ব্যাটিং দৈন্যতায় ডুবল বাংলাদেশ
প্রকাশ | ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০০:০০
ক্রীড়া প্রতিবেদক
বল হাতে দিনের শুরুটা পরিকল্পনা মতোই করেন হাসান মাহমুদরা। ভারতকে গুঁড়িয়ে দেন ৪০০'র মধ্যে। কিন্তু ব্যাটিংয়ে ব্যর্থতার চরম নজির দেখালেন সাদমান-মুমিনুলরা। প্রতিরোধ তো দূরের কথা, একের পর এক ব্যাটার আশা-যাওয়ার মিছিলে ফলোঅনও এড়াতে পারেনি বাংলাদেশ। ব্যর্থতার মঞ্চায়ন করে অলআউট হয় মাত্র ১৪৯ রানে।
প্রথম ইনিংসে ৩৭৬ রান করে ভারত। জবাবে নেমে মাত্র ১৪৯ রানে অলআউট হয় বাংলাদেশ। ২২৭ রানে এগিয়ে থাকলেও, টাইগারদের ফলোঅন না করিয়ে আবারও ব্যাটিংয়ে নামে ভারত। দ্বিতীয় ইনিংসে ২৩ ওভারে ৩ উইকেট হারিয়ে ৮১ রান তুলে দিন শেষ করেছে স্বাগতিকরা। এতে ৩০৮ রানের লিড নিয়েছে রোহিত শর্মার দল।
এমএ চিদাম্বারাম স্টেডিয়ামে শুক্রবার উইকেট পড়েছে ১৭টি। এই মাঠের ৯০ বছরের ইতিহাসে এক দিনে সবচেয়ে বেশি উইকেট পতনের রেকর্ড এটিই।
প্রথম ইনিংসে ব্যাট করতে নেমে মাত্র ৪৭.১ ওভার স্থায়ী হয় বাংলাদেশের ইনিংস। পারল না ফলোঅন এড়াতেও। প্রথম ইনিংসে ভারতের থেকে ২২৭ রানে পিছিয়ে থেকে অলআউট নাজমুল হোসেন শান্তর দল। ব্যাট হাতে প্রথম দিনই বাংলাদেশকে হতাশায় ডোবান রবীচন্দ্রন অশ্বিন ও রবীন্দ্র জাদেজা। দু'জনের শতরানের জুটিতে প্রথম দিনের শুরুর আনন্দ হাওয়ায় মিলিয়ে যায় বাংলাদেশের।
গতকাল শুক্রবার স্কোর বোর্ডে ৬ উইকেটে ৩৩৯ রান নিয়ে চেন্নাই টেস্টের দ্বিতীয় দিন শুরু করে ভারত। আগের দিনের মতো অশ্বিন আর জাদেজাকে ছুটতে দেননি বাংলাদেশের পেসাররা। দিনের শুরুতেই হ পৃষ্ঠা ২ কলাম ৫
\হজাদেজাকে নিজের শিকার বানান তাসকিন আহমেদ। আগের দিন ৮৬ রানে শেষ করা জাদেজা গতকাল আর রান তুলতে পারেননি।
পরের ব্যাটার আকাশ দ্বীপকেও থামান তাসকিন। ৩০ বলে ১৭ রানের বেশি যোগ করতে পারেননি আকাশ। এরপর থামান অশ্বিনকে। আগের দিন ১০২ রানে অপরাজিত থাকা অশ্বিন গতকাল ১১ রান যোগ করেই ফেরেন সাজঘরে। তাসকিনের করা স্ট্যাম্পের বাইরের বল সজোরে মারেন অশ্বিন। লক্ষ্য ছিল বাউন্ডারি। তবে সেটি হতে দেননি বাংলাদেশ অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত। লুফে নেন ক্যাচ। ১৩৩ বলে ১১?৩ রানে থামে তার ইনিংস।
ভারতের শেষ ব্যাটার হিসেবে নামা বুমরাহকে বিদায় করে ব্যাক টু ব্যাক ফাইফারে নাম লেখান হাসান মাহমুদ। ভারতের মাটিতে এই প্রথম কোনো বাংলাদেশি হিসেবে পাঁচ উইকেট পাওয়ার গৌরব অর্জন করেন হাসান। তাসকিন ও হাসানের দাপটে শেষ পর্যন্ত ৩৭৪ রানে থামে ভারত।
বোলিংয়ের এমন দারুণ উচ্ছ্বাস ব্যাটিংয়ে নামতে নামতেই আবারও মিলিয়ে গেল। প্রথম ইনিংসে ব্যাট করতে নেমে ভারতীয় বোলারদের সামনে রীতিমতো মুখ থুবড়ে পড়ে বাংলাদেশের ইনিংস। দলীয় ৪০ রানেই পাঁচ টপঅর্ডার বিদায় নেন।
প্রথমটা ধসটা শুরু সাদমান ইসলামকে দিয়ে। ইনিংসের প্রথম ওভারেই জাসপ্রীত বুমরাহর অফ স্ট্যাম্পের বাইরে পিচ করে ভেতরে ঢোকা বল না খেলে ছেড়ে দেন সাদমান। সেই বল অফ স্ট্যাম্পের বেল উড়িয়ে দেয়। এরপর ২২ রানে আকাশের বলে বোল্ড জাকির হাসান (৩)। চারে নামা মুমিনুল তো রানের খাতাই খুলতে পারেননি। তিনি পড়েন আকাশ দ্বীপের ফাঁদে।
