রোববার, ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১৩ আশ্বিন ১৪৩১

ইসরাইলি হামলায় হিজবুলস্নাহ প্রধান নাসরুলস্নাহ নিহত

১৯৯২ সালে মাত্র ৩২ বছর বয়সে হিজবুলস্নাহর প্রধান হন নাসরুলস্নাহ। এর আগে ইসরাইলের এক হেলিকপ্টার হামলায় নিহত হন তাঁর পূর্বসূরি আব্বাস আল-মুসাবি। হিজবুলস্নাহ প্রধানের দায়িত্ব নেওয়ার পর মুসাবি হত্যার প্রতিশোধ নেওয়াই ছিল হাসান নাসরুলস্নাহর প্রথম কাজ
যাযাদি ডেস্ক
  ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০০:০০
হাসান নাসরুলস্নাহ :১৯৬০-২০২৪

লেবাননের হিজবুলস্নাহর প্রধান হাসান নাসরুলস্নাহ ইসরাইলের বিমান হামলায় নিহত হয়েছেন বলে নিশ্চিত করেছে সংগঠনটি। এক বিবৃতিতে সংগঠনটি এ তথ্য জানায় বলে এএফপির খবরে বলা হয়।

বিবৃতিতে বলা হয়, 'হিজবুলস্নাহর সেক্রেটারি জেনারেল হাসান নাসরুলস্নাহ সংগঠনটির মহান ও অমর শহীদ কমরেডদের সঙ্গে যোগ দিয়েছেন; যাদের তিনি ৩০ বছর ধরে নেতৃত্ব দিয়েছেন।'

এর আগে এক এক্স বার্তায় ইসরাইলের সামরিক বাহিনীর পক্ষ থেকে লেবাননভিত্তিক শিয়া ইসলামপন্থি রাজনৈতিক দল ও সশস্ত্র সংগঠনের নেতা হাসান নাসরুলস্নাহ নিহত হয়েছেন বলে দাবি করা হয়েছিল। এতে বলা হয়, 'হাসান নাসরুলস্নাহ আর বিশ্বে সন্ত্রাসবাদ পরিচালনা করতে পারবেন না।'

রাজধানী বৈরুতসহ লেবাননের বিভিন্ন জায়গায় শুক্রবার রাতভর বিমান হামলা চালায় ইসরাইল। জানা যায়, ইরান-সমর্থিত হিজবুলস্নাহর কমান্ড সেন্টারে সংগঠনের নেতা হাসান নাসরুলস্নাহ ও অন্য নেতাদের লক্ষ্য করে হামলা চালানো হয়েছে। এরপরই হাসান নাসরুলস্নাহ নিহত হওয়ার খবর জানানো হয়।

তবে হামলায় হাসান নাসরুলস্নাহর ভাগ্যে কী ঘটেছে, তাৎক্ষণিকভাবে হিজবুলস্নাহ আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু জানায়নি, কোনো বিবৃতি দেয়নি।

হাসান নাসরুলস্নাহর (৬৪) জন্ম ১৯৬০ সালে। বেড়ে উঠেছেন বৈরুতের পূর্বাঞ্চলীয় উপকণ্ঠের বুর্জ হামুদ এলাকায়। বাবা আবদুল

করিম ছিলেন একজন সাধারণ সবজি বিক্রেতা। তাঁর ৯ সন্তানের মধ্যে নাসরুলস্নাহ ছিলেন সবার বড়।

১৯৭৫ সালে লেবানন গৃহযুদ্ধের মুখে পড়লে হাসান নাসরুলস্নাহ শিয়া মুভমেন্ট 'আমাল'-এ যোগ দেন। পরে ১৯৮২ সালে আরও কয়েকজনের সঙ্গে দলটি থেকে বেরিয়ে যান তিনি। ১৯৮৫ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে নিজেদের প্রতিষ্ঠার কথা জানায় হিজবুলস্নাহ। তাতে যোগ দেন হাসান নাসরুলস্নাহ।

হিজবুলস্নাহ শুরু থেকেই যুক্তরাষ্ট্র ও তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়নকে চিহ্নিত করে 'ইসলামের প্রধান দুই শত্রু' হিসেবে। সেই সঙ্গে ইহুদি রাষ্ট্র ইসরাইলকে ধ্বংস করার ডাক দেয় তারা। দেশটিকে আখ্যায়িত করে মুসলিমদের ভূমি দখলকারী হিসেবে।

১৯৯২ সালে মাত্র ৩২ বছর বয়সে হিজবুলস্নাহর প্রধান হন নাসরুলস্নাহ। এর আগে ইসরাইলের এক হেলিকপ্টার হামলায় নিহত হন তাঁর পূর্বসূরি আব্বাস আল-মুসাবি। হিজবুলস্নাহপ্রধানের দায়িত্ব নেওয়ার পর মুসাবি হত্যার প্রতিশোধ নেওয়াই ছিল হাসান নাসরুলস্নাহর প্রথম কাজ। সে অনুযায়ী ইসরাইলের উত্তরাঞ্চলে রকেট হামলার নির্দেশ দেন তিনি।

নাসরুলস্নাহ লেবাননের দক্ষিণে ইসরাইলি বাহিনীর সঙ্গেও তার যোদ্ধাদের লড়াইয়ে নেতৃত্ব দেন। একপর্যায়ে ২০০০ সালে সেখান থেকে পিছু হটে দেশে ফিরে যান ইসরাইলি সেনারা। তবে নাসরুলস্নাহর ব্যক্তিগত ক্ষতিও কম হয়নি। ইসরাইলি সেনাদের সঙ্গে লড়াইয়ে প্রাণ দিতে হয় তার বড় ছেলে হাদিকে।

নাসরুলস্নাহর নেতৃত্বে হিজবুলস্নাহ ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাসের যোদ্ধাদের পাশাপাশি ইরাক ও ইয়েমেনের মিলিশিয়াদের প্রশিক্ষণগত সহায়তা দিয়েছে। ইসরাইলের বিরুদ্ধে ব্যবহারের লক্ষ্যে ইরানের কাছ থেকে সংগ্রহ করা ক্ষেপণাস্ত্র ও রকেটের এক সমৃদ্ধ ভান্ডার রয়েছে হিজবুলস্নাহর।

দখলকৃত লেবাননি ভূখন্ড থেকে ইসরাইলি সেনাদের তাড়াতে প্রথমে একটি মিলিশিয়া দল হিসেবে গড়ে উঠেছিল হিজবুলস্নাহ। পরে এ দলকেই লেবাননের সেনাবাহিনীর চেয়ে শক্তিশালী এক বাহিনীতে রূপ দেন নাসরুলস্নাহ। সংগঠনটি এখন দেশের রাজনীতিতেও উলেস্নখযোগ্য প্রভাব বিস্তারকারী একটি শক্তি।

সর্বশেষ হিজবুলস্নাহ ইসরাইল উত্তেজনা বেড়ে যায় গত বছরের ৮ অক্টোবর থেকে। ওইদিন ইসরাইলের দক্ষিণাঞ্চলে হামাসের রকেট হামলার জের ধরে গাজায় নজিরবিহীন তান্ডব শুরু করে দেশটি। ফিলিস্তিনিদের প্রতি সংহতি প্রদর্শনের অংশ হিসেবে মাঝে মধ্যেই ইসরাইলের অভ্যন্তর ও দখলকৃত গোলান মালভূমি এলাকায় রকেট হামলা চালাচ্ছে হিজবুলস্নাহ।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে