শুক্রবার, ০৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ কার্তিক ১৪৩১

গাজীপুর-আশুলিয়ায় ফের শ্রমিক বিক্ষোভ

যাযাদি ডেস্ক
  ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০০:০০
গাজীপুর-আশুলিয়ায় ফের শ্রমিক বিক্ষোভ

শিল্পাঞ্চল গাজীপুর ও আশুলিয়ায় ফের সড়ক অবরোধ করে শ্রমিক বিক্ষোভের ঘটনা ঘটেছে। শনিবার সকালে বন্ধ কারখানা খুলে দেওয়া ও বেতন বাড়ানোর দাবিতে গাজীপুরের দক্ষিণ সালনায় ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক ও আশুলিয়ায় বাইপাইল-আব্দুলস্নাহপুর সড়ক অবরোধ করে জিরাবো এলাকায় বিক্ষোভে অংশ নেন পোশাক শ্রমিকরা। এ সময় সড়ক দুটির উভয় পাশে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। ফলে ভোগান্তিতে পড়েন সাধারণ মানুষ। আশুলিয়ায় শ্রমিক বিক্ষোভ চলাকালে চারটি কারখানায় সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়। পরে পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনলে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়। শিল্পপুলিশ জানায়, শনিবার আশুলিয়ায় ১৬ কারখানায় উৎপাদন বন্ধ ছিল।

গাজীপুর প্রতিনিধি জানান, অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা কারখানা খুলে দেওয়া এবং তিন মাসের বকেয়া বেতনের দাবিতে এইচ আর ওয়ান ফ্যাশন লিমিটেড এবং এইচ আর ওয়ান এক্সোসরিজ কারখানার শ্রমিকরা শনিবার সকালে দক্ষিণ সালনায় (পলাশটেক) ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন। এছাড়া শহরের কোনাবাড়ীতে যমুনা ডেনিমস কারখানার ২২৫ জন স্টাফ ১৯ দফা দাবিতে বিক্ষোভ করেন। পরে শিল্পপুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে শ্রমিকদের বোঝালে তারা মহাসড়ক থেকে সড়ে গিয়ে কারখানার সামনে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করতে থাকেন।

জানা যায়, শনিবার সকালে শ্রমিকরা কাজে এসে গেটে বন্ধের নোটিশ দেখতে পান। শ্রমিকদের অভিযোগ, তাদের ৩ মাসের বকেয়া বেতন না দিয়ে কারখানা কর্তৃপক্ষ হঠাৎ করে গেটে অনির্দিষ্টকালের জন্য কারখানা বন্ধ ঘোষণার নোটিশ টানিয়ে দিয়েছে।

শ্রমিকরা জানান, তিন মাসের বেতন বকেয়া থাকায় তাদের ঘর ভাড়া, দোকান বাকি, বাচ্চাদের স্কুলের বেতন প্রাইভেট শিক্ষকের বেতনসহ অনেক ধারদেনা বেড়েছে। কারখানা বন্ধের নোটিশ দেখে তারা মহাসড়কে অবস্থান নিতে বাধ্য হয়েছে।

তারা বলেন, 'বৃহস্পতিবার আমরা কাজ করছি। শুক্রবার সাপ্তাহিক ছুটি ছিল। শুনেছি শুক্রবার রাতে মালিক কর্তৃপক্ষ কারখানা বন্ধ করে চলে গেছে। আমাদের মধ্যে অনেক শ্রমিক রয়েছে যারা ৪ মাসও বেতন পাচ্ছিল না। স্টাফদের বেতন দিলেও আমাদের মতো শ্রমিকদের বেতন বকেয়া রেখে মালিক কারখানা বন্ধ করে দিয়েছে।'

গাজীপুর শিল্পপুলিশের পরিদর্শক ফারুক বলেন, শ্রমিকরা মহাসড়ক অবরোধ করার খবরে ঘটনাস্থলে পৌঁছে তাদের বুঝালে তারা সড়ক ছেড়ে কারখানার সামনে অবস্থান নেয়।

