ডিম-মুরগির দামে অস্বস্তি চরমে

নিয়ন্ত্রণহীন বাজার

প্রকাশ | ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০০:০০

যাযাদি রিপোর্ট
সম্প্রতি ডিমের বাড়তি দামে ক্রেতা অস্বস্তি চরমে পৌঁছেছে। যদিও ডিম ও মুরগির দাম নির্ধারণ করে দিয়েছে সরকার কিন্তু বাজারে তা কার্যকর করা যায়নি। কর্পোরেট ব্যবসায়ীদের দাবি ফেনীসহ উত্তর-পূর্বাঞ্চলের বিভিন্ন জেলার বন্যায় উৎপাদন কমে সরবরাহ ঘাটতি তৈরি হয়েছে। অন্যদিকে প্রান্তিক খামারিদের দাবি কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানের ফিড ও মুরগির বাচ্চার চড়ামূল্যের কারণেই পণ্য দুটির দামে অস্থিরতা বিরাজ করছে। রোববারও রাজধানীর বাজারে প্রতি ডজন ডিম বিক্রি হয়েছে ১৬৫-১৭০ টাকা দরে। অর্থাৎ প্রতি পিস ডিম বিক্রি হয়েছে ১৪ টাকার ওপর। যদিও প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর ১৫ আগস্ট প্রতিটি ডিমের দাম ১১.৮৭ টাকা এবং ব্রয়লার মুরগির দাম প্রতি কেজি ১৮০ টাকা নির্ধারণ করে দেয়। এ পরিস্থিতি নিয়ে ডিম ও মুরগির উৎপাদনকারীদের দুই অংশ দুই ধরনের যুক্তি দিচ্ছে। প্রান্তিক খামারিরা বলছেন, এই দাম বেধে দেওয়ায় খামারিদের লোকসান হচ্ছে, কারণ ফিড ও মুরগির বাচ্চার চড়ামূল্যের কারণে প্রান্তিক খামারিদের উৎপাদন খরচ আরও বেড়ে গেছে। অন্যদিকে কর্পোরেট শ্রেণির উৎপাদনকারীরা বলছেন, বন্যায় অনেক খামারের মুরগি মরে যাওয়ার কারণে ডিম ও মুরগির সরবরাহে ঘাটতি তৈরি হয়েছে। এ কারণে দাম কমছে না। তবে ফিডের দাম ঠিক আছে। কিন্তু বাংলাদেশ পোল্ট্রি অ্যাসোসিয়েশনসহ সরকারি কয়েকটি নিয়ন্ত্রক সংস্থা বলছে, ফিডের দাম নিয়ে আরও পর্যালোচনা করার জায়গা রয়েছে। প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, পশুসম্পদ খাতে বন্যায় ৪৩৫.৩২ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে, যেখানে খামারের অবকাঠামো, মুরগি ও মুরগির খাবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। অধিদপ্তরের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিভিন্ন খামারের ২৫.৩৮ লাখের বেশি মুরগি মারা গেছে। তবে চট্টগ্রাম, সিলেট ও খুলনা বিভাগে বন্যায় আক্রান্ত্র হওয়া মুরগির সংখ্যা ৪৬.৫১ লাখের বেশি। উৎপাদনকারীরা বলছেন, এ লাখ লাখ মুরগি মারা যাওয়া এবং উৎপাদন বন্ধ হয়ে যাওয়ার কারণে ডিম ও মাংসের সরবরাহ চেইনে স্বাভাবিকভাবেই কিছুটা সরবরাহ কমেছে। তবে দেশে উৎপাদন এখনো চাহিদার চেয়ে বেশি। বাংলাদেশ পোল্ট্রি অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সুমন হাওলাদার বলেন, 'বন্যার কারণে যদি ২০-২৫ লাখ ডিমের উৎপাদন কমও হয়, তাতেও সমস্যা নেই। কারণ, প্রতিদিন ৪ কোটি পিস চাহিদার বিপরীতে দেশে এর আগে সাড়ে ৪ কোটি পিস ডিমের উৎপাদন ছিল'। কর্পোরেট উৎপাদনকারীদের