দিনভর বৃষ্টিতে জলাবদ্ধতার ভোগান্তি

বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট লঘুচাপের কারণে অঝরে ঝরেছে বৃষ্টি। তবে বৃহস্পতিবার বৃষ্টিপাতের পরিমাণ বেশ বেড়েছে। এ পরিস্থিতি আরও দুই দিন থাকতে পারে

প্রকাশ | ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০০:০০

যাযাদি রিপোর্ট
বুধবার রাত থেকে টানা বৃষ্টিতে রাজধানীর বিভিন্ন সড়কে দেখা দেয় জলাবদ্ধতা। ছবিটি বৃহস্পতিবার নিউমার্কেট এলাকা থেকে তোলা -নাজমুল ইসলাম
সকাল থেকে দিনভর মাঝারি থেকে ভারী বর্ষণে তলিয়েছে রাজধানী ঢাকার বেশিরভাগ রাস্তাঘাট। পানি নিষ্কাষণের সুষ্ঠু ব্যবস্থা না থাকায় দেখা দেয় জলাবদ্ধতা। এতে অলিগলি থেকে শুরু করে বেশিরভাগ সড়কে সৃষ্টি হয় ভয়াবহ যানজট। চরম দুর্ভোগে পড়েন কর্মজীবী মানুষ। এদিকে টানা বৃষ্টিতে আবারও নোয়াখালীতে বন্যা ও জলাবদ্ধতা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। জেলার বানভাসি মানুষ নতুন করে দুশ্চিন্তায় পড়েছে। জেলায় এখনো প্রায় ১২ লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে আছে। জেলার সদর, বেগমগঞ্জ, সেনবাগ, সোনাইমুড়ী ও চাটখিল উপজেলার অনেক এলাকা এখনো পানিতে নিমজ্জিত। অন্যদিকে বিরামহীন বৃষ্টিতে খুলনার জনজীবনও বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে। গত বুধবার দুপুর থেকে কখনো ঝিরিঝিরি, কখনো হালকা আবার কখনো মুষলধারে বৃষ্টি হওয়ায় নগরীর রাস্তাঘাটের পাশাপাশি নিম্নাঞ্চলের বাসাবাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানও তলিয়ে গেছে। জলাবদ্ধতায় বেড়েছে নগরবাসীর দুর্ভোগ। আবহাওয়া অধিদপ্তর বলছে, বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট লঘুচাপের কারণে মঙ্গলবার থেকে অঝরে ঝরেছে বৃষ্টি। তবে গত দু'দিনের তুলনায় বৃহস্পতিবার বৃষ্টিপাতের পরিমাণ বেশখানিকটা বেড়েছে। এমন পরিস্থিতি আরও দুই দিন থাকতে পারে। রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, দুপুরের পর থেকে বিভিন্ন সড়কে শুরু হয় যানজট। বিশেষ করে মতিঝিল, যাত্রাবাড়ী, কাকরাইল, গুলিস্তান, শান্তিনগর, মৌচাক, বাড্ডা, বনানী, ফার্মগেট, শাহবাগ, মিরপুর রোডে যানবাহনের দীর্ঘ সারি জমে ওঠে। এসব সড়কে ২০/২৫ মিনিটের পথ পাড়ি দিতে এক থেকে দেড় ঘণ্টা পেরিয়ে যায়। আর যেসব সড়কে বৃষ্টির পানি জমে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে সেখানে সিএনজি অটোরিকশা ও মোটরসাইকেলসহ বিপুলসংখ্যক ছোট যানবাহন মাঝরাস্তায় বিকল হওয়ায় যানজটের ভোগান্তি আরও বেড়েছে। কাকরাইল মোড়ে ভিক্টর পরিবহণের চালক কলিম শেখ জানান, বৃষ্টির কারণে যাত্রী কমলেও যানজট বেড়েছে। অন্য