পরিবার-পরিজন নিয়ে সুখেই দিনযাপন করছিলেন এমারুল। হাওড়ে মাছ ধরে যতটুকু আয়-রোজগার হতো, তাই দিয়েই চলত সংসারের চাকা। সোমবার তিনি স্থানীয় বাজার থেকে স্ত্রী ও সন্তানদের জন্য কিনে এনেছিলেন ফল আর মাংস। রাতে হয়তো সেই খাবার খেয়ে সবাই ঘুমিয়ে পড়েছিলেন। কিন্তু সেই ঘুম যে, চিরনিদ্রার হবে- তা কে জানত। এক অগ্নিকান্ডে সবকিছু শেষ হয়ে গেল। চার শিশুসন্তানসহ ঘরের মধ্যেই পুড়ে মারা গেল এমারুল ও তার স্ত্রী। অবসান হলো এক জেলে পরিবারের!
সোমবার দিবাগত রাত সাড়ে ১২টার দিকে সুনামগঞ্জের ধর্মপাশা উপজেলার জয়শ্রী ইউনিয়নের শীমের খাল নামক আশ্রয়ণ প্রকল্পে এ ঘটনা ঘটে।
নিহতরা হলেন- এমারুল (৫০), তার স্ত্রী পলি আক্তার (৪৫), চার শিশুসন্তান পলাশ (৯), ফরহাদ (৭), ফাতেমা বেগম (৫) ও ওমর ফারুক (৩)।
উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, জয়শ্রী ইউনিয়নের শীমের খাল গ্রামে সরকারি অর্থায়নে ২০২১ সালে গৃহহীন ও ভূমিহীনদের জন্য ৩৪টি টিনের ছাউনিসহ আধাপাকা ঘর নির্মাণ করা হয়। এখানে ৩৪টি পরিবারের বসবাস। এর মধ্যে এমারুলেরও ছিল একটি পরিবার। স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে তিনি একটি ঘরে বসবাস করতেন।
স্থানীয়দের বরাত দিয়ে পুলিশ জানায়, প্রতিদিনের
\হমতো সোমবার রাতে আশপাশের বাড়িঘরসহ ওই পরিবারের লোকজন ঘুমোতে যান। রাত সাড়ে ১২টায় ধোঁয়া ও আগুন দেখে আশপাশের লোকজন এগিয়ে যান। গিয়ে ভেতর থেকে দরজা-জানালা বন্ধ দেখতে পান। দেখতে দেখতে অগ্নিকান্ডে ভস্মিভূত হয় ঘরটি। রাত দুইটার দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। আগুনে ঘরের ভেতরেই অগ্নিদগ্ধ হয়ে মারা যান ওই পরিবারের চার শিশুসহ ছয়জন।
প্রতিবেশীরা জানান, সোমবার এমারুল স্থানীয় বাজার থেকে ফল, মাংস ও কেরোসিন কিনে আনেন। পরে রাত সাড়ে বারোটার দিকে অগ্নিকান্ডের ঘটনায় তাদের মৃতু্য হয়। ঘরের ভেতর থেকে দরজা লাগানো থাকায় ধারণা করা হচ্ছে ভেতরেই অগ্নিকান্ডের সূত্রপাত হয়েছে।
আশ্রয়ণ প্রকল্পের বাসিন্দা বাবুল মিয়া বলেন, 'রাত সাড়ে বারোটার দিকে প্রতিবেশী কামালের ডাক শুনে এগিয়ে দেখি এমারুলের ঘরের ভেতর আগুন জ্বলছে। পরে দরজা ভেঙে ভেতরে ঢুকে দেখি সবাই পুড়ে ছাই।'
এমারুলের শ্বশুর চেরাগ আলী জানান, 'এমারুল ও তার স্ত্রীর মধ্যে টুকটাক ঝগড়াঝাটি হতো। তারা নিজেরাই মীমাংসা করত। তবে এমন কোনো ঝগড়া হয়নি- যার জন্য এমন হবে। কেন যে এমন হলো ভেবে পাচ্ছি না।'
এমারুলের মা তাসলিমা আক্তার ও বড় ভাই রাহাত আলী বলেন, 'কেন এমন ঘটনা ঘটেছে তা বুঝতে পারছি না।'
শীমের খাল গ্রামের বাসিন্দা নিহত পলি আক্তারের ছোট ভাই মনির মিয়া (২০) বলেন, 'আমার বইন ও ভগ্নিপতির মধ্যে কোনো ঝগড়াঝাটি ছিল না। রাতে তাদের বাড়িতে আমি দাওয়াতও খাইছি। কী কারণে তারা আগুনে পুড়ে মরল বুঝতে পারছি না।'
এদিকে, খবর পেয়ে মঙ্গলবার সকালে সুনামগঞ্জ পুলিশ সুপার আ. ফ. ম. আনোয়ার হোসেন খান ও ধর্মপাশা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ গিয়াস উদ্দীন, ধর্মপাশা সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার আলী ফরিদ ও ধর্মপাশা থানার ওসি এনামুল হক ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।
ধর্মপাশা সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার মো. আলী ফরিদ বলেন, সুনামগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপার মহোদয় ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন এবং রহস্য উদঘাটনের জন্য সিআইডি টিম এসেছে। তদন্তের পরে ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করা যাবে।
ধর্মপাশা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ গিয়াস উদ্দীন জানান, 'আগুন কীভাবে লেগেছে তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। আশপাশের ঘরে আগুন যায়নি।
সুনামগঞ্জ পুলিশ সুপার আ.ফ.ম. আনোয়ার হোসেন বলেন, 'এই মর্মান্তিক ঘটনা কিভাবে ঘটল তা জানার চেষ্টা করছি। এর রহস্য উদঘাটনে সিআইডির ক্রাইম সিন ইউনিট ও পিবিআইও কাজ করছে।'