কক্সবাজারে পানিবন্দি ২ শতাধিক গ্রাম, ৫ লাশ উদ্ধার, নিখোঁজ ৭০

প্রকাশ | ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০০:০০

যাযাদি ডেস্ক
কক্সবাজার শহরের জলাবদ্ধ এলাকা থেকে পানি নেমে গেলেও বেড়েছে পস্নাবিত এলাকার পরিধি। ভারী বর্ষণে পানিবন্দি আছেন ছয় উপজেলার অন্তত ২ শতাধিক গ্রামের মানুষ। এদিকে দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার মধ্যে সাগরে মাছ ধরতে যাওয়া আটটি ফিশিং ট্রলারসহ অন্তত ৭০ জেলে নিখোঁজের তথ্য জানিয়েছেন মালিকরা। এর মধ্যে দুজনের মরদেহ ভেসে এসেছে উপকূলে। এর আগে শুক্রবার তিন জেলের মৃতদেহ আসে। এদিন ইনানী সৈকতের কাছে এসে এফবি আব্দুল ছামাদ নামে ট্রলারডুবির ঘটনা ঘটে। ট্রলারটিতে ১১ জন জেলে ছিলেন। নয়জন জীবিত উদ্ধার হলেও দুজন নিখোঁজ ছিলেন। কক্সবাজার আবহাওয়া অফিসের সহকারী আবহাওয়াবিদ আব্দুল হান্নান বলেন, 'শনিবার বৃষ্টি কিছুটা কমেছে। তবে ভারী বৃষ্টি অব্যাহত রয়েছে। এদিন বেলা ১২টা পর্যন্ত গত ২৪ ঘণ্টায় ২১০ মিমি, বৃষ্টিপাত রেকর্ড হয়েছে। এর আগের ২৪ ঘণ্টায় ৫০১ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়, যা একদিন বৃষ্টিপাতের সর্বোচ্চ। এর আগে ২০১৫ সালের আগস্ট মাসে একদিনে ৪৩৭ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড হয়েছিল। শনিবার বৃষ্টি কিছুটা কম হওয়ায় শহরের জলাবদ্ধ পরিস্থিতির কিছুটা উন্নত হয়েছে। পানি নেমে গেছে পর্যটন জোন কলাতলীর হোটেল-মোটেল এলাকার সব সড়ক, সৈকত সংলগ্ন এলাকা, মাকের্ট এলাকা থেকে। তবে শহরের সমিতিপাড়া, কুতুবদিয়াপাড়া, ফদনারডেইল, নুনিয়াছড়াসহ আটটি নিম্নাঞ্চল এখনো পানিবন্দি রয়েছে। কক্সবাজার পৌরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আকতার কামাল বলেন, 'সমিতিপাড়া, কুতুবদিয়াপাড়া, ফদনারডেইল, নুনিয়াছড়া এলাকাটি নিম্নাঞ্চল। সমুদ্র উপকূলের এসব এলাকায় ১০ হাজার ঘরবাড়ি এখনও পানিবন্দি।' কক্সবাজার হোটেল-মোটেল গেস্টহাউস মালিক সমিতির সভাপতি আবুল কাশেম সিকদার বলেন, 'বৃষ্টি কমে যাওয়ায় হোটেল-মোটেল জোন থেকে এখন পানি নেমে গেছে। তবে বৃষ্টি হলেই এখন আতঙ্ক তৈরি হচ্ছে। মুহূর্তের মধ্যেই জলাবদ্ধতা হচ্ছে। নালা উন্নত করা না হলে এ পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে না।' এদিকে উখিয়া উপজেলার ৪০টির বেশি গ্রামের ৫০ হাজার মানুষ পানিবন্দি থাকার তথ্য জানিয়েছেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা। উখিয়ার সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে হলদিয়াপালং ও জালিয়া পালং ইউনিয়নে। এই দুই ইউনিয়নের ৩০টি গ্রামের ৩৫ হাজারের বেশি মানুষ গত দুই দিন ধরে পানির মধ্যে বসবাস করছেন। চুলা ধরাতে না পেরে রান্না হচ্ছে না অধিকাংশ ঘরে। জালিয়া পালং ইউনিয়নের লম্বরীপাড়া, ঘাটঘর পাড়া পাইন্যাশিয়া, সোনাইছড়ি, সোনারপাড়া ডেইপাড়া মনখালী, হলদিয়া পালং ইউনিয়নের চৌধুরীপাড়া, মনির মার্কেট, রুমখা পালং, বড়বিল, পাতাবাড়ী, নলবুনিয়া, খেওয়া ছড়ি, বৌ বাজার, কুলালপাড়া, পাগলির বিল, রাজা পালং ইউনিয়নের কুতুপালং, মাছকারিয়া, লম্বাশিয়া তুতুরবিল, পিনজির কুল, রত্না পালং ইউনিয়নের সাদৃ কাটা, পশ্চিম রত্না, খোন্দকার পাড়া, গয়াল মারা ও পালংখালী ইউনিয়নে থাইংখালী, রহমতের বিল, বালুখালী