দিনগুলোর চেয়ে আজ গন্তব্যে পৌঁছতে বেশি সময় লাগছে। স্বাভাবিক সময়ে দিনে চার থেকে পাঁচ ট্রিপ দেওয়া গেলে, এখন তিন ট্রিপ দেওয়াই কঠিন হয়ে পড়েছে। সিএনজি আটোরিকশার চালক আলম বলেন, 'ইঞ্জিনে পানি ঢুকে সিএনজি অটোরিকশার ইঞ্জিন বিকল হয়ে গেছে। এক ঘণ্টা ধরে কাকরাইল মোড়ে দাঁড়িয়ে আছি। বৃষ্টি কমলে এটা টেনে গ্যারেজে নিয়ে যাব। গাড়ি ঠিক করতে সেখানে কত সময় লাগবে আলস্নাহই জানেন।' গাড়ি ভাড়া উঠবে কিনা তা নিয়ে শঙ্কায় রয়েছেন এই অটোরিকশা চালক। একই অবস্থা দেখা গেছে হাতিরঝিলের মধুবাগ লিংক রোডে। সেখানে জমে থাকায় রাস্তায় সিএনজি অটোরিকশা চালক হাতেম আলীসহ আরও তিনজনের গাড়ির ইঞ্জিন বিকল হয়ে গেছে। তারা রাস্তার এক পাশে গাড়ি দাঁড় করিয়ে নিজেরাই তা মেরামত করার চেষ্টা করছেন। তবে ইঞ্জিনে পানি ঢুকে যাওয়ায় গাড়ি স্টার্ট নিচ্ছে না। এদিকে বিকল এসব গাড়ির জন্য গোটা রাস্তায় দীর্ঘ যানজট সৃষ্টি হয়েছে। ট্রাফিক পুলিশের পাশাপাশি স্থানীয় কয়েকজন যুবক প্রাণবন্ত চেষ্টা করেও যানজট নিরসনে ব্যর্থ হচ্ছেন। তবে বৃহস্পতিবার সারাদিন রিকশাওয়ালাদের ইনকাম ভালোই ছিল। বেশ কয়েকজন রিকশাওয়ালার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, অন্যদিনের তুলনায় তারা ৩/৪শ' টাকা বেশি আয় করেছেন। তবে দীর্ঘ সময় বৃষ্টিতে ভেজায় জ্বরে আক্রান্ত হবেন কিনা তা নিয়ে শঙ্কায় রয়েছেন। রবিউল নামে এক রিকশাচালক বলেন, আগে রামপুরা থেকে শান্তিনগর পর্যন্ত একশ' টাকা ভাড়া চাইলে যাত্রীরা গালাগাল করতো। কখনও কখনও গায়ে হাত তুলতে আসতো। কিন্তু আজ দেড়শ' টাকা ভাড়া চাইলেও অনেকে লাফ দিয়ে রিকশায় উঠে বসছে।' এই রিকশাচালকের ভাষ্য, বৃহস্পতিবার খ্যাপ কম থাকলেও ইনকাম বেশি হয়েছে। তবে বেশিরভাগ চালক আধাবেলার বেশি রিকশা চালায়নি। রাজধানীর মহাখালী, সাতরাস্তা, মালিবাগ, গুলশানসহ বিভিন্ন এলাকার মানুষকে অফিসে যাওয়ার পথে ভোগান্তিতে পড়তে দেখা গেছে। এর মধ্যে শফিকুল আলম নামে একজন চাকরিজীবী বলেন, 'সকাল থেকে বৃষ্টি, বাসেই উঠতে পারছিলাম না। তবে নির্ধারিত সময়ে অফিসে যেতে না পারলে বেতন কাটা যাবে তাই যাত্রীতে ঠাসা বাসেই কষ্ট করে উঠে পড়েছি। কিন্তু রাস্তায় যে যানজট, কখন অফিসে পৌঁছাতে পারবো বুঝতে পারছি না। কামাল হোসেন নামে এক মোটরপার্টস ব্যবসায়ী বলেন, মিরপুর থেকে পুরনো ঢাকার বংশালের দোকানে যেতে তার স্বাভাবিক দিনে বাসে ঘণ্টাখানেক সময় লাগে। কিন্তু আজ দেড় ঘণ্টাতেও অর্ধেক পথ পাড়ি দিতে পারেননি। অন্য সময় হলে এই বৃষ্টিতে তিনি দোকানে যেতেন না। কিন্তু যশোর থেকে একজন বড় ক্রেতা মাল নিতে এসেছে। তাই কষ্ট করে হলেও দোকানে যাচ্ছেন। ওই ব্যবসায়ীর ভাষ্য, বৃষ্টির