নির্বাচিত সরকারই দেশে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে পারে

ঝিনাইদহে ভার্চুয়ালি সমাবেশে তারেক রহমান

প্রকাশ | ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০০:০০

তারেক মাহমুদ, ঝিনাইদহ
শনিবার ঝিনাইদহের পায়রা চত্বরে অনুষ্ঠিত গণ-সমাবেশে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে বক্তব্য রাখেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান -যাযাদি
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, 'জনগণ দ্বারা নির্বাচিত সরকারই কেবল গণতন্ত্র ও দেশে উন্নয়নের নতুন ধারা সৃষ্টি করতে পারে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রতি সেদিনও আমাদের সমর্থন ও আস্থা ছিল, আজও আছে। তবে তাদের প্রতি আমাদের আস্থাকে প্রশ্নহীন রাখার চ্যালেঞ্জ কিন্তু তাদেরই নিতে হবে।' শনিবার বিকালে ঝিনাইদহের পায়রা চত্বরে ছাত্র-জনতার গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের আন্দোলনে নিহত ঝিনাইদহের সাব্বির ও প্রকৌশলী রাকিব হত্যার প্রতিবাদে অনুষ্ঠিত গণ-সমাবেশে প্রধান অতিথি হিসেবে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে এসব কথা বলেন। ঝিনাইদহ জেলা বিএনপির সভাপতি অ্যাডভোকেট এমএ মজিদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত গণসমাবেশে স্বশরীরে উপস্থিত থেকে বক্তৃতা করেন বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির খুলনা বিভাগীয় ভারপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক অনিন্দ্য ইসলাম অমিত, তথ্যবিষয়ক সম্পাদক আজিজুল বারী হেলাল, বিএনপির খুলনা বিভাগীয় সহ-সাংগঠনিক জয়ন্ত কুমার কুন্ডু, সহ-তথ্য ও গবেষণা বিষয়ক সম্পাদক আমিরুজ্জামান খান শিমুল, বিএনপিপন্থি আইনজীবী নেতা রুহুল কুদ্দুস কাজল ও জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক জাহিদুজ্জামান মনা। সমাবেশকে ঘিরে গোটা ঝিনাইদহ জেলাসহ দেশের দক্ষিণাঞ্চলের নেতাকর্মীদের মাঝে প্রাণচাঞ্চল্য ও উৎসবমুখর পরিবেশের সৃষ্টি হয়। বিকাল ৩টায় অনুষ্ঠান শুরু হলেও দুপুর ১২টা থেকে জেলার বিভিন্ন উপজেলা থেকে নেতাকর্মীরা আসতে থাকেন। দুপুর আড়াইটার পর মিছিলে মিছিলে সমাবেশস্থল লোকে লোকারণ্য হয়ে ওঠে। এ সময় জাতীয় সঙ্গীত ও দেশের আলোচিত সঙ্গীত শিল্পী মৌসুমির 'দেশটা তোমার বাপের নাকি করছো ছলাকলা' গান দিয়ে সমাবেশ শুরু হয়। তারেক রহমান বিকাল ৪.৪০টার দিকে ভার্চুয়ালি সমাবেশে যুক্ত হয়ে ১১ মিনিট বক্তব্য রাখেন। এ সময় তারেক রহমান বলেন, 'নির্বাচিত সরকারের কোনো বিকল্প নেই। আগস্টের যে বিপস্নব, জনগণের সফলতা আমাদের আর একটি স্বাধীনতা এবং বিজয়ের বার্তা নিয়ে এসেছে। স্বৈরাচার পতনের এ মহাসমরে আন্দোলনের সফলতা দেশের রাজনৈতিক দল সর্বস্তরের মানুষ ছাত্র-জনতা, গৃহিণী-শ্রমিক সবার অবদানকে মর্যাদা দিতে ব্যর্থ হয়, বিশেষ করে গত ১৭ বছরে অবিরাম আন্দোলনে গুম-খুন, হামলা-মামলায় লাখ লাখ কর্মীর যথাযথ মূল্যায়নে ব্যর্থ হয় তাহলে ইতিহাস আমাদের কিন্তু ক্ষমা করবে না। প্রিয় ভাইবোনেরা আজ আসুন আমরা সকলে মিলে শপথ গ্রহণ করি। গত ১৭ বছর এবং বিশেষ করে জুলাই এবং আগস্টে যে মানুষগুলো আত্মাহুতি দিয়েছেন, যে মানুষগুলো সবকিছু উজাড় করে দিয়েছেন তাদের আত্মত্যাগ সেদিনই সফলতা পাবে যেদিন দেশের মানুষ অর্থনৈতিক মুক্তি পাবে।' তারেক রহমান আরও বলেন, 'আমরা আজ এমন একটা পরিবেশে সমবেত হয়েছি যেখানে কারও কোনো ভয় নেই। সকলে আমরা শঙ্কামুক্ত পরিবেশে একত্রিত হয়ে কথা বলতে পারছি। আমরা আমাদের কথা বলার জন্য একই সঙ্গে আমরা অন্যের কথা শোনার