পুলিশের নির্দেশনা
তদন্তে সম্পৃক্ততা না মিললে মামলা থেকে নাম বাদ
তথ্যপ্রমাণ ছাড়া সরকারি কর্মকর্তাদের গ্রেপ্তার নয়
প্রকাশ | ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০০:০০
যাযাদি ডেস্ক
ছাত্র-জনতার অভু্যত্থানে হতাক্যান্ডসহ অন্যান্য ঘটনা ঘিরে যেসব মামলা হচ্ছে, সেগুলোর প্রাথমিক তদন্তে কোনো আসামির সম্পৃক্ততা না পাওয়া গেলে মামলা থেকে তার নাম প্রত্যাহার করা হবে বলে জানিয়েছে পুলিশের সদর দপ্তর। সেই সঙ্গে সঠিক তথ্যপ্রমাণ ছাড়া এসব মামলায় কোনো সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীকে গ্রেপ্তার করা যাবে না বলেও নির্দেশনা দিয়েছে পুলিশ।
পুলিশ সদর দপ্তরের উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি-কনফিডেনশিয়াল) মো. কামরুল আহসান স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে এসব নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। শুক্রবার বিকালে যোগাযোগ করা হলে কামরুল আহসান বলেন, ১০ সেপ্টেম্বর পুলিশ সদর দপ্তর থেকে