পানি জমে বেশিরভাগ রাস্তায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। এ কারণেই বেশি যানজট। এছাড়া বৃষ্টির কারণে ট্রাফিক পুলিশও ঠিকমত দায়িত্ব পালন করছে না বলেও অভিযোগ করেন তিনি। এদিকে বৃষ্টিতে তলিয়ে যাওয়া সড়কের ছবি ও ভিডিওর সঙ্গে নানা ধরনের ভোগান্তির চিত্র তুলে ধরে ফেসবুকে পোস্ট দেন অনেকে। এ রকম একটি পোস্টে মাহমুদ সুজন নামের একজন জলাবদ্ধতার ছবি দিয়ে লেখেন, 'শান্তিনগর হয়ে উঠেছে বুড়িগঙ্গা নদী।' তার দেওয়া ছবির নিচে একজন লিখেছেন, 'শাহজাহানপুরেরও একই অবস্থা'। এনামুল হক নামে আরেকজন ফেসবুকে মিরপুর এলাকার ছবি দিয়ে লিখেছেন 'ভেনিস, মিরপুর ব্রাঞ্চ'। নিউমার্কেট এলাকায় ডুবে যাওয়া সড়কে এক পথশিশুর সাঁতার কাটার ছবি দিয়ে একজন লিখেছেন, 'এ বছর আর কক্সবাজার যাব না। বেঁচে থাকলে আগামী বছর...।' অথচ ভারী বৃষ্টিতেও ঢাকায় যাতে জলাবদ্ধতা না হয় সে জন্য ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন গত চার বছরে বিভিন্ন প্রকল্পের মাধ্যমে খরচ করেছে প্রায় ৩৬০ কোটি টাকা। দক্ষিণ সিটির প্রকৌশল বিভাগ সূত্র এটি নিশ্চিত করেছে। অন্যদিকে ঢাকা উত্তর সিটির প্রকৌশল বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, জলাবদ্ধতা নিরসনে চার বছরে খরচ করা হয়েছে প্রায় ৩৭০ কোটি টাকা। দুই সিটির প্রকৌশল বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, আগের চেয়ে ঢাকার জলাবদ্ধতা পরিস্থিতির অনেক উন্নতি হয়েছে। আরও উন্নতির জন্য মানুষকেও সচেতন হতে হবে। কারণ, পলিথিনজাতীয় বর্জ্য নির্বিচারে নর্দমা ও খালে ফেলা হয়। তবে নগর পরিকল্পনাবিদরা বলছেন, জলাবদ্ধতার ভোগান্তি কমাতে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের কার্যক্রমে সমন্বিত পরিকল্পনার অভাব সুস্পষ্ট, বৃহস্পতিবার ঘটনা তা আবারও প্রমাণ করল। দুই সিটি যা করছে তা সাময়িক ব্যবস্থা। ঢাকার ড্রেনেজ ব্যবস্থাপনা নিয়ে করা মহাপরিকল্পনাকে গুরুত্ব না দিয়ে শুধু টাকা খরচ করছে তারা। দীর্ঘমেয়াদি উদ্যোগ ছাড়া ঢাকার জলাবদ্ধতার সমাধান হবে না। বৃহস্পতিবার আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, রংপুর, রাজশাহী, ঢাকা, ময়মনসিংহ, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের অধিকাংশ জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি/বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেইসঙ্গে দেশের কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারী থেকে অতি ভারী বর্ষণ হতে পারে। এ সময় সারাদেশে দিন এবং রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে। এই পরিস্থিতি শুক্রবারও অব্যাহত থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। আর শনিবার রংপুর, ময়মনসিংহ, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের কিছু কিছু জায়গায় এবং রাজশাহী, ঢাকা, খুলনা ও বরিশাল বিভাগের দুয়েক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি/বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেইসঙ্গে দেশের কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারী বর্ষণ হতে পারে। ওই দিনও সারাদেশে দিন ও রাতের তাপমাত্রা সামান্য বাড়তে পারে। তবে বর্ধিত ৫ দিনের আবহাওয়ার অবস্থা বলছে, শেষের দিকে বৃষ্টিপাতের প্রবণতা বাড়তে পারে। আবহাওয়াবিদ ড. মুহাম্মদ আবুল কালাম মলিস্নক বলেন, 'পশ্চিম-মধ্য বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন উত্তর-পশ্চিম বঙ্গোপসাগর এলাকায় অবস্থানরত লঘুচাপটি পশ্চিম উত্তর-পশ্চিম দিকে অগ্রসর হয়ে গুরুত্বহীন হয়ে পড়েছে এবং মৌসুমি অক্ষের সঙ্গে মিলিত হয়েছে। মৌসুমি বায়ুর অক্ষের বর্ধিতাংশ মধ্য প্রদেশ, ওড়িশা, গাঙ্গের পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশ হয়ে আসাম পর্যন্ত বিস্তৃত হয়েছে। এর একটি বর্ধিতাংশ উত্তর বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত বিস্তৃত হয়েছে।' তিনি জানান, মৌসুমি বায়ু বাংলাদেশের ওপর সক্রিয় এবং উত্তর বঙ্গোপসাগরে মাঝারি থেকে প্রবল অবস্থায় হয়েছে। যে কারণে রাজশাহী, পাবনা, বগুড়া, টাঙ্গাইল, ঢাকা, ফরিদপুর, মাদারীপুর, খুলনা, কুষ্টিয়া, যশোর, বরিশাল, পাটুয়াখালী, নোয়াখালী, কুমিলস্না, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার এবং সিলেট অঞ্চলগুলোর ওপর দিয়ে দক্ষিণ/দক্ষিণ-পূর্ব দিক থেকে ঘণ্টায় ৪৫-৬০ কিলোমিটার বেগে বৃষ্টি/বজ্রবৃষ্টিসহ অস্থায়ীভাবে ঝড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে। এসব এলাকার নদীবন্দরগুলোকে ১ নম্বর (পুন.) ১ নম্বর সতর্ক সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। তবে সমুদ্র বন্দরগুলোকে দেওয়া পূর্বাভাসে বলা হয়েছে উত্তর বঙ্গোপসাগর এবং তৎসংলগ্ন বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকায় ঝড়ো হাওয়া বয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা নেই। সেজন্য চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মোংলা ও পায়রা সমুদ্র বন্দরগুলোকে সংকেত নামিয়ে ফেলতে বলা হয়েছে। এদিকে নোয়াখালীর জেলা আবহাওয়া কার্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. রফিকুল ইসলাম বৃহস্পতিবার বলেন, গত দুই দিনের টানা বৃষ্টিতে নোয়খালীতে পানি আবারও বেড়ে গেছে। আগামী কয়েক দিন বজ্রসহ বৃষ্টির