এইচ আর ওয়ান ফ্যাশন লিমিটেড এবং এইচ আর ওয়ান এক্সোসরিজ কারখানার মালিক হাতেমের মুঠোফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি তা রিসিভ করেননি।

এদিকে, সকাল ৮টার দিকে বেতন বৃদ্ধিসহ ১৯ দফা দাবিতে মহানগরীর কোনাবাড়ীতে যমুনা গ্রম্নপের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান যমুনা ডেনিমস লিমিটেড কারখানায় (উৎপাদন ফ্লোরে) কর্মরত ২২৫ জন স্টাফ (ডিস্ট্রিবিউটর, সুপারভাইজার, ইনচার্জ) বিক্ষোভ করেন। তাদের সঙ্গে শ্রমিকদের একটি অংশ যোগ দেয়।

শ্রমিক-কর্মচারীদের দাবিগুলো হলো চলতি মাসের বেতনের সঙ্গে সব

স্টাফদের স্থগিত হওয়া বার্ষিক ইনক্রিমেন্টের মোট বেতনের ১০% পরিশোধ করতে হবে, ২০২৩ সালের প্রকাশিত গেজেট অনুযায়ী বাড়ানো বেতন (ডিসেম্বর থেকে আগস্ট) প্রদান করতে হবে সব স্টাফদের এবং শ্রমিকদের বকেয়া ছুটির টাকা চলতি মাসের বেতনের সঙ্গে পরিশোধ করতে হবে।

শ্রমিকদের চেয়ে স্টাফদের বেতন বৈষম্য করা যাবে না, সুপারভাইজারদের বেতন সর্বনিম্ন ৩৩ হাজার টাকা, লাইন চিফের বেতন সর্বনিম্ন ৩৮ হাজার টাকা এবং ইনচার্জদের বেতন সর্বনিম্ন ৫০ হাজার টাকা করতে হবে, এটি সেপ্টেম্বর মাস থেকে কার্যকর করতে হবে।

স্টাফদের ছুটির দিনে কাজ করানো হলে এক দিনের হাজিরা দিতে হবে। সব শ্রমিকদের হাজিরা বোনাস ৯০০ টাকা, সন্ধ্যা ৭টার পর সব শ্রমিক এবং কর্মচারীদের টিফিন বিল ৫০ টাকা এবং ১১টার পর ডিউটি করলে নাইট বিল ১০০ টাকা দিতে হবে।

সপ্তম কর্মদিবসের মধ্যে স্টাফ এবং শ্রমিকদের বেতন পরিশোধ করতে হবে, চাকরির বয়স ছয় মাস হলে বেসিক সমপরিমাণ ঈদ বোনাস দিতে হবে, সব স্টাফ এবং শ্রমিকদের কর্ম দক্ষতা অনুযায়ী প্রমোশন দিতে হবে।

প্রতি তিন মাস পর পর কর্মদক্ষতা মূল্যায়নের মাধ্যমে গ্রেড পরিবর্তনের সিস্টেম আবার চালু করতে হবে। তিন দিন লেট করলে সব কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের হাজিরা এবং হাজিরা বোনাস কর্তন করা যাবে না, পূর্ব নির্ধারিত নোটিশ ছাড়া শ্রমিক কর্মচারীদের জোরপূর্বক চাকরিচু্যত করা হলে শ্রম আইন অনুযায়ী ১২০ দিনের (৪ মাস) বেতনসহ সার্ভিস বেনিফিট নগদ পরিশোধ করতে হবে।

কোনো শ্রমিক-কর্মচারী অসুস্থ বা মৃতু্য হলে তাদের চিকিৎসার খরচসহ বাড়িতে লাশ পাঠিয়ে দাফনের জন্য খরচ কারখানা কর্তৃপক্ষের নিজ দায়িত্বে বহন করতে হবে, কর্মরত অবস্থায় অনিচ্ছাকৃত ভুল এবং মেশিনের যন্ত্রাংশ নষ্ট হলে বেতন কর্তন করা যাবে না।

প্রত্যেক ঈদে মোট ১২ দিন করে ছুটি দিতে হবে, কাজ না থাকার অজুহাতে ছুটি দিলে ওই ছুটি অন্যান্য দিনের সঙ্গে অ্যাডজাস্ট করা যাবে না।

