লেবাননে ইসরাইলি হামলায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৫৫৮
প্রকাশ | ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০০:০০
যাযাদি ডেস্ক
দক্ষিণ লেবাননে স্মরণকালের ভয়াবহ বিমান হামলার পর মঙ্গলবার ফের হামলা চালিয়েছে ইসরাইলি বাহিনী। মঙ্গলবার লেবাননের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, সোমবারের হামলায় অন্তত ৫০ শিশুসহ নিহতের সংখ্যা ৫৫৮ ছাড়িয়েছে। এ ছাড়া আহত হয়েছেন আরও এক হাজার ৮৩৫ জন। ইসরাইলের সামরিক বাহিনী দাবি করেছে, তারা হিজবুলস্নাহর বিভিন্ন অবস্থানে এসব হামলা চালিয়েছে। অন্যদিকে হিজবুলস্নার দাবি, তারাও ইসরাইলের কয়েকটি সামরিক লক্ষ্যবস্তুতে আক্রমণ করেছে। পাশাপাশি আঘাত হেনেছে ইসরাইলের ৬০ কিলোমিটার অভ্যন্তরের একটি বিস্ফোরক কারখানায়। সূত্র: রয়টার্স, বিবিসি ও আল জাজিরা।
সংশ্লিষ্টরা জানান, সোমবার ইসরাইলি বিমান হামলা শুরুর পর থেকে দক্ষিণ লেবানন ছেড়েছেন লক্ষাধিক মানুষ। মঙ্গলবার বোমা হামলা অব্যাহত থাকায় নিরাপত্তার জন্য এখনো পালিয়ে যাচ্ছেন সেখানকার বাসিন্দারা। এর ফলে বৈরুতের মহাসড়কে বিশাল যানজট তৈরি হয়েছে। দক্ষিণ লেবানন থেকে বৈরুত পৌঁছাতে অনেকের ১৭ ঘণ্টা সময় লেগেছে বলে জানিয়েছেন পালিয়ে যাওয়া লেবানিজরা। এ ছাড়া হামলার জেরে বৈরুতে সব ধরনের বিমান চলাচল স্থগিত করেছে কাতার এয়ারওয়েজ। তেল আবিবেও বিমান চলাচল স্থগিত করেছে ব্রিটিশ এয়ারওয়েজ।
দক্ষিণ লেবাননে ইসরাইলি বিমান হামলার পর বিশ্বনেতারা তাদের প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। নিউ ইয়র্কে শুরু হওয়া জাতিসংঘের ৭৯তম সাধারণ পরিষদের বৈঠকেও বিষয়টি আলোচনায় এসেছে। এদিকে, 'এই সহিংসতা অবিলম্বে বন্ধ করতে হবে' উলেস্নখ করে ইউনিসেফ এক বার্তায়
সতর্ক করেছে যে, সংঘাত আরও বৃদ্ধি পেলে তা লেবাননের শিশুদের জন্য 'বিপর্যয়কর' হবে, বিশেষ করে যারা ইসরাইলের আক্রমণে ইতোমধ্যে বাস্তুচু্যত হতে বাধ্য হয়েছে।
লেবাননে জাতিসংঘের ডেপুটি প্রতিনিধি ইটি হিগিন্স বলেছেন, 'আজ সারাদেশে স্কুল বন্ধ, বাচ্চারা ভয়ে ঘরে বসে আছে। তাদের পরিচর্যাকারীরাও পরিস্থিতির অনিশ্চয়তায় ভীত। ফলে এই সহিংসতা অবিলম্বে বন্ধ করতে হবে।'
লেবাননে কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে প্রাণঘাতী দিনশেষে ইসরাইল আবারও হামলা শুরু করায়, ওই এলাকায় পুরোপুরি সংঘর্ষের আশঙ্কা বাড়িয়ে দিয়েছে।
হিজবুলস্নাহ দাবি করেছে, তারা রাতভর ইসরাইলের কয়েকটি সামরিক লক্ষ্যবস্তুতে আক্রমণ করেছে। বিশেষ করে ইসরাইলের উত্তরাঞ্চলীয় শহর আফুলার কাছে মেগিডো এয়ারফিল্ডেও হামলা করেছে তারা। এ ছাড়া ইসরাইলের অভ্যন্তরে ৬০ কিলোমিটার দূরের এক বিস্ফোরক কারখানায়ও আঘাত হেনেছে।
হিজবুলস্নাহর মিডিয়া অফিসের দাবি, ইসরাইল লেবাননের পূর্ব বেকা উপত্যকায় 'খুব বিপজ্জনক' বারকোডসহ লিফলেট ফেলেছে। যে ফোনের মাধ্যমে এই কোডটি স্ক্যান করা হবে, সেই ডিভাইস থেকে সমস্ত তথ্য তারা পেয়ে যাবে। তবে এ বিষয়ে ইসরাইলি সেনাবাহিনীর কোনো বক্তব্য পায়নি আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থাগুলো।
লেবাননের তত্ত্বাবধায়ক প্রধানমন্ত্রী নাজিব মিকাতির কার্যালয় জানিয়েছে, লেবাননে বর্ধিত হামলার প্রেক্ষিতে আরও যোগাযোগের জন্য নিউ ইয়র্কে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে যোগ দেবেন তিনি।
সংকট মোকাবিলার দায়িত্বে থাকা লেবাননি মন্ত্রী নাসের ইয়াসিন রয়টার্সকে জানিয়েছেন, স্কুল ও অন্যান্য স্থাপনায় ৮৯টি অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে, এসব জায়গায় 'ইসরাইলের নৃশংসতা' থেকে বাঁচতে পালিয়ে আসা ২৬ হাজারেরও বেশি মানুষকে আশ্রয় দেওয়া যাবে।
'দক্ষিণ সীমান্তে গাজায় ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী গোষ্ঠী হামাসের সঙ্গে প্রায় এক বছর ধরে যুদ্ধের পর ইসরাইল এবার মনোযোগ উত্তর দিকের যুদ্ধক্ষেত্রে সরিয়ে নিচ্ছে, যেখানে হামাসের প্রতি সমর্থন জানিয়ে হিজবুলস্নাহ ইসরাইলের উত্তরাঞ্চলে রকেট নিক্ষেপ করে আসছে' বলে উলেস্নখ করেন তিনি।
লেবাননের এক কর্মকর্তা জানান, ১৯৭৫ থেকে ১৯৯০ পর্যন্ত চলা গৃহযুদ্ধের পর থেকে লেবাননে একদিনের সহিংসতায় এটি সবচেয়ে বেশি প্রাণহানির ঘটনা।
রয়টার্স জানিয়েছে, গত বছরের অক্টোবরে গাজা যুদ্ধের প্রতিক্রিয়ায় দুই পক্ষের মধ্যে শত্রুতা উসকে ওঠার পর থেকে সোমবার সবচেয়ে ব্যাপক আন্তঃসীমান্ত গোলাগুলি বিনিময়ের ঘটনা ঘটেছে। এরপর লেবাননের জনগণকে সতর্ক করে হিজবুলস্নাহ গোষ্ঠী যেখানে 'অস্ত্রশস্ত্র মজুদ করে রেখেছে' সেসব এলাকা ছেড়ে যাওয়ার জন্য বলে ইসরাইল।
আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, লেবাননে নতুন করে ইসরাইলি হামলা মধ্যপ্রাচ্যের শক্তিধর দেশ ইরানকে বড় ধরনের যুদ্ধে জড়িয়ে ফেলতে পারে বলে আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। বিভিন্ন অঞ্চলে হিজবুলস্নাহ, ইয়েমেনের হুথি এবং ইরাকের সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর মতো উপনিবেশ রয়েছে ইরানের।