ময়নাতদন্তের রিপোর্ট প্রকাশ

আবু সাঈদের মাথার খুলিতে মিলেছে গর্ত মৃতু্য হয় অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে

প্রকাশ | ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০০:০০

রংপুর ও বেরোবি প্রতিনিধি
আবু সাঈদ
রংপুরে কোটা সংস্কার ছাত্র আন্দোলনে নিহত বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী আবু সাঈদের শরীরে মিলেছে শর্টগানের গুলির চিহ্ন ও মাথার খুলিতে গর্ত রয়েছে। এতে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে তিনি মারা গেছেন। নিহত হওয়ার আড়াই মাস পর গত ২৩ সেপ্টেম্বর গণমাধ্যমে আসা ময়নাতদন্তের রিপোর্টে এসব তথ্য উঠে এসেছে। ময়নাতদন্তের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আবু সাঈদের কানের ওপরের দিকে মাথার খুলিতে দৈর্ঘ্যে ৩ ইঞ্চি ও প্রস্থে দেড় ইঞ্চি আয়তনের গর্ত ছিল, যেখান থেকে রক্তক্ষরণ হয়েছে এবং রক্ত জমাট বাঁধা ছিল। এ ছাড়া বুক, পেট, পাসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে অসংখ্য ছোট ছোট রাবার বুলেটের ক্ষত ছিল। সেখান থেকেও প্রচুর রক্তক্ষরণ হয়েছে। মাথার আঘাত, শরীরের রক্তক্ষরণের কারণে আবু সাঈদ নিস্তেজ হয়ে তার মৃতু্য হয়। এর আগে গত ১৬ জুলাই রাত ১১টা ৫০ মিনিটে আবু সাঈদের ময়নাতদন্ত করা হয়। ময়নাতদন্তের প্রতিবেদনে এটিকে হোমিসাইডাল বা হত্যাকান্ড হিসেবে উলেস্নখ করা হয়েছে। আবু সাঈদ হত্যা মামলার প্যানেল আইনজীবী রোকনুজ্জামান রোকন বলেন, মাথার আঘাতের চিহ্ন সুস্পষ্ট। শরীরের বিভিন্ন জায়গায় গুলির ক্ষত। সবকিছু মিলে ময়নাতদন্ত রিপোর্ট প্রমাণ করে, এটি হত্যাকান্ড। ফলে এ হত্যার সঙ্গে যারা জড়িত তাদের কেউ ছাড় পাবে না। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক বলেন, ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন অনুযায়ী আবু সাঈদের মাথার আঘাতে একটি বড় ক্ষত (গর্ত) হয়েছিল। বুলেটের আঘাতে মৃতু্য হলে বুলেট তার মাথার এক প্রান্তে লেগে অন্য প্রান্ত দিয়ে বের হয়ে যেত। যেহেতু এমনটি ময়নাতদন্তে উলেস্নখ নেই, তাহলে এটি কোনো ঢিলের আঘাতে হতে পারে। এ ব্যাপারে ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. রাজিবুল ইসলামকে একাধিকবার ফোন করেও তার সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। প্রসঙ্গত, গত ১৬ জুলাই বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সামকোটা সংস্কার ছাত্র আন্দোলনে পুলিশের গুলিতে নিহত হন আবু সাঈদ। তিনি রংপুর বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের ২০১৯-২০ সেশনের শিক্ষার্থী ছিলেন। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়কও ছিলেন তিনি। এ ঘটনায় ১৮ আগস্ট রংপুর মেট্রোপলিটন আমলি আদালতে হত্যা মামলা করেন নিহতের বড় ভাই রমজান আলী। ওই মামলায় ১৭ জনের নাম উলেস্নখ করে এবং অজ্ঞাত আরও ৩০-৩৫ জনকে আসামি করা হয়। তদন্ত কমিটি গঠন এদিকে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে (বেরোবি) নতুন উপাচার্য যোগদানের পর আবু সাঈদ নিহতের ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে জড়িত শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের চিহ্নিতকরণ ও শাস্তির ধরন নির্ধারণের জন্য তদন্ত কমিটি গঠন করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। তদন্ত কমিটিতে রয়েছেন আহ্বায়ক বেরোবি প্রকৌশল ও প্রযুক্তি অনুষদের ডিন প্রফেসর ড. মো. মিজানুর রহমান, সদস্য সচিব বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. মো. ফেরদৌস রহমান ও সদস্য অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন সিস্টেমস বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মো. আমির শরীফ। কমিটিকে আগামী সাত কর্মদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।