জাফর উল্যাহ গ্রেপ্তার সালমান-আনিসুল ফের রিমান্ডে
প্রকাশ | ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০০:০০
যাযাদি ডেস্ক
এবার আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী জাফর উল্যাহকে গ্রেপ্তার করার কথা জানিয়েছে পুলিশ। বুধবার গভীর রাতে রাজধানীর গুলশান থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয় বলে জানান ডিএমপির উপকমিশনার (গণমাধ্যম ও জনসংযোগ) তালেবুর রহমান।
তিনি বলেন, 'পল্টন থানার একটি হত্যা মামলায় তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গ্রেপ্তারের পর তাকে ডিবি কার্যালয়ে নেওয়ার পর অসুস্থবোধ করায় তাকে জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। জাফর উল্যাহ এখন সুস্থ আছেন, তবে এখনো হাসপাতালেই আছেন।'
১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ডের অর্ধযুগ পর শেখ হাসিনা দেশে ফিরলে আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে প্রবেশ করেন কাজী
\হজাফর উল্যাহ। তিনি ২০০১ সালের সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়নে তৎকালীন ফরিদপুর-৫ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।
২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪ সালের নির্বাচনে ফরিদপুর-৪ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা স্বতন্ত্র প্রার্থী মজিবুর রহমান চৌধুরী নিক্সনের কাছে পরাজিত হন।
ছাত্র-জনতার প্রবল আন্দোলনের মধ্যে গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার সরকারের পতন ঘটে। এরপর থেকে আওয়ামী লীগ সরকারের বেশ কয়েকজন মন্ত্রী, সংসদ সদস্য ও শীর্ষ নেতা গ্রেপ্তার হয়েছেন।
সালমান ও আনিসুল ফের রিমান্ডে
এদিকে রাজধানীর কোতোয়ালী থানার বৈদেশিক মুদ্রা ব্যবস্থাপনা আইনের মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান এবং সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হককে ৫ দিনের রিমান্ডে পেয়েছে আদালত। বৃহস্পতিবার শুনানি শেষে এ আদেশ দেন ঢাকা মহানগর হাকিম আরিফুর রহমান।
এদিন আসামিদের আদালতে হাজির করে ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করেন তদন্ত কর্মকর্তা কোতোয়ালী থানার এসআই রাশিদুল হাসান। তার বিরোধিতা করে আসামিপক্ষের আইনজীবী জামিন আবেদন করেন। বিচারক সেই আবেদন নাকচ করে রিমান্ডের আদেশ দেন।
ছাত্র-জনতার প্রবল আন্দোলনের মুখে গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ঘটে। সেদিন শেখ হাসিনার সঙ্গে একই উড়োজাহাজে তার উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানও দেশত্যাগ করেন বলে ভারতীয় সংবাদমাধ্যমে খবর আসে।
তবে গত ১৩ আগস্ট নৌপথে দেশ ছেড়ে পালানোর সময়ে সালমানের পাশাপাশি সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হককে রাজধানীর সদরঘাট থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এ সময় তাদের কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ বিদেশি মুদ্রা জব্দ করা হয়, যার মধ্যে ডলার, ইউরো, সৌদি রিয়াল, পাউন্ডসহ বিভিন্ন মুদ্রা ছিল।
মামলার অভিযোগ অনুযায়ী, আনিসুল হকের কাছ থেকে ১৭ হাজার ৫৯২ মার্কিন ডলার, ৭২৬ সিঙ্গাপুরি ডলার এবং লাল রঙের ৩টি কূটনৈতিক পাসপোর্ট উদ্ধার করা হয়।
আর সালমান ফজলুর রহমানের কাছ থেকে ১২ হাজার ৬২৪ মার্কিন ডলার, ৬২০ সুইস ফ্রাঙ্ক, সংযুক্ত আরব আমিরাতের সাড়ে আট হাজার দিরহাম, ১৩ লাখ উজবেকিস্তানি সোম, ১১ হাজার ৬৫০ সৌদি রিয়াল, ৭৭৯ সিঙ্গাপুরি ডলার, ১৫০ পাউন্ড, ১,৩২১ ইউরো, ৫০ হাজার বাংলাদেশি টাকা, ৬,২৩০ ভুটানি নগুলট্রুম, ২,০০০ ভারতীয় রুপি, ৩,২২০ থাই বাহত, সবুজ রঙের ৫টি পাসপোর্ট, লাল রঙের ১টি কূটনৈতিক পাসপোর্ট এবং কালো রঙের ১টি স্যাটেলাইট ফোন উদ্ধার করা হয়। এর আগে সালমান এফ রহমান ও আনিসুল হক দফায় দফায় ২৫ দিনের রিমান্ডে ছিলেন।
ফরহাদ হোসেন কারাগারে
এদিকে রাজধানীর আদাবর থানার পোশাককর্মী রুবেল হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার সাবেক জনপ্রশাসনমন্ত্রী ফরহাদ হোসেনকে রিমান্ড শেষে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন আদালত। বৃহস্পতিবার শুনানি শেষে ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. রাগীব নূর জামিনের আবেদন নামঞ্জুর করে তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।
বৃহস্পতিবার চারদিনের রিমান্ড শেষে ফরহাদ হোসেনকে আদালতে হাজির করে কারাগারে আটক রাখার আবেদন করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা আদাবর থানার পরিদর্শক আব্দুল মালেক। আসামিপক্ষের আইনজীবী জামিন চেয়ে শুনানি করেন। রাষ্ট্রপক্ষ এর বিরোধিতা করে। উভয়পক্ষের শুনানি শেষে আদালত জামিন নামঞ্জুর করে তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।
