ছাত্র-জনতার অভু্যত্থানে গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর দায়িত্ব নেয় অন্তর্র্বর্তীকালীন সরকার। এই সরকার ছয়টি সংস্কার কমিশন গঠন করেছে- যেগুলো অক্টোবরে কাজ শুরু করবে। এসব কমিশন ডিসেম্বরের মধ্যে সংস্কারের প্রতিবেদন জমা দেবে।
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় রাজধানীর হেয়ার রোডে ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান অন্তর্র্বর্তী সরকারের আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল। সংস্কার কমিশনগুলো রিপোর্ট দিলে সেগুলো প্রধান উপদেষ্টার নেতৃত্বে উপদেষ্টা পরিষদের সভায় পর্যালোচনার পর অনলাইনে উন্মুক্ত করা হবে বলেও জানিয়েছেন তিনি।
এ সময় প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মাহফুজ আলম, নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রধান বদিউল আলম মজুমদার উপস্থিত ছিলেন।
এক প্রশ্নের জবাবে আসিফ নজরুল বলেন, সংস্কারের বিষয়ে আওয়ামী লীগ ছাড়া সব রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনা হবে। যারা গণহত্যা চালিয়েছে, হাজারের ওপর মানুষকে হত্যা করেছে, হাজার হাজার মানুষকে আহত করেছে, যারা বিচারের ভয়ে পালিয়ে আছে, তাদের সঙ্গে
আলোচনা হবে না। এটা আমাদের পরিষ্কার বক্তব্য।
'মব জাস্টিস' বা গণপিটুনিতে হত্যার মতো ঘটনার বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে হত্যাকান্ডে আমরা মর্মাহত। এ ধরনের প্রতিটি ঘটনার বিচার করা হবে। আমরা এটা নিয়ে কঠোর অবস্থানে রয়েছি।
খসড়ার চূড়ান্ত অনুমোদন : এদিকে, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে বিগত আওয়ামী লীগ সরকার কর্তৃক ব্যাপক দমনপীড়ন ও গণহত্যা চালানোর ফলে সমগ্র দেশে দল-মত নির্বিশেষে ছাত্র-জনতা গণবিক্ষোভ করে। আন্দোলনের একপর্যায়ে মানুষের জীবনের নিরাপত্তা ও বিচারের দাবিতে সরকার পতনের একদফা দাবি ওঠে। ঐক্যবদ্ধ ছাত্র-জনতার গণঅভু্যত্থানের মুখে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ৫ আগস্ট রাষ্ট্রপতির কাছে পদত্যাগ করে দেশত্যাগ করেন। মহামান্য রাষ্ট্রপতি ৬ আগস্ট দ্বাদশ জাতীয় সংসদ ভেঙে দেন।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, উদ্ভূত পরিস্থিতিতে সাংবিধানিক সংকট মোকাবিলা, জনস্বার্থ ও রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা রক্ষা, অর্থনৈতিক ব্যবস্থা সচল রাখা এবং রাষ্ট্রের নির্বাহী কার্য পরিচালনার জন্য অন্তর্র্বর্তী সরকার গঠন বিষয়ে জনগুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানের ১০৬ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি সুপ্রিম কোর্টের মতামত যাচনা করেন।
'সংবিধানের ১০৬ অনুচ্ছেদে প্রদত্ত উপদেষ্টামূলক এখতিয়ার প্রয়োগ করে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ ৮ আগস্ট স্পেশাল রেফারেন্স নম্বর- ০১/২০২৪ দ্বারা মতামত প্রদান করেছে যে, রাষ্ট্রের সাংবিধানিক শূন্যতা পূরণে জরুরি প্রয়োজনে মহামান্য রাষ্ট্রপতি রাষ্ট্রের নির্বাহী কার্য পরিচালনার নিমিত্তে অন্তর্র্বর্তী ব্যবস্থা হিসেবে প্রধান উপদেষ্টা এবং অন্যান্য উপদেষ্টা নিযুক্ত করতে পারবেন। মহামান্য রাষ্ট্রপতি উক্তরূপে নিযুক্ত প্রধান উপদেষ্টা এবং অন্যান্য উপদেষ্টাদের শপথ পাঠ করাতে পারবেন। '
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বিদ্যমান পরিস্থিতিতে ডক্ট্রিন অব নেসেসিটি অনুসারে সাংবিধানিক সংকট মোকাবিলায় সর্বস্তরের জনগণের ঐকান্তিক ইচ্ছা ও পরম অভিপ্রায়ের প্রেক্ষিতে, গণঅভু্যত্থানকারী ছাত্র-জনতার প্রতিনিধিদের প্রস্তাবের ভিত্তিতে এবং ছাত্র-জনতার গণঅভু্যত্থানের রাষ্ট্র সংস্কার আকাঙ্ক্ষা পূরণের ও রাষ্ট্রের নির্বাহী কার্য পরিচালনার জন্য রাষ্ট্রপতি কর্তৃক ৮ আগস্ট অন্তর্র্বর্তী সরকার গঠিত হয়েছে। গঠিত অন্তর্র্বর্তী সরকারের ক্ষমতা ও দায়িত্ব, প্রধান উপদেষ্টা ও উপদেষ্টাদের পদমর্যাদা ও সুযোগ-সুবিধা, পদত্যাগ এবং আনুষঙ্গিক অন্যান্য বিষয়ে বিধান করা জরুরি। বর্ণিত প্রেক্ষাপটে অন্তর্র্বর্তী সরকার অধ্যাদেশ, ২০২৪-এর খসড়া প্রস্তুত করা হয়েছে। উপদেষ্টা পরিষদ 'অন্তর্র্বর্তী সরকার অধ্যাদেশ, ২০২৪'-এর খসড়া চূড়ান্ত অনুমোদন করেছে।