আজ মহালয়া দেবীপক্ষ শুরু
প্রকাশ | ০২ অক্টোবর ২০২৪, ০০:০০
বীরেন মুখার্জী
বছর ঘুরে আবারও এসেছে সৌর আশ্বিনের অমাবস্যা তিথি। আজ 'মহালয়া'। দক্ষিণায়নের এদিনে ভোরে চন্ডীপাঠ ও পিতৃপুরুষের উদ্দেশে তর্পণ (শ্রাদ্ধ) করা হয়। পুরাণে আছে, সৌর উত্তরায়ণকালে বিষ্ণুলোকে যখন দিন, যমলোকে তখন রাত-দক্ষিণায়ন। উত্তরায়ণের ছয় মাস দেবতারা জেগে থাকেন, বিষ্ণুলোকের তোরণ থাকে অবারিত। দক্ষিণায়নের ছয় মাস দেবতারা নিদ্রিত। কিন্তু যমলোকে দিনমান, দুয়ার খোলা। দক্ষিণায়নের পয়লা দিনে ঘুম ভেঙে জেগে উঠেই বন্ধ দুয়ার ঠেলে পিতৃপুরুষেরা ছুটে আসবেন মর্ত্যলোকে। এ সময় তারা থাকেন ক্ষুধা-তৃষ্ণায় কাতর। উত্তরপুরুষদের হাতে একটু শ্রাদ্ধাহার পেলেই তারা পরম তৃপ্ত। সে অর্থে মহালয়া মর্ত্যলোকে পরলোকগত পিতৃগণের ক্ষণিক আবাস। দশ প্রহরণধারিণী দেবী দুর্গার আগমন- ক্ষণে এ যেন 'নান্দিমুখ'। আজ মহালয়ার পুণ্য প্রভাতে বিশ্বের কোটি কোটি সনাতন ধর্মাবলম্বী পুণ্যার্থী 'ময়া দত্তেন তোয়েন তৃপ্যান্ত ভুবনত্রয়ম, আব্রহ্ম স্তম্ভ পর্যন্তং তৃপ্যন্তু'- মন্ত্র উচ্চারণের মাধ্যমে তিন গন্ডুষ জল অঞ্জলি দিয়ে বিদেহী পিতৃপুরুষদের স্মরণ করবেন।
অন্যদিকে, শারদীয় দুর্গাপূজার অন্যতম অনুষঙ্গ হিসেবে গণ্য করা হয় মহালয়াকে। দেবী দুর্গা যে মর্ত্যে আসছেন, তা জানান দেয় মহালয়া। এর মধ্য দিয়ে শুরু হয় হিন্দু সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব দুর্গাপূজার ক্ষণগণনা। মহালয়ার পাঁচ দিন পর, শুক্লপক্ষের ষষ্ঠী তিথিতে
অনুষ্ঠিত হয় দেবীর বোধন। চন্ডীপাঠের মধ্য দিয়ে দেবী দুর্গার
আবাহন করেন ভক্ত-অনুসারীরা।
পুরাণ মতে, মহালয়ার দিনে দেবী দুর্গা মহিষাসুর বধের দায়িত্ব পান। শিবের বর অনুযায়ী কোনো দেবতা মহিষাসুরকে বধ করতে পারবে না। বর লাভ করে মহিষাসুর দেবতাদের স্বর্গ থেকে বিতাড়িত করে এবং বিশ্বব্রহ্মান্ডের অধীশ্বর হতে চায়। এই দুরাচারীকে একমাত্র নারীশক্তিই বধ করতে পারবে। তাই ব্রহ্মা, বিষ্ণু ও শিব শক্তি দ্বারা উৎপন্ন নারীশক্তি সিংহবাহিনী মা দুর্গা মহিষাসুরকে পরাজিত করে হত্যা করেন।
পঞ্জিকা অনুযায়ী, কৈলাস ছেড়ে কন্যারূপে সন্তান-সন্ততি নিয়ে দেবী এবার মর্ত্যে আসছেন। এ বছর দেবী দুর্গা দোলায় বা পালকিতে চড়ে মর্ত্যে আসবেন এবং হাতিতে চড়ে বিদায় নেবেন। পঞ্জিকা মতে দেবীর আগমন দোলায় হওয়ায় তা 'ছত্রভঙ্গ'-এর ইঙ্গিত দেয়। ফলে দেবীর আগমনকালে ধ্বংস ও অস্থিরতার বার্তা রয়েছে। এরপরও প্রতিবছরের মতো দেবী দুর্গা শ্রদ্ধাভরে পূজিত হবেন মন্ডপে মন্ডপে। সে পূজার প্রস্তুতিই চলছে দেশজুড়ে। মহালয়ার এই দিনে নতুন করে মন্দির আর পূজামন্ডপে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রতিমা স্থাপন করা হবে। মহালয়ার পর ষষ্ঠতম দিনে আগামী ৯ অক্টোবর বোধনের মধ্য দিয়ে ষষ্ঠীবিহিত পূজা অনুষ্ঠিত হবে। আর ১২ অক্টোবর নবমী ও দশমীবিহিত পূজা শেষে হবে দেবী বিসর্জন।
বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের তথ্য অনুযায়ী, ২০ অক্টোবর শুক্রবার বোধন ও মহাষষ্ঠীবিহিত পূজার-অর্চনার মধ্য দিয়ে শুরু হবে দুর্গাপূজার আনুষ্ঠানিকতা। ১০ অক্টোবর মহাসপ্তমী, ১১ অক্টোবর মহাঅষ্টমী, ১২ অক্টোবর মহানবমী ও মহাদশমীবিহিত পূজা সমাপন শেষে বিসর্জনের মাধ্যমে ধরাধাম থেকে দেবী বিদায় নেবেন।
আজ ভোরে রাজধানীর ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দিরে বিশেষ অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে মহানগর সার্বজনীন পূজা উদযাপন কমিটি। 'বাজলো তোমার আলোর বেণু,/মাতলো রে ভুবন/আজ প্রভাতে,/সে সুরও শুনে খুলে দিনু মন।/বাজলো, বাজলো/ বাজলো তোমার আলোর বেণু,/... সঙ্গীতায়োজনের মধ্য দিয়ে দিবসের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হবে। এছাড়া দেবীর আগমনী উপলক্ষে দিনটি উদযাপন করতে গুলশান বনানী সার্বজনীন পূজা পরিষদসহ দেশের মন্ডপগুলোতে আয়োজন করা হয়েছে নানা অনুষ্ঠানের।