সম্পাদক পরিষদের বিবৃতি
সাংবাদিকদের নামে ঢালাও হত্যা মামলা সরকারের ভাবমূর্তিকে ক্ষুণ্ন করছে
প্রকাশ | ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০০:০০
যাযাদি ডেস্ক
সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে ঢালাও হত্যা মামলা অন্তর্র্বর্তী সরকারের স্বাধীন সাংবাদিকতার প্রতিশ্রম্নতির লঙ্ঘন। সাংবাদিকদের নামে এভাবে হত্যা মামলা দেওয়ার প্রবণতা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে অন্তর্র্বর্তী সরকারের ভাবমূর্তিকে ক্ষুণ্ন করছে বলে মনে করে সম্পাদক পরিষদ।
শনিবার এক বিবৃতিতে সম্পাদক পরিষদ এ কথা জানায়।
বিবৃতিতে বলা হয়, ঢালাও অভিযোগের ভিত্তিতে সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে হত্যা মামলার ঘটনা এখনো অব্যাহত। সম্পাদক পরিষদ দ্ব্যর্থহীন কণ্ঠে বলতে চায়, এ ধরনের মামলা প্রচলিত আইনের অপব্যবহারের শামিল। একই সঙ্গে অন্তর্র্বর্তী সরকারের স্বাধীন সাংবাদিকতার প্রতিশ্রম্নতিরও লঙ্ঘন।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, সাংবাদিকরা কোনো অপরাধ করে থাকলে সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে যথাযথ ধারা অনুসরণ করে তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে। সম্পাদক পরিষদ আরও জোর দিয়ে বলতে চায় যে পেশাদারিত্ব বাদ দিয়ে নীতিবিবর্জিত ও লেজুড়বৃত্তির সাংবাদিকতা বর্জনীয়। যে সাংবাদিকরা বিগত সরকারের নানা নিপীড়নমূলক কর্মকান্ডে সাংবাদিকতার নামে সমর্থন দিয়েছেন, প্রেস কাউন্সিলে একটি কমিটি গঠন করে তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত ও অনুসন্ধান হতে পারে। সেখানে দোষী সাব্যস্ত হলে প্রেস কাউন্সিল আইনে তাদের সাজা হতে পারে। তাদের অন্যান্য অপরাধের ক্ষেত্রে প্রেস কাউন্সিলের সুপারিশের ভিত্তিতে প্রচলিত আইনে তাদের বিচার চলতে পারে।
বিগত সরকারের সময়ে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন (ডিএসএ)/ সাইবার নিরাপত্তা আইনসহ (সিএসএ) নিবর্তনমূলক বিভিন্ন আইন ও হয়রানিমূলক আটক-গ্রেপ্তারের মাধ্যমে
সাংবাদিকদের কণ্ঠরোধের যে প্রয়াস চালানো হয়েছিল, তা বৈশ্বিক পরিমন্ডলে অত্যন্ত নিন্দিত ও সমালোচিত হয়েছিল। আর বর্তমানে সাংবাদিকদের নামে এভাবে ক্রমাগত হত্যা মামলা দেওয়ার প্রবণতাও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে অন্তর্র্বর্তী সরকারের ভাবমূর্তিকে ক্ষুণ্ন করছে বলে সম্পাদক পরিষদ মনে করে।
এ অবস্থায় যথাযথভাবে যাচাই-বাছাই করে অভিযুক্ত সাংবাদিকদের কোনো সংশ্লিষ্টতা না পাওয়া গেলে এসব মামলা থেকে দ্রম্নত তাদের অব্যাহতি দেওয়ার আহ্বান জানায় সম্পাদক পরিষদ।
ভারতীয় চার সংগঠনের চিঠি
এদিকে, বাংলাদেশে সাংবাদিকদের হয়রানি বন্ধ, অযাচিত নিষেধাজ্ঞা ও মামলা তুলে নেওয়ার আহ্বান জানিয়ে অন্তর্র্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে চিঠি দিয়েছে ভারতের সাংবাদিকদের ৪টি সংগঠন।
শুক্রবার ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে পাঠানো এই চিঠিতে একই সঙ্গে গ্রেপ্তার সাংবাদিকদের মুক্তির দাবি জানিয়েছে তারা।
ভারতের ৪টি সংগঠন যৌথভাবে এই চিঠি দিয়েছে। দিলিস্নর ফরেন করেসপন্ডেন্টস ক্লাব অব সাউথ এশিয়ার (এফসিসি) পক্ষ থেকে এস ভেংকট নারায়ণের স্বাক্ষরে যৌথ চিঠির অন্য তিনটি সংগঠন হলো- প্রেসক্লাব অব ইন্ডিয়া (পিসিআই), ইন্ডিয়ান উইমেনস প্রেস কর্পস (আইডবিস্নউপিসি) এবং প্রেস অ্যাসোসিয়েশন (পিএ)।
চিঠিতে বলা হয়, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবু্যনালে ৫২ জ্যেষ্ঠ সংবাদকর্মীকে হত্যা মামলায় জড়ানো হয়েছে, যাদের কয়েকজনকে ইতোমধ্যে কারারুদ্ধ করা হয়েছে। এ ছাড়া অনেক সাংবাদিকের বিরুদ্ধে অযাচিত অভিযোগ করা হয়েছে, যা মতপ্রকাশের স্বাধীনতার স্পষ্ট লঙ্ঘন।
প্রধান উপদেষ্টার উদ্দেশে বলা হয়, 'আমরা আশা করি আপনিও আমাদের সঙ্গে একমত হবেন, একটি মুক্ত সংবাদমাধ্যম বাংলাদেশের গর্ব হওয়া উচিত। ভিন্নমত এবং সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতাকে দমন করা শুধু আপনার প্রশাসনের নয়, একটি দেশ হিসেবে বাংলাদেশের ভাবমূর্তিও ক্ষুণ্ন করে।'
যারা সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতার শত্রম্ন এবং সাংবাদিকদের হয়রানি করে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানানো হয় চিঠিতে।
চিঠিতে অনুরোধ করা হয়, বিশ্বব্যাপী সম্মানিত একজন নোবেল শান্তি বিজয়ী হিসেবে প্রধান উপদেষ্টা এসব বিষয়ে (মামলা) হস্তক্ষেপ করবেন। একই সঙ্গে সাংবাদিকদের সুরক্ষা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করবেন, যাতে তারা ভয় ও পক্ষপাতিত্ব ছাড়াই তাদের কাজ চালিয়ে যেতে পারেন।
চিঠিতে মিথ্যা অভিযোগে গ্রেপ্তারকৃত সাংবাদিকদের অবিলম্বে মুক্তির নির্দেশ দিতে অনুরোধ করা হয়।