মাঝপথে হঠাৎ মেট্রোরেল বন্ধে দিনভর ভোগান্তি

প্রকাশ | ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০০:০০

যাযাদি রিপোর্ট
বুধবার যান্ত্রিক ত্রম্নটির কারণে আগারগাঁও থেকে মতিঝিল পর্যন্ত মেট্রোরেল চলাচল বন্ধ ছিল। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়েন যাত্রীরা। ছবিটি সচিবালয় স্টেশন থেকে তোলা -ফোকাস বাংলা
ব্যবসার জরুরি কাজে চট্টগ্রামে যাওয়ার উদ্দেশে মিরপুরের বাসা থেকে মতিঝিল বাস কাউন্টারে যাচ্ছিলেন জাহাঙ্গীর আলম। কিন্তু কারিগরি ত্রম্নটিতে মাঝপথে আকস্মিক মেট্রোরেল চলাচল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় অন্যান্য যাত্রীদের সঙ্গে আগারগাঁও স্টেশনে নেমে পড়েন তিনি। নির্ধারিত সময় বাস ছেড়ে দেওয়ার আগেই যাতে কাউন্টারে পৌঁছতে পারেন, এ জন্য সিএনজি অটোরিকশা খুঁজতে থাকেন। কিন্তু এক সঙ্গে কয়েকশ' যাত্রী আগারগাঁও স্টেশনে নেমে নিজ নিজ গন্তব্যে যাওয়ার জন্য হুমড়ি খেয়ে পড়ায় তা জোগাড় করতে পারেননি। উপায়ন্তর না পেয়ে বেশকিছু সময় পর গাদাগাদি করে বাসে মতিঝিলের বাস কাউন্টারে পৌঁছান। কিন্তু এর আগেই নির্ধারিত বাসটি কাউন্টার ছেড়ে গেছে। ফলে নতুন করে টিকিট কেটে তাকে চট্টগ্রাম যেতে হয়েছে। শুধু জাহাঙ্গীর আলমই নন, মাঝপথে মেট্রোরেল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় তার মতো অসংখ্য যাত্রীকে নানা ভোগান্তির শিকার হতে হয়েছে। এ ছাড়া মেট্রোরেল বন্ধ থাকায় দিনভর এই রুটে বাস-মিনিবাসসহ অন্যান্য গণপরিবহণের চাপ বেড়ে যাওয়ায় ব্যাপক যানজট সৃষ্টি হওয়ায় তা 'মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা' হয়ে দাঁড়িয়েছে। যদিও দিনভর ভোগান্তির পর সন্ধ্যার দিকে যান্ত্রিক ত্রম্নটি সারিয়ে মতিঝিল অংশ পর্যন্ত মেট্রোরেল চলাচলের জন্য প্রস্তুত করা হয়। ডিএমটিসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ আব্দুর রউফ বিকাল সোয়া ৫টায় বলেন, 'আমাদের ৪৩০ নম্বর যে পিলার, এটার যে হেড আছে- এর মাঝখানে চারটা বিয়ারিং প্যাড আছে, এটা স্প্রিংয়ের মতো কাজ করে। এটা ফ্লেক্সিবিলিটি রক্ষা করে, এর একটা কর্নারে একটা বিয়ারিং প্যাড ডিসপেস্নসমেন্ট হয়েছে। বিয়ারিং প্যাডটি ভায়াডাক্টের নিচে ও পিলারের ওপর থাকে। এটা দুই থেকে তিন ইঞ্চি দেবে গিয়েছিল। আমরা কোনো রিস্ক না নিয়ে সকাল থেকেই আগারগাঁও-মতিঝিল অংশে মেট্রোরেল চলাচল বন্ধ রেখেছি। এখন মেরামত শেষ করে মেট্রোরেল চলাচলের জন্য সম্পূর্ণ প্রস্তুত করা হয়েছে।' এই অংশ মেরামত করতে গিয়ে ভায়াডাক্টের তাপমাত্রা বেড়ে গেছে জানিয়ে তিনি বলেন, 'ভায়াডাক্টের তাপমাত্রা এখন বেশি, ৪০-এ। তাপমাত্রাটা একটু কমলে অর্থাৎ ৩২-এ নেমে আসলে আমরা চলাচল শুরু করতে পারব।' যান্ত্রিক ত্রম্নটির কারণে বুধবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে রাজধানীর আগারগাঁও থেকে মতিঝিল রুটে মেট্রোরেল চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। তবে উত্তরা থেকে আগারগাঁও অংশে ট্রেন চলাচল করে। ভোগান্তির শিকার মেট্রোরেল যাত্রীরা জানান, আগারগাঁও স্টেশনে এক সঙ্গে কয়েকশ' যাত্রী নেমে বাস-মিনিবাসসহ অন্যান্য গণপরিবহণে গন্তব্যে যাওয়ার চেষ্টা করায় সেখানে বিশৃঙ্খল অবস্থার সৃষ্টি হয়। সুযোগ বুঝে সিএনজি অটোরিকশা ও রাইড শেয়ারের বাইকাররা দ্বিগুণ ভাড়া হাঁকেন। বাসগুলোতে তিলধারণের জায়গা না থাকায় নারী-শিশু ও বৃদ্ধ যাত্রীদের পক্ষে ঠেলাঠেলি করে তাতে ওঠা কঠিন হয়ে পড়ে। ফলে তীব্র গরমের মধ্যে অনেকে পায়ে হেঁটে গন্তব্যের উদ্দেশে রওনা দেন। কেউ কেউ আবার কাজের উদ্দেশে না গিয়ে বাসায় ফিরে যান। মতিঝিলের একটি প্রাইভেট ফার্মের জুনিয়র কর্মকর্তা হাসিবুল ইসলাম জানান, নির্ধারিত সময় অফিসে পৌঁছতে না পারলে বেতন কাটা যাবে। তাই সিএনজি অটোরিকশা নিয়ে মতিঝিল যাওয়ার চেষ্টা করেছেন। কিন্তু দীর্ঘক্ষণ ছোটাছুটি করে ব্যর্থ হয়েছেন। বাসে চড়ে অফিসে গেলে ১১টার আগে অফিসে পৌঁছানো যাবে না। তাই তিনি বাসায় ফিরে যাচ্ছেন। এদিকে যারা গাদাগাদি করে বাসে চড়ে গন্তব্যে যাওয়ার চেষ্টা করেছেন, তারাও চরম ভোগান্তির শিকার হয়েছেন। বাসযাত্রী নূরজাহান বেগম বলেন, অফিসে ঢোকার সময় অনেক আগেই পেরিয়ে গেছে। কিন্তু জরুরি কাজে অফিসে যেতেই হবে। তাই ঠেলাঠেলি করে বাসে উঠেছি। কিন্তু তীব্র যানজটে গাড়ি এক জায়গাতেই আটকে আছে। যাত্রীতে ঠাঁসা বাসের মধ্যে তীব্র গরমে দাঁড়িয়ে থাকা দায় হয়ে দাঁড়িয়েছে। আগারগাঁও-মতিঝিল রুটে মেট্রোরেল চলাচল বন্ধ প্রসঙ্গে ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের পরিচালক (অপারেশন অ্যান্ড মেইন্টেন্যান্স) নাসির উদ্দিন আহমেদ জানান, মেট্রোরেলের পথে ভায়াডাক্টের একটি অংশে স্প্রিং সরে যাওয়ায় সকাল থেকেই আগারগাঁও-মতিঝিল রুটে মেট্রোরেল চলাচল বন্ধ করা হয়েছিল। ভায়াডাক্টের রুট অ্যালাইনমেন্ট কিছুটা উঁচু-নিচু হয়ে গিয়েছিল। এতে মেট্রোরেল চলাচলে ঝুঁকি তৈরি হয়েছিল। যোগাযোগ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এটিকে স্প্রিং নয়, বিয়ারিং প্যাড বলা হয়। কোনো কারণে বিয়ারিং প্যাডের কার্যকারিতা নষ্ট হয়ে গেছে বা বিয়ারিং প্যাড সেখান থেকে পড়ে গেছে। না হলে এ ধরনের ঘটনা ঘটার কথা নয়। মেট্রোরেলের এক কর্মকর্তা বলেন, 'আমরা সকাল ৮টার পর বিষয়টি জানতে পেরেছি। তখন থেকে যন্ত্রপাতি আনতে কিছুটা সময় লেগেছে। এরপর মেরামতের কাজ শুরু করা হয়। এতে যাত্রীদের ভোগান্তি হলেও দুর্ঘটনা থেকে রক্ষা পাওয়া গেছে।