দাবি পর্যালোচনায় কমিটি

৩৫ প্রত্যাশীদের আন্দোলন চলবে আজ বৈঠক

প্রকাশ | ০১ অক্টোবর ২০২৪, ০০:০০

যাযাদি ডেস্ক
সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩৫ করার দাবিতে আন্দোলনকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে টিয়ার শেল নিক্ষেপ করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। ছবিটি সোমবার প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনার সামনে থেকে তোলা -ফোকাস বাংলা
সরকারি চাকরিতে আবেদনের বয়স ৩৫ করা নিয়ে অন্তর্র্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বাসভবন যমুনায় অনুষ্ঠিত বৈঠকে চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। বিষয়টি নিয়ে আজ মঙ্গলবার আন্দোলনকারীরা জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের প্রধান আবদুল মুয়ীদ চৌধুরীর সঙ্গে বৈঠক করবেন। তবে দাবি পর্যালোচনায় সাবেক এই সচিবকে প্রধান করে একটি কমিটি গঠন করেছে সরকার। সোমবার রাতে প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন থেকে বেরিয়ে আন্দোলনের অন্যতম দুই সদস্য রাসেল আল মাহমুদ ও আবু সাইদ সাদ বলেন, 'দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে। আর আন্দোলন পরিচালিত হবে রাজধানীর শাহবাগ থেকে।' এর আগে তারা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বাসভবনে কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলেন। সেখান থেকে বের হয়ে প্রধান উপদেষ্টার আশ্বাস ছাড়া আন্দোলন স্থগিত করা হবে না বলেন জানান। এরপর যমুনায় আসেন দুই উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ ও নাহিদ ইসলাম। তাদের সঙ্গে আন্দোলনকারীরা ঘণ্টাব্যাপী কথা বলেন। সেখান থেকে বের হয়ে রাতে রাসেল আল মাহমুদ তাদের মাইকে ঘোষণা দেন, মঙ্গলবার তারা জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের প্রধান আবদুল মুয়ীদ চৌধুরীর সঙ্গে বৈঠক করবেন। তবে তাদের দাবি আদায়ে আন্দোলন চলবে। শাহবাগ থেকে তারা আন্দোলন পরিচালনা করবেন। এরপর মাইকের মাধ্যমে আন্দোলনকারীদের শাহবাগের দিকে যেতে আহ্বান জানান আবু সাইদ সাদ। তার ঘোষণার পর আন্দোলনকারীরা শাহবাগের দিকে যান। এর আগে সোমবার সকাল ১০টায় জাতীয় জাদুঘরের সামনে 'চাকরিতে আবেদনের বয়সসীমা ৩৫ (শর্ত সাপেক্ষে উন্মুক্ত)' ব্যানারে মহাসমাবেশ শুরু হয়। দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে চাকরিপ্রত্যাশীদের মহাসমাবেশে যোগ দিতে দেখা যায়। এ সময় তাদের চাকরিতে আবেদনের বয়সসীমা ৩৫ করার বিষয়ে বিভিন্ন স্স্নোগান দিতে দেখা যায়। সমাবেশে সংহতি জানিয়ে আন্দোলনকারীদের দাবি মেনে নিতে বর্তমান অন্তর্র্বর্তী সরকারের প্রতি আহ্বান জানান নিরাপদ সড়ক চাই (নিসচা) এর চেয়ারম্যান চিত্রনায়ক ইলিয়াস কাঞ্চন। ইলিয়াস কাঞ্চন বলেন, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে শত রক্তের বিনিময় আমরা দ্বিতীয়বার যে নতুন স্বাধীনতা অর্জন করেছি, সেখানে আমাদের সবার আশা-আকাঙ্ক্ষা ছিল এই রাষ্ট্রের মধ্যে আর কোনো বৈষম্য থাকবে না। কিন্তু এখনো চাকরিতে আবেদনের বয়সসীমা ৩০-৩৫ এর জন্য আমার সন্তানরা কষ্ট পাবে, বৃষ্টি উপেক্ষা করে দাবি আদায়ের জন্য দাঁড়াতে হবে- এটা আমি কখনো আশা করিনি। আমার সন্তানরা কষ্ট করে লেখাপড়া করার পর আবার কষ্ট নিয়ে পৃথিবীতে বেঁচে থাকবে? তার (শিক্ষার্থী) যদি যোগ্যতা থাকে, তার যদি চাকরির বয়স এক বছরও বাকি থাকে, তাহলেও শেষ পরীক্ষার মধ্যে সে অংশগ্রহণ করবে। কারণ, আমি মনে করি, একটি ছাত্র তার যোগ্যতা দিয়ে চাকরি অর্জন করবে। তারা কারও কাছে কোনো চাকরি চায় না, দয়া চায় না, সাহায্য-সহানুভূতি চায় না। তারা চায়, তাদের অধিকার। যে অধিকার কোটা বৈষম্যের অধিকারের মধ্য দিয়ে নতুন স্বাধীনতা এসেছে, সেখানে এখনো কেন এই বৈষম্য রয়েছে? তাদের এই যৌক্তিক দাবি এখনো কেন পূরণ হচ্ছে না। আমি আশা করব, আপনারা এই যৌক্তিক দাবি মেনে নেবেন। চাকরির বসয়সীমা ৩৫ বছর মেনে নিন। সমাবেশের অন্যতম সমন্বয়ক মো. জিয়াউর রহমান খান বলেন, 'চাকরিতে আবেদনের বয়সসীমা বাড়ানোর দাবি নতুন নয়। আমরা দীর্ঘদিন ধরে এই দাবি জানিয়ে আসছি। সরকারের পক্ষ থেকে বিভিন্ন সময় আমাদের দাবি মেনে নেওয়ার আশ্বাস দেওয়া হলেও কার্যকরী কোনো পদক্ষেপ নিতে দেখা যায়নি। তাই আমরা আন্দোলন করছি।' পরে আন্দোলনকারীরা প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনার সামনে অবস্থান নেওয়ার পর পুলিশের বাধার মুখে পড়েন। আন্দোলনকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে সোমবার বেলা দেড়টার দিকে টিয়ারশেল ও সাউন্ডগ্রেনেড নিক্ষেপ করে পুলিশ। এই দাবিতে গত আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ও কয়েক দফা আন্দোলন করেছেন সরকারি চাকরিপ্রত্যাশীরা। তবে প্রতিবারই তাদের দাবি প্রত্যাখ্যাত হয়েছে। চাকরিতে আবেদনের বয়সসীমা ৩৫ বছরে উন্নীত করার দাবিতে আন্দোলনকারীরা পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী, সোমবার সকালে শাহবাগ জাতীয় জাদুঘরের সামনে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন। সেখান থেকে কয়েকশ' চাকরিপ্রত্যাশী মিন্টো রোডে প্রধান উপদেষ্টার বাসভবনের সামনে যান। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, আন্দোলনকারীরা যমুনার সামনে পৌঁছানোর পর তাদের আটকে দেয় পুলিশ। পরে সেখান থেকেই আন্দোলনকারীরা স্স্নোগানে স্স্নোগানে নিজেদের দাবি জানাতে থাকেন। তাদের ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ কয়েক রাউন্ড টিয়ারশেল ও সাউন্ডগ্রেনেড নিক্ষেপ করে। এ সময় আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশের ধস্তাধস্তির ঘটনাও ঘটে। ওই সময় সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশন্স) মো. ইসরাইল হাওলাদার বলেন, 'প্রধান উপদেষ্টার বাসভবনের সামনে সভা-সমাবেশ করার বিষয়ে আগে থেকেই নিষেধাজ্ঞা ছিল। কিন্তু আন্দোলনকারীরা পুলিশের নিষেধ অমান্য করে প্রধান উপদেষ্টার বাসার সামনে অবস্থান নিলে বাধা দেওয়া হয়।' দাবি পর্যালোচনায় কমিটি গঠন এদিকে, বয়সসীমা বৃদ্ধির দাবির বিষয়ে একটি কমিটি গঠন করেছে সরকার। এই কমিটির প্রধান করা হয়েছে সাবেক সচিব আব্দুল মুয়ীদ চৌধুরীকে, যিনি জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের প্রধান। কমিটির সদস্যসচিব জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব। এই কমিটি আগামী সাত দিনের মধ্যে পরামর্শ দেবে। সোমবার বিকালে সচিবালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মো. মোখলেস উর রহমান। তিনি বলেন, কমিটিতে যে কয়জন সদস্য নেওয়ার তা নেবেন, সেই এখতিয়ার কমিটির আহ্বায়ককে দেওয়া হয়েছে। ক্ষমতার পালাবদলের পর নানা দাবিতে বিভিন্ন পক্ষের দফায় দফায় আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে গত ২৫ আগস্ট গণবিজ্ঞপ্তি দিয়ে সচিবালয় ও প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের আশপাশে সভা-সমাবেশ ও মিছিল নিষিদ্ধ ঘোষণা করে ঢাকা মহানগর পুলিশ। সেখানে বলা হয়েছে, 'সাম্প্রতিক উদ্ভূত পরিস্থিতি মোকাবিলায় জনশৃঙ্খলা রক্ষার্থে বাংলাদেশ সচিবালয় এবং প্রধান উপদেষ্টার সরকারি বাসভবনের (যমুনা) আশপাশ এলাকায় যেকোনো প্রকার সভা-সমাবেশ, মিছিল, শোভাযাত্রা-বিক্ষোভ প্রদর্শন ইত্যাদি নিষিদ্ধ করা হলো।