বিএনপির ডা. শাহাদাতকে চসিক মেয়র ঘোষণা
প্রকাশ | ০২ অক্টোবর ২০২৪, ০০:০০
চট্টগ্রাম বু্যরো
তিন বছর আগে অনুষ্ঠিত চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী ডা. শাহাদাত হোসেনকে মেয়র ঘোষণা করেছেন আদালত। নির্বাচন বাতিল চেয়ে এই প্রার্থীর করা মামলায় এই রায় ঘোষণা করা হয়। পাশাপাশি আগামী ১০ দিনের মধ্যে গেজেট ঘোষণার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
মঙ্গলবার দুপুর ১২টায় নির্বাচনী ট্রাইবু্যনাল এবং যুগ্ম জেলা ও দায়রা জজ মোহাম্মদ খাইরুল আমীনের আদালত এই রায় প্রদান করেন।
আদালতের রায়ে বলা হয়েছে, নির্বাচনের ফলাফল বাতিল করে ডা. শাহাদাতকে মেয়র ঘোষণা করা হয়েছে এবং এই রায় অনুযায়ী ১০ দিনের মধ্যে গেজেট প্রকাশ করতে হবে।
বাদীপক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট আরশাদ হোসেন আসাদ জানান, চসিক নির্বাচন বাতিল চেয়ে দায়ের করা মামলায় আদালত ডা. শাহাদাতের পক্ষে রায় দিয়েছেন এবং তাকে মেয়র ঘোষণা করেছেন।
এজলাসের বাইরে বেরিয়ে তাৎক্ষণিক এক প্রতিক্রিয়ায় ডা. শাহাদাত হোসেন বলেন, এই রায়ের মাধ্যমে সারাদেশের গণতন্ত্র মানুষের আইনের শাসনের প্রতি যে অনাস্থা তৈরি হয়েছিল, তা ফিরে আসতে শুরু করবে। একই সঙ্গে চট্টগ্রামের ২০ লাখ ভোটার, যারা বারবার
প্রতারিত হয়েছিল, তারাও খুশি হয়েছে। অবিলম্বে আদালতের রায় কার্যকর করতে নির্বাচন কমিশন ও অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক এরশাদ উলস্নাহ এ ব্যাপারে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করতে গিয়ে বলেন, গত ১৫ বছর দেশের মানুষের কোনো অধিকার ছিল না। ছিল না জনগণের ভোটাধিকার। কোনো নির্বাচনে জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটেনি। অন্যান্য সেক্টরের মতো বিচার বিভাগও ছিল ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকারের নিয়ন্ত্রণে। ডা. শাহাদাত হোসেনকে মেয়র ঘোষণা করে যে রায় দেওয়া হয়েছে, এতে প্রমাণিত হয়েছে, ড. ইউনূসের নেতৃত্বে বর্তমান সরকারের আমলে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। দেশে গণতান্ত্রিক পরিবেশ ফিরে আসছে। জনগণ ন্যায্য অধিকার ফিরে পাচ্ছে। পাশাপাশি হাসিনা সরকারের জুলুম-অবিচার থেকে মানুষ মুক্তি লাভ করেছে।
আদালত সূত্রে জানা গেছে, ২০২১ সালের ২৪ ফেব্রম্নয়ারি চসিক নির্বাচনে কারচুপি ও ফল বাতিল চেয়ে মেয়র প্রার্থী ডা. শাহাদাত হোসেন নির্বাচন কমিশনারসহ ৯ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন। এই মামলায় বিবাদী করা হয় চসিকের সাবেক মেয়র এম রেজাউল করিম চৌধুরী, আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা মো. হাসানুজ্জামান, নির্বাচন কমিশনারের সচিব, প্রধান নির্বাচন কমিশনার, আবুল মনজুর, এমএ মতিন, খোকন চৌধুরী, মুহাম্মাদ ওয়াহেদ মুরাদ ও মো. জান্নাতুল ইসলামকে। তাদের পক্ষে আদালতে কোনো আইনজীবী উপস্থিত ছিলেন না।
মামলার এজাহারে অভিযোগ করা হয়, নৌকা প্রতীক পাওয়ার পর থেকে চসিক কর্মকর্তারা রেজাউল করিমের সঙ্গে যোগাযোগ শুরু করেন। এ থেকে বোঝা যায়, নির্বাচনের নামে ওইদিন শুধু আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন হয়েছে। যে কারণে নির্বাচনে ভোটের হিসাব চেয়ে এখনো পাওয়া যায়নি। কোনো কেন্দ্র থেকে ইভিএমের প্রিন্ট কপি দেওয়া হয়নি। ভোটের দিন দুপুর পর্যন্ত ৪-৬ শতাংশ ভোট পড়ে। কিন্তু ভোটের হিসাবে দেখানো হয়, ২২ শতাংশ ভোট পড়েছে।
২০২১ সালের ২৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত চসিক নির্বাচনে তিন লাখ ৬৯ হাজার ২৪৮ ভোট পেয়ে নৌকার প্রার্থী রেজাউল করিম চৌধুরী জয়লাভ করেন। ওই নির্বাচনে তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির মেয়রপ্রার্থী শাহাদাত হোসেন ধানের শীষ প্রতীকে পেয়েছিলেন ৫২ হাজার ৪৮৯ ভোট।
প্রসঙ্গত, কেন্দ্রীয় বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ও চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির সাবেক সভাপতি ডা. শাহাদাত হোসেনকে ২০২০ সালের ২৪ ফেব্রম্নয়ারি বিএনপির পার্লামেন্টারি বোর্ডের বৈঠকের পর চসিক নির্বাচনে মেয়র পদে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছিল।