ডেঙ্গুতে চলতি বছরে এক দিনে সর্বোচ্চ মৃতু্য দেখল দেশ। শুক্রবার সকাল ৮টা থেকে শনিবার সকাল ৮টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে ৭ জনের মৃতু্য হয়েছে। এ সময়ে ডেঙ্গু নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন আরও ৮৬০ জন।
শনিবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুম থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, হাসপাতালে নতুন ভর্তিদের মধ্যে বরিশাল বিভাগে ১০১, চট্টগ্রাম বিভাগে ১৬৪, ঢাকা বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ১০৯, ঢাকা উত্তরে ১৯৫, ঢাকা দক্ষিণে ১৮১ ও খুলনা বিভাগে ৫৩ জন রয়েছেন। এছাড়া রাজশাহী বিভাগে ২, ময়মনসিংহ বিভাগে ৩২, সিলেট বিভাগে ৬ ও রংপুর বিভাগে ১৭ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।
এদিকে গত ২৪ ঘণ্টায় সারাদেশে ৬২১ জন ডেঙ্গু রোগী হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র পেয়েছেন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, এ বছরের জানুয়ারি থেকে এখন পর্যন্ত সবমিলিয়ে ২৮ হাজার ৫৬৫ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। আর ডেঙ্গুতে মৃতু্য হয়েছে ১৫০ জনের।
বিশ্লেষকরা বলছেন, দেশে বিগত দুই
বছরের ধারাবাহিকতায় এবারও ডেঙ্গুর সেরোটাইপ বা ধরন 'ডেন-২'-এর প্রাধান্য বিস্তার করছে। চলতি বছরের জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউিট (আইইডিসিআর) ডেঙ্গু পজিটিভ ৫০ জন রোগীর নমুনা বিশ্লেষণ করে সেখানে ৭০ শতাংশ (৬৯ দশমিক ২০ শতাংশ) ডেন-২ এর উপস্থিতি পেয়েছে। তবে পরপর দুই বছর একই সেরোটাইপ বা ধরন প্রভাব বিস্তার করায় চলতি বছর ডেঙ্গুর ভয়াবহতা কম দেখছেন গবেষকরা।
চিকিৎসা বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ডেঙ্গুর (ডেন-১, ডেন-২, ডেন-৩ ও ডেন-৪) চারটি ধরন রয়েছে। এবার বেশির ভাগই ডেন-২ আক্রান্ত হচ্ছেন। পাশাপাশি তারা এও বলছেন যে, ডেঙ্গুর চারটি ধরনের একটিতে পজিটিভ হলে পরবর্তী সময়ে ওই ধরনের আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা তেমন নেই। তবে দ্বিতীয়বার ডেঙ্গু আক্রান্ত হলে রোগীর শারীরিক অবস্থা গুরুতর হতে পারে। চলতি বছরের আগস্টের শেষ দিক থেকে শুরু হয়েছে ডেঙ্গুজ্বরের ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা। গত দুই মাসের বেশি সময় ধরে এডিস মশাবাহিত ডেঙ্গু নিয়ে প্রতিদিন অসংখ্য মানুষ দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন।
তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, বছরব্যাপী ডেঙ্গু রোগী পাওয়া গেলেও গত তিন বছর ধরে প্রাদুর্ভাব সবচেয়ে বেশি থাকছে আগস্ট, সেপ্টম্বর ও অক্টোবর মাসে। গত বছর ডেঙ্গু নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন তিন লাখ ২১ হাজার ১৭৯ জন ও মৃতু্য এক হাজার ৭০৫ জন রেকর্ড করা হয়েছে। ওই বছর প্রভাব বিস্তার করে ডেঙ্গুর ডেন-২ ধরন। এবারও এই ধরনটির প্রভাবের ইঙ্গিত মিলেছে আইইডিসিআরের নমুনা বিশ্লেষণে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ৬৯ দশমিক ২০ শতাংশ ডেন-২ আক্রান্ত রোগী পাওয়া গেছে। এরপর ২০ দশমিক ৫০ শতাংশ ডেন-৩, ১০ দশমিক ৩০ শতাংশ ৪ আক্রান্ত। তবে বিশ্লেষণে ডেন-১ আক্রান্ত কোনো রোগী পাওয়া যায়নি।