সর্বত্র সেনাবাহিনীকে ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা দেওয়া ঠিক হবে না

ঠাকুরগাঁওয়ে মির্জা ফখরুল

প্রকাশ | ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০০:০০

ঠাকুরগাঁও ও রাণীশংকৈল প্রতিনিধি
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর
দেশের সব জায়গায় সেনাবাহিনীকে ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা দেওয়া ঠিক হবে না মন্তব্য করে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, 'ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা সেসব এলাকায় দেওয়া দরকার, যেগুলো নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে। যেসব এলাকা শান্তিপূর্ণ রয়েছে, রাজনৈতিক নেতারা নিয়ন্ত্রণ করছেন, সেখানে ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা দিয়ে নতুন সমস্যা সৃষ্টি করা সমীচীন বা বুদ্ধিমানের কাজ হবে না।' বৃহস্পতিবার ঠাকুরগাঁও প্রেস ক্লাবে ছাত্র-জনতার আন্দোলনে নিহতের পরিবার ও আহতদের সঙ্গে সাক্ষাৎ এবং আর্থিক সহযোগিতা করার সময় তিনি এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর তার দলের পক্ষ থেকে জেলায় ছাত্র-জনতার আন্দোলনে নিহতের চার পরিবার এবং আহত ৪৩ জনের হাতে মোট ১৫ লাখ টাকা তুলে দেন। অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে শেখ হাসিনার বিচার চেয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, '৭১ সালে যুদ্ধ করেছিলাম পাকিস্তানের সঙ্গে, ২৪ সালে যুদ্ধ করতে হলো দেশের একটি রাজনৈতিক দলের বিরুদ্ধে। স্বৈরাচার হাসিনার সময় ২০১২ সাল থেকে আমাদের ওপর নির্যাতন করেছে। সাতশ'র বেশি মানুষকে গুম করা হয়েছে। হাজার হাজার মানুষকে হত্যা করা হয়েছে। বেগম খালেদা জিয়া, তারেক রহমানসহ সাধারণ মানুষের নামে মিথ্যা মামলা দিয়ে নিঃস্ব করা হয়েছে। তাদের আমলে ঠাকুরগাঁওয়ে ৯ জনকে হত্যা করেছে।' তিনি বলেন, 'সবার অংশগ্রহণের মাধ্যমে আমরা একটি নির্বাচন চাই। আগামীতে একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ও পার্লামেন্ট দেখতে চাই। যাতে রাজনীতিবিদরা কাজ করতে পারেন, রাজনৈতিক অবস্থা ফিরে আসে। সেই সঙ্গে, আন্দোলনে শহীদ পরিবার ও আহতদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করার দাবি জানাই।' 'আ'লীগ মানুষের মৌলিক অধিকার হরণ করেছে' এদিকে, ঠাকুরগাঁও রাণীশংকৈল উপজেলা বিএনপি আয়োজিত জনসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন বিএনপি মহাসচিব। মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, 'কিছু ছাত্র-শিক্ষকদের জোরপূর্বক পদত্যাগ করতে বাধ্য করিয়েছে- এটা ছাত্রদের কাজ না। মূলত আমরা স্বাধীন হয়েছি, স্বাধীনতা রক্ষা করতে হবে। সামনে দুর্গাপূজা, সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে ধর্মীয় বড় উৎসব। এই উৎসবের সময় দুর্গাপূজার মন্ডপগুলো পাহারা দিতে হবে। আমাদের নেতাকর্মীদের পাড়ায় পাড়ায় পূজামন্ডপগুলো পাহারা দিতে হবে। সনাতন ধর্মের মানুষজন যেন নির্বিঘ্নে পূজা করতে পারে।' বিএনপি মহাসচিব আরও বলেন, 'ছাত্র-জনতার গণ-আন্দোলনে ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন। এর আগে অনেক ছাত্র-জনতাকে অন্যায়ভাবে গুলি করে হত্যা করেছে, গুম করেছে। অনেক ছাত্রকে পঙ্গু করে দিয়েছে। এখন ভারতে পালিয়ে সেখান থেকে ষড়যন্ত্র করছে। ভারত সরকারকে আহ্বান জানানো হয়েছে, শেখ হাসিনা যেন ভারতে বসে কোনো ষড়যন্ত্র করতে না পারে।' বিএনপি নেতা বলেন, 'আ'লীগ সরকার দুর্নীতি করে দেশটি শেষ করে দিয়েছে। মেগা প্রজেক্টের মাধ্যমে মেম্বার থেকে শুরু করে