জেলা প্রশাসক (ডিসি) নিয়োগ নিয়ে গত ১০ সেপ্টেম্বর সচিবালয়ের জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে হট্টগোল হয়। এ ঘটনায় ১৭ জন উপসচিবকে চিহ্নিত করে শাস্তির সুপারিশ করেছে এ বিষয়ে গঠিত তদন্ত কমিটি। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব ড. মো. মোখলেস উর রহমান সোমবার সচিবালয়ে সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, ডিসি নিয়োগ নিয়ে গত ১০ সেপ্টেম্বর সচিবালয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে হট্টগোলের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ১৭ জনকে চিহ্নিত করেছে তদন্ত কমিটি। তাদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন প্রকার বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া সুপারিশ করা হয়েছে।
ডিসি নিয়োগে হট্টগোলে জড়িতদের মধ্যে ৮ জনকে গুরুদন্ড, পাঁচজনকে লঘুদন্ড ও ৪ জনকে তিরস্কার করার সুপারিশ এসেছে বলেও জানান জ্যেষ্ঠ সচিব।
মোখলেস উর রহমান বলেন, গত ১০ ডিসেম্বর আমাদের মন্ত্রণালয়ে একটি আনরেস্ট (অসন্তোষ) হয়েছিল। সেটার জন্য এক সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়। এটির প্রধান ছিলেন স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সিনিয়র সচিব এম এ আকমল হোসেন আজাদ। তার রিপোর্ট পাওয়া গেছে। বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা থেকেও প্রতিবেদন পাওয়া গেছে, সাক্ষী-প্রমাণ পাওয়া গেছে।
তিনি আরও বলেন, ১৭ জনকে তিনি (আকমল হোসেন) জিজ্ঞাসাবাদ করেছেন। তিনটি পর্যায়ে আকমল হোসেন আজাদ সাজেস্ট করেছেন
কী কী ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে। আটজনের বিষয় বলা হয়েছে, তদন্তসাপেক্ষে কিছু পদ্ধতি অনুসরণ করে গুরুদন্ড দেওয়া যেতে পারে। চারজনের বিষয় বলা হয়েছে তদন্তসাপেক্ষে বিধিবিধান অনুযায়ী লঘুদন্ড দেওয়া যেতে পারে। আর পাঁচজনের ব্যাপারে বলা হয়েছে, তাদের শাস্তি তিরস্কার দেওয়া যেতে পারে। তাদের সাবধান করা, যাতে ভবিষ্যতে এটা না করে। এটা হলো আমাদের ফাইন্ডিংস। একজন সরকারি কর্মকর্তা যখন এই বিষয়গুলো ফেস করে তখন অনেকগুলো স্টেজ আছে, সেগুলো সময়সাপেক্ষ ব্যাপার। একটা পর্যায়ে দেখা যায় অনেকের সংশ্লিষ্টতা ছিল, আবার অনেকের ছিল না। আবার অনেক সময় দেখা যায় নিঃস্বার্থ ক্ষমা প্রার্থনা করেছে। এ রকম হয়ে গেলে অনেক সময় আমরা সেগুলো দেখি।
জ্যেষ্ঠ সচিব আরও বলেন, এখন এই বিষয়গুলো প্রসেস করা হবে। কারণ, জাতি-মানুষ জানতে চায়। আমি ডিসি হতে পারিনি, সেজন্যই এরকম একটা আন্দোলন মন্ত্রণালয়ের মধ্যে, এটা কেউ ভালোভাবে নেননি। আমাদের সিনিয়র কলিগরা নেননি, কলিগরা নেননি, আমাদের জুনিয়র কলিগরা নেননি সর্বোপরি আপনারা (সাংবাদিক) নেননি এবং সত্যি কথা বলতে জনগণও নেয়নি। অনেকে বলছে এগুলো যদি কঠোর হস্তে দমন না করেন, ব্যবস্থা না নেন, আমাদের প্রশাসন ভেঙে পড়বে, শৃঙ্খলা থাকবে না। প্রশাসনের একটি বড় দিক হলো শৃঙ্খলা। শৃঙ্খলা রক্ষার্থে প্রয়োজনীয় যা যা করার... আমিও আইনের ঊর্ধ্বে না আপনারাও আইনের ঊর্ধ্বে নন, আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা, ২০১৮ অনুযায়ী গুরু এবং লঘুদন্ড দেওয়ার ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন সিনিয়র সচিব।
জড়িত তারও বিরুদ্ধে কোনো শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি এমন কেউ আছেন কিনা- বিষয়ে সিনিয়র সচিব বলেন, একজন যুগ্ম সচিব ছিলেন, তাকে ইতিমধ্যে সিলেটের অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার করে বদলি করা হয়েছে। উনি কিছু ওভার রিঅ্যাক্ট করেছিলেন, এজন্য সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। আমরা অ্যাক্ট করব, ওভার অ্যাক্ট করতে পারি না।
১৭ জনের সবাই উপসচিব পদমর্যাদার কর্মকর্তা জানালেও তাদের নাম জানাননি সিনিয়র সচিব।
চলতি মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে দেশের ৫৯ জেলায় নতুন জেলা প্রশাসক (ডিসি) নিয়োগ দেয় অন্তর্র্বর্তী সরকার। নতুন এ পদায়নে বঞ্চিত হওয়ার অভিযোগ তুলে সচিবালয়ে হট্টগোল করেন উপসচিব পর্যায়ের এক দল কর্মকর্তা। ১০ সেপ্টেম্বর দুপুরে তারা জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব কে এম আলী আযমের কক্ষে গিয়ে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন। তারা যুগ্ম সচিবের বিরুদ্ধে এককভাবে ডিসি পদায়নের তালিকা তৈরির অভিযোগ তোলেন।
নিজেদের বিএনপি-জামায়াতপন্থি 'বঞ্চিত' কর্মকর্তা উলেস্নখ করে তারা বলেন, নতুন পদায়ন পাওয়া কর্মকর্তাদের বেশির ভাগই হাসিনা সরকারের ফিটলিস্টের কর্মকর্তা ও সুবিধাভোগী। আর্থিক লেনদেনের মাধ্যমে এ কর্মকর্তাদের ডিসি নিয়োগ করা হয়েছে বলে তাদের দাবি। এ নিয়ে দিনভর সচিবালয়ে চলে হট্টগোল।
পরে কর্মকর্তারা মন্ত্রিপরিষদ সচিবের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে জারি করা ডিসি নিয়োগের দুই প্রজ্ঞাপন বাতিল করার দাবি জানান। মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. মাহবুব হোসেন তাদের দাবির বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে কথা বলবেন বলে আশ্বস্ত করেন।