গত ১৪ সেপ্টেম্বর রাতে রাজধানীর ইস্কাটন এলাকা থেকে ফরহাদ হোসেনকে গ্রেপ্তার করা হয়। ১৫ সেপ্টেম্বর তার চার দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত।
মামলার অভিযোগে বলা হয়, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় গত ৫ আগস্ট রুবেলসহ কয়েকশ' ছাত্র-জনতা সকাল ১১টার দিকে আদাবর থানার রিং রোড এলাকায় প্রতিবাদী মিছিল বের করেন। এ সময় পুলিশ, আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, শ্রমিক লীগ, তাঁতি লীগ, কৃষকলীগ, মৎসজীবী লীগের নেতাকর্মীরা গুলি চালায়। এতে রুবেল গুলিবিদ্ধ হন। কাছের একটি হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। এ ঘটনায় ২২ আগস্ট আদাবর থানায় মামলাটি করেন রুবেলের বাবা রফিকুল ইসলাম।
এ মামলায় প্রধান আসামি করা হয়েছে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে। অন্য আসামিদের মধ্যে রয়েছেন শেখ হাসিনার ছোট বোন শেখ রেহানা, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, সাবেক সংসদ সদস্য ও ক্রিকেটার সাকিব আল হাসান, নায়ক ফেরদৌস, ব্যারিস্টার সায়েদুল হক সুমন প্রমুখ।
বিচারপতি মানিক আরেক মামলায় গ্রেপ্তার
এদিকে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের মধ্যে ধানমন্ডিতে কিশোর আব্দুল মোতালিবকে গুলি করে হত্যা মামলায় সাবেক বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিককে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।
এ বিষয়ে পুলিশের আবেদনের ওপর বৃহস্পতিবার শুনানি নিয়ে তা মঞ্জুর করেন ঢাকা মহানগর হাকিম ঢাকার মহানগর হাকিম আরিফুর রহমান।
বিচারপতি মানিককে এই মামলায় গ্রেপ্তার দেখাতে মঙ্গলবার আবেদন করেছিলেন তদন্ত কর্মকর্তা ধানমন্ডি থানার এসআই খোকন মিয়া। ওই আবেদনের শুনানি শেষে তাকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়।
এ নিয়ে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের ঢাকার সাত হত্যা মামলায় তাকে গ্রেপ্তার দেখানো হলো। এর আগে বুধবার মানিককে বাড্ডা থানার চারটি এবং আদাবর ও লালবাগ থানার একটি মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়।
গত ২৩ আগস্ট সিলেটের কানাইঘাট সীমান্ত দিয়ে ভারতে পালিয়ে যাওয়ার সময় আটক হন সাবেক বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক। অবৈধভাবে ভারতে প্রবেশের চেষ্টার মামলায় মঙ্গলবার সিলেটে জামিন পান বিচারপতি মানিক। তবে ঢাকায় তার বিরুদ্ধে একাধিক মামলা থাকায় ওই দিন বিকালে হেলিকপ্টার যোগে তাকে কেরানীগঞ্জ কারাগারে আনা হয়।
আরেক মামলায় গ্রেপ্তার আছাদুজ্জামান মিয়া
এদিকে সরকার পতনের দিন উত্তরায় পোশাককর্মী আব্দুল আজিজ হত্যা মামলায় সাবেক ডিএমপি কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়াকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। বৃহস্পতিবার শুনানি নিয়ে এ আদেশ দেন ঢাকা মহানগর হাকিম আরিফুর রহমান।
এই মামলায় আছাদুজ্জামানকে গ্রেপ্তার দেখাতে গত শনিবার আবেদন করেছিলেন তদন্ত কর্মকর্তা উত্তরা পূর্ব থানার এসআই সজল চন্দ্র পাল। আসামি তখন অন্য মামলায় রিমান্ডে থাকায় সেদিন আবেদনটির শুনানি হয়নি।
আদালতে এসআই সজল চন্দ্র পাল বলেন, 'আছাদুজ্জামান মিয়া মামলার ৬ নম্বর আসামি এবং তদন্তে এই ঘটনার সঙ্গে তার সম্পৃক্ততার প্রাথমিক প্রমাণ পাওয়া গেছে। ভবিষ্যতে আসামিকে রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করার প্রয়োজন হতে পারে। তাই তদন্তের স্বার্থে তাকে এই মামলায় গ্রেপ্তার দেখানোর আবেদন করছি।'
মামলার অভিযোগে বলা হয়েছে, ৫ আগস্টে পুলিশ এবং আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের ক্যাডাররা বিনা উস্কানিতে আন্দোলনকারীদের ওপর গুলি বর্ষণ করে। ওই দিন পোশাক শ্রমিক আব্দুল আজিজ উত্তরা হাউজ বিল্ডিং ফাইন্যান্স করপোরেশনের সামনে পৌঁছালে তাদের গুলিতে গুলিবিদ্ধ হন। পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ৭ আগস্ট মারা যান আজিজ।
ছাত্রদল নেতা নুরুজ্জামান জনিকে 'ক্রসফায়ারের নামে হত্যার' মামলায় ডিএমপির সাবেক কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়াকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য গত ১২ সেপ্টেম্বর সাত দিনের হেফাজতে পায় পুলিশ।
জিজ্ঞাসাবাদ শেষে বৃহস্পতিবার তাকে ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে হাজির করেন তদন্ত কর্মকর্তা খিলগাঁও থানার এসআই মুহাম্মদ গোলাপ উদ্দিন। ওই মামলায় তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন বিচারক।