জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণসহ সক্ষমতা বাড়ানোর পাশাপাশি বিদেশে পাচার হওয়া অর্থ ফেরাতে সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছে বিশ্বব্যাংক।
সিঙ্গাপুর, আরব আমিরাত, যুক্তরাজ্যসহ যেসব দেশে বাংলাদেশ থেকে অর্থ পাচারের বিষয় সামনে আসছে, সেসব দেশ যেহেতু বিশ্বব্যাংকের সিগনেটরি, তাই উন্নয়ন সহযোগী এ সংস্থার কাছে দালিলিক প্রমাণাদি সংগ্রহ, বিশ্লেষণ ও অর্থ উদ্ধারের সয ধরনের সহযোগিতা চেয়েছে এনবিআর।
বৃহস্পতিবার আগারগাঁওয়ের রাজস্ব ভবনে এনবিআরের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সেলের (সিআইসি) সঙ্গে বিশ্বব্যাংক কর্মকর্তাদের বৈঠকে এ বিষয়ে আলোচনা হয়।
বিশ্বব্যাংকের এসটিএআর লিড ফাইন্যান্সিয়াল সেক্টর স্পেশালিস্ট এমিল জোহানেস মারি ভ্যান ডের ডেস ডি উইলেবোইস ও সোফি ডং অর্থ ফেরাতে সব ধরনের সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন সিআইসির পরিচালক মো. মাসুদুর রহমান মাসুদ।
তিনি বলেন, 'এমিল মূলত স্টোলেন অ্যাসেট রিকভারি এক্সপার্ট। তিনি আশ্বস্ত করেছেন, দ্রম্নতই ট্যাক্স রিকভারি নিয়ে যিনি বিশ্বব্যাংকে কাজ করছেন, তিনি আমাদের সঙ্গে বসবেন।'
এ সময় তিনি প্রশিক্ষণের মাধ্যমের সক্ষমতা বৃদ্ধি, সিআইসির ফরেনসিক ল্যাব সচল করাসহ কয়েকটি ক্ষেত্রে বিশ্বব্যাংকের সহযোগিতার আশ্বাস পাওয়ার কথাও বলেন। বর্তমানে সিআইসির ফরেনসিক ল্যাবে কোনো কর্মকর্তা না থাকায় অচল পড়ে আছে।
মাসুদুর রহমান বলেন, 'আমরা অনেক সময় শুনি, অমুকের এই আছে, ওই আছে। কিন্তু সুস্পষ্ট প্রমাণ ছাড়া কাজ করতে পারি না। বিদেশে পাচার হওয়া অর্থ পুনরুদ্ধারে এটি আরও বেশি দেখা যায়। সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, দুবাই, যুক্তরাষ্ট্রসহ যেসব দেশের নাম অর্থ পাচারের দেশের তালিকায় আছে, তারাও বাংলাদেশের মতো বিশ্বব্যাংকে সিগনেটরি। আমরা বলেছি, আমরা বিশ্বব্যাংকের সহযোগিতা চাই। আমরা সেসব দেশ থেকে অর্থ পেতে চাই।'
এর আগে, মঙ্গলবার দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) কর্মকর্তাদের সঙ্গেও একইরকম সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছিল বিশ্বব্যাংক।
সেই বিষয়ে তখন দুদকের মহাপরিচালক (প্রতিরোধ) মো. আক্তার হোসেন সাংবাদিকদের বলেছিলেন, 'যেসব দেশে আমাদের অর্থ পাচার হয়ে থাকে, সেসব দেশ থেকে দালিলিক প্রমাণাদি সংগ্রহের ক্ষেত্রে কীভাবে তারা আমাদের সহযোগিতা করতে পারে, সে বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। তারা জানিয়েছে, দালিলিক প্রমাণাদি সংগ্রহ করা এক ধরনের চলমান প্রক্রিয়া। সংশ্লিষ্ট দেশের সহযোগিতা ছাড়া আসলে এ ধরনের প্রমাণাদি সংগ্রহ করা কঠিন।'
তিনি আরও বলেন, 'তবে যেসব দেশে অর্থ পাচার হয়েছে, পাচার করা অর্থ পুনরুদ্ধারের ক্ষেত্রে ওই সব দেশের সংশ্লিষ্ট আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সঙ্গে কথা বলে এ বিষয়ে কীভাবে সহযোগিতা করা যায় সে বিষয়ে তারা (বিশ্বব্যাংক) আলোচনা করবে। তারা আমাদের আশ্বস্ত করেছে যোগাযোগ অব্যাহত রেখে আমাদের সহযোগিতা করার বিষয়ে।'
বলা হয়, বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের শাসনামলে বিপুল অর্থ বিদেশে পাচার হয়েছে, তবে সেই অর্থের পরিমাণ কত, তার সুনির্দিষ্ট কোনো হিসাব নেই।
ওয়াশিংটনভিত্তিক গবেষণা সংস্থা গেস্নাবাল ফাইন্যান্সিয়াল ইনটেগ্রিটির (জিএফআই) তথ্য বলছে, বাংলাদেশ থেকে গড়ে প্রতি বছর ৭৫৩ কোটি ৩৭ লাখ ডলার বা ৮০ হাজার কোটি টাকা পাচার হয়েছে।
কেবল ব্যক্তি নয়, অর্থ পাচার প্রক্রিয়ায় পরোক্ষভাবে যুক্ত হয়েছে দেশের একাধিক আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও ব্যাংক।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) হিসাব বলছে, গত প্রায় দেড় যুগে দেশীয় ১৯টি ব্যাংকের মাত্র ২৪টি ঋণ কেলেঙ্কারির মাধ্যমেই প্রায় একশ' হাজার কোটি টাকা বিশ্বের বিভিন্ন দেশে পাচার হয়েছে।