আভাস রয়েছে। স্থানীয় সূত্রগুলো জানায়, বৈরী আবহাওয়ার কবলে পড়ে টানা বৃষ্টির কারণে সেখানের জনজীবনে স্থবিরতা নেমে এসেছে। অফিসগামী বা জীবিকার তাগিদে নিম্ন আয়ের শ্রমজীবী ছাড়া তেমন কেউ ঘর থেকে বের হননি। টানা বৃষ্টিতে বিভিন্ন জায়গায় পানি জমে জলাবদ্ধতা বেড়েছে। নিম্নাঞ্চলে বন্যা ও জলাবদ্ধতা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা ভেঙে পড়ায় জলাবদ্ধতার পানি নামছে না। নতুন করে বৃষ্টি হওয়ায় ভোগান্তি আরও বেড়েছে। সদর উপজেলার নেওয়াজপুর গ্রামের শাকের আহমেদ বলেন, 'আমাদের এলাকায় পূর্বের বন্যার পানি তেমন নামেনি। সর্বত্রই হাঁটু বা তার চেয়ে একটু কম পরিমাণ পানি রয়েছে। তার ওপর আবার টানা বৃষ্টিতে পানি বেড়ে গেছে। জনজীবন স্বাভাবিক না। রাস্তার অবস্থাও তেমন ভালো না। যানবাহন চলাচল করে না। ফলে পানির সঙ্গে যুদ্ধ করে আমাদের চলতে হচ্ছে।' কাদির হানিফ ইউনিয়নের মুস্তাফিজুর রহমান বলেন, 'পানি আবারও বাড়ছে। পানি নামার রাস্তা বন্ধ। টানা সৃষ্টি হওয়ায় সব ধরনের কাজ বন্ধ। জনজীবন একেবারে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে।' পূর্ব লক্ষ্ণীণারায়নপুর গ্রামের রুস্তম আলী বলেন, 'আমরা শহর থেকে মাত্র দুই কিলোমিটার দূরে থাকি। কিন্তু মনে হয় আমরা কোনো এক অজপাড়া গ্রামে বা চরাঞ্চলে বসবাস করছি। আশ্রয়কেন্দ্র থেকে আসার পরে থেকে পানির সঙ্গে যুদ্ধ করছি। আজ একটু কমে, কাল আবারও বৃষ্টি হলে বাড়ে। ঘরবাড়ি বসবাসের অনুপযোগী। রান্নার সমস্যা হচ্ছে। নিম্ন আয়ের মানুষ, তাই গ্যাস সিলিন্ডার ব্যবহারের সামর্থ্য নেই।' বেগমগঞ্জ উপজেলার মিজানুর রহমান বলেন, গত বেশ কিছু পানি কমে ছিল। আবারও অবিরাম বৃষ্টিতে রাস্তা ও বাড়ি পানিতে তলিয়ে গেছে। বৃষ্টির পানিতে তলিয়ে গেছে খুলনা নগরীর ব্যস্ততম রয়্যাল মোড় সড়ক। বৃষ্টির পানিতে তলিয়ে গেছে খুলনা নগরীর ব্যস্ততম রয়্যাল মোড় সড়ক। এদিকে খুলনায় বিরামহীন বৃষ্টিতে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। বিরামহীন বৃষ্টির কারণে শ্রমজীবী মানুষ কাজের জন্য ঘর থেকে বের হতে পারছেন না। আবার অনেকে বের হলেও কাজ মিলছে না। ফলে তাদের পরিবারে চরম সংকট দেখা দিয়েছে। স্থানীয় সূত্রগুলো জানায়, নগরীর রয়্যাল মোড়, পিটিআই মোড়, স্যার ইকবাল রোডের বাইতিপাড়া এলাকা, সাতরাস্তা মোড়, বড় মির্জাপুর, টুটপাড়া, বয়রা, মুজগুন্নি, রায়েরমহলসহ বিভিন্ন এলাকা বৃষ্টির পানিতে তলিয়ে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। সড়ক তলিয়ে যাওয়ার কারণে যানবাহন চলাচলে চরম দুর্ভোগ সৃষ্টি হয়। নগরীর বয়রা এলাকার বাসিন্দা জাহিদুল ইসলাম বাপ্পী বলেন, একটু বৃষ্টি