শাহরিয়ার, মোজাম্মেল ও শ্যামল রিমান্ডে
প্রকাশ | ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০০:০০
যাযাদি ডেস্ক
বৈষম্যবিরোধী অন্দোলনের পৃথক দুটি হত্যা মামলায় ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবির ও সাংবাদিক মোজাম্মেল বাবু এবং শ্যামল দত্তের সাত দিন করে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি দিয়েছেন আদালত। ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালত মঙ্গলবার এই আদেশ দেন।
সকালে ভাষানটেক থানায় দায়ের করা হত্যা মামলায় ভোরের কাগজের সম্পাদক শ্যামল দত্তকে আদালতে হাজির করে ১০ দিন রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন করা হয়। আর রমনা থানায় দায়ের করা হত্যা মামলায় একাত্তর টিভির প্রধান সম্পাদক মোজাম্মেল বাবু ও লেখক শাহরিয়ার কবিরকে ১০ দিনের রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন করা হয়।
এর আগে, সকালে ময়মনসিংহের ধোবাউড়া সীমান্ত হয়ে অবৈধভাবে ভারতে যাওয়ার সময় মোজাম্মেল বাবু ও শ্যামল দত্তকে আটক করেন এলাকাবাসী। পরে তাদের পুলিশে দেন তারা। আর সোমবার মধ্যরাতে বনানীর বাসা থেকে গ্রেপ্তার করা হয় শাহরিয়ার কবিরকে।
এদিন পৃথক দুই মামলায় প্রত্যেকের ১০ দিনের রিমান্ড চেয়ে আবেদন করেন পুলিশ। সকাল ৯টার দিকে তাদের আদালতে হাজির করা হয়। তাদের ঢাকার সিএমএম আদালতে হাজতখানায় রাখা হয়, পরে ৯টা ৪০ মিনিটের দিকে তাদের এজলাসে তোলা হয়। এরই মাঝে বিএনপিপন্থি আইনজীবীরা তাদের 'কটূক্তি' করতে থাকেন।
বিএনপিপন্থি আইনজীবীরা 'মুরগি বাবা, মুরগি খাবা'; 'শাপলা চত্বরের খুনি'; 'শ্যামল দত্ত দালালি করছো'; 'মোজাম্মেল বাবু কই?'; 'এরা সাংবাদিক, তবে বাংলাদেশের স্বাধীনতায় বিশ্বাস করে না' প্রভৃতি মন্তব্য করতে থাকেন। এ সময় একজন সিনিয়র আইনজীবী এসব কথা বলতে বারণ করেন। এতে তোপের মুখে পড়েন তিনি। তারা ওই আইনজীবীকে বলেন, ওদের হয়ে দালালি করবেন না, দালালির দিন শেষ। শাহরিয়ার কবির শাহবাগের নাস্তিক; তিনি আলেম-মসজিদ-মাদ্রাসার বিরুদ্ধে সবসময় কথা বলেন।
এর কিছুক্ষণ পরে আদালতের কার্যক্রম শুরু হয়। প্রথমে মোজাম্মেল বাবু ও শাহরিয়ার কবিরের রিমান্ডের বিষয়ে শুনানি হয়। রাষ্ট্রপক্ষ রিমান্ড
মঞ্জুরের পক্ষে শুনানি করে। বিএনপিপন্থি আইনজীবী ওমর ফারুকও রিমান্ডের পক্ষে শুনানি করেন। আসামিপক্ষের আইনজীবীরা রিমান্ড বাতিল চেয়ে জামিন আবেদন করেন।
পরে আদালত জানতে চান, তারা কিছু বলবেন কি না। শাহরিয়ার কবির বলেন, 'আমি অসুস্থ, হাঁটতে পারি না। আমি ১০০টিরও বেশি বই লিখেছি। কোথাও দেখতে পাবেন না, ইসলামের বিরুদ্ধে কিছু বলেছি। রিমান্ড দেবেন বা না দেবেন আপনার ইচ্ছা। তবে আমি অসুস্থ, হুইল চেয়ার ছাড়া চলতে পারি না।'
এরপর মোজাম্মেল বাবু কথা বলতে চাইলে তিনি আইনজীবীদের তোপের মুখে পড়েন। পরে দুই হাত জোর করে তিনি ক্ষমা প্রার্থনা করেন। তিনি বলেন, 'আমার জয় বাংলা, জয় হিন্দ বক্তব্য ম্যানিপুলেট করা হয়েছে। আমি ক্যানসারে আক্রান্ত।'
এরপর শ্যামল দত্তের রিমান্ডের বিষয়ে শুনানি হয়। শ্যামল দত্ত আদালতকে বলেন, 'আমি একজন পেশাদার সাংবাদিক। ৩৭ বছর সাংবাদিকতা করেছি। ৩৩ বছর একই হাউজে আছি। আমি কোনো দিন সরকারের সুবিধা নেইনি। কোনো পস্নট নেইনি, টিভি (লাইসেন্স) নেইনি। আমি জাতীয় প্রেস ক্লাবের নির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক। সম্পাদক পরিষদের ভাইস প্রেসিডেন্ট। ঘটনার সময় আমি ঢাকাতে ছিলাম না। সরকারের নির্দেশনা আছে যাচাই-বাছাই না করে সাংবাদিকদের গ্রেপ্তার করা না হয়। তারপরও গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এসব ঘটনায় আমি কিছুই জানি না। ঘটনা ঘটার সময় ওই জায়গাতেও ছিলাম না।' পরে আদালত তাদের প্রত্যেকের সাত দিনের রিমান্ডের আদেশ দেন।
আদালতে কার্যক্রম শেষে সিএমএম আদালতে হাজতখানায় নেওয়ার পথে বিএনপিপন্থি আইনজীবীরা বিভিন্ন ধরনের স্স্নোগান দিতে থাকেন। এ সময় অনেকেই তাদের আঘাত করতে গেলে দায়িত্বরতরা বাধা দেন।
৩ দিনের রিমান্ডে মেনন
এদিকে, এবার বিএনপি নেতা মির্জা আব্বাসের ওপর হামলা মামলায় বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেননকে রিমান্ডে পেয়েছে পুলিশ। মঙ্গলবার শুনানি শেষে তার ৩ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন অতিরিক্ত মুখ্য মহানগর হাকিম মাহবুবুল হক।
এদিন মেননকে আদালতে হাজির করে তার পাঁচ দিনের রিমান্ড চেয়ে আবেদন করে পুলিশ। ওই আবেদন বাতিল চেয়ে আসামির জামিন আবেদন করেন আইনজীবী মোরশেদ হোসেন শাহীন। উভয়পক্ষের শুনানি নিয়ে আদেশ দেন বিচারক।
মামলার বিবরণ অনুযায়ী, ২০১৮ সালের ১৫ ডিসেম্বর রাজধানীর সেগুনবাগিচা এলাকায় বিএনপির নির্বাচনী প্রচারণা চলাকালে দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাসের ওপর অতর্কিত হামলা চালানো হয়। মেননের নির্দেশে অন্য আসামিরা লাঠি, রড ও দেশীয় অস্ত্র নিয়ে ওই হামলা চালায়।
এজাহারে বলা হয়, হামলার সময় মির্জা আব্বাসকে হত্যার উদ্দেশ্যে রড দিয়ে আঘাত করা হয়। তার সমর্থকরা তাকে বাঁচানোর চেষ্টা করলে তাদের ওপরও হামলা চালানো হয়, তাতে কয়েকজন গুরুতর আহত হন।
এর আগে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের দুই হত্যা মামলায় ১১ দিন রিমান্ডে ছিলেন মেনন। গত ২২ আগস্ট তাকে রাজধানীর গুলশান থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।
কাফী আরও ২ দিনের রিমান্ডে
এদিকে, বরখাস্ত হওয়া পুলিশ কর্মকর্তা আব্দুলস্নাহিল কাফীকে এবার আশুলিয়া থানার হত্যাচেষ্টা মামলায় দুই দিনের রিমান্ডে পেয়েছে পুলিশ। মঙ্গলবার শুনানি নিয়ে এ আদেশ দেন ঢাকার বিচারিক হাকিম জুলহাস উদ্দীন।
এদিন আসামিকে আদালতে হাজির করে ৭ দিনের রিমান্ড আবেদন করেন আশুলিয়া থানার এসআই আবু তাহের মিয়া। রিমান্ড আবেদনের বিরোধিতা করে আসামির জামিন চেয়ে শুনানি করেন আইনজীবী ফারজানা ইয়াসমিন রাখি।
গত ১১ সেপ্টেম্বর সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, বরখাস্ত হওয়া পুলিশ কর্মকর্তা কাফীসহ ৩০ জনের বিরুদ্ধে হত্যাচেষ্টার মামলা করেন রবিউল সানি নামের একজন।
অন্য আসামির মধ্যে রয়েছেন সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, সাবেক শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, ইউজিসির সাবেক সচিব ফেরদৌস জামান, সদস্য মুহাম্মদ আলমগীর, বিশ্বজিৎ চন্দ্র চন্দ ও সাজ্জাদ হোসেন।
এর আগে দুই মামলায় ১৩ দিন রিমান্ডে ছিলেন ঢাকা জেলার সাবেক অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আব্দুলস্নাহিল কাফী। ২ সেপ্টেম্বর রাতে তাকে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে কাফীকে গ্রেপ্তার করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ। পরদিন তাকে সাময়িক বরখাস্ত করার কথা জানায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।