চেয়ারম্যান, এমপি পযর্ন্ত লুটপাট করেছে। আ'লীগ সরকার এ দেশের মানুষের মৌলিক অধিকার হরণ করেছে। বিভিন্ন অফিসে ঘুষ একটি ব্যাধিতে পরিণত হয়েছে। এখন আমরা স্বাধীন হয়েছি, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার অল্প দিনের জন্য সরকার হয়েছে। তারা নির্বাচনী পরিবেশ তৈরি করবে। আইনশৃঙ্খলা ঠিক রাখবে।' উপজেলা বিএনপির সভাপতি আতাউর রহমানের সভাপতিত্বে সভায় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন- কেন্দ্রীয় বিএনপির নির্বাহী সদস্য জের্ড মূর্তজা চৌধুরী তুলা, ঠাকুরগাঁও জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মির্জা ফয়সাল আমিন, জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি ওবায়দুলস্নাহ মাসুদ, সুলতানুল ফেরদৌস নম্র চৌধুরী, পয়গাম আলী, উপজেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক বকুল মজুমদার, পৌর বিএনপির সভাপতি শাহাজাহান আলীসহ বিভিন্ন ইউনিয়ন সভাপতি-সম্পাদকরা। জনসভাটি পরিচালনা করেন- উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আলস্নাম আল ওয়াদুদ বিন নুর আলিফ ও পৌর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মহসিন আলী। ব্যাংক লুটেরাদের দেশে ফিরিয়ে এনে বিচার করতে হবে ব্যাংক লুটেরাদের দেশে ফিরিয়ে এনে বিচারের আওতায় আনার দাবি জানিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। বৃহস্পতিবার বিকালে ঠাকুরগাঁওয়ের পীরগঞ্জে উপজেলা বিএনপি আয়োজনে মিনি স্টেডিয়ামে সম্প্রতি ও গণতন্ত্র রক্ষা এবং শেখ হাসিনা ও তার দোসরদের বিচারের দাবিতে এক জনসভায় এই দাবি জানান তিনি। এ সময় তিনি বলেন, গত ১৬ বছরে দেশের সব ব্যাংক থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা লোন নিয়ে বিদেশে পাচার করেছে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। সব টাকা লুট করে দেশের অর্থনীতিটা ধ্বংস করেছে দিয়েছে। শেখ হাসিনা দেশটাকে বাপ দাদার জমিদারি মনে করেছিল। যখন ইচ্ছা মানুষকে ধরে নিয়ে গিয়ে গুম করে রাখত, না হলে হত্যা করত। ইলিয়াস আলীসহ গুম হওয়া নেতাকর্মীর সন্তান স্বজনরা এখনো তাদের পথ চেয়ে আছে। বিএনপি মহাসচিব আরও বলেন, আওয়ামী লীগ এমন কান্ড করেছিল। মানুষকে ভোট দিতে দেয়নি। তাদের স্স্নোগান ছিল আমার ভোট আমি দেব তোমার ভোটও আমি দেব। তারা দেশের মানুষের সঙ্গে গাদ্দারি করেছে। আলস্নাহ তাদের বিচার করেছেন। ওবায়দুল কাদেরকে উদ্দেশ্য করে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ছাত্র-জনতার সরকার বর্তমানে দেশের ময়লা-আবর্জনা পরিষ্কার করছে। মাঠ পরিষ্কার হলেই ওবায়দুল কাদের সাহেবকে খেলার আমন্ত্রণ জানাব, আসেন আগামীতে খেলা হবে। তিনি আর বলেন, বর্তমান প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস একজন সার্বজনীন ব্যক্তিত্ব। তিনি নোবেলবিজয়ী। পৃথিবীর মানুষ তাকে সম্মান করে অথচ শেখ হাসিনা তার নামে মামলা দিয়ে তাকেও জেলে পাঠাতে চেয়েছিল। আলস্নাহর কি বিধিবাম, তিনি নিজেই এখন দেশ ছাড়া হয়েছে। এ সময় আরও বক্তব্য রাখেন- ঠাকুরগাঁও-৩ আসনের সাবেক এমপি ও উপজেলা বিএনপির সভাপতি জাহিদুর রহমান, দিনাজপুরের সাবেক সংসদ সদস্য আক্তারুজ্জামান মিয়া, সাবেক এমপি জেড মর্তুজা তুলা, জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি ও ঠাকুরগাঁও সরকারি কলেজের সাবেক জিএস ওবায়দুলস্নাহ মাসুদ, কেন্দ্রীয় যুবদল নেতা কামাল আহম্মেদ, পীরগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান জিয়াউল ইসলাম জিয়া, ঠাকুরগাঁও জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট জয়নাল আবেদীন, জেলা যুবদলের সভাপতি শরিফ প্রমুখ।