলবার রাতে রাজধানীর গুলশান এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের একটি দল। তিনি প্রায় দেড় দশক ব্যাংক উদ্যোক্তাদের সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকাসের (বিএবি) সভাপতির দায়িত্বেও ছিলেন।
মামলা সূত্রে জানা যায়, গত ৫ আগস্ট রাজধানীর যাত্রাবাড়ী এলাকার চিটাগাং রোডে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সময়ে গুলিবিদ্ধ হয়ে ইমন হোসেন গাজী নামের এক যুবক নিহত হন। এই ঘটনায় তার ভাই আনোয়ার হোসেন বাদী হয়ে ২৮ আগস্ট যাত্রাবাড়ী থানায় ৮৫ জনের নাম উলেস্নখ করে মামলাটি দায়ের করেন।
কামাল চৌধুরীসহ আরও তিনজন রিমান্ডে
এদিকে, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপদেষ্টা, সাবেক মুখ্য সচিব কামাল আবদুল নাসের চৌধুরীকে রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে। সেই সঙ্গে রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে সাবেক যুব ও ক্রীড়া সচিব মেজবাহ উদ্দীন আহমেদ এবং বসুন্ধরা গ্রম্নপের কো-অর্ডিনেটর আদনান।
আদালত সূত্রে জানা যায়, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে হত্যার ঘটনায় রাজধানীর পল্টন থানায় করা হত্যা মামলায় কামাল নাসের চৌধুরীর ৪ দিনের ও মেজবাহ উদ্দীন আহমেদের ৩ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত।
বুধবার বিকালে ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট জাকির হোসাইনের আদালত এই আদেশ দেন। এ সময় আসামিদের আদালতে হাজির করা হয়।
এছাড়া, রাজধানীর গুলশান থানায় দায়ের হওয়া এক মামলায় বসুন্ধরা গ্রম্নপের কো-অর্ডিনেটর আদনান নাসিফ আদনান জামানের দুই দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত।
বুধবার শুনানি শেষে চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত তার এই রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
জানা গেছে, মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা আসামি নাসিফ আদনান জামানকে সিএমএম-২নং আদালতে হাজির করে ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করেন। শুনানি শেষে আদালত তাকে দুই দিনের জন্য পুলিশি রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
এর আগে মঙ্গলবার দিবাগত রাতে রাজধানী থেকে তাদের গ্রেপ্তার করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। ডিএমপির গণমাধ্যম ও জনসংযোগ বিভাগের উপকমিশনার মুহাম্মদ তালেবুর রহমান বলেন, 'তাদের প্রত্যেকের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট মামলা রয়েছে।'
এই তিন জনের মধ্যে কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী কবি কামাল চৌধুরী হিসেবে পরিচিত। আওয়ামী লীগের টানা চতুর্থ মেয়াদের সরকারে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাকে শিক্ষা ও সংস্কৃতি বিষয়ক উপদেষ্টার দায়িত্ব দিয়েছিলেন।
সালমান এফ রহমানও রিমান্ডে
আদালত সূত্রে জানা গেছে, সালমান এফ রহমানকে বুধবার ঢাকার চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট (সিজেএম) আদালতের ম্যাজিস্ট্রেট সাইফুল ইসলাম রিমান্ডের নেওয়ার আদেশ দেন। সালমান এফ রহমান ঢাকা-১ ( দোহার-নবাবগঞ্জ) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য। এ নিয়ে পৃথক ছয়টি মামলায় সালমান এফ রহমানের ৩৭ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করলেন আদালত।
