চলতি অর্থবছরে বাংলাদেশকে নতুন করে দুই বিলিয়ন ডলার ঋণ দেওয়ার বিষয়ে ইতিবাচক আভাস দিয়েছেন ঢাকা সফররত বিশ্বব্যাংকের দক্ষিণ এশিয়ার আঞ্চলিক কার্যালয়ের ভাইস প্রেসিডেন্ট মার্টিন রেইজার।
নতুন এ অর্থায়নের কিছু অংশ বাজেট সহায়তা হিসেবে দেওয়ার ইঙ্গিত দিয়ে তিনি বলেছেন, বাকি অর্থ গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পে, স্বাস্থ্য ও জ্বালানি খাতের জন্য বরাদ্দ দেওয়া হতে পারে। তবে সবকিছুই পর্ষদ সভার অনুমোদনের ওপর নির্ভর করছে।
বৃহস্পতিবার সকালে রেইজারের নেতৃত্বে বিশ্বব্যাংকের একটি প্রতিনিধি দল সচিবালয়ে অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদের সঙ্গে বৈঠক করে।
বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে মার্টিন রেইজার বাংলাদেশকে বিশ্ব ব্যাংকের সহযোগিতা দেওয়ার আগ্রহের বিষয়টি তুলে ধরেন। চলমান প্রকল্প ও ঋণ আলোচনার বাইরে নতুন সহযোগিতা যে দুই বিলিয়ন ডলারের বেশি হবে সেটিও তার কথায় আভাস পাওয়া যায়।
তিনি বলেন, 'এটি বাংলাদেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ সময়। উপদেষ্টার সঙ্গে ব্যাংক খাতসহ বিভিন্ন বিষয়ে কথা বলেছি। উপদেষ্টার সংস্কার পরিকল্পনাগুলো শুনে খুবই ভালো লেগেছে। সংস্কার পরিকল্পনায় বিশ্ব ব্যাংক কীভাবে সহযোগিতার মনোভাব নিয়ে যুক্ত থাকতে পারে সে বিষয়ে আমরা কথা বলেছি। বাংলাদেশের সূচনালগ্ন থেকে আমরা এই দেশটির সঙ্গে কাজ করছি। আমরা এই
সহযোগিতা অব্যাহত রাখতে চাই।'
কী পরিমাণ অর্থায়ন দিতে চান এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, 'চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে পরিচালনা বোর্ড। সেজন্য আমি কোনো অঙ্গীকার করতে পারছি না। তবে আমি এটা বলতে পারি আমরা বাংলাদেশের বিভিন্ন ক্ষেত্রে কী পরিমাণ সহায়তা করা যায় সেটাই খুঁজে দেখছি। এই অর্থবছরের মধ্যেই দুই বিলিয়ন ডলারের বেশি অর্থ দেওয়া যায় কি না সেটা আমরা বিবেচনা করছি।'
দুই দিন আগে মঙ্গলবার অর্থ উপদেষ্টা বিশ্ব ব্যাংকের আরেক প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বৈঠকের পর বাড়তি কিছু অর্থায়নের বিষয়ে আলোচনা হওয়ার কথা বলেছিলেন।
সংস্কার প্রক্রিয়া এগিয়ে নিতে তিনি দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের পরিচালক ম্যাথিউ এ ভারগিসের নেতৃত্বাধীন প্রতিনিধি দলের সঙ্গে আলোচনা শেষে বাজেট সহায়তা ও তারল্য সহায়তার কথা বলেছিলেন।
ছাত্র-জনতার তুমুল আন্দোলনের মুখে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর অন্তর্র্বর্তী সরকার ক্ষমতার শাসনামলে ওয়াশিংটনভিত্তিক উন্নয়ন সহযোগী সংস্থাটি নতুন করে সহায়তা দিতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে।
গত কয়েকদিনে সরকারের উপদেষ্টাদের সঙ্গে বিশ্ব ব্যাংকের একাধিক প্রতিনিধি দলের একাধিক বৈঠক হচ্ছে। সেটির ধারাবাহিকতায় দক্ষিণ এশিয়ার আঞ্চলিক কার্যালয়ের ভাইস প্রেসিডেন্ট মার্টিন রেইজারের নেতৃত্বে একটি দল নীতিনির্ধারকদের সঙ্গে বৈঠক করছেন।
এদিন সকালে তার নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল অর্থ উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠক করে। এরপর প্রতিনিধি দলটির বিদু্যৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ, রেল ও সড়ক যোগাযোগের দায়িত্বে নিয়োজিত উপদেষ্টা ফাওজুল কবির খানের সঙ্গে বৈঠকের কথা রয়েছে।
বিকালে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গেও রেইজারের বৈঠকের সূচি থাকার কথা বলেছেন কর্মকর্তারা।
দুদিন আগেই বিশ্ব ব্যাংকের দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের পরিচালক ম্যাথিউ এ ভারজিসের নেতৃত্বাধীন প্রতিনিধি দল অর্থ উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠক করে সহযোগিতা জোরদারের বার্তা দেন।
একইদিন প্রধান উপদেষ্টা ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাতের সময় বিশ্ব ব্যাংকের কান্ট্রি ডিরেক্টর আব্দুলায়ে সেক দুই বিলিয়ন ডলারের ঋণ সহায়তার বিষয়টি জানিয়েছিলেন।
বৃহস্পতিবার রেইজারের সঙ্গে বৈঠক শেষে অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন সাংবাদিকদের বলেন, প্রতিনিধি দলের সঙ্গে আলাপে তাদের খুবই ইতিবাচক দেখা গেছে। মোটামুটি একটা চূড়ান্ত পর্যায়ে এসেছে সহযোগিতার বিষয়গুলো।
তিনি আরও বলেন, 'বাজেট সাপোর্ট, হেলথ অ্যান্ড এনার্জি সেক্টর, সার আমদানি, খাদ্য নিরাপত্তা, বন্যা পরবর্তী পুনর্বাসন, রোহিঙ্গা পুনর্বাসন নিয়ে কথা হয়েছে। অন্যান্য দাতা সংস্থাগুলোর অর্থায়নের বিষয়টি বিশ্ব ব্যাংক সমন্বয় করবে। একসঙ্গে ফান্ড, কারিগরি সহায়তা তারা করবে। তাদের কোনো কার্পণ্য থাকবে না।'
ঋণ সহায়তার পাশাপাশি অন্তর্র্বর্তীকালীন সরকারের সংস্কার উদ্যোগগুলোর সঙ্গেও বিশ্ব ব্যাংক সহযোগিতার মনোভাব নিয়ে যুক্ত থাকবে বলে জানান উপদেষ্টা।
তিনি বলেন, 'ব্যাংকিং খাতে যে সংস্কার করব, রপ্তানি খাতে যা সংস্কার হবে সেখানেও তাদের সহযোগিতা থাকবে। বেসরকারি খাতে বিনিয়োগ বাড়ানো, ব্যবসার সুবিধা বাড়ানো বা অন্যান্য কোনো সমস্যা থেকে থাকলে সেগুলোর ব্যাপারেও তারা সহায়তা করতে আগ্রহী। আমরা যে সংস্কারগুলো করছি এই ব্যাপারে তারা মোটামুটি কনভিন্সড।'