বাংলাদেশ-ভারত ম্যাচ মানেই নাটকীয়তা আর রোমাঞ্চ। টি২০, ওয়ানডের পর টেস্ট ফরম্যাটেও দেখা মিলছে তেমনটাই। কানপুর টেস্টে দ্বিতীয় ও তৃতীয় দিন বৃষ্টির বাধায় পন্ড হলেও চতুর্থ দিনে জমে উঠেছে লড়াই। একদিকে ড্রয়ের চিন্তা শান্তদের, অন্যদিকে জয়ে চোখ রোহিতদের। সবমিলিয়ে শেষ দিনেও যে জমজমাট লড়াই হতে চলেছে, তা অনুমেয়। চতুর্থ দিনশেষে এগিয়ে স্বাগতিকরাই।
ম্যাচ জেতার সামান্য সুযোগ থাকলেও সেটা নিতে চাইবে ভারত, এই আভাস আগেই মিলেছিল। তেমন চেষ্টাই চালাচ্ছে তারা।
প্রথম ইনিংসে অপরাজিত সেঞ্চুরির দিনে পড়ন্ত বিকালে ফ্ল্যাড লাইটের আলোয় দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাটিংয়ে নামতে হলো মুমিনুল হককে। এবার তার লড়াইটা বাংলাদেশকে হারের মুখ থেকে রক্ষা করার। কানপুর টেস্টের অর্ধেকের বেশি বৃষ্টির পানিতে ধুয়ে গেলেও জয়ের জন্য লড়াই জারি রেখেছে ভারত।
গতকাল সোমবার দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাটিংয়ে নেমে চতুর্থ দিনশেষে ১১ ওভারে ২ উইকেট হারিয়ে স্কোরবোর্ডে ২৬ রান তোলে বাংলাদেশ। এখনও পিছিয়ে ২৬ রানে। ক্রিজে আছেন দুই ব্যাটার সাদমান ইসলাম ও মুমিনুল হক। মুমিনুল শূন্য ও সাদমান ৭ রানে অপরাজিত। ভারতের হয়ে দুই
উইকেট নেন রবিচন্দ্রন অশ্বিন। ৫২ রানে পিছিয়ে থেকে ব্যাটিং শুরু করে বাংলাদেশ। শুরুটা ভালো করলেও খেই হারান ওপেনার জাকির হাসান। দলীয় ১৮ রানের মাথায় ১৫ বলে ১০ রান করে অশ্বিনের বলে এলবিডবিস্নউ হয়ে ফেরেন জাকির। এরপর নাইট ওয়াচম্যান হিসেবে নামানো হয় হাসান মাহমুদকে। তবে তিনিও অশ্বিনের দ্বিতীয় শিকারে পরিণত হন। এরপর ক্রিজে আসেন মুমিনুল।
ঝড়ো ব্যাটিংয়ে বাংলাদেশের করা ২৩৩ রান মাত্র ৩৫ ওভার ব্যাটিং করেই তুলে ফেলে ভারত। দলীয় ২৮৫ রান তুলতেই ৯ উইকেট হারিয়ে বসে ভারত।
লাঞ্চের পর ব্যাটিং পেয়ে ভারতীয়রা মাতে চার-ছক্কায়। মাত্র ৩ ওভারে দলীয় পঞ্চাশ, ১০.১ ওভারে একশ' রান করে বিশ্বরেকর্ড গড়ে। এরপর দ্রম্নততম দেড়শ', দুইশ', আড়াইশ' রানের রেকর্ডও নিজেদের করে নেয় তারা। টি২০ গতিতে ওভারপ্রতি আটের ওপর রান আনতে থাকেন স্বাগতিক ব্যাটাররা। যশভি জয়সওয়াল, লোকেশ রাহুল ফিফটি পেলেও অবদান আছে বিরাট কোহলি, শুভমান গিল, রোহিত শর্মাদের। ক্রিজে যারাই গেছেন দ্রম্নত রান বাড়ানোর প্রয়াস ছিল সবার ব্যাটে।
এরপর ইনিংস ঘোষণা দেয় তারা। বাংলাদেশের বিপক্ষে লিড হয়েছে ৫২ রানের। দিনের খেলা আরও ৪৫ মিনিট বাকি ছিল। বল হাতে সাকিব ৪টি ও মিরাজ ৪টি উইকেট নেন। হাসান মাহমুদ নেন ১টি উইকেট। মূলত বাকি ওভারগুলোতে বাংলাদেশের কয়েকটি উইকেট নেওয়ার পরিকল্পনা ছিল ভারতের। যে পরিকল্পনাতে তারা শতভাগ সফল।
এর আগে ১০৭ রানে তিন উইকেট হারিয়ে আড়াই দিন পর ব্যাটিংয়ে নামে বাংলাদেশ। এক মুমিনুল হক ছাড়া কেউ পারেননি আস্থার প্রতিদান দিতে। তার একার সেঞ্চুরিতে (১০৭) দুইশ' ছাড়িয়ে থামে বাংলাদেশ। বাকিরা যোগ্যতার পরিচয় দিতে পারেননি। তাতে প্রথম ইনিংসে ২৩৩ রানে থেমেছে বাংলাদেশ দল। শেষ উইকেট হিসেবে রবীন্দ্র জাদেজা খালেদ আহমেদকে বিদায় দিলে লাল-সবুজদের ইনিংস শেষ হয় ৭৪.২ ওভারে।
কানপুর টেস্টে ড্র করার লক্ষ্য বাংলাদেশের। যার ফলে পঞ্চম দিনে দারুণ ব্যাটিং করতে হবে সাকিব-মুশফিকদের। প্রথম ইনিংসে ভারতের ব্যাটিং তান্ডব দেখার পর আর তাদেরকে দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাটিংয়ের সুযোগ যে দেবে না বাংলাদেশ, তা অনেকটাই নিশ্চিত। টিকে থাকাই এখন মূল চ্যালেঞ্জ শান্তদের। যদিও ভারতের বিশ্বসেরা বোলিংয়ের সামনে কাজটা বেশ কঠিন। সবমিলিয়ে পঞ্চম দিনের রোমাঞ্চের অপেক্ষায় সমর্থকরা।