হলেই খুলনা মহানগরীর রাস্তাঘাট পানিতে ডুবে যায়। বিগত সরকারের আমলে ড্রেনের কিছু উন্নয়নমূলক কাজ হলেও তাতে কোনো কাজ হয়নি। একটু বৃষ্টি হলেই ড্রেন উপচে রাস্তা ডুবে যায়। এদিকে সারাদেশের মতো নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজারেও মঙ্গলবার থেকে শুরু হয়েছে থেমে থেমে ভারী বর্ষণ। ফলে অনেকেই দোকানপাট খুলতে পারছেন না আড়াইহাজার পৌর বাজারে। বুধবার রাত থেকে বৃহস্পতিবার এ রিপোর্ট লিখা পর্যন্ত ভারী বর্ষণের ফলে বাজারের বিভিন্ন গলিতে সৃষ্টি হয়েছে জলাবদ্ধতা। নারায়ণগঞ্জের মধ্যে আড়াইহাজারের প্রধান অর্থনৈতিক কর্মকান্ড শিল্পভিত্তিক এলাকা না হলেও এখানে অনেক সাইজিং ও টেক্সটাইল মিল রয়েছে। থেমে থেমে ভারী বৃষ্টি ও ঘন ঘন হচ্ছে বিদু্যৎ বিভ্রাট। ফলে কলকারখানায় উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। অনেক শ্রমিক কাজে যোগদান করতে পারনি। অপরদিকে পৌরবাজারের অধিকাংশ দোকানপাট রয়েছে বন্ধ। কোনো কোনো দোকানের ভেতরে বৃষ্টির পানি প্রবেশ করেছে। বাজারের হাজী আব্বাস আলী সুপার মার্কেটের একটি গলিতে গিয়ে এমনি অবস্থা দেখা গেছে। কাঁচাবাজারের প্রবেশ পথেরও একই অবস্থা। প্রধান সড়ক থেকে সুবেদ আলী মার্কেটের প্রবেশ গলিতেও বৃষ্টির পানি জমে লোকজনের চলাচলে বাধার সৃষ্টি হচ্ছে। অফিসগুলোতে লোকজনের উপস্থিতি কম লক্ষ্য করা গেছে। হাসপাতালে সেবা নিতে আসা লোকজনের ভিড়ও ছিল কম। অন্যদিকে নীলফামারী জেলার ছয়টি উপজেলায় ভোর থেকেই থেমে থেমে ঝরছে আশ্বিনের বৃষ্টি। কখনো মুষলধারে কখনো ঝিরিঝিরি। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন কর্মজীবী ও খেটে খাওয়া মানুষ। সড়ক ও অলিগলিতে দেখা দিয়েছে জলাবদ্ধতা। বৃহস্পতিবার ভোর থেকে শুরু হয় এই বৃষ্টি। সকালে কর্মজীবী মানুষ রাস্তায় নামলে এমন ভোগান্তির শিকার হন। আর এই সুযোগে রিকশা-সিএনজিগুলোতে বাড়তি ভাড়া হাঁকতে দেখা গেছে। নীলফামারী শহরের সরকারি চাকরিজীবী মো. সাদেক আনোয়ার বলেন, 'সকাল থেকে বৃষ্টি, বাসেই উঠতে পারছিলাম না। ঠাসাঠাসি করে খুব ভোগান্তি নিয়ে অফিসে এলাম। পানি উন্নয়ন বোর্ড ডালিয়া সূত্রে জানা গেছে, ডালিয়া পয়েন্টে তিস্তা নদীর পানি বিপৎসীমার ৬৫ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ৪৪টি গেট খোলা রয়েছে। স্বাভাবিক গতিতে তিস্তার পানি প্রবাহিত হচ্ছে। এছাড়া নীলফামারীর ছোট-বড় নদীগুলোতেও পানি স্বাভাবিক রয়েছে। সৈয়দপুর আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্য মতে, গত ২৪ ঘণ্টায় বৃষ্টি সর্বোচ্চ রেকর্ড করা হয়েছে ৩৩ মিলিমিটার, গতকাল (আজ) ভোর ৬টা থেকে এ পর্যন্ত ৯১ মিলিমিটার বৃষ্টির পরিমাণ রেকর্ড করা হয়েছে।