সালমান এফ রহমানকে কারাগার থেকে বুধবার সকাল ৭টার পর আদালতে হাজির করা হয়। এরপর নবাবগঞ্জ ও দোহার থানায় করা পৃথক হত্যাচেষ্টার মামলায় ৭ দিন করে ১৪ দিন রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন করা হয়। অপর দিকে সালমান এফ রহমানের পক্ষের আইনজীবীরা তার রিমান্ডের আবেদন নামঞ্জুর করার আরজি জানান। তারা জামিনের আবেদন করেন। উভয় পক্ষের শুনানি নিয়ে আদালত সালমান এফ রহমানকে দোহার থানার মামলায় তিন দিন এবং নবাবগঞ্জ থানার মামলায় চার দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
মামলার কাগজপত্রের তথ্য অনুযায়ী, ছাত্র-জনতার আন্দোলনে অংশ নেন দোহারের বাসিন্দা শাহজাহান মাঝি। গত ৪ আগস্ট দোহারের কোমর আলী সড়কে ছাত্র-জনতার আন্দোলনে অংশ নিয়েছিলেন শাহজাহান। তখন মিছিলে স্থানীয় আওয়ামী লীগ, যুবলীগসহ অন্যরা হামলা চালায়। এতে গুরুতর জখম হন তিনি। পরে সুস্থ হয়ে ২৫ আগস্ট দোহার থানায় মামলা করেন তিনি। মামলায় সালমান এফ রহমানের নাম রয়েছে।
অন্যদিকে দোহারের বাসিন্দা ফাতেমা বেগম। তিনিও ছাত্র-জনতার আন্দোলনে অংশ নেন। গত ৫ আগস্ট সকাল ১০টার সময় নবাবগঞ্জ শহীদ মিনারের সামনে ছাত্র-আন্দোলনে হামলা চালায় স্থানীয় আওয়ামী লীগসহ অন্যরা। তখন তিনি আহত হন। পরে সুস্থ হয়ে গত ২ সেপ্টেম্বর নবাবগঞ্জ থানায় মামলা করেন। মামলায় সালমান এফ রহমানকে আসামি করা হয়।
৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণ-অভু্যত্থানে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর গত ১৩ আগস্ট রাজধানীর সদরঘাট এলাকা থেকে সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক ও সালমান এফ রহমানকে গ্রেপ্তারের কথা জানায় পুলিশ।
এমপি একরামুল করিম চৌধুরী কারাগারে
এদিকে, চট্টগ্রাম বু্যরো ও স্টাফ রিপোর্টার, নোয়াখালী জানান, নোয়াখালী-৪ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক একরামুল করিম চৌধুরীকে আদালতের নির্দেশে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। বুধবার সকাল ৭টা ৪০ মিনিটে তাকে নোয়াখালী জেলা কারাগারে নেওয়া হয়।
নোয়াখালী জেলা কোর্ট পরিদর্শক মো. শাহ্ আলম জানিয়েছেন, বুধবার সকাল সোয়া ৭টায় একরামুল করিম চৌধুরীকে নোয়াখালীর চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির করা হয়। পরে ১নং আমলি আদালতের বিচারক সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট সাজ্জাদ হোসেন সুধারাম মডেল থানার একটি হত্যা মামলায় তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।
কোর্ট পরিদর্শক আরও বলেন, ২০১৩ সালে জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দলের কর্মী মো. খোকনকে (২৫) গুলি করে হত্যার অভিযোগে গত ৮ সেপ্টেম্বর বিকালে একটি হত্যা মামলা দায়ের হয়। এতে একরামুল করিমসহ ৫৩ জনকে আসামি করা হয়েছে। বুধবার সকালে সেই মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে তাকে আদালতের হাজির করা হয়।
নোয়াখালী জেলা কারাগারের জেল সুপার মো. গোলাম দস্তগীর বলেন, সকাল ৭টা ৪০ মিনিটে সাবেক এমপি একরামুল করিম চৌধুরী কারাগারে প্রবেশ করেন।
তিনি বলেন, সাবেক এমপি একরামুলের বিরুদ্ধে নোয়াখালীর সুধারাম থানায় একটি হত্যা মামলা, একটি বিস্ফোরক ও অপহরণ মামলা, কবিরহাট থানায় একটি অস্ত্র মামলা ও সোনাইমুড়ী থানায় একটি হত্যা মামলাসহ মোট চারটি মামলা হয়েছে। এছাড়া ঢাকার একটি থানায়ও তার বিরুদ্ধে মামলা রয়েছে বলে জানা গেছে।
এর আগে মঙ্গলবার রাতে পৌনে ১২টার দিকে চট্টগ্রাম নগরের খুলশী থানার আবাসিক এলাকা থেকে একরামুল করিম চৌধুরীকে গ্রেপ্তার করের্ যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন র্(যাব-৭)। এ সময় তার কাছ থেকে ২৬ হাজার ২০০ মার্কিন ডলার, ২ হাজার ১০০ সিঙ্গাপুরের মুদ্রা ও বাংলাদেশি ১০ লাখ টাকা উদ্ধার করা হয়।
তাকে গ্রেপ্তারের বিষয়টি নিশ্চিত করেনর্ যাব-৭ চট্টগ্রামের সহকারী পরিচালক (গণমাধ্যম) শরীফ উল আলম।