জুমার নামাজের আগে জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের বর্তমান ও সাবেক দুই খতিবের অনুসারীদের মধ্যে 'হাতাহাতি ও ভাঙচুরের' ঘটনা ঘটেছে, ভাঙচুর করা হয়েছে মসজিদের দরজা-জানালাও। এ ঘটনায় কয়েকজন আহত হয়েছেন বলেও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন। পুলিশের মতিঝিল বিভাগের উপ-কমিশনার মো. শাহরিয়ার আলী বলেন, 'ভেতরে নতুন এবং পুরনো খতিব নিয়ে সমস্যা হয়েছে। পরে জেনেছি পুরনো খতিব নামাজ পড়াতে পারেননি। নতুন খতিব জুমার নামাজ পড়িয়েছেন।' আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের খতিব মুফতি রুহুল আমিন 'আত্মগোপনে চলে যান'। পরে খতিবের দায়িত্ব দেওয়া হয় ওয়ালিউর রহমান খানকে। মসজিদে নামাজ পড়তে আসা জাহেদ আলী নামে এক ব্যক্তি বলেন, '৫ আগস্টের পর থেকে মসজিদে না আসা আগের খতিব রুহুল আমিন শুক্রবার ফিরে এলে এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। নামাজের আগে নিয়মানুযায়ী বায়তুল মোকাররম মসজিদের বর্তমান খতিব মুফতি ওয়ালিয়ুর রহমান খান বয়ান করছিলেন। এমন সময় পুরনো খতিব মুফতি রুহুল আমিন তার অনুসারীদের নিয়ে মসজিদে ঢুকে বর্তমান খতিবের মাইক্রোফোনে হাত দেন। এ নিয়ে ঝামেলা বেঁধে যায়।' এদিকে সাবেক ও বর্তমান খতিবের অনুসারীদের মধ্যে 'হাতাহাতি ঘিরে উত্তেজনাকর পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়' বলে জানিয়েছেন পুলিশের আরেক কর্মকর্তা। তিনি বলেন, 'তারা একপক্ষ আরেক পক্ষকে জুতার বাক্স থেকে জুতা বের করে ছুড়ে মেরেছে।' এ সময় পুলিশ মসজিদের বাইরে ছিলেন জানিয়ে তিনি বলেন, 'আমরা বাইরে দায়িত্বরত ছিলাম। আমরা বাইরে কোনো ঝামেলা হতে দেইনি। একটি গ্রম্নপ এসে বাইরে উত্তেজনাকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছিল, কিন্তু আমরা তাদের বাইরেও অবস্থান করতে দেইনি।' এ সময় তিনজনকে আটক করা হয়েছে বলেও জানান তিনি। বর্তমানে মসজিদ এলাকার পরিস্থিতি 'স্বাভাবিক আছে' বলে জানিয়েছেন পল্টন থানার ওসি মোলস্না মো. খালিদ হোসেন। ওই এলাকার পুলিশ সতর্ক আছেন বলেও জানিয়েছেন এই কর্মকর্তা। যা ঘটেছিল প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, নতুন খতিব ওয়ালিয়ুর রহমান খানের মাইক্রোফোনে পুরনো খতিব মুফতি রুহুল আমিন হাত দিলে বর্তমান খতিবের অনুসারীরা প্রতিবাদ করেন। এরপর দুই পক্ষের অনুসারীদের মধ্যে হাতাহাতি বেঁধে যায়, এতে কয়েকজন আহতও হয়েছেন। এ ঘটনায় মসজিতে নামাজ পড়তে যাওয়া সাধারণ ব্যক্তিরা এক পাশে সরে যান। এক পর্যায়ে দেখা যায়, মসজিদের নিচতলায় যেখানে ইমাম সাহেব নামাজ পড়ান, সেই চত্বরে গিয়ে দুই পক্ষের অনুসারীরা দুদিকে অবস্থান নেন। ওই সময় তারা একে-অপরের দিকে মসজিদের বিভিন্ন জিনিস ছুড়ে মারছিলেন। এমন পরিস্থিতিতে নামাজ পড়তে আসা সাধারণ মানুষ নিচতলা থেকে বেরিয়ে পড়েন বাইরে। প্রায় আধাঘণ্টা ধরে হাতাহাতি চলার পর সাবেক খতিব মুফতি রুহুল আমিন মসজিদ ছেড়ে চলে যান। পরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সহায়তায় পরিবেশ কিছুটা শান্ত হলে সোয়া ১টায় অনেকে আবার মসজিদে ঢোকেন নামাজ পড়তে। নামাজ শেষে মুসলিস্নদের বের হয়ে যাওয়ার মধ্যেই কোনো এক খতিবের অনুসারীদের একটি গ্রম্নপ স্স্নোগান দিয়ে রাস্তায় এসে অবস্থানের চেষ্টা করেন। পরে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা তাদের রাস্তা থেকে সরিয়ে দিলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসে। পরে খবর পেয়ে দ্রম্নত বায়তুল মোকাররম মসজিদে আসেন সেনাবাহিনীর সদস্যরাও। মসজিদের ভেতরে জুতা, জুতার বাক্স ছোড়াছুড়ি এবং হাতাহাতির কিছু ভিডিও ছড়িয়ে পড়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। এসব ভিডিওতে মসজিদের দরজা-জানালা ভাঙচুর করতেও দেখা গেছে। তবে বায়তুল মোকাররম মসজিদ প্রাঙ্গণে আগে থেকেই পুলিশের বিপুলসংখ্যক সদস্য অবস্থান নিয়েছিলেন। ছিল পুলিশের সাজোঁয়া যান, জলকামান এবং প্রিজনভ্যান।