মূল্যস্ফীতি ও জাতীয় আয়ের তথ্য বিশেষভাবে খতিয়ে দেখা হবে বলে জানিয়েছেন অর্থনীতি নিয়ে শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটির প্রধান ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য। সেই সঙ্গে এতদিন (আওয়ামী লীগের সময়ে) করা সব ধরনের চুক্তির মূল কাগজ খতিয়ে দেখা হবে বলেও জানান তিনি।
ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, 'জিডিপি, জাতীয় আয়, মূল্যস্ফীতি এবং এডিপির প্রাক্কলন করা হয় এগুলোর বস্তুগত ভিত্তিতে, যা অত্যন্ত দুর্বল। এগুলো কীভাবে হয়, এসব বিষয় খতিয়ে দেখা হবে। এ জন্য আমরা আলাদাভাবে বিবিএসের (পরিসংখ্যান বু্যরো) সঙ্গে বসব।'
মঙ্গলবার রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে পরিকল্পনা কমিশনের নাজিয়া সালমা সম্মেলনকক্ষে বিভিন্ন সংস্থার সঙ্গে বৈঠক শেষে তিনি এসব কথা বলেন।
বৈঠকে সরকারের তথ্য তৈরি, পরিবেশন এবং প্রাক্কলন যারা করেন- এমন ২৪টি সংস্থার প্রতিনিধিরা অংশ নেন। এ সময় শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটির সদস্য ড. মোস্তাফিজুর রহমান, ড. সেলিম রায়হানসহ অন্যরা উপস্থিত ছিলেন। সংস্থাগুলোর মধ্যে বিবিএস, বিআইডিএস, এনবিআর, বিডা,
বেজা, বিসিক, কৃষি মন্ত্রণালয়সহ বিভিন্ন সংস্থার প্রতিনিধিরা ছিলেন।
ড. দেবপ্রিয় বলেন, 'রাজনৈতিক চাপে সরকারি কর্মকর্তারা সঠিক তথ্য দিতে অসহায় ছিলেন (পারতেন না)। ফলে তারা বাধ্য হয়েই যে কোনো সরকারি প্রাক্কলন করতেন। যারা ভয়ে বা চাপে এতদিন সঠিক তথ্য দিতে পারেননি, তাদের বলা হয়েছে, এখন সময় এসেছে সে সুযোগ কাজে লাগান।'
এক প্রশ্নের জবাবে শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটির প্রধান বলেন, 'আমাদের তৃতীয় সভা হবে। আমরা তথ্য-উপাত্ত পেয়েছি। এখন লেখার কাজ কীভাবে শুরু হবে সেটি নিয়ে আলোচনা হবে। আমরা যে উন্মুক্ত তথ্য-উপাত্ত চেয়েছিলাম, এতে ব্যাপক সাড়া পড়েছে। আমরা দ্রম্নত ঢাকার বাইরে টাউনহল বৈঠক করব। আমরা কী পেয়েছি, সেই ভেতরের তথ্য এখন বলার সময় নয়, সময় আসলে বলা হবে।'
দেবপ্রিয় বলেন, আমাদের মূল কাজটা ছিল, যেসব তথ্য-উপাত্ত বিবেচনায় নেওয়া হয় এবং সেই বিবেচনাগুলো নিয়ে সরকারের ভেতরে যারা তথ্য-উপাত্তকে সৃষ্টি করেন, পরিবেশন করেন, মূল্যায়ন করেন, সেসব ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে আলোচনা করা। আমাদের দিক থেকে যেসব চাহিদা আছে জানার, তা হলো- তথ্য-উপাত্তের হালনাগাদ পরিস্থিতি কী আছে? উনাদের কাছে এমন কিছু আছে কিনা, যেগুলো এতদিন উনারা প্রকাশ করতে পারেননি এবং আগামীতে তথ্য-উপাত্ত সঠিকভাবে দেওয়ার জন্য কী কী পদ্ধতি অবলম্বন করা যেতে পারে, সেগুলো সম্পর্কে যদি তাদের কোনো পরামর্শ থাকে সেগুলো আমরা শুনেছি।
পরিকল্পনা শেষে এখন শ্বেতপত্র লেখার কাজ এগোবে জানিয়ে দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, আমাদের পরিকল্পনার কাজ শেষ হয়ে গেছে, এখন আমরা লেখার দিকে আগাচ্ছি। এর পাশাপাশি বিভিন্ন অংশীজনের সঙ্গেও আলোচনা চালিয়ে যাব।
তিনি আরও বলেন, এখন পর্যন্ত আমরা মোটা দাগে পেয়েছি, যে বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে নেওয়া বিভিন্ন প্রাক্কলনের বস্তুগত ভিত্তি অত্যন্ত দুর্বল ছিল। অনেক সময় যারা প্রাক্কলন তৈরি করেছেন, তারা অসহায়বোধ করেছেন, ওই প্রাক্কলন দিতে বাধ্য হয়েছেন। এ কথাটা অনেক বড়ভাবে এসেছে। দুই মাস পর শ্বেতপত্র লেখা হলে সব বিস্তারিত তুলে ধরা হবে।
জাতীয় আয়ের প্রবৃদ্ধি ও মূল্যস্ফীতির এই দুটি বিষয় প্রথমে বিশ্লেষণ করা হবে জানিয়ে দেবপ্রিয় বলেন, আমরা মূলত দুটি তথ্য নিয়ে আলোচনা করেছি। একটা হলো- জাতীয় আয়ের প্রবৃদ্ধির হিসাব কীভাবে হয়েছিল। দ্বিতীয় হলো- মূল্যস্ফীতির হিসাব কীভাবে হয়। এই দুটি বিষয়কে স্যাম্পল হিসেবে গভীরে গিয়ে দেখার ব্যবস্থা করেছি।
এই অর্থনীতিবিদ আরও জানান, আগামী বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিকে দিকনির্দেশনা দেওয়ার জন্য অথবা পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে অগ্রগতি বা কী ঘাটতি ছিল, এ বিষয়েও খোঁজ নেবে শ্বেতপত্র কমিটি। পাশাপাশি দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়, জ্বালানি ক্রয়, অথবা বৈদেশিক ঋণ নেওয়ার ক্ষেত্রে যেসব চুক্তি হয়েছে, সেগুলোর মূল চুক্তিগুলো দেখার সুযোগ কীভাবে হবে, সেগুলো নিয়েও পর্যালোচনা করা হচ্ছে।
তিনি জানান, শ্বেতপত্র কমিটি কোনো সংস্কার কর্মসূচি নয়। বরং দেশের অর্থনীতির জিরো পয়েন্ট খুঁজে বের করার কাজ চলছে। যেখান থেকে সংস্কার শুরু করা যাবে বলে মনে করেন দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য।