ইরানের পর এবার ইসরায়েলে হিজবুলস্নাহ-হুতিদের হামলা
প্রকাশ | ০৩ অক্টোবর ২০২৪, ০০:০০
যাযাদি ডেস্ক
ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলার পর এবার ইসরায়েলে হামলা চালিয়েছে লেবাননের সশস্ত্র হিজবুলস্নাহ ও ইয়েমেনের হুতি। বুধবার এমন দাবি করেছে গোষ্ঠীগুলো। পৃথক প্রতিবেদনে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি ও বার্তা সংস্থা রয়টার্স এ খবর জানিয়েছে।
বিবিসি জানিয়েছে, হিজবুলস্নাহ বুধবার সকালে ইসরায়েলের ওপর ধারাবাহিক হামলা চালিয়েছে। এর মধ্যে একটি ইসরায়েলি সামরিক ব্যারাকে রকেট হামলার দাবি করেছে তারা।
এক বিবৃতিতে হিজবুলস্নাহ জানিয়েছে, স্থানীয় সময় ৭টা ১৫ মিনিট থেকে ৭টা ২০ মিনিটের মধ্যে তিনটি হামলায় পরিচালনা করে হিজবুলস্নাহ। এ হামলায় শতুলা ও মাসকাফ আমের বসতিতে জড়ো হওয়া ইসরায়েলি সেনা এবং 'শোমেরা ব্যারাকে ইসরায়েলি শত্রম্ন বাহিনীর সমাবেশকে লক্ষ্যবস্তু করে ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করে তারা।
শেষ কয়েক মিনিটে গোষ্ঠীটি বেশ কয়েকটি লক্ষ্যবস্তুতে 'সরাসরি' এবং 'নির্ভুল' আক্রমণ করতে সক্ষম হওয়ার দাবি করেছে।
লেবাননের আদাইসেহ শহরে ইসরায়েলি বাহিনীকে বিতাড়িত করার দাবি করেছিল হিজবুলস্নাহ। এর কিছুক্ষণ পরই এই হামলার ঘটনা সামনে এলো।
একইদিনে ইয়েমেনের হুতিরাও ইসরায়েলে হামলার দাবি করেছে। তারা বলছে, ইসরায়েলি সামরিক চৌকি লক্ষ্যবস্তু করে হামলা চালিয়েছে তারা।
বুধবার গোষ্ঠীর সামরিক মুখপাত্র ইয়াহিয়া সারি বলেছেন, হুথিরা তিনটি ডানাযুক্ত 'কুদস-৫' রকেট দিয়ে ইসরায়েলের গভীরে সামরিক পোস্টগুলোকে লক্ষ্যবস্তু করেছে। তবে ইয়েমেন থেকে রকেট নিক্ষেপের বিষয়ে ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে কোনো ঘোষণা আসেনি।
এর আগে মঙ্গলবার রাতে ইসরায়েলকে লক্ষ্য করে শতাধিক ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে ইরান। হামলার পর ইসরায়েলজুড়ে বিভিন্ন স্থানে বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে এবং ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপের কথা জানিয়ে একটি বিবৃতিও দিয়েছে ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী।
তারা বলছে, প্রায় ১৮০টি ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়া হয়েছে এবং অনেক ক্ষেপণাস্ত্র ভূপাতিত করা হয়েছে, তবে মধ্য এবং দক্ষিণাঞ্চলে 'কিছু আঘাতের' ঘটনাও ঘটেছে।
ইসরায়েলের স্বাস্থ্যকর্মীরা জানিয়েছে, হামলায় তেল আবিবে অন্তত দুইজন কিছুটা আহত হয়েছেন।
সম্প্রতি হামাস, হিজবুলস্নাহ এবং ইরানের সিনিয়র কমান্ডারদের হত্যার জবাবে এই ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালানো হয়েছে বলে জানিয়েছে ইরানের রেভু্যলশনারি গার্ড।
তারা বলছে, ইসরায়েল যদি এই হামলার জবাব দেয় তবে আরও হামলা চালানো হবে।
যুক্তরাষ্ট্র জানিয়েছে, ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র ধ্বংস করতে তারা ইসরায়েলকে সহায়তা করেছে। অন্যদিকে যুক্তরাজ্য বলেছে, যুদ্ধে ইসরায়েলকে সহায়তা কাজে অংশ নিয়েছে ব্রিটিশ সৈন্যরা।
শনিবারেই ইরানের সর্বোচ্চ নেতা অঙ্গীকার করেছিলেন যে তাদের মিত্র, হিজবুলস্নাহ নেতা হাসান নাসরুলস্নাহকে হত্যার প্রতিশোধ নেয়া হবে।
