জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ বৈশ্বিক সহযোগিতা সংরক্ষণের লক্ষ্যে একটি 'ভবিষ্যতের জন্য চুক্তি' অনুমোদন করেছে। রোববার সাধারণ পরিষদের গ্রহণ করা এই চুক্তিকে 'আরও কার্যকর, অন্তর্ভুক্তিমূলক, বহুপাক্ষিকতাবাদের মধ্যে সংযোগ সৃষ্টির দিকে উলেস্নখযোগ্য মোড় ফেরানো' একটি মাইলফলক সমঝোতা বলে বর্ণনা করেছেন জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস।
এই চুক্তির এক সংযুক্তিতে একটি দায়িত্বশীল ও টেকসই ডিজিটাল ভবিষ্যতের লক্ষ্যে কাজ করার বিষয়টিও অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
রয়টার্স জানায়, সাধারণ পরিষদের দুই দিনব্যাপী 'ভবিষ্যতের জন্য শীর্ষ সম্মেলনে' এই চুক্তিটি কোনো ভোট ছাড়াই গৃহীত হয়। প্রায় নয় মাস ধরে আলাপ আলোচনার মাধ্যমে এই সমঝোতা চুক্তিটি প্রস্তুত করা হয়েছে।
শীর্ষ সম্মেলনে গুতেরেস বলেন, 'প্রান্ত থেকে বহুপাক্ষিকতাকে ফিরিয়ে আনতে আমরা এখানে মিলিত হয়েছি।'
কেন এটি গুরুত্বপূর্ণ :গুতেরেস দীর্ঘদিন ধরেই এই চুক্তি ও শীর্ষ সম্মেলনের জন্য তাগাদা দিয়ে আসছিলেন। শান্তি এবং নিরাপত্তা, বৈশ্বিক শাসনপ্রক্রিয়া, টেকসই উন্নয়ন, জলবায়ু পরিবর্তন, ডিজিটাল
সহযোগিতা, মানবাধিকার, লৈঙ্গিক সমতা, তরুণ ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মের মতো বিষয়গুলো এই চুক্তির আওতায় আছে। এতে প্রায় ৫৬টি বিস্তৃত পদক্ষেপের কথা বলা হয়েছে, যা অর্জনের প্রতিশ্রম্নতি দিয়েছে রাষ্ট্রগুলো।
'ভবিষ্যতের জন্য চুক্তির' উলেস্নখযোগ্য উদ্ধৃতি : 'আমরা স্বীকার করি যে পরিবর্তনশীল বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলার জন্য জাতিসংঘ ও এর
হ পৃষ্ঠা ২ কলাম ২
কেন্দ্রে থাকা সনদের বহুপাক্ষিক ব্যবস্থা ও প্রতিষ্ঠানগুলোকে অবশ্যই শক্তিশালী করতে হবে। তাদের অবশ্যই বর্তমান ও ভবিষ্যতের জন্য উপযুক্ত তথা কার্যকর ও সক্ষম, ভবিষ্যতের জন্য প্রস্তুত, যথাযথ, গণতান্ত্রিক, ন্যায়সঙ্গত ও বর্তমান বিশ্বের প্রতিনিধিত্বকারী, অন্তর্ভুক্তিমূলক, আন্তঃসংযুক্ত ও আর্থিকভাবে স্থিতিশীল হতে হবে।'
'আজ আমরা বহুপাক্ষিকতার একটি নতুন সূচনার অঙ্গীকার করছি। এই চুক্তিতে যে সব পদক্ষেপ নিশ্চিত করার লক্ষ্য নেওয়া হয়েছে তা হলো জাতিসংঘ ও অন্যান্য প্রধান বহুপাক্ষিক প্রতিষ্ঠানগুলো যেন মানুষ ও গ্রহের জন্য একটি ভালো ভবিষ্যৎ দিতে পারে, নতুন ও উদীয়মান চ্যালেঞ্জ ও সুযোগগুলো যখন তৈরি হচ্ছে তখন আমরা যেন আমাদের বর্তমান প্রতিশ্রম্নতিগুলো পূরণ করতে সক্ষম হই।'
এদিকে, বৈশ্বিক সংকটগুলো জাতিসংঘের সংস্কার ও আন্তর্জাতিক আর্থিক ব্যবস্থার পুনর্গঠনের প্রয়োজনীয়তাকে মূর্ত করে তুলেছে। এই সংকটগুলোর মধ্যে আছে ইউক্রেন, গাজা ও সুদানে চলমান যুদ্ধ; জলবায়ু পরিবর্তন প্রশমনের প্রচেষ্টায় পিছিয়ে পড়া; ব্যাপক জাতীয় ঋণ সমস্যা এবং নিয়ন্ত্রণহীন প্রাযুক্তিক উন্নয়ন নিয়ে উদ্বেগ। সময়ের এই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলাই এই চুক্তির সামগ্রিক লক্ষ্য।
রাশিয়ার উপপররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ভারশিনিন এই আলোচনা ও চুক্তি অনুমোদনের সমালোচনা করেছেন।
রাশিয়া এই চুক্তির ঘোষণায় একটি সংশোধনী যুক্ত করতে চেয়েছিল। এতে বলা হয়েছিল, 'জাতিসংঘ ও এর ব্যবস্থা কোনো রাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ এখতিয়ারের অধীনে থাকা বিষয়গুলোতে হস্তক্ষেপ করবে না।'
উত্তর কোরিয়া, সিরিয়া, নিকারাগুয়া, বেলারুশ ও ইরান রাশিয়ার এই সংশোধনী প্রস্তাবে সমর্থন জানালেও তাদের প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়।