দেশের বিভিন্ন স্থানে মাজার, ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক স্থাপনায় হামলা রুখতে অন্তর্র্বর্তী সরকার 'কঠোর অবস্থান নিয়েছে' বলে সতর্ক করেছে প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের দপ্তর।
শনিবার দপ্তরের এক বার্তায় এ ধরনের স্থাপনায় হামলাকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছে।
এ ছাড়া ধর্মীয় উপাসনালয় ও সাংস্কৃতিক স্থাপনাগুলো রক্ষায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলেও জানিয়েছে প্রধান উপদেষ্টার দপ্তর।
বার্তায় বলা হয়, 'আমাদের নজরে এসেছে যে, গত কয়েকদিন ধরে একদল দুর্বৃত্ত দেশের সুফি মাজারগুলোয় হামলা চালিয়ে যাচ্ছে। অন্তর্র্বর্তীকালীন সরকার ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক স্থাপনা এবং সুফি মাজার নিয়ে যে কোনো ধরনের বিদ্বেষপূর্ণ বক্তব্য এবং এসব জায়গায় হামলার তীব্র নিন্দা জানায়।
'এসব হামলার সঙ্গে জড়িতদের অতিদ্রম্নত আইনের আওতায় আনা হবে এবং তাদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।'
বাংলাদেশকে হাজার বছরের 'সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ও শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের দেশ' বর্ণনা করে ওই বার্তায় বলা হয়, 'আমরা দ্ব্যর্থহীন ভাষায় বলছি যে আমরা সম্প্রীতির দেশ হিসেবেই থাকব এবং ধর্মীয়
বা সাংস্কৃতিক সহিষ্ণুতা ও সম্প্রীতিকে বিঘ্নিত করার যে কোনো প্রচেষ্টা বৈষম্য ছাড়াই দৃঢ়ভাবে মোকাবিলা করা হবে।'
সাম্প্রতিক সময়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে মাজার ও দরগায় হামলার ঘটনা ঘটছে। কোথাও কোথাও আগে থেকে প্রস্তুতি নিয়ে ও ঘোষণা দিয়ে লোকজন জড়ো করে মাজারে হামলা চালানো হচ্ছে।
সরকারের সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা এ ধরনের ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়ে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার কথা বলেছেন। কিন্তু তাতে পরিস্থিতির কোনো পরিবর্তন দেখা যায়নি। এ ঘটনায় দেশের বিভিন্ন মাজারে সাম্প্রতিক হামলা-ভাঙচুরের ঘটনায় নিন্দা জানিয়ে বিচার দাবি করেছেন দেশের ৪৬ নাগরিক।
এসব হামলার ধারাবাহিকতায় গত সপ্তাহে আক্রমণ হয়েছে সিলেটের হযরত শাহপরাণের (রহ.) মাজারে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছে, একদল লোক লাঠিসোটা নিয়ে মাজারে আক্রমণ করে এবং ভাঙচুর চালায়। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে যায় পুলিশ। হামলাকারীদের ঠেকাতে গিয়ে পুলিশ ও স্থানীয় কয়েকজন আহত হন।
এরপর সিলেটের শাহপরাণ (রহ.) থানার খাদিমপাড়া এলাকায় শাহ সুফি আব্দুল কাইয়ুমের মাজারও শুক্রবার গুঁড়িয়ে দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। ফেসবুকে ভাইরাল হওয়া এক ভিডিওতে দেখা গেছে ১০ থেকে ১২ জনের একটি দল মাজারে হামলা চালিয়ে গুঁড়িয়ে দিয়েছেন। পাশাপাশি মাজারে থাকা কবরগুলো গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।
হামলা ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে নারায়ণগঞ্জের বন্দর উপজেলার মদনপুর এলাকায় দেওয়ানবাগ মাজারেও, এতে অন্তত চারজন আহত হয়েছেন।
ওই হামলার ঘণ্টাখানেক পর আরেক দফায় সেখানে হামলা ও লুটপাট চালানো হয় বলে জানান স্থানীয়র। সোনারগাঁ উপজেলার সনমান্দি ইউনিয়নে আয়নাল শাহ দরগা নামে পুরনো একটি মাজার ভেঙে ফেলা হয়।
নোয়াখালী পৌরসভার লক্ষ্ণী-নারায়ণপুর এলাকার ফকির চাড়ু মিজি শাহ্ (র.) মাজারে (দরগাহ বাড়ির মাজার) শুক্রবার সকাল ৯টায় হামলা চালানো হয়।
একই দিনে গাজীপুর মহানগরের পোড়াবাড়ী এলাকায় দুপুরে শাহ সুফি ফসিহ উদ্দিন (র.) মাজারে ভাঙচুর-লুটপাটের পর তাতে অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে।
এ ছাড়া সিরাজগঞ্জ তিন জায়গার মাজারে হামলা হয়েছে গত মাস থেকে এ পর্যন্ত। হামলা হয়েছে সদর উপজেলার শিয়ালকোল ইউনিয়নের শ্যামপুর গ্রামে 'হযরত বড়পীর গাউসুল আজম দরবার শরিফে এবং এই মাজারে হামলা-ভাঙচুর চালানোর পর তিনটি কবর খুঁড়ে সেখান থেকে হাড়গোড়-মাথার খুলিও নিয়ে গেছে একদল সশস্ত্র লোক। দুটি খানকা ও একটি রান্নাঘর ভাঙচুর করা হয়েছে।
এর আগে ২৯ আগস্ট কাজীপুর উপজেলার মনসুর নগর ইউনিয়নের বামনজানি বাজারের পাশে 'আলী পাগলার মাজার' এবং ৩ সেপ্টেম্বর সদর উপজেলার কালিয়া হরিপুর গ্রামের 'ইসমাইল পাগলার মাজার' ভাঙচুর করা হয়।
এর মধ্যে গত সপ্তাহে রাজধানীর গুলিস্তানের গোলাপ শাহ মাজারে হামলা হতে পারে এমন খবর ছড়িয়ে পড়লে হামলা ঠেকাতে সেখানে কয়েকশ মানুষ অবস্থান নেয়। পাশাপাশি দেশের বিভিন্ন মাজারে হামলা ও ভাঙচুরের প্রতিবাদ জানাচ্ছেন।