বাংলাদেশে প্রতিবছর পাঁচ লাখ ৫৭ হাজার ২০০ জনের মৃতু্য হয় অসংক্রামক রোগে। তাদের মধ্যে প্রায় দুই লাখ ৭৩ হাজার মানুষ হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যায়। আর বিশ্বে হৃদরোগে প্রতি দেড় সেকেন্ডে একজনের মৃতু্য হয়। হৃদরোগজনিত মৃতু্যর প্রায় ৮০ ভাগ প্রতিরোধযোগ্য বলে দাবি করেন হৃদরোগ বিশেষজ্ঞরা।
হৃদরোগ বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, দেশে হৃদরোগের ঝুঁকি ও হৃদরোগজনিত মৃতু্য ক্রমবর্ধমান হারে বাড়ছে। হৃদরোগের অন্যতম কারণ উচ্চ রক্তচাপ। প্রতি চার জনে একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্ত। তাদের হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি খুবই বেশি।
এমন পরিস্থিতিতে আজ সারাদেশে বিশ্ব হার্ট দিবস দিবস পালিত হবে। এবারের প্রতিপাদ্য নিধারণ করা হয়েছে-'ইউজ হার্ট ফর অ্যাকশন বা কর্মের জন্য হৃদয় ব্যবহার করুন'। এই প্রতিপাদ্যে সারাদেশে সরকারি-বেসরকারিভাবে ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে পালিত হবে দিবসটি।
ডবিস্নউইচও'র গেস্নাবাল রিপোর্ট অন হাইপারটেনশন-২০২৩ অনুযায়ী, বাংলাদেশে প্রতিবছর দুই লাখ ৭৩ হাজার মানুষ হৃদরোগে মৃতু্যবরণ করে, যার ৫৪ শতাংশের জন্য দায়ী উচ্চ রক্তচাপ। আর উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্তদের (৩০-৭৯ বছর বয়সি) অর্ধেকই জানে না যে, তাদের উচ্চ রক্তচাপ রয়েছে। আক্রান্তদের মধ্যে চিকিৎসাসেবা গ্রহণের হার খুবই কম, মাত্র ৩৮ শতাংশ। নিয়মিত ওষুধ সেবনের মাধ্যমে রোগটি নিয়ন্ত্রণে রাখতে পেরেছে মাত্র ১৫ শতাংশ অর্থাৎ প্রতি সাতজনে একজন। এমনকি বিশ্বে প্রতিবছর দুই কোটিরও বেশি মানুষ হৃদরোগে
আক্রান্ত হয়ে মৃতু্যবরণ করে, যার অন্যতম কারণ উচ্চ রক্তচাপ।
চিকিৎসকরা বলেছেন, অনেক হার্ট বস্নক আছে, যা শুধু ওষুধ সেবনেই ভালো রাখা যায়। হৃদরোগ প্রতিকারের চেয়ে সবাইকে প্রতিরোধের দিকে বেশি গুরুত্ব দেওয়া উচিত। এ জন্য নিয়মিত ৩০ মিনিট হাঁটতে হবে। এ ছাড়া নিয়মিত ঘুম, লবণ না খাওয়া, স্ট্রেস না থাকা ও ধূমপান না করলে হৃদরোগ প্রতিরোধ করা সম্ভব।
জনস্বাস্থ্য ও হৃদরোগ বিশেষজ্ঞরা বলেন, হৃদরোগজনিত মৃতু্যর ৮০ ভাগ প্রতিরোধযোগ্য। কিন্তু বাংলাদেশে এই রোগে ঝুঁকি ও মৃতু্য ক্রমবর্ধমান হারে বাড়ছে। স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন, তৃণমূল পর্যায়ে উচ্চ রক্তচাপের ওষুধের সরবরাহ নিশ্চিত করা এবং এই খাতে সরকারি বাজেট বৃদ্ধির মাধ্যমে হৃদরোগ ঝুঁকি অনেকাংশেই মোকাবিলা সম্ভব।
বিশ্ব হার্ট দিবস ২০২৪ উপলক্ষে গবেষণা ও অ্যাডভোকেসি প্রতিষ্ঠান প্রজ্ঞা (প্রগতির জন্য জ্ঞান), গেস্নাবাল হেলথ অ্যাডভোকেসি ইনকিউবেটরের সহযোগিতায় আজ বেলা ১১টায় 'উচ্চ রক্তচাপ ও হৃদরোগ ঝুঁকি' শীর্ষক ওয়েবিনারের আয়োজন করেছে।
বিদ্যমান পরিস্থিতি এবং আমাদের করণীয় বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করতে ওয়েবিনারে যুক্ত থাকবেন জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের পরিচালক এবং স্বাস্থ্য খাত সংস্কার-বিষয়ক বিশেষজ্ঞ প্যানেলের সদস্যসচিব অধ্যাপক ডা. আব্দুলস্নাহ শাফি মজুমদার, ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশের ইপিডেমিওলজি অ্যান্ড রিসার্চ বিভাগের বিভাগীয় প্রধান, অধ্যাপক ডা. সোহেল রেজা চৌধুরী, পাবলিক হেলথ অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সভাপতি ডা. আবু জামিল ফয়সাল, সেন্টার ফর নন কমিউনিকেবল ডিজিজ অ্যান্ড নিউট্রিশনের পরিচালক অধ্যাপক ডা. মলয় কান্তি মৃধা, প্রজ্ঞার নির্বাহী পরিচালক এবিএম জুবায়েরসহ অন্যরা।