নিরাপত্তার দায়িত্ব নেবে না বিসিবি

টেস্ট ও টি-টোয়েন্টি থেকে অবসরের ঘোষণা সাকিবের

প্রকাশ | ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০০:০০

যাযাদি ডেস্ক
ভারতের কানপুরে সংবাদ সম্মেলনে বৃহস্পতিবার টেস্ট ও টি-টোয়েন্টি থেকে অবসরের ঘোষণা দেন বাংলাদেশের সর্বকালের সেরা ক্রিকেটার সাকিব আল হাসান -ওয়েবসাইট
এবারের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপেই বাংলাদেশের হয়ে শেষ টি-টোয়েন্টি ম্যাচটি খেলে ফেলেছেন সাকিব আল হাসান। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে আগামী মাসের সিরিজ দিয়ে তিনি ইতি টানবেন টেস্ট ক্যারিয়ারের। বাংলাদেশ ক্রিকেটের গৌরবময় এক অধ্যায় তাই এখন শেষের দিকে। ভারতের বিপক্ষে দ্বিতীয় টেস্টের আগের দিন কানপুরে এই ঘোষণা দিয়েছেন বাংলাদেশের সর্বকালের সেরা ক্রিকেটার। তবে ওয়ানডে ক্রিকেট তিনি এখনই ছাড়ছেন না। আগামী বছরের ফেব্রম্নয়ারি-মার্চে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি পর্যন্ত এই সংস্করণে খেলতে চান ৩৭ বছর বয়সি অলরাউন্ডার। সাকিবকে আগামী অক্টোবরে ঘরের মাঠে দক্ষিণ আফ্রিকা টেস্টের খেলা নিয়ে প্রশ্ন করা হয়। সেই প্রশ্নের উত্তরে টেস্ট ক্রিকেটকে বিদায় জানানোর কথা বলেন সাকিব, 'দেখুন, এখন পর্যন্ত আমি তো এভেলেবল। দেশে যেহেতু অনেক পরিস্থিতি আছে, সবকিছু অবশ্যই আমার ওপরে না। আমি বিসিবির সঙ্গে এসব নিয়ে আলোচনা করেছি। তাদের বলা হয়েছে আমার কি পরিকল্পনা। এই সিরিজ আর হোম সিরিজটা আমি ফিল করেছিলাম আমার শেষ সিরিজ হবে, টেস্ট ক্রিকেটে স্পেশালি।' এ নিয়ে এর মধ্যে বোর্ড সভাপতি ফারুক আহমেদের সঙ্গে কথা হয়েছে বলে জানিয়ে সাকিব যোগ করেন, 'এভাবেই ফারুক ভাইয়ের সঙ্গে ও নির্বাচকদের সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। যদি সুযোগ থাকে, আমি যদি দেশে যাই, খেলতে পারি, তাহলে মিরপুর টেস্ট হবে আমার জন্য শেষ। সেই কথাটা বোর্ডের সবার সঙ্গে বলা হয়েছে। তারা চেষ্টা করছেন কিভাবে সুন্দর আয়োজন করা যায়।' দেশে ফেরার আগে নিরাপত্তার ঝুঁকির বিষয়টিও মাথায় আছে সাকিবের, 'আমি যেন গিয়ে খেলতে পারি এবং নিরাপদ অনুভব করি। যখন দেশের বাইরে আসার দরকার হবে, দেশের বাইরে আসতেও যেন আমার কোনো সমস্যা না হয়। বোর্ড খেয়াল করছে। বিষয়গুলোর সঙ্গে যারা জড়িত তারা দেখছেন। তারা হয়তো আমাকে একটা সিদ্ধান্ত দেবে, যেটার ভিত্তিতে আমি দেশে গিয়ে খুব ভালোভাবে খেলে অন্তত টেস্ট ফরম্যাটটা ছাড়তে পারব।' কষ্ট কিংবা অভিমান থেকে কি টেস্ট ছাড়ছেন সাকিব? এ প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেছেন, 'কষ্ট কিংবা অভিমান থেকে নেওয়া নয়। আমার মনে হয় এটাই সঠিক সময়, সরে যাওয়ার জন্য এবং নতুনদের আসার সুযোগ তৈরি করে দেওয়ার জন্য।' একই প্রশ্নের উত্তরে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট থেকেও নিজের সরে যাওয়ার ঘোষণাটা দেন সাকিব, 'অপ্রাসঙ্গিক হলেও বলে ফেলতে চাই, টি-টোয়েন্টি