আজ পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.)

প্রকাশ | ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০০:০০

যাযাদি ডেস্ক
মহান আলস্নাহর হাবিব আখেরি নবী ও রাসুল হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর জন্ম এবং ওফাতের দিনটি ফিরে এলো আজ ১২ রবিউল আউয়াল। হিজরি সালের তৃতীয় মাস রবিউল আউয়ালের ১২ তারিখে মক্কার বিখ্যাত কুরাইশ বংশে মা আমিনার কোল আলো করে বিশ্বনবী জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর বাবা আবদুলস্নাহ। খ্রিষ্টীয় বর্ষপঞ্জিতে তাঁর জন্মবছর ছিল ৫৭০ সাল। একই তারিখে ৬৩২ খ্রিষ্টাব্দে তিনি ইন্তেকাল করেন। জন্মের আগেই রাসুল (সা.) তাঁর বাবাকে হারান এবং ৬ বছর বয়সে তিনি মাতৃহারা হন। বিশ্বজগতের রহমত হিসেবে মহান আলস্নাহ তাআলা রাসুল হজরত মুহাম্মদ (সা.)কে পৃথিবীতে প্রেরণ করেছিলেন। এ কারণে তাঁকে 'রহমাতুলিস্নল আলামিন' বলা হয়। সারা পৃথিবীর মুসলিমদের কাছে দিনটি অত্যন্ত পবিত্র ও মহিমান্বিত। মুসলিম উম্মাহ দিনটি ঈদে মিলাদুন্নবী হিসেবে উদযাপন করে থাকে। পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ও অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস পৃথক বাণী দিয়েছেন। বিশ্বনবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) এসেছিলেন তাওহিদের মহান বাণী নিয়ে। সে সময় আরবের সমাজ ছিল পৌত্তলিকতা, ঘোরতর অন্যায়-অবিচারের অন্ধকারে নিমজ্জিত। 'আইয়ামে জাহেলিয়ার যুগ' বলে সেই সময়টিকে চিহ্নিত করা হয়েছে। সেই অন্ধকারে মহানবী (সা.) এসেছিলেন আলোকবর্তিকার মতো। শৈশব থেকেই তিনি তার সত্যবাদিতা, ন্যায়পরায়ণতা, বিচক্ষণতাসহ অনুপম চারিত্রিক গুণাবলি, অপরিমেয় দয়া-সহিষ্ণুতা, সহমর্মিতার মতো মহৎ গুণের জন্য আরব সমাজের সবার কাছে শ্রদ্ধাভাজন হয়ে উঠেছিলেন। নবুয়ত লাভের আগেই 'আল-আমিন' অভিধায় তাঁকে সম্মানিত করেছিল আরব সমাজ। হেরা পর্বতের গুহায় গভীর ধ্যানে নিমগ্ন থেকে তিনি ৪০ বছর বয়সে ওহি লাভ করেন। এরপর পরম করুণাময় আলস্নাহর নির্দেশে দীর্ঘ ২৩ বছর কঠোর পরিশ্রম, নিষ্ঠা ও সীমাহীন ত্যাগের মাধ্যমে শান্তির ধর্ম ইসলাম তথা পবিত্র কোরআনের বাণী প্রচার করেন। আলস্নাহর প্রতি অসীম ও অতুলনীয় আনুগত্য এবং ভালোবাসার পাশাপাশি মহৎ মানবিক চারিত্রিক গুণাবলির জন্য তিনি সর্বকালে সর্বজনের কাছে পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ মহামানব হিসেবে অভিষিক্ত। পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) উদযাপন উপলক্ষে ইসলামিক ফাউন্ডেশনসহ বিভিন্ন ইসলামি সংগঠন ও সংস্থা নানা কর্মসূচি নিয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে শোভাযাত্রা, আলোচনা ও মিলাদ মাহফিল। এ ছাড়া ধর্মপ্রাণ মুসলিমরা বেশি বেশি কোরআন তিলাওয়াত, দরুদ পাঠ, দান-খয়রাতের মতো নফল ইবাদতের মধ্য দিয়ে দিনটি অতিবাহিত করবেন। আজ চট্টগ্রামে জশনে জুলুস এদিকে, চট্টগ্রামে প্রতি বছরের মতো এবারও পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) উপলক্ষে জশনে জুলুস অনুষ্ঠিত হবে। এবার ৫২তম জুলুসে নেতৃত্ব দেবেন দরবারে আলিয়া কাদেরিয়া সিরিকোট শরিফের আওলাদে রাসুল, পীরে বাঙ্গাল, আলস্নামা সৈয়্যদ মুহাম্মদ সাবির শাহ্‌? (মা.জি.আ) ও সাহেবজাদা সৈয়্যদ মুহাম্মদ কাসেম শাহ্‌? (মা.জি.আ)। গত শনিবার তারা চট্টগ্রামে এসে পৌঁছেছেন। সোমবার চট্টগ্রামে পবিত্র জশনে জুলুসে ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) সকাল ৮টায় ষোলশহরস্থ আলমগীর খানকায়ে কাদেরিয়া সৈয়্যদিয়া তৈয়্যবিয়া থেকে শুরু হয়ে বিবিরহাট (বামে মোড়)-মুরাদপুর (ডানে মোড়)-ষোলশহর-২ নম্বর গেট-জিইসি মোড় (ডানে মোড়)-পুনরায় ২ নম্বর গেট-ষোলশহর-মুরাদপুর-বিবিরহাট-জামেয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া কামিল মাদ্রাসা সংলগ্ন জুলুস ময়দানে জমায়েত হয়ে দুপুর ১২টায় মাহফিল এবং নামাজে জোহর ও দোয়া অনুষ্ঠিত হবে। গাউসিয়া কমিটি বাংলাদেশের যুগ্ম মহাসচিব ও জশনে জুলুস মিডিয়া উপ-কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক মোছাহেব উদ্দিন বখতিয়ার যায়যায়দিনকে বলেন, ১৯৭৪ সালের ১২ রবিউল আউয়াল থেকে চট্টগ্রামে প্রথম এ জশনে জুলুসের সূচনা হয়। প্রথম জুলুসটি গাউসে জামান আলস্নামা সৈয়দ মুহাম্মদ তৈয়ব শাহ্‌র (রহ.) দিকনির্দেশনায় নগরীর বলুয়ারদীঘিরপাড় খানকাহ্‌ শরিফ থেকে আঞ্জুমানে সুন্নিয়া আলিয়া মাদ্রাসা ময়দানে এসে শেষ হয়। এরই ধারাবাহিকতায় চট্টগ্রামে এবার ৫২তম জুলুস হবে। জশনে জুলুস উপলক্ষে গত শনিবার চট্টগ্রামে এসে পৌঁছেছেন আলস্নামা সৈয়্যদ মুহাম্মদ সাবির শাহ্‌? (মা.জি.আ) ও সাহেবজাদা সৈয়্যদ মুহাম্মদ কাসেম শাহ্‌? (মা.জি.আ)। এদিকে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স বিভাগ থেকে এক নির্দেশনায় জানানো হয়েছে, জুলুস চলার সময় নগরের পাঁচলাইশ থানার জামেয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া মাদ্রাসার মাঠ থেকে বিবিরহাট হয়ে মুরাদপুর, মুরাদপুর ট্রাফিক পুলিশ বক্স থেকে ডান দিকে মোড় নিয়ে ষোলশহর ২ নম্বর গেট, ষোলশহর ২ নম্বর গেট এলাকা থেকে জিইসি মোড়, লর্ডস ইন হোটেল থেকে ২ নম্বর গেট, মুরাদপুর বামে মোড় নিয়ে বিবিরহাট থেকে জামেয়া আহম্মদিয়া সুন্নিয়া কামিল মাদ্রাসা প্রাঙ্গণের অভিমুখে চলাচলের কারণে অভিমুখ সড়কে সব ধরনের যানবাহন চলাচল নিয়ন্ত্রণ করা হবে। এছাড়া নগরের বিবিরহাট, মুরাদপুর, পাঁচলাইশ, হামজারবাগ, শোলকবহর, মির্জারপুল রোডের মুখ, বায়েজিদ বোস্তামী রোডের মুখ (শেরশাহ মোড়), বেবি সুপার মার্কেট, প্রবর্তক মোড়ের মুখ, জাকির হোসেন রোডের মুখ, গোলপাহাড় রোডের মুখ ও পুনাক মোড়ে রোড বস্নক স্থাপনের মাধ্যমে ডাইভারশন করা হবে। ফলে এই সময়ের্ যালি অভিমুখে সব ধরনের যানবাহন চলাচল নিয়ন্ত্রণ করা হবে। চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স বিভাগের অতিরিক্ত উপকমিশনার (এডিসি) কাজী মো. তারেক আজিজ বলেন, ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) উপলক্ষে প্রতি বছরের মতো এবারও নগরীর ষোলশহর জামেয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া কামিলা মাদ্রাসা থেকে জশনে জুলুস বের হবে। জশনে জুলুস সুষ্ঠুভাবে সম্পন্নের জন্য সিএমপির নির্দেশনায় সব ধরনের যানবাহনের চালক ও যাত্রী সাধারণসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে মেনে চলার জন্য বিশেষভাবে অনুরোধ করা হয়েছে। ধর্মীয় অনুষ্ঠান সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে সম্পন্ন করার জন্য সিএমপির ট্রাফিক উত্তর বিভাগের পক্ষ থেকে নগরবাসীর সর্বাত্মক সহযোগিতা প্রত্যাশা করেন।