বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন ভারতীয় হাইকমিশনার প্রণয় ভার্মা। শনিবার বিকালে প্রায় ঘণ্টাব্যাপী এই বৈঠকে দুই দেশের মধ্য দ্বিপাক্ষিক উন্নয়নসহ বিভিন্ন সমস্যাবলি নিয়ে আলোচনা হয়েছে।
বিকাল ৪টায় ভারতীয় হাইকমিশনারের গাড়ি গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে প্রবেশ করে। হাইকমিশনারের সঙ্গে উপ-হাইকমিশনার প্রভন বাধে উপস্থিত ছিলেন। বিএনপি মহাসচিবের সঙ্গে ছিলেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ, ভাইস চেয়ারম্যান নিতাই রায় চৌধুরী ও আন্তর্জাতিক কমিটির সদস্য শামা ওবায়েদ।
বৈঠকের পর বিএনপি মহাসচিব সাংবাদিকদের বলেন, 'বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের যে সম্পর্ক সেই সম্পর্ক আরও কীভাবে গভীর করা যায়, দৃঢ় করা যায় সে বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। বাংলাদেশের স্বার্থসংশ্লিষ্ট যে বিষয়গুলো রয়েছে সেগুলো তুলে ধরেছি।'
তিনি বলেন, 'আমরা পানি সমস্যা সমাধান, সীমান্ত হত্যা বন্ধ করা প্রয়োজন সেই কথাগুলো বলেছি। সেই সঙ্গে সিকিউরিটির যে বিষয়টা আছে সেটাও নিয়ে কথা বলেছি।'
তিনি বলেন, 'তারা (ভারতীয় হাইকমিশনার)
বলেছেন যে তারা এই বিষয়গুলোতে সজাগ, তারা চেষ্টা করছেন দ্রম্নততার সঙ্গে সেই সমস্যাগুলো সমাধান করতে।
তাদের মূল বক্তব্য হচ্ছে, বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক তারা আরও দৃঢ় করতে চান। বিশেষ করে এই পরিবর্তনের পরে (ছাত্র-জনতার বিপস্নবে ক্ষমতার পরিবর্তন) নতুন যে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার আছে তাদের সঙ্গে তারা ইতিমধ্যে যোগাযোগ করেছেন, কথা বলেছেন। আমাদের সঙ্গেও তারা সম্পর্ক দৃঢ় করতে চান। এই সম্পর্কের মধ্যে কী করে আরও সুস্থতা, আরও পজেটিভিটি কী করে নিয়ে আসা যায় সেটা নিয়ে তারা কাজ করতে আগ্রহী।
আ'লীগের রাজনীতি করার অধিকার নেই : মেজর হাফিজ
আওয়ামী লীগ রাজনীতি করার অধিকার হারিয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেন, 'যারা এই দেশের গণতন্ত্রকে নির্বাসনে পাঠিয়েছে, রাজনৈতিক দলকে নিষিদ্ধ করেছে, হেলিকপ্টার থেকে গুলি করে শিশু হত্যা করেছে, রাজপথে সাধারণ মানুষকে গুলি করে খড়কুটোর মতো উড়িয়ে দিয়েছে, সেই আওয়ামী লীগের বাংলাদেশে রাজনীতি করার কোনো অধিকার নেই।'
রোববার জাতীয় প্রেস ক্লাবে সেন্টার ফর সোশ্যাল স্টাডিজ (সিএসআরবি) আয়োজিত 'বাংলাদেশ রাষ্ট্রের পুনর্গঠন ও জন মালিকানা' শীর্ষক সেমিনারে তিনি এসব কথা বলেন।
হাফিজ বলেন, রাজনীতিকদের একটা বড় অংশ দুর্নীতিবাজ তাতে কোনো সন্দেহ নেই। যে তিন-চারটি নির্বাচন করে গেল শেখ হাসিনা, এগুলো কী নির্বাচন হলো? এগুলোতে কী পেয়েছি আমরা? এভাবে জনগণের সঙ্গে প্রতারণা বিশ্বের কোনো সরকার করেনি। কীভাবে ব্যাংক ব্যবস্থা ধ্বংস করে দিয়ে গেছে। কীভাবে পুলিশ বাহিনীকে একটা দুর্বৃত্ত বাহিনীতে পরিণত করেছে।
তিনি বলেন, বিএনপি জনগণের মধ্যে থেকে উঠে আসা একটি রাজনৈতিক দল। নির্বাচন এলেই দেখবেন এই দলের জনপ্রিয়তা আছে কী নেই। তবে রাষ্ট্র সংস্কার করার নিশ্চয়ই প্রয়োজন আছে। এই দেশের সরকারগুলো কেন একের পর এক জনগণের আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটাতে ব্যর্থ হয়? একজন ক্ষুদ্র রাজনৈতিক কর্মী হিসেবে মনে হয় আমাদের সব রাজনৈতিক দলের মধ্যে দুর্নীতি শিকড় গেঁড়ে বসেছে। ক্ষমতায় গেলে দুর্নীতি দমন করতে আমরা যথেষ্ট পদক্ষেপ নিতে পারি না। ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় দুর্নীতির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার সিস্টেম বাংলাদেশে থাকতে হবে। প্রধানমন্ত্রী কিংবা রাষ্ট্রপতি যেই হোক; ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় দুর্নীতি করলে তাকে জেলে পাঠানোর ব্যবস্থা করতে হবে। দুর্নীতি দমন কমিশনকে এমন শক্তিশালী হতে হবে। এই ধরনের ব্যবস্থা আমাদের সংবিধানে সুনির্দিষ্ট করতে হবে।
এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক হাসানুজ্জামান চৌধুরী, কবি আবদুল হাই শিকদার প্রমুখ।
এদিকে জাতীয় প্রেস ক্লাবে পৃথক আরেকটি অনুষ্ঠানে বিএনপি ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু বলেছেন, দেশের পার্বত্য অঞ্চলসহ বিভিন্ন জায়গায় ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে। এমনকি বায়তুল মোকাররমে যে ঘটনা ঘটেছে এটা খুবই নিন্দনীয় এবং আশঙ্কাজনক। সেজন্যে এই সরকারকে সতর্ক থাকতে হবে যারা এক সাগর রক্ত দিয়ে দেশ স্বাধীন করেছে এবং স্বৈরাচারী শেখ হাসিনা পতনের আন্দোলনে জীবন উৎসর্গ করেছে তাদের যে দাবি সেই গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে হবে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, এই সরকারকে একটি ভালো নির্বাচনের উদ্যোগ নিতে হবে। সেই উদ্যোগের সাথে দেশবাসী এ সরকারের সঙ্গে থাকবে। এবং ভালো নির্বাচনের মধ্য দিয়ে এই দেশের মানুষ তার পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিতে পারবে। এ সময় উপস্থিত ছিলেন বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য আবু নাসের মো. রহমতউলস্নাহ, ডক্টর খন্দকার মারুফ হোসেন, মাইনুল ইসলাম, জাপার সহ-সভাপতি রাশেদ প্রধান প্রমুখ।