নিয়েও আমার কথা হয়েছে। বোর্ডের সবার সঙ্গে, নির্বাচকদের সঙ্গে, প্রেসিডেন্টের সঙ্গে, টি-টোয়েন্টি থেকেও আমি সরে যাই। আপাতত পরের যে সিরিজগুলো আছে, নতুন খেলোয়াড় আসুক, সুযোগ দেওয়া হোক।' পরবর্তীতে দলের প্রয়োজনে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে ফিরতেও পারেন সাকিব। তবে আপাতত তিনি আর আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি খেলতে চান না, 'আমি ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগগুলো খেলতে থাকি, ছয় মাস-এক বছর পরে যদি বিসিবি মনে করে যদি আমার টি-টোয়েন্টিকে কন্ট্রিবিউট করার সুযোগ আছে, আমি পারফর্ম করছি এবং ফিট আছি, দেন আমরা ডিসাইড করতে পারি। কিন্তু এই মুহূর্তে, নিজেকে টি-টোয়েন্টিতে দেখছি না। সাউথ আফ্রিকার বিপক্ষে আমার ইচ্ছা আছে টেস্টে শেষ সিরিজ হওয়ার। মোটামুটি বলতে পারেন আমি অন্তত দুটি সংস্করণে আমার শেষটা দেখছি।' সিদ্ধান্তটি সংশ্লিষ্ট সবার সঙ্গে কথা বলেই নিয়েছেন সাকিব। তিনি বলেন, 'এই সিরিজগুলো আমার খেলার কোনো কারণ আছে বলে মনে করি না। আমার মনে হয় নতুনদের সুযোগ দেওয়া উচিত। তাদের দেখা এটাই সবচেয়ে ভালো সুযোগ। ২০২৬ সালের দিকে যদি বাংলাদেশ ক্রিকেট তাকায়, তাহলে এটাই বাংলাদেশের জন্য ভালো। আমরা সবাই মিলে সিদ্ধান্ত নিয়েছি, সবাই এক মত।' সাকিব এটাও জানিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্র ও ওয়েস্ট ইন্ডিজে হয়ে যাওয়া টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপেই বাংলাদেশের হয়ে তার শেষ টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলে ফেলেছেন, 'আমার তো মনে হয় টি-টোয়েন্টিতে আমার শেষ ম্যাচ খেলে ফেলেছি বিশ্বকাপে।' ওয়ানডে ক্রিকেট নিয়ে সাকিব তার পরিকল্পনাও জানিয়েছেন। চ্যাম্পিয়নস ট্রফি খেলে ৫০ ওভারের খেলাটাও ছাড়তে চান, '(ওয়ানডে অবসর চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি দিয়ে?) আমি তা-ই আশা করি। তো আর হয়তো ৯টা ওয়ানডে।' নিজের ক্যারিয়ার মূল্যায়ন করতে বলা হলে সাকিব হেসে উত্তরে বললেন, 'আমি মনে করি, আমি রিজনেবলি ওকে করেছি। আমি খুশি। কোনো অনুশোচনা নেই। জীবনে কখনো অনুশোচনা ছিল না। এখনো নেই। যত দিন উপভোগ করেছি, আমি ক্রিকেট খেলেছি। আমার মনে হয়েছে, এটা বাংলাদেশ ক্রিকেট ও আমার জন্য সঠিক সময়। যে কারণে এই সিদ্ধান্তগুলো নেওয়া। কোচ, অধিনায়ক, নির্বাচক, বোর্ড- সবার সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া।' প্রসঙ্গত, সবশেষ জাতীয় নির্বাচনে মাগুরা-২ আসন থেকে আওয়ামী লীগের টিকেটে সংসদ সদস্য হয়েছিলেন সাকিব। সরকার পতনের ধারাবাহিকতায় তার বিরুদ্ধে হত্যা মামলা হওয়ার পর পাকিস্তান থেকে তাকে দেশে ফেরাতে আইনি নোটিস দেন এক আইনজীবী। তবে তার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ তুলে সম্পদের অনুসন্ধান করতে দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) চিঠি পাঠান এক আইনজীবী। সবশেষ তিনি আলোচনায় উঠে আসেন শেয়ারবাজার কারসাজির দায়ে ৫০ লাখ টাকা জরিমানা হওয়ায়। মাঠের বাইরে দুঃসময়ের মধ্যে থাকা সাকিব মাঠের ভেতরও হারিয়ে খুঁজছেন নিজেকে। পাকিস্তান সফরে বোলিংয়ে মোটামুটি পারফর্ম করতে পারলেও ব্যাট হাতে ছিলেন সাদামাটা। ভারতের প্রথম টেস্টে ব্যাট হাতে একটু লড়াই করতে পারলেও বোলিংয়ে ছিলেন একদমই ধারহীন। সব মিলিয়ে তার পারফর্ম্যান্স সেরার ধারেকাছে নেই অনেক দিন ধরেই। গত বছর ওয়ানডে বিশ্বকাপ থেকে চোখের সমস্যাও তাকে প্রবলভাবে ভোগাচ্ছে, যা বাজেভাবে প্রভাব ফেলছে তার ব্যাটিংয়ে। ২০০৭ সালের মে মাসে চট্টগ্রামে ভারতের বিপক্ষে ম্যাচ দিয়ে টেস্টে অভিষিক্ত সাকিব এই সংস্করণে এখনো পর্যন্ত খেলেছেন ৭০ টেস্ট। বাংলাদেশের ক্রিকেটে অসংখ্য রেকর্ড আর অর্জন তার সঙ্গী। দেশের সর্বকালের সেরা ক্রিকেটার হিসেবে তিনি অবিসংবাদিত। বিশ্ব ক্রিকেটের পরিমন্ডলেও তার রেকর্ডের কমতি নেই। ২০১১ সালে প্রথমবার আইসিসি টেস্ট অলরাউন্ডারদেরর্ যাংকিংয়ে শীর্ষে ওঠার পর তিনিই সবচেয়ে বেশি সময় ধরে রাখেন এই জায়গা। তার টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ার শেষ হলো ১২৯ ম্যাচে। এখানেও লম্বা সময় ছিলেন অলরাউন্ডারদেরর্ যাংকিংয়ের এক নম্বরে। ১৯ টেস্ট ও ৩৯ টি-টোয়েন্টিতে তিনি নেতৃত্ব দিয়েছেন দেশকে। নিরাপত্তার দায়িত্ব নেবে না বিসিবি এদিকে, সম্ভব হলে ক্যারিয়ারের শেষ টেস্টটা মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে খেলতে চান সাকিব আল হাসান। আগামী মাসেই দক্ষিণ আফ্রিকা আসছে বাংলাদেশ সফরে। বৃহস্পতিবার কানপুরে টেস্ট ও টি-টোয়েন্টি থেকে অবসর ঘোষণা করে বলেছেন, যদি তাকে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা দেওয়া হয়, তিনি শেষ টেস্টটা দেশের মাটিতে খেলতে চান। তবে বিসিবি সভাপতি ফারুক আহমেদ আজ বোর্ড সভা শেষে সংবাদমাধ্যমকে বলেছেন, 'নিরাপত্তার বিষয়টি আমাদের হাতে নেই। তাকেই এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। বোর্ড থেকে এ ব্যাপারে কিছু বলতে পারব না। নির্দিষ্ট একজনকে ব্যক্তিগতভাবে নিরাপত্তা দেওয়ার সামর্থ্য নেই বিসিবির।' সাকিবের নিরাপত্তার ব্যাপারটি সরকারের উচ্চপর্যায় থেকে আসতে হবে বলেই মনে করেন ফারুক, 'নিরাপত্তার বিষয়টি সরকারের উচ্চপর্যায় থেকে আসতে হবে। বিসিবি কোনো এজেন্সি না, পুলিশ না,র্ যাব না। সরকারের তরফ থেকে নিরাপত্তার ব্যাপারটি আসতে হবে।' বিসিবি সভাপতি অবশ্য খুব করেই চান সাকিব তাঁর ক্যারিয়ারের শেষ টেস্টটি দেশের মাটিতে খেলুন, 'সাকিব যদি এখান থেকে শেষ টেস্ট খেলতে পারে, ওর মতো আমিও বিশ্বাস করি এর থেকে ভালো কিছু হতে পারে না।' সাকিবের অবসর ঘোষণা তাঁর নিজের সিদ্ধান্ত বলেই মনে করেন বিসিবি সভাপতি, 'সাকিব এ মুহূর্তে তার জীবনের খুব বাজে সময় পার করছে। তাকে বোঝানোর চেষ্টা করিনি। সে মনে করেছে অবসর নেওয়ার এটাই সঠিক সময়। আমি তার সিদ্ধান্তকে সম্মান জানাই। আমার দিক থেকে ওর জন্য খুব বেশি কিছু বলার নেই।'