বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাউদ্দীন আহমেদ বলেছেন, গণহত্যাকারীরা যদি আবারো রাজনীতিতে চলে আসে তবে এই বাংলাদেশ পরাজিত হবে। বিদেশি কোনো শক্তির তাঁবেদারি চলবে না।
মঙ্গলবার বিকালে চট্টগ্রাম নগরের আলমাস মোড়ে চট্টগ্রাম বিভাগীয় বিএনপি আয়োজিত কেন্দ্র ঘোষিত গণতন্ত্রের শোভাযাত্রা পূর্ব-সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
সালাউদ্দীন আহমেদ বলেন, গণতান্ত্রিক নির্বাচনের মাধ্যমে একটি নির্বাচিত রাজনৈতিক সরকারের প্রতিষ্ঠা না হওয়া পর্যন্ত আমাদের আন্দোলন চলবেই। নির্বাচিত সরকারের কোনো বিকল্প নেই। সংবিধান শুধুমাত্র নির্বাচিত সরকারই
সংশোধন করতে পারে, তাই যত দ্রম্নত সম্ভব সংস্কারমুখী ও নির্বাচিত সরকার চালু করুন।
তিনি বলেন, ১৯৯৬ সালে বাংলাদেশে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রবর্তন আমরা করেছিলাম বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের নেতৃত্বে, বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে। সেই কেয়ারটেকার সরকার বিলুপ্ত করে শেখ হাসিনা বাংলাদেশে নতুনভাবে স্বৈরাচার ও ফ্যাসিবাদি শাসনের প্রবর্তন করে। অন্তঃহীন সংগ্রাম, ত্যাগ-তিতিক্ষা, রক্ত শ্রম এবং প্রাণের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের মানুষ পুনরায় স্বাধীনতা অর্জন করেছে। এই স্বাধীনতা, এই গণতন্ত্রের জন্য যারা যুদ্ধ করেছে বৈষম্যহীন সমাজব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার জন্য, যারা বুকের তাজা রক্ত ঢেলে দিয়েছে, তাদের মধ্যে বাংলাদেশে প্রথম শহীদ রংপুরের সাঈদ, দ্বিতীয় শহীদ চকরিয়া পেকুয়ার সন্তান, আমার সন্তান ওয়াসিম। সব গণতান্ত্রিক সংগ্রামে, আন্দোলনে, যুদ্ধে চট্টগ্রাম সবসময় নেতৃত্ব দিয়েছে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাউদ্দীন আহমেদ বলেন, আপনারা যদি মনে করেন, সবকিছু এমনি এমনি এসেছে, তাহলে এটা ভুল কথা। মোট ৪৮৫ জন শহীদের মধ্যে এ গণঅভু্যত্থানে, এ গণবিপস্নবে ৪২২ জন শহীদ বিএনপির নেতাকর্মী। ১১৩ জনের বেশি ছাত্রদলের নেতাকর্মী। এ আন্দোলন সংগ্রামে সাতশ'র বেশি মানুষ গুম-খুনের শিকার হয়েছে, যার মধ্যে ৪২৩ জন শুধু বিএনপির নেতাকর্মী। দীর্ঘ আন্দোলন সংগ্রামে প্রায় ২৭০০ মানুষ বিভিন্নভাবে নির্যাতনের শিকার হয়েছে, বিচারবহির্ভূত হত্যাকান্ডের শিকার হয়েছে, তার মধ্যে শত শত মানুষ বিএনপির নেতাকর্মী।
তিনি বলেন, এত রক্ত, এত ঘাম, এত প্রাণ, এত সংগ্রামের মধ্য দিয়ে আমরা অর্জন করেছি বাংলাদেশে নতুন স্বাধীনতা দিবস, বাংলাদেশের নতুন গণতন্ত্র দিবস। বাংলাদেশের মানুষ গণতন্ত্রকে ছিনিয়ে নিয়ে এসেছে। কিন্তু গণতন্ত্র, এই নতুন স্বাধীনতা, এই বিজয়কে যদি আপনারা অর্থবহ করতে চান, তাহলে ধৈর্য্য ধরতে হবে। আন্দোলন জারি রাখতে হবে, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রকে মোকাবিলা করতে হবে। সুতরাং চলমান এ আন্দোলন, যতদিন সত্যিকারভাবে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা না হবে ততদিন চালু রাখতে হবে। প্রকৃত গণতান্ত্রিক নির্বাচনের মধ্য দিয়ে যতদিন পর্যন্ত একটি রাজনৈতিক সরকার প্রতিষ্ঠিত না হবে, সংসদ প্রতিষ্ঠিত না হবে, ততদিন পর্যন্ত আমরা রাজপথে এ আন্দোলন অব্যাহত রাখব।
সালাউদ্দীন আহমেদ বলেন, বাংলাদেশে গণহত্যাকারীর আর কোনোদিন জায়গা হবে না। শেখ হাসিনা এবং আওয়ামী লীগ ও গণহত্যাকারীদের কোনো রাজনীতি চলবে না। যদি গণহত্যাকারীদের রাজনীতি চলে, তাহলে বাংলাদেশ আবার পরাধীন হবে। কোনো বিদেশি রাষ্ট্রের এখানে তাঁবেদারি চলবে না। যদি সত্যিকারভাবে স্বাধীন, সার্বভৌম, গণতান্ত্রিক, বৈষম্যহীন, যদি সাম্যভিত্তিক একটি রাষ্ট্র নির্মাণ করতে চান, যদি আইনের শাসনের রাষ্ট্র নির্মাণ করতে চান, তাহলে শহীদের রক্তের প্রতি সম্মান দেখিয়ে আমাদের পরস্পরের অধিকারের প্রতি স্বীকৃতি দিতে হবে। কেউ আইনের চেয়ে বড় নন।