জন্য একত্রিত হয়েছি। অথচ মাত্র ক'দিন আগেও এই দেশের মানুষ দল-মত নির্বিশেষে কথা বলতে পারত না। বিগত ১৬ বছর ধরে আমরা আমাদের কষ্টের কথাও স্বাধীনভাবে বলতে পারতাম না। বিগত ফ্যাসিস্ট সরকারের অত্যাচারে অতিষ্ঠ ছিল দেশের মানুষ। কীভাবে বাংলাদেশের মানুষের অধিকারগুলো ছিনিয়ে নেওয়া হয়েছিল, তাদের ন্যায্য অধিকার হরণ করা হয়েছিল। ঝিনাইদহ জেলায় জাতীয়তাবাদী দলের অনেক নেতাকর্মী আছেন যাদের আমরা হারিয়েছি। মিরাজুল, দুলাল ও পলাশসহ বহু মানুষকে হারিয়েছি। ফ্যাসিস্ট সরকার পতনেও এই জেলার মানুষ সাব্বির ও প্রকৌশলী রাকিবুল বুকের তাজা রক্ত দিয়েছে। দেশের মানুষ গত ৫ আগস্ট এই স্বৈরাচার সরকারকে হটিয়েছে। জনগণের আন্দোলনের মুখে যে স্বৈরাচার জনগণের বুকের ওপর চেপে বসেছিল, সেই স্বৈরাচার পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছে। এই কৃতিত্ব বাংলাদেশের সকল মানুষের কৃতিত্ব। আজকে যখন স্বৈরাচার পালিয়ে গেছে, তখন দেশের জনগণের দাবি ছিল দেশের মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠায় সৃষ্ট শূন্যতা পূরণের জন্য একটি নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের। গত ১৬ বছরে বিশেষ করে এই জুলাই-আগস্টে যে মানুষগুলো আন্দোলনে গিয়েছে, যে মানুষগুলো সবকিছু উজাড় করে দেশকে স্বৈরাচারমুক্ত করেছে, আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য জীবনবাজি রেখে যারা যুদ্ধ করেছে তাদের এই আত্মত্যাগ সেদিনই সফলতা লাভ করবে যেদিন এদেশের মানুষ নির্বাচনের মাধ্যমে তাদের রাজনৈতিক অধিকার ফিরে পাবে। সেদিনই বাংলাদেশের মানুষের অর্থনৈতিক মুক্তি অর্জিত হবে। সেদিন আমাদের এই আন্দোলনের শহীদদের, '৭১-এর শহীদদের এবং গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার আন্দোলনে যারা শহীদ হয়েছেন এবং যারা বিভিন্নভাবে নির্যাতনের শিকার হয়েছেন তাদের আত্মত্যাগ সফলতা লাভ করবে। আজ আমাদের সেই প্রতিজ্ঞা নিতে হবে, বাংলাদেশকে ফিরিয়ে আনতে হবে একটি স্বাভাবিক মঞ্চে। যা দেশের মানুষ প্রত্যাশা করে। দল-মত নির্বিশেষে নিজেদের জীবনের নিরাপত্তা প্রত্যাশা করে। প্রতিটি শিশু, প্রতিটি শিক্ষার্থী নিরাপত্তা ও শিক্ষা গ্রহণের যে গ্যারান্টি চায়, প্রতিটি কৃষক তাদের অবদানের যে স্বীকৃতি চায় এই সব কিছু সরকার গঠনের মাধ্যমে ধীরে ধীরে প্রতিষ্ঠিত করতে হবে। তারেক রহমান দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়া উপেক্ষা করে তার বক্তব্য শোনার জন্য ঝিনাইদহের মানুষের প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করে বলেন, 'আসুন, আমরা আন্দোলন করে, সংগ্রাম করে স্বৈরাচারের পতন ঘটিয়েছি। আমরা জনগণের প্রত্যাশা পূরণে কাজ করি। আসুন আমরা বৈষম্যহীন সুখি-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গঠনে ঐক্যবদ্ধ হই।' ঝিনাইদহ জেলা বিএনপির সভাপতি অ্যাডভোকেট এমএ মজিদ সমাবেশে জানান, খুন-গুমের রানি শেখ হাসিনা নিয়ন্ত্রিত দীর্ঘ ১৬ বছর আওয়ামী সরকারের দুঃশাসনামলে বিএনপি ঝিনাইদহে বড় কোনো সমাবেশ করতে পারেনি। সমাবেশ করতে গেলেই পুলিশ ও দলীয় সন্ত্রাসী দিয়ে পন্ড করে দেওয়া হয়েছে। নেতাকর্মীদের সমাবেশ থেকে গ্রেপ্তার করে জেলে ঢোকানো হয়েছে। আওয়ামী দুঃশাসনের প্রতিবাদ করে প্রায় ৩০ জন বিচারবহির্ভূত হত্যার শিকার হয়েছেন। ১১ হাজার নেতাকর্মীকে মিথ্যা মামলা দিয়ে ঘরছাড়া করেছে। অনেকেই হাসিনার ফ্যাসিবাদী শাসনে পিষ্ট হয়ে সম্পদ ও সংসার হারিয়েছেন। তাই বিএনপির আজকের এই সমাবেশ বিএনপির লাখো কর্মীর কাছে বেঁচে থাকার একটি উজ্জীবনী বার্তা বলে মনে করেন বিএনপি নেতারা।