কোনো অভিযোগ ছাড়া ছাঁটাইকৃত পুরনো কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পুনরায় নিয়োগ দিতে হবে। আন্দোলনরত কোনো শ্রমিক-কর্মচারীদের ছাঁটাই করা যাবে না।

এসব দাবির বিষয়ে প্রশাসন বিভাগের মহাব্যবস্থাপকের (জিএম) ওপর কোনো ধরনের চাপ প্রয়োগ করা যাবে না বলেও শ্রমিকদের দাবির মধ্যে আছে।

এ বিষয়ে যুমনা ডেনিমস লিমিটেডের কমপস্নায়েন্স ম্যানেজার সেলিম রেজা সাংবাদিকদের বলেন, 'আন্দোলনকারীদের মধ্যে থেকে ৮-১০ জনকে কারখানার সভাকক্ষে এসে তাদের দাবিগুলো নিয়ে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু তারা আমাদের প্রস্তাব না মেনে কারখানার প্রধান ফটক অবরুদ্ধ করে বিক্ষোভ করছে। সকাল থেকেই তারা শ্রমিকদের কারখানায় প্রবেশ করতে দেয়নি।'

পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ঘটনাস্থলে সেনাবাহিনী, শিল্পপুলিশ অবস্থান করছে বলেও জানান তিনি।

আশুলিয়ায় বন্ধ ১৬ কারখানা

অন্যদিকে, সাভারের শিল্পাঞ্চল আশুলিয়ায় বন্ধ কারখানা খুলে দেওয়া ও বেতন বৃদ্ধির দাবিতে বাইপাইল-আব্দুলস্নাপুর সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছেন শ্রমিকরা। শনিবার সকালে জিরাবো এলাকায় লুসাকা কারখানার শ্রমিকরা এই অবরোধ পালন করেন। তাদের সঙ্গে মন্ডল গ্রম্নপের শ্রমিকরাও বেতন বৃদ্ধির দাবি জানিয়ে বিক্ষোভ করেন। পরে শ্রমিকরা ওই এলাকার আশপাশের কারখানায় ঝামেলা করার চেষ্টা করলে আরও চারটি কারখানায় সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়। এ ছাড়াও অনির্দিষ্টকালের জন?্য এখনো বন্ধ রয়েছে ১০টি ও সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে দুটি কারখানায়।

শ্রমিকরা জানান, কয়েকদিন আগে বিভিন্ন দাবির মুখে লুসাকা কারখানা বন্ধ ঘোষণা করে কর্তৃপক্ষ। শনিবার বন্ধ কারখানা খুলে দেওয়ার দাবিতে শ্রমিকরা কারখানার সামনে অবস্থান করেন। পরে তারা ওই এলাকার কয়েকটি কারখানার সামনে গিয়ে গোলযোগ করলে ৪টি কারখানায় সাধারণ ছুটি ঘোষণা করতে বাধ্য হয় কর্তৃপক্ষ। এ ছাড়া বেতন বৃদ্ধির দাবিতে মন্ডল গ্রম্নপের শ্রমিকরা বিক্ষোভ করেছেন।

শিল্পপুলিশ-১ এর পুলিশ সুপার সারোয়ার আলম বলেন, 'আশুলিয়ায় পুরোদমে উৎপাদন চলছে। তবে কয়েকটি কারখানায় আজও উৎপাদন বন্ধ রয়েছে। ১৩(১) ধারায় বন্ধ রয়েছে ১০টি, এ ছাড়া সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে ৬টি কারখানায়। বেতন বৃদ্ধির দাবিতে মন্ডল গ্রম্নপের শ্রমিকরা জিরাবো এলাকায় সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করছেন। তবে শিল্পাঞ্চলের পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে। বেতন বৃদ্ধির দাবিতে মন্ডল গ্রম্নপের শ্রমিকরা বিক্ষোভ করছেন। আমরা বুঝিয়ে তাদের সরিয়ে দিয়েছি।'

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে