'গান গেয়ে উলস্নাস করে' যুবককে পিটিয়ে হত্যা!

প্রকাশ | ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০০:০০

চট্টগ্রাম বু্যরো
চট্টগ্রামের আঞ্চলিক ভাষার জনপ্রিয় 'মধু হই হই বিষ খাওয়াইলা' গানের তালে নাচছেন একদল যুবক। প্রথম দেখায় আনন্দ উদযাপনের কোনো আসর মনে হলেও ভুল ভাঙে একটু পর। নাচ-গানের এই আসরের কেন্দ্রে দেখা মেলে এক যুবকের; লোহার ছোট ছোট দুটি খুঁটিতে দু'পাশ থেকে বাঁধা তার দুই হাত। গানের তালে তালে লাঠি হাতে ওই যুবককে মারধর করছেন কয়েকজন। একপর্যায়ে ঝুলন্ত হাতেই নেতিয়ে পড়েন মারধরের শিকার যুবক। ওই যুবকের লাশ ফেলে দেওয়া হয়। পরে সেই লাশ রাস্তা থেকে উদ্ধার করে পুলিশ। চট্টগ্রামের পাঁচলাইশ এলাকায় গত মাসে এ ঘটনা ঘটলেও শনিবার ওই পাষবিক কান্ডের ভিডিওটি ভাইরাল হলে তোলপাড় শুরু হয়। খুঁটির সঙ্গে বেঁধে গান গেয়ে গেয়ে নির্মমভাবে পিটিয়ে হত্যার ২০ সেকেন্ডের যে ভিডিওটি ভাইরাল হয়েছে সেটি দেখে স্ত্রী শারমিন আক্তার বলেন, এটি তার স্বামীকে মারারই দৃশ্য। জানা গেছে, মারধরে মৃতু্যবরণকারী যুবকের নাম মো. শাহাদাত হোসেন (২৪)। তাকে নগরের আখতারুজ্জামান ফ্লাইওভারের নিচে ২ নম্বর গেট এলাকায় বেঁধে রাখা হয়েছিল। তিনি নোয়াখালীর সোনাইমুড়ি থানাধীন পাঁচবাড়িয়া ইউনিয়নের নদনা গ্রামের বাসিন্দা। তার বাবা ওই এলাকার মিয়া জান ভূঁইয়া বাড়ির মৃত মোহাম্মদ হারুন। শাহাদাত নগরের বিআরটিসি এলাকার বয়লার কলোনিতে থাকতেন এবং ফলমন্ডিতে একটি দোকানে চাকরি করতেন। ১৪ আগস্ট রাতে প্রবর্তক এলাকা থেকে পুলিশ তার মরদেহ উদ্ধার করে। এ ঘটনায় ১৫ আগস্ট শাহাদাতের চাচা মো. হারুন বাদী হয়ে পাঁচলাইশ থানায় মামলা করেন। মামলার এজাহারে বলা হয়, গত ১৩ আগস্ট দুপুর ২টার দিকে কর্মস্থলের উদ্দেশ্যে বাসা থেকে বের হন শাহাদাত। সন্ধ্যা ৭টার দিকে ফোন করলে কিছুক্ষণের মধ্যে বাসায় চলে আসবেন বলে স্ত্রীকে জানান। গভীর রাত পর্যন্ত বাসায় ফিরে না আসায় খোঁজাখুঁজি করেন শারমিন। এ সময় শাহাদাতের মোবাইল ফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়। ১৪ আগস্ট রাত সাড়ে ৯টার দিকে ফেসবুকে বাদী মোহাম্মদ হারুন দেখতে পান, নগরের প্রবর্তক মোড়ের অদূরে সিএসসিআর হাসপাতালের সামনের সড়কের পাশে তার ভাতিজা শাহাদাত হোসেনের লাশ পড়ে আছে। এর আগে রাত ৯টার দিকে খবর পেয়ে পাঁচলাইশ থানা পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে তাকে উদ্ধার করে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের (চমেক) জরুরি বিভাগে নিয়ে গেলে সেখানে দায়িত্বরত চিকিৎসকরা মৃত ঘোষণা করেন। ওই দিন রাতেই চমেক হাসপাতালে গিয়ে পুলিশের উপস্থিতিতে শাহাদাতের লাশ শনাক্ত করেন স্ত্রী শারমীন এবং মামলার বাদী হারুন। সেদিন রাতে মৃত অবস্থায় শাহাদাতকে হাসপাতালে নেওয়া হয় বলে মামলার এজাহারে উলেস্নখ করেন বাদী। স্বজনরা জানিয়েছেন, শাহাদাত হোসেন নগরীর বিআরটিসি এলাকার ফলমন্ডিতে কাজ করতেন। দুই বছর আগে শারমীন আক্তারকে বিয়ে করেন। পাঁচলাইশ থানার ওসি মোহাম্মদ সোলাইমান বলেন, ভিডিও ছড়িয়ে পড়ার পর শাহাদাতের স্ত্রী মারধরের শিকার ব্যক্তি শাহাদাত বলে নিশ্চিত করেছেন। যারা মারধর করেছে, তাদের পরিচয় জানার চেষ্টা চলছে। রাজধানী ঢাকার দুই বিশ্ববিদ্যালয়ে দুইজনকে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় দেশব্যাপী তোলপাড় সৃষ্টির মধ্যেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওটি নজরে আসে পুলিশের। এরপরই অভিযুক্তদের শনাক্তে তদন্তে নেমেছে পুলিশ। চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশন) আব্দুল মান্নান মিয়া বলেন, 'ঘটনাটি ৫ আগস্টের কাছাকাছি সময়ের, ১৩ বা ১৪ আগস্টের। তখন পরিস্থিতি অস্থিতিশীল ছিল। ভিডিওটি আমাদের নজরে আসার পরই আমরা সবদিক বিবেচনায় রেখে তদন্ত করছি। ঘটনায় জড়িতদের শনাক্তে কাজ করছি আমরা।'