দলের বিপর্যয়ে অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত গতকালও চরম ব্যর্থ। হাল ধরা তো দূরে উল্টা সিরাজের বলে খোঁচা মেরে কোহলির হাতে ক্যাচ উপহার দেন শান্ত। ৩০ বল টিকে ২০ রানে থামে তার ইনিংস।
মিডল অর্ডারে নেমে মুশফিকুর রহিমও পারেননি হাল ধরতে। এমন বিপর্যয়ে কিছুটা আশা দেখান সাকিব আল হাসান ও লিটন দাস। দুজনের ব্যাটে মনে হয়েছিল লড়াইয়ে ফিরতে পারে বাংলাদেশ। কিন্তু না, ভক্তদের ভুল প্রমাণ করে অহেতুক শট খেলে সাজঘরে ফিরলেন লিটন দাস।
জাদেজার অফ স্টাম্পের বাইরের ডেলিভারি সুইপ করে ডিপ স্কয়ার লেগে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন ২২ রানে লিটন।
একই বোলারের ফাঁদে পা দিলেন সাকিবও। জাদেজার স্ট্যাম্পের ওপর করা ডেলিভারি রিভার্স সুইপ খেলতে গিয়ে আউট হন সাকিব। বল তার ব্যাটে লেগে জুতায় পড়ে উপরে উঠে যায়, এই সুযোগটা লুফে নিয়ে ক্যাচ নেন পান্ত। ৬৪ বলেই থেমে যায় ৩২ রান করা সাকিবের ইনিংস।
একের পর এক বিদায়ে ক্রিজে শেষ আশা হয়ে ওঠেন মিরাজ। একদিকে ফলোঅনের শঙ্কা, অন্যদিকে সঙ্গ দেওয়ার কেউ নেই। একা মিরাজ কতটুকুই বা পারতেন টানতে? মিরাজ টেলএন্ডারদের নিয়ে চেষ্টা করেন। কিন্তু যোগ সঙ্গীর অভাবে তিনিও পারলেন না ফলোঅনের বাধা কাটাতে। উইকেটে সবাই আউট হওয়ার পর শেষ ব্যাটার হিসেবে ২২৭ রানে অপরাজিত ছিলেন মিরাজ। ভারতের হয়ে বল হাতে ৫০ রান দিয়ে বুমরাহ নেন চারটি উইকেট। জাদেজা, সিরাজ ও আকাশ দ্বীপও নেন সমান দুই উইকেট।
ভারত দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাটিংয়ে নামলেও, শুরুতেই হিটম্যান রোহিত শর্মাকে সাজঘরে ফেরান তাসকিন আহমেদ। ইনিংস বড় করতে পারেননি আরেক তরুণ ওপেনার যশস্বী জয়সাওয়ালও। ১০ রান করেন এই বাঁহাতি ব্যাটার। দলীয় ২৮ রানে ২ উইকেট হারায় স্বাগতিকরা। এরপর শুভমান গিলকে সঙ্গে নিয়ে রান তুলতে থাকেন বিরাট কোহলি। তবে এই তারকা ব্যাটারকে ইনিংস বড় করতে দেননি মিরাজ। ১৭ রান করে লেগ বিফোরের ফাঁদে পড়েন তিনি। পঞ্চম উইকেটে গিলকে সঙ্গ দেন পান্থ। শেষ পর্যন্ত ঋষভ পান্থ ১৩ বলে ১২ রান এবং শুভমান গিল ৬৪ বলে ৩৩ রানে অপরাজিত থেকে দ্বিতীয় দিনের খেলা সমাপ্ত করেছে।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
ভারত ১ম ইনিংস: ৯১.২ ওভারে ৩৭৬ (আগের দিন ৩৩৯/৬) (জাদেজা ৮৬, অশ্বিন ১১৩, আকাশ ১৭, বুমরাহ ৭, সিরাজ ০*; তাসকিন ২১-৪-৫৫-৩, হাসান ২২.২-৪-৮৩-৫, নাহিদ ১৮-২-৮২-১, মিরাজ ২১-২-৭৭-১, সাকিব ৮-০-৫০-০, মুমিনুল ১-০-৪-০)।
বাংলাদেশ ১ম ইনিংস: ৪৭.১ ওভারে ১৪৯ (সাদমান ২, জাকির ৩, শান্ত ২০, মুমিনুল ০, মুশফিক ৮, সাকিব ৩২, লিটন ২২, মিরাজ ২৭*, হাসান ৯, তাসকিন ১১, নাহিদ ১১; বুমরাহ ১১-১-৫০-৪, সিরাজ ১০.১-১-৩০-২, আকাশ ৫-০-১৯-২, অশ্বিন ১৩-৪-২৯-০, জাদেজা ৮-২-১৯-২)।
ভারত ২য় ইনিংস: ২৩ ওভারে ৮১/৩ (জয়সওয়াল ১০, রোহিত ৫, গিল ৩৩*, কোহলি ১৭, পান্ত ১২*; তাসকিন ৩-০-১৭-১, হাসান ৫-১-১২-০, নাহিদ ৩-০-১২-১, সাকিব ৬-০-২০-০, মিরাজ ৬-০-১৬-১)।