সমালোচনা করে সুমন বলেন, তারা প্রান্তিক খামারিদের কাছে এক বস্তা (৫০ কেজি) ফিড বিক্রি করে ৩ হাজার ৫০০ থেকে ৩ হাজার ৬০০ টাকায়; কিন্তু নিজেদের চুক্তিবব্ধ খামারির কাছে বিক্রি করে ২ হাজার ৭০০ টাকায়। একই ভাবে দ্বিগুণ দামে বিক্রি করে মুরগির বাচ্চা। এ কারণে সরকার দাম বেঁধে দিয়ে কর্পোরেট উৎপাদনকারীদের বাড়তি লাভ করার সুযোগ করে দিয়েছে। এদিকে কাজী ফার্মসের পরিচালক কাজী জাহিন হাসান বলেন, 'মুরগি ও ডিমের দাম নির্ধারিত হয় চাহিদা ও সরবরাহের ভিত্তিতে। বন্যার কারণে সরবরাহ কমে যাওয়ায় বাজারদর বেড়েছে। ২০২৩ সালে বন্যার পরও ডিমের দাম বেড়েছিল। তাই এ বছরও বন্যার পর একই প্রভাব দেখা স্বাভাবিক। তিনি আরও বলেন, কাজী ফার্মস এখনো কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের বেঁধে দেওয়া পাইকারি দরে ডিম বিক্রি করছে এবং সরকার-ঘোষিত মূল্যের চেয়ে কম দামে ব্রয়লার মুরগি বিক্রি করছে। কর্পোরেট খামারিদের সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে, সরকারিভাবে ৪০০ কোটি টাকা ক্ষতির কথা বলা হলেও এটা আসলে ১ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে। কুমিলস্না, চাঁদপুর, ফেনী, লক্ষ্ণীপুর, হবিগঞ্জ ও মৌলভীবাজারের প্রায় ৮০ শতাংশ খামারি আক্রান্ত হয়েছেম এ বন্যায়। আর আক্রান্ত খামারের সংখ্যা প্রায় ১৫ হাজার। এদিকে গত ১ সেপ্টেম্বর বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদের সভাপতিত্বে পোল্ট্রি খাতের সব স্টেকহোল্ডারদের নিয়ে একটি সভা হয়। ওই সভার কার্যবিবরণী থেকে জানা গেছে, সভাটি করা হয়েছিল বন্যার কারণে ডিম, মুরগি ও ফিডের বাজার, উৎপাদন ও সরবরাহ পর্যায়ে যেসব চ্যালেঞ্জ দেখা দিতে পারে, সে বিষয়ে সবার মতামত নেওয়ার জন্য। প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মোহাম্মদ রেয়াজুল হক বলেন, ডিম উৎপাদনে ঘাটতি নেই, তবে বাজার অস্থিতিশীল রয়েছে। তিনি অবশ্য এ সময় প্রতিদিন ৬.৩০ কোটি পিস ডিমের উৎপাদনের সম্ভাব্য বাস্তবতাবিবর্জিত তথ্যও উপস্থাপন করেন। তবে জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সাবেক মহাপরিচালক এএইচএম সফিকুজ্জামান বলেন, খামারি থেকে ভোক্তা পর্যায়েই ডিমের দামে ৩-৪ টাকার পর্থ্যক্য হয়। এই ইসু্যতে সবাই মিলে কাজ করলে ডিমের দাম সহনীয় পর্যায়ে আনা সম্ভব হবে। ঢাকার বিভিন্ন আড়তের ডিমের পাইকারি ব্যবসায়ীরা বলেন, বৃহৎ কর্পোরেট গ্রম্নপগুলো ডিলারদের চাহিদার চেয়ে কম পরিমাণে ডিম সরবরাহ করে। এ কারণে বাজারে ডিমের দাম বাড়ে। একই সঙ্গে পোল্ট্রি অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ফিড ও মুরগির বাচ্চার বাড়তি দামের বিষয়ে অভিযোগ তুললে কাজী ফার্মস লিমিটেডের পরিচালক জাহিন হাসান বলেন, ডলারের মূল্যবৃদ্ধিতে ফিডের দাম বেড়েছে।