এদিকে ইরানের হামলার মধ্যেও লেবাননের রাজধানী বৈরুতে বিমান হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। হিজবুলস্নাহ লক্ষ্যবস্তুতে ওই হামলা চালানো হয়েছে বলে দেশটি দাবি করেছে।
এই সংঘাত নিয়ে আলোচনা করতে বুধবার জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ বৈঠক বসেছে।
দক্ষিণ লেবাননে ইসরায়েলি বাহিনী তাদের ভাষায় 'হিজবুলস্নাহ সন্ত্রাসী লক্ষ্যবস্তুতে' অভিযান শুরু করার পরই ইরান এই ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালাল।
গাজা যুদ্ধকে কেন্দ্র করে সীমান্ত এলাকায় বছরব্যাপী সংঘর্ষের পর ইসরায়েল এই অভিযান শুরু করে। তারা বলছে, হিজবুলস্নাহর হামলায় সীমান্ত এলাকার বাস্তুচু্যত বাসিন্দাদের নিরাপদে ফিরিয়ে আনার উদ্দেশ্যেই তারা এই আক্রমণ শুরু করেছে।
যদিও ইসরায়েল এবং হিজবুলস্নাহর মধ্যকার দীর্ঘ বিবাদ এখন নতুন করে তীব্র হয়ে ওঠার ফলে একটি আঞ্চলিক যুদ্ধের সূচনা হতে পারে বলে ব্যাপকভাবে আশঙ্কা রয়েছে, যাতে ইরান এবং যুক্তরাষ্ট্র উভয়েই জড়িয়ে পড়তে পারে।
ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলার পর অপরিশোধিত তেলের দাম রাতারাতি বাড়তে শুরু করেছে। ব্রেন্ট ক্রুড অয়েলের দাম একদিনে এক শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭৪.৪০ ডলার।
বিশ্বে তেল উৎপাদনকারী দেশগুলোর মধ্যে ইরানের অবস্থান সপ্তম।
ক্ষেপণাস্ত্র হামলার পর তেহরানের রাস্তায় মানুষজন নেমে এসে উৎসব করতে শুরু করে। তাদের অনেকের হাতে ইরান ও হিজবুলস্নাহর পতাকা এবং হাসান নাসরুলস্নাহর ছবি ছিল।
জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে ও জাতিসংঘ মহাসচিবের কাছে পাঠানো একটি চিঠিতে ইরানের রাষ্ট্রদূত আমির সাইদ ইরাভানি বলেছেন, হামাস ও হিজবুলস্নাহ জ্যেষ্ঠ নেতাদের হত্যার পাল্টা পদক্ষেপ হিসেবে এই হামলা চালানো হয়েছে। ইসরায়েলি ভবিষ্যৎ হামলার আরো জোরালো জবাব দেওয়া হবে বলে তিনি বলেছেন।
অন্যদিকে ইসরায়েলের রাষ্ট্রদূত ডানি ডানন ঘোষণা দিয়েছেন যে, ইরানের সর্বশেষ হামলার সমুচিত জবাব দেওয়া হবে।
তিনি বলেছেন, 'আমাদের যুদ্ধের কোনো ইচ্ছা নেই কিন্তু যখন আমাদের বেসামরিক লোকজনের ওপর এভাবে হামলা করা হচ্ছে, তখন আমরা অলস বসে থাকতে পারি না।'
গত সপ্তাহ জুড়েই নিরাপত্তা পরিষদের বিরুদ্ধে 'নিষ্ক্রিয়' থাকার অভিযোগ করে আসছে ইরান। দেশটি বলছে, মধ্যপ্রাচ্যে পুরোদস্তুর একটা যুদ্ধ শুরু হয়ে যাওয়ার আগে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেয়া উচিত পরিষদের।
ক্ষেপণাস্ত্র হামলার আগে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ইসরায়েলিদের উদ্দেশে এক ভিডিও বার্তায় 'আমরা ইরানের অশুভ অক্ষের বিরুদ্ধে অভিযানে রয়েছি' বলে বক্তব্য দিয়েছিলেন।
অন্যদিকে ওয়াশিংটনে হোয়াইট হাউজের একজন সিনিয়র কর্মকর্তা সাংবাদিকদের বলেন, 'ইরান থেকে ইসরায়েলে সরাসরি কোনো সামরিক হামলা চালানো হলে তার জন্য ইরানকে চরম পরিণতি ভোগ করতে হবে।'
এর আগে গত এপ্রিলে সিরিয়ায় ইরানি কনসু্যলেটে ইসরায়েলের হামলায় কয়েকজন শীর্ষ কমান্ডারের মৃতু্যর ঘটনায় ইসরায়েলে ৩০০টির বেশি ড্রোন হামলা চালিয়েছিল ইরান।
সে সময় প্রায় সবগুলো ড্রোনই ভূপাতিত করেছিল ইরায়েল, যুক্তরাষ্ট্র এবং তাদের আরব মিত্ররা। ওই হামলায় ইসরায়েলের একটি বিমানঘাঁটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল।