আত্মসমর্পণের পর মাহমুদুর রহমান কারাগারে

প্রকাশ | ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০০:০০

যাযাদি রিপোর্ট
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়কে অপহরণ ও হত্যাচেষ্টার ষড়যন্ত্রের মামলায় কারাদন্ডপ্রাপ্ত দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মাহমুদুর রহমানকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন আদালত। ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতের এডিশনাল চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (এসিএমএম) মাহবুবুল হক রোববার সকালে এ আদেশ দেন। এ তথ্য নিশ্চিত করেন মাহমুদুর রহমানের আইনজীবী সৈয়দ জয়নুল আবেদীন। এদিন বেলা ১১টার দিকে তিনি ঢাকার সিএমএম আদালতে আত্মসমর্পণ করেন। পরে আদালত তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। আইনজীবী সৈয়দ জয়নুল আবেদীন বলেন, হয়রানিমূলক মামলায় দৈনিক আমার দেশের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মাহমুদুর রহমানকে কারাদন্ড দেওয়া হয়েছিল। সম্প্রতি তিনি দেশে ফিরে আজ আদালতে আত্মসমর্পণ করেন। আদালত তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। পরবর্তী সময়ে মাহমুদুর রহমানের জামিন চাওয়া হবে বলে জানান তার আইনজীবী সৈয়দ জয়নুল আবেদীন। গত বছরের ১৭ আগস্ট সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছেলে এবং তার তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তিবিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়কে অপহরণ ও হত্যাচেষ্টার ষড়যন্ত্রের মামলায় সাংবাদিক শফিক রেহমানসহ পাঁচজনকে সাত বছরের কারাদন্ড দেন আদালত। কারাদন্ডপ্রাপ্ত অন্য চারজন হলেন- আমার দেশ পত্রিকার ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মাহমুদুর রহমান, জাতীয়তাবাদী সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংস্থার (জাসাস) সহসভাপতি মোহাম্মদ উলস্নাহ মামুন, তার ছেলে রিজভী আহাম্মেদ ওরফে সিজার এবং যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী ব্যবসায়ী মিজানুর রহমান ভূঁইয়া। সজীব ওয়াজেদ জয়কে অপহরণ ও হত্যাচেষ্টার ষড়যন্ত্রের অভিযোগ এনে গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) পরিদর্শক ফজলুর রহমান ২০১৫ সালের ৩ আগস্ট পল্টন থানায় মামলা করেন। মামলার এজাহারে বলা হয়, ২০১১ সালের সেপ্টেম্বরের আগে যেকোনো সময় জাসাস নেতা মোহাম্মদ উলস্নাহসহ বিএনপি ও বিএনপির নেতৃত্বাধীন জোটভুক্ত দলের উচ্চপর্যায়ের নেতারা ঢাকা শহরের পল্টনে জাসাস কার্যালয়ে এবং যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক শহর ও যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন এলাকায় আসামিরা একত্র হয়ে বৈঠকে অংশ নেন। তারা সজীব ওয়াজেদ জয়কে যুক্তরাষ্ট্রে অপহরণ করে হত্যার ষড়যন্ত্র করেছিলেন। অপরাধ ঘটানোর দায়িত্ব দেওয়া হয় রিজভী আহাম্মদকে। এই মামলায় ২০১৮ সালের ২২ ফেব্রম্নয়ারি শফিক রেহমানসহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ। বিচার চেয়ে ২০২২ সালের ১৩ নভেম্বর ঢাকার আদালতে সাক্ষ্য দেন সজীব ওয়াজেদ জয়। মামলায় সজীব ওয়াজেদ জয়কে অপহরণ করে হত্যাচেষ্টা ষড়যন্ত্রের নির্দেশদাতা হিসেবে শফিক রেহমান ও মাহমুদুর রহমানের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়। আর আসামি মোহাম্মদ উলস্নাহর বিরুদ্ধে পরামর্শদাতার অভিযোগ আনে পুলিশ। আর তার ছেলে রিজভী আহাম্মেদ এই ষড়যন্ত্র বাস্তবায়নের দায়িত্ব নিয়েছিলেন বলে অভিযোগে বলা হয়। রিজভী যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থা এফবিআইয়ের কাছ থেকে সজীব ওয়াজেদের ব্যক্তিগত তথ্য সংগ্রহ করেন। পরে অন্য আসামিদের কাছে সেই তথ্য সরবরাহ করেন। মামলায় অর্থায়ন ও পরামর্শদাতার অভিযোগ আনা হয় যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী মিজানুর রহমানের বিরুদ্ধে। মামলার অভিযোগে বলা হয়, সজীব ওয়াজেদ জয়কে অপহরণ ও হত্যার পরিকল্পনা হয়েছিল যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে। সেখানেও এ-সংক্রান্ত মামলার বিচার হয়। ২০১৫ সালের মার্চ মাসে দেওয়া ওই রায়ে রিজভী আহাম্মেদ সিজারের ৪২ মাসের কারাদন্ড হয়। এ ছাড়া ঘুষ লেনদেনের জন্য এক এফবিআই এজেন্টের বন্ধুর ৩০ মাসের কারাদন্ড হয়। নিঃশর্ত মুক্তি দাবি জামায়াত আমিরের যাযাদি ডেস্ক দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মাহমুদুর রহমানের নিঃশর্ত মুক্তি দাবি করেছেন জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান। একইসঙ্গে জামিন না দিয়ে মাহমুদুর রহমানকে কারাগারে পাঠানোর ঘটনাকে আশ্চর্যজনক উলেস্নখ করেছেন তিনি। রোববার এক ফেসবুক পোস্টে মাহমুদুর রহমানের মুক্তি দাবি করেন জামায়াত আমির। ডা. শফিকুর রহমান তার ফেসবুক পোস্টে লিখেছেন, 'পতিত স্বৈরাচারের প্রতিহিংসামূলক নিকৃষ্ট মামলায় কলম সৈনিক ও সাহসী কণ্ঠ ড. মাহমুদুর রহমানের ওপর জুলুম করে ন্যায়ভ্রষ্ট বিচারের মাধ্যমে সাজা দেওয়া হয়।' 'আশ্চর্য! আদালতকে সম্মান করে আজ তিনি আদালতে হাজিরা দওয়ার পর বিচারক তাকে জামিন না দিয়ে জেলে পাঠিয়ে দিলেন। কোনোভাবেই তা মেনে নিতে পারছি না। নিকৃষ্ট এই মামলায় তাকে নিঃশর্ত খালাস দিয়ে অতি দ্রম্নত মুক্তি দেওয়া হোক।' জামায়াত আমির লিখেছেন, 'তিনি স্বৈরশাসনের পুরো সময় জুড়ে স্বৈরতন্ত্রের বিরুদ্ধে লড়াই করেছেন। স্বৈরাচারের হাতে (আদালত প্রাঙ্গণে) রক্তাক্ত হয়েছেন। দেশ ত্যাগে বাধ্য হয়েছেন।' মাহমুদুর রহমানকে বীর উলেস্নখ করে ডা. শফিকুর রহমান লেখেন, 'জাতি আপনার অবদানকে চিরদিন শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করবে। কারণ আপনি একজন বীর।'