বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্রাথমিক তালিকায় ১৪২৩ মৃতু্য
প্রকাশ | ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০০:০০
যাযাদি ডেস্ক
ছাত্র-জনতার প্রবল আন্দোলনে ১৪২৩ জন নিহত হয়েছে বলে জানিয়েছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের স্বাস্থ্যবিষয়ক কেন্দ্রীয় উপ-কমিটির সদস্যসচিব ও সমন্বয়ক তারেকুল ইসলাম।
শুক্রবার রাতে ফেসবুকে হতাহতের প্রাথমিক তালিকা এবং তাদের পরিবারকে সহযোগিতার বিষয়ে কথা তুলে ধরেন তিনি।
তারেকুল ইসলাম বলেন, সারাদেশে বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি উৎস থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী জুলাই মাসে শুরু হওয়া বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে নিহত ও আহতের প্রাথমিক তালিকা তৈরি করেছেন তারা।
তিনি বলেন, 'আমরা ১৪২৩ জন শহীদের একটি প্রাথমিক তালিকা তৈরি করতে পেরেছি। তবে এর মধ্যে সংযোজন-বিয়োজন হবে; এরমধ্যে পুলিশ বা ফ্যাসিবাদের দোসর ছাত্রলীগ বা আন্দোলনে নিহত না হওয়া কেউ থাকবেন। আমরা ভেরিফিকেশেন এবং ভেলিডেশনের কাজটি চলমান রেখেছি। আমরা একটি সঠিক তালিকা প্রকাশ করতে সক্ষম হব।'
তারেকুল ইসলাম বলেন, এ সময় ২২ হাজারের বেশি মানুষ আহত হয়েছেন। তাদের মধ্যে ৫৮৭ জনের অঙ্গহানি হয়েছে। গুলি লেগে আংশিক বা সম্পূর্ণ দৃষ্টিশক্তি হারিয়েছেন ৬৮৫ জন। ৯২ জনের দুই চোখেই গুলি লেগেছে, দুই চোখই নষ্ট হয়ে গেছে।
তিনি বলেন, আহতদের তালিকা তৈরির কাজটি বেশ চ্যালেঞ্জিং ছিল। আহতদের সংখ্যাও হালনাগাদ হবে।
'আহতদের নিয়ে কাজ করাটা খুব দুরূহ। কারণ এই সংখ্যাটা বিপুল। এরমধ্যে আমরা যখন হাসপাতাল থেকে তথ্য সংগ্রহ করি তখন প্রচুর গার্বেজ ডাটা চলে আসে। যারা আন্দোলনে আহত না তাদের নাম চলে আসে। আহতদের শুধু নাম পাওয়া যায়, মোবাইল নম্বর, ঠিকানা পর্যন্ত পাওয়া যায় না। আমরা কিছু ক্ষেত্রে গোয়েন্দা তথ্য নিয়ে তাদের নাম-ঠিকানা উদ্ধার করতে পেরেছি। তারপর যাচাই করতে গিয়ে দেখেছি এদের মধ্যে কিছু আছে
আন্দোলনে আহত হননি।'
তারেকুল ইসলাম জানান, এ পর্যন্ত ৬০০ জনের বেশি আহতকে তাদের পক্ষ থেকে জরুরি সহায়তা পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। আস সুন্নাহ ফাউন্ডেশন ২ হাজার, সাজেদা ফাউন্ডেশন ৪৫০ জন রোগীর সার্বিক দায়িত্ব নিয়েছে, ১৮০০ জনকে আর্থিক সহায়তা দিয়েছে।
তারেকুল ইসলাম বলেন, সঠিক তথ্য না থাকায় যোগাযোগের অভাবে আহত অনেকের কাছে পৌঁছুতে দেরি হয়েছে। তবে যেখানেই খবর পাওয়া যাচ্ছে যে কারও আর্থিক সহায়তা দরকার, সেখানেই ব্যবস্থা করা হচ্ছে।
'চিকিৎসার ব্যবস্থা আগেই ফ্রি করা হয়েছে। কিন্তু এটাই যথেষ্ট না, অনেকের পরিবার টিকতে পারছে না। খাওয়ার টাকা নাই। আমরা যখনই এমন খবর পাচ্ছি সেখানেই বিভিন্ন ডোনার এজেন্সির মাধ্যমে আমরা সাহায্য পাঠানোর চেষ্টা করছি।'
হাসপাতালে ভর্তি, যাদের অঙ্গহানি হয়েছে, চোখের দৃষ্টি হারিয়েছে, গুলি লেগেছে- এমন রোগীদের কাছে আগামী ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে জুলাই শহীদ ফাউন্ডেশন আর্থিক সহায়তা পৌঁছে দেবে বলে জানিয়েছেন তারেকুল ইসলাম।
তিনি বলেন, 'আর্থিক সহায়তার এই বিষয়টি একেবারেই প্রাথমিক, চূড়ান্ত না। কারণ সরকার এবং ফাউন্ডেশন আলাদা। সরকার আহতদের সহায়তায় একটি নীতিমালা করছে, সেখানে প্রত্যেক শহীদ পরিবারকে ৮ লাখ টাকা, আহতদের ৪ লাখ টাকা দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। সরকারের বাইরে জুলাই ফাউন্ডেশন সব সময় চালু থাকবে। সেখান থেকে সহায়তা দেওয়া হবে।'
সরকারি চাকরিতে কোটা বাতিলের দাবিতে যে ছাত্র আন্দোলন শুরু হয় তা তীব্র আকার ধারণ করে ১৫ জুলাইয়ের পর থেকে। ১৬ জুলাই রংপুরে পুলিশের গুলিতে মারা যান বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আবু সাঈদ। সেদিন দেশের বিভিন্ন স্থানে আরও ৫ জন নিহত হন।
আন্দোলনের তীব্রতা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়ে সহিংসতাও। সরকার পতনের এক দফা দাবিতে তীব্র ছাত্র গণ-আন্দোলনের মুখে ৫ অগাস্ট প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে ইস্তফা দিয়ে শেখ হাসিনা দেশ ত্যাগ করে ভারতে যান।
আন্দোলনে হতাহতদের তালিকা তৈরি করতে গত ১৫ আগস্ট স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় একটি কমিটি গঠন করে। এর প্রধান স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের সাবেক সিনিয়র সচিব ও কমিটির প্রধান মুহাম্মদ হুমায়ুন কবির।
কমিটি তাদের প্রতিবেদন দিলে গত ৯ সেপ্টেম্বর স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছিল বৈষম্যবিরোধী সারাদেশে অন্তত ৬৩১ জন নিহত, ১৯ হাজার ২০০ জনের বেশি আহত হয়েছে। সেটাও ছিল প্রাথমিক তালিকা।