সাভার ও আশুলিয়া শিল্পাঞ্চলে বন্ধ থাকা কারখানাসহ সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা কারখানাগুলো উৎপাদন মুখর হয়ে উঠেছে। বৃহস্পতিবার সকালে বৃষ্টির মধ্যেও অধিকাংশ তৈরি পোশাক কারখানায় উপস্থিত হয়ে উৎপাদন শুরু করেন শ্রমিকরা। তবে বকেয়া বেতনসহ অভ্যন্তরীণ কিছু সমস্যার কারণে এদিন ১৭টি কারখানা বন্ধ রয়েছে বলে জানিয়েছে শিল্প পুলিশ। এর আগেরদিন বুধবার ১৯টি কারখানায় উৎপাদন বন্ধ ছিল।
টানা আন্দোলনের পর মালিকপক্ষ শ্রমিকদের ১৮ দফা দাবি মেনে নেওয়ায় গত দুই দিনে কারখানাগুলোতে স্বাভাবিক উৎপাদন শুরু হয়েছে। এর ফলে দীর্ঘদিন পর প্রাণ ফিরেছে শিল্পাঞ্চল আশুলিয়ায়। বৃহস্পতিবার সকালে ডিইপিজেডসহ শিল্পাঞ্চলের বাইপাইল-আব্দুলস্নাহপুর সড়কের উভয়পাশে বন্ধ থাকা প্রায় অর্ধশতাধিক কারখানায় শ্রমিকরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে কাজে যোগ দিলেও বকেয়া বেতনসহ আরও কিছু সমস্যার কারণে ১৭টি কারখানায় উৎপাদন বন্ধ রয়েছে। এর মধ্যে শ্রম আইনের ১৩(১) ধারায় ৯টি কারখানা অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ এবং ৮টি কারখানায় সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে।
শিল্পাঞ্চলের বাইপাইল, জামগড়া, নরসিংহপুর, জিরাবোসহ বিভিন্ন এলাকায় খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রতিটি তৈরি পোশাক কারখানার নিরাপত্তায় রয়েছেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। সকাল থেকে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে মোতায়েন রয়েছে শিল্প পুলিশ,র্ যাব, বিজিবিসহ সেনাবাহিনীর সদস্যরা। তবে সকাল থেকেই আশুলিয়ার টঙ্গাবাড়ী এলাকার গ্রীন লাইফ কারখানার দুই হাজার ৬০০ শ্রমিক দাবি আদায়ের কর্মবিরতি শুরু করেন। একই দাবিতে জামগড়া এলাকার ফ্যাশন ফোরামের সাড়ে চার হাজার শ্রমিক কর্মবিরতি পালন করেছেন। যেকোনো ধরনের সহিংসতা এড়াতে শিল্পাঞ্চল ঘিরে রয়েছে যৌথবাহিনীর সমন্বয়ে পুলিশ, আর্মড পুলিশ, শিল্প পুলিশ, বিজিবি, র?্যাব ও সেনা সদস্যদের তৎপরতা।
বাংলাদেশ গার্মেন্ট ও সোয়েটার্স শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের আইনবিষয়ক সম্পাদক খায়রুল মামুন মিন্টু বলেন, 'অধিকাংশ পোশাক কারখানায় শ্রমিকরা উৎপাদনে যোগ দেওয়ায় শিল্পাঞ্চল তার প্রাণ ফিরে পেয়েছে। তবে বকেয়া বেতনসহ কিছু কারখানায় দাবি নিয়ে সমস্যার সমাধান হয়নি। মালিকপক্ষ ও শ্রমিকপক্ষ আলোচনার মাধ্যমে দ্রম্নত সমাধানের জন্য যোগাযোগ করা হচ্ছে বলে জানান তিনি।'
কারখানা কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, সময়মতো রপ্তানি পণ্য পাঠাতে চলছে তোড়জোড়। ওভারটাইমের ক্ষেত্রেও মানা হচ্ছে শ্রম আইন। অন্যদিকে, কারখানায় হামলা-ভাঙচুরসহ বেশকিছু গুরুতর অভিযোগে আশুলিয়ার অনন্ত গার্মেন্টস ও অনন্ত স্পোর্টস ওয়্যার কারখানার ১২০ শ্রমিককে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে শ্রমিক সংগঠনগুলোর মধ্যে বিরাজ করছে চাপা উত্তেজনা।
যৌথ ঘোষণায় শ্রমিকদের ছাঁটাই করা হবে না মর্মে সিদ্ধান্ত নেওয়ার পরও তা না মানা দুঃখজনক বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ গার্মেন্টস অ্যান্ড সোয়েটার শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের আইনবিষয়ক সম্পাদক খায়রুল মামুন মিন্টু।
অনন্ত গার্মেন্টসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এনামুল হক খান জানান, গত প্রায় তিন সপ্তাহ শ্রমিকরা হাজিরা দিয়ে কাজ বন্ধ রেখে আন্দোলন করায় ৭০ কোটি টাকার মতো লোকসান হয়েছে। আন্দোলনকারী ওই শ্রমিকদের ভিডিও ফুটেজ দেখে শনাক্ত করার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, কেউ নিজেদের নির্দোষ প্রমাণ করতে পারলে তাকে চাকরিতে পুনর্বহাল করা হবে।
আশুলিয়া শিল্প পুলিশ-১ এর পুলিশ সুপার সারোয়ার আলম বলেন, 'বৃহস্পতিবার সকাল থেকে শিল্পাঞ্চলের প্রায় সব কারখানাতেই স্বাভাবিক উৎপাদন শুরু হয়েছে। তবে শ্রম আইনের ১৩ (১) ধারায় ৯টি কারখানা অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ রয়েছে। এছাড়া আরও ৮টি কারখানায় সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। বিভিন্ন কারণে এসব কারখানাগুলো বন্ধ রয়েছে। সাধারণ ছুটি ঘোষণা হওয়া ৮টি কারখানার ৫টিতেই মালিকপক্ষ শ্রমিকদের বেতন পরিশোধ করতে পারছে না। অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা হওয়া ৯টি কারখানার মধ্যে ২টি নন আরএমজি ফ্যাক্টরি। আর বাকিগুলোর মধ্যে ২টিতে শ্রমিকদের বেতন পরিশোধ করতে পারছে না বলে জানান এই পুলিশ কর্মকর্তা।'
গাজীপুরে বন্ধ ৯ কারখানা
এদিকে, শিল্পাঞ্চল গাজীপুরের কোনো কারখানায় বৃহস্পতিবার শ্রমিকদের বিক্ষোভের খবর পাওয়া যায়নি। বন্ধ কারখানাগুলোর মধ্যে এদিন খুলে দেওয়া হয়েছে ৫টি। এসব কারখানায় কাজে ফিরেছেন শ্রমিকরা। তবে বন্ধ ছিল ৯ কারখানা। এগুলোও শিগগিরই খুলে দেওয়া হবে বলে জানিয়েছে কারখানা কর্তৃপক্ষ ও শিল্প পুলিশ।
শিল্প পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, গাজীপুরে মোট নিবন্ধিত কারখানা আছে ২ হাজার ৬৩৩টি। এর বাইরে অনিবন্ধিত কারখানা আছে ৪০০ থেকে ৫০০টি। এসব কারখানায় শ্রমিক হিসেবে কাজ করেন প্রায় ২২ লাখ মানুষ। এসব শ্রমিকের ১৮ দফা দাবি বাস্তবায়নে রাজি হয়েছে মালিকপক্ষ। ফলে বিক্ষোভ-প্রতিবাদসহ অন্য কর্মসূচি বন্ধ করে অধিকাংশ কারখানায় কাজে ফিরেছেন শ্রমিকরা। তবে বুধবার মহানগরীর ছয়দানা এলাকায় ফুল এভার বিডি লিমিটেড নামে একটি পোশাক কারখানায় বকেয়া বেতনের দাবিতে বিক্ষোভ করেন শ্রমিকরা। দাবি পূরণের আশ্বাসে বিক্ষোভ তুলে নেওয়া হয়।
গাজীপুর শিল্পাঞ্চল-২-এর টঙ্গী জোনের সহকারী পুলিশ সুপার মোশাররফ হোসেন বলেন, 'আজ (বৃহস্পতিবার) সকাল সাড়ে ১০টা পর্যন্ত জেলার কোথাও শ্রমিক অসন্তোষের খবর পাওয়া যায়নি। ৯টি কারখানা বন্ধ আছে। সেগুলোও দু-এক দিনের মধ্যে খুলে দেওয়া হতে পারে। কারখানাগুলোর নিরাপত্তা রক্ষায় শিল্প পুলিশের পাশাপাশি কাজ করছেন বিজিবি ও সেনা সদস্যরাও।'