তৈল খোলা, আঞ্জুমান পাড়া ফারিবিলসহ অন্তত ৪০টি গ্রাম পানি তলিয়ে আছে বলে জানিয়েছেন জনপ্রতিনিধিরা। উখিয়া উপজেলা পরিষদের সদ্য সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান রাসেল চৌধুরী জানিয়েছেন, বন্যায় উপজেলার ৫ ইউনিয়নের অনেক এলাকার মানুষ বন্যাকবলিত হয়ে পড়েছে। জালিয়া পালং ও হলদিয়াপালং ইউনিয়নের মানুষ বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। উখিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার তানভির হোসেন জানিয়েছেন, বন্যাকবলিত এলাকার মানুষের জন্য জেলা প্রশাসন থেকে বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে। বিভিন্ন বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থার মাধ্যমেও সহযোগিতার চেষ্টা করা হচ্ছে। চকরিয়া উপজেলার সুরাজপুর-মানিকপুর, কাকারা, লক্ষ্যারচর, কৈয়ারবিল, বরইতলী, বিএমচর, কোনাখালী ও বদরখালী ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চল পস্নাবিত হয়েছে। অন্তত ২০ হাজার লোক পানিবন্দি রয়েছে। তলিয়ে গেছে আমন ধানের ক্ষেত ও শীতকালীন বিভিন্ন সবজির চারা। মানকিপুর-সুরাজপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আজিমুল হক বলেন, 'বৃষ্টিতে মানিকপুর এলাকায় নিচু এলাকার অন্তত ২ শতাধিক ঘরবাড়ি বৃষ্টির পানিতে পস্নাবিত হয়েছে। পাহাড়ি এলাকার বাসিন্দাদের নিরাপদ স্থানে সরে যেতে বলা হয়েছে।' বরইতলী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. ছালেকুজ্জামন বলেন, আমার ইউনিয়নের পহরচাঁদা, গোবিন্দপুর ও ডেইঙ্গাকাটা এলাকায় অধিকাংশ ঘরবাড়ি পানির নিচে তলিয়ে গেছে। তাদের নিরাপত্তা ও শুষ্ক খাবার বিতরণের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. ফখরুল ইসলাম জানান, ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানদের এলাকার খোঁজখবর রাখতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। পাহাড়ের পাদদেশে ও নদীর তীরবর্তী অবস্থানরত লোকজন নিরাপদে সরিয়ে যেতে উপজেলার পক্ষ থেকে বলা হয়েছে। দুর্যোগ মোকাবিলায় উপজেলা প্রশাসন সহায়তায় প্রস্তুত রয়েছে। সাগরে নিখোঁজ ৮টি ফিশিং ট্রলার দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কবলে পড়ে সাগরে মাছ ধরতে যাওয়া আটটি ফিশিং ট্রলার এখনো নিখোঁজ আছে বলে জানিয়েছেন কক্সবাজার জেলা ফিশিং বোট মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন। তিনি বলেন, 'বঙ্গোপসাগরে নিখোঁজ থাকা এসব ট্রলার ডুবে গেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এর মধ্যে কিছু জেলে সাঁতার কেটে উপকূলে ফিরেছে। ট্রলারের আরও অন্তত ৭০ জেলে নিখোঁজ রয়েছেন। শনিবার সকালে কক্সবাজার সৈকতের নাজিরারটেক, পেঁচারদ্বীপ ও কলাতলী উপকূলে ভেসে আসা তিনজনের মরদেহ উদ্ধার হয়েছে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট থানার পুলিশ কর্মকর্তা। এর মধ্যে দুজনের পরিচয় নিশ্চিত হওয়া গেছে। তারা হলেন- বাঁশখালী উপজেলার শেখেরকিল এলাকার নুরুল আমিন (৪০) ও লোহাগাড়া উপজেলার চরমবা এলাকার মোহাম্মদ জালাল (৩৭)। মরদেহ তিনটি কক্সবাজার সদর হাসপাতালের মর্গে রয়েছে বলে জানিয়েছেন কক্সবাজার সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল কর্মকর্তা ডা. আশেকুর রহমান।