নেতাকর্মীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, সবাই ধৈর্য্য ধরুন। সবাই সুশৃঙ্খল থাকুন। গণতান্ত্রিক আন্দোলন সংগ্রাম জারি রাখুন। যতদিন পর্যন্ত এ অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় ফিরে যাওয়ার ঘোষণা না দেয়, ততদিন এ আন্দোলন অব্যাহত থাকবে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা এবং উপদেষ্টাদের আহ্বান জানাই, যতদ্রম্নত সম্ভব নির্বাচনমুখী সংস্কার সাধন করুন এবং গণতান্ত্রিক নির্বাচনের একটি রোডম্যাপ আপনারা ঘোষণা করুন। তাহলে এদেশের মানুষ আশ্বস্ত হবে যে, বাংলাদেশ সত্যিই প্রকৃত গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় ফিরে যাবে।
বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক ও বিভাগীয় শোভাযাত্রার সমন্বয়কারী মাহবুবের রহমান শামীম বলেন, বর্তমান সরকার হচ্ছে গণঅভু্যত্থানের পর বিপস্নবের মধ্যদিয়ে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। তাদের প্রধান কাজ হচ্ছে, একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন করে জনগণের প্রতিনিধিদের হাতে ক্ষমতা তুলে দেওয়া। তবে আওয়ামী লীগ সরকার যে জঞ্জাল সৃষ্টি করে গেছে, সেটাকে দূর করে একটি সঠিক সুন্দর নির্বাচনের ব্যবস্থা করতে হবে।
সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ডা. শাহাদাত হোসেন বলেন, গত ১৫ বছর ধরে শেখ হাসিনার ফ্যাসিবাদী শাসনে বাংলাদেশের স্বাধীনতাকে দুর্বল করে দিয়েছে। তার শাসনামলে এই জাতিকে সে ১৮ লাখ কোটি টাকার ঋণে আবদ্ধ করে গেছে। পাচার হয়ে গেছে প্রায় ১০০ বিলিয়ন ডলার। দুঃশাসনে সব গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে ভেঙে দিয়েছে। বর্তমান সরকার হচ্ছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। আমরা আশা করব, তারা একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের ক্ষমতা জনগণের হাতে তুলে দেবে।
চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক এরশাদ উলস্নাহ সভাপতির বক্তব্যে বলেন, ছাত্র-জনতার অভু্যত্থানে স্বৈরাচার পালিয়ে গেছে। দেশ আজকে একটি নবতর স্বাধীনতা পেয়েছে। একবার আমরা ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবস পেয়েছি। আর এবার সত্যিকার অর্থে ৫ আগস্ট নতুন প্রজন্ম দেখতে পেল, স্বাধীনতা কাকে বলে। মানবাধিকার ছিল না। এক ব্যক্তির শাসন ছিল, সেখান থেকে আজ আমরা মুক্ত হয়েছি। গণতন্ত্রের যাত্রাপথের মুক্তিকে আমাদের সমুন্নত রাখতে হবে।
সমাবেশে চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপি সদস্য সচিব নাজিমুর রহমানের পরিচালনায় বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরী, বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা আবুল খায়ের ভূইয়া, জয়নাল আবেদীন ফারুক ও গোলাম আকবর খোন্দকার। এ ছাড়া বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় বিএনপির শ্রম সম্পাদক এ এম নাজিম উদ্দীন, সাবেক সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আবুল হাশেম বক্কর, কেন্দ্রীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক ভিপি হারুনুর রশীদ, ব্যারিস্টার মীর মোহাম্মদ হেলাল উদ্দিন, কক্সবাজার জেলা বিএনপির সভাপতি, সাবেক হুইপ শাহজাহান চৌধুরী, খাগড়াছড়ি জেলা বিএনপির সভাপতি, সাবেক এমপি আব্দুল ওয়াদুদ ভুঁইয়া, কেন্দ্রীয় বিএনপির সহ-গ্রাম সরকার সম্পাদক বেলাল আহমেদ, সদস্য সাচিং প্রম্ন জেরী, জালাল উদ্দীন মজুমদার, মশিউর রহমান বিপস্নব, হুম্মাম কাদের চৌধুরী, রাঙামাটি জেলা বিএনপির সভাপতি দিপেন তালুকদার দিপু, উত্তর জেলা বিএনপির সি. যুগ্ম আহ্বায়ক এম এ হালিম, ফেনী জেলা বিএনপির সদস্য সচিব আলাল উদ্দিন আলাল, কক্সবাজার জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক অ্যাড. শামীম আরা স্বপ্না, নোয়াখালী জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক অ্যাড. আবদুর রহমান, বান্দরবান জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক জাবেদ রেজা।
সমাবেশের পর সালাউদ্দীন আহমেদের নেতৃত্বে শোভাযাত্রাটি আলমাস হয়ে কাজীর দেউরী, লাভ লেইন, জুবলী রোড়, নিউ মার্কেট, কোতোয়ালী হয়ে লালদীঘি পাড়ে এসে শেষ হয়।