মামলার এজাহারে নাম থাকলেই সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করতে হবে এমন কোনো 'বাধ্যবাধকতা নেই' জানিয়ে ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার মো. মাইনুল হাসান বলেছেন, সরকার পতনের পর পুলিশ হত্যা এবং থানা লুটপাটের ঘটনাতেও মামলা হবে।
ক্রাইম রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (ক্র্যাব) কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্যরা রোববার ডিএমপির সদর দপ্তরে সৌজন্য সাক্ষাৎ করতে গেলে এ বিষয়ে কথা বলেন ডিএমপি কমিশনার।
সরকার পতনের পর বিভিন্ন থানায় সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের এবং গ্রেপ্তার নিয়ে পুলিশ কমিশনারকে প্রশ্ন করেন সাংবাদিকরা।
জবাবে মাইনুল ইসলাম বলেন, 'এজাহারে নাম থাকলেই গ্রেপ্তার হবে বিষয়টি এমন নয়। কোনো বাধ্যবাধকতাও নেই। তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।'
ক্ষমতার পালাবদলের পর গত এক মাসে বিগত সরকারের মন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের নামে প্রায় পৌনে তিনশ' মামলা হয়েছে
আদালতে এবং দেশের বিভিন্ন থানায়। এসব মামলায় নাম প্রকাশ করে আসামি করা হয়েছে ২৬ হাজারের বেশি মানুষকে; অজ্ঞাতপরিচয় আসামি রয়েছে দেড় লাখের ওপরে।
ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে জুলাইয়ের প্রথম দিন থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত সময়ে নিরাপত্তা বাহিনীকে গুলি চালাতে নির্দেশ দিয়ে হত্যা এবং নির্যাতন চালানোর অভিযোগ আনা হয়েছে এসব মামলায়।
গণআসামি করে দায়ের করা এসব মামলা বিচারের ভবিষ্যৎ কী, তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন বিশ্লেষকরা। এ ছাড়া যাচাই-বাছাই না করে মিথ্যা বা ভুয়া মামলা দিয়ে নিরপরাধ মানুষকে হয়রানি না করার অনুরোধ এসেছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পক্ষ থেকে।
হত্যাকান্ডের শিকার হওয়া পুলিশ সদস্যদের মধ্যে অনেকের পরিবারই মামলা করতে পারছেন না বলে অভিযোগ উঠেছে, এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে কমিশনার বলেন, 'এসব অনেক ঘটনা, এগুলো যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। সুপারভাইজিং টিম কাজ করছে। সব হবে। ক্রিমিনাল ইভেন্ট কখনো তামাদি হয় না। থানা লুট, পুলিশ হত্যার ঘটনায়ও পর্যায়ক্রমে মামলা হবে।'
গণআন্দোলনের মুখে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর দেশের অধিকাংশ থানায় হামলা, ভাঙচুর ও আগুন দেওয়ার খবর আসতে থাকে। পুলিশ সদর দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, সহিংসতায় অন্তত ৪৪ জন পুলিশ সদস্য নিহত হয়েছেন।
এসব হামলায় নথিপত্র, আসবাবপত্রের পাশাপাশি পুড়ে গেছে থানায় থাকা সব গাড়ি। লুট হয়ে গেছে অনেক অস্ত্র ও গুলি। এরপর থেকে কার্যত স্থবির হয়ে যায় দেশের পুলিশি ব্যবস্থা। পরে সরকারের নির্দেশে থানায় ফিরতে শুরু করেন পুলিশ সদস্যরা। তবে পুলিশ সদস্যদের মনোবল ফেরানোই এখন বড় চ্যালেঞ্জ।
অন্তর্র্বর্তী সরকার গঠনের পর মাস পেরিয়ে গেলেও এখনো পুলিশের মধ্যে 'আস্থার সংকট চলছে' বলে মন্তব্য করেন পুলিশ কমিশনার।
তিনি বলেন, 'সংকট দূর করতে পুলিশ সদস্যরা কাজ করছেন। ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা নিয়মিত থানা ও ফাঁড়ি যাচ্ছেন, সদস্যদের বোঝাচ্ছেন।'
রাজধানীতে পুলিশের 'দৃশ্যমান' অবস্থান না থাকায় ছিনতাই ও অন্যান্য অপরাধ বেড়ে যাওয়া নিয়ে কী পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে জানতে চাইলে মাইনুল ইসলাম বলেন, 'পুলিশ সতর্ক রয়েছে। থানাগুলোতে কাজ চলছে। থানা সচল হয়ে গেলে পুলিশের তৎপরতা আরও বাড়বে। অনেকটাই কাজ শুরু করেছে। মোটরসাইকেল পেট্রোলিং, ফুট পেট্রোলিং আরও জোরদার হবে।'
অপরাধ নিয়ন্ত্রণে পুলিশের চেকপোস্ট 'কাজ শুরু করেছে' জানিয়ে কমিশনার বলেছেন, ধীরে ধীরে চেকপোস্টগুলোর কাজের পরিধি বাড়বে। তিনি বলেন, গত সরকার পতনের পর ঢাকা মহানগরের ৪৫ পুলিশ সদস্য এখনো অনুপস্থিত আছেন। তারা কেউ চাকরি করবে না, বিদেশ চলে যাবে জানিয়েছেন।
রাজধানীর প্রধান সড়কগুলোতে ব্যাটারিচালিত রিকশার চলাচল বন্ধে ইতিমধ্যে 'অ্যাকশন' শুরু হয়ে গেছে বলেও মন্তব্য করেন পুলিশ কমিশনার।
ক্র্যাবের সভাপতি কামরুজ্জামান খান ও সাধারণ সম্পাদক সিরাজুল ইসলাম এ সময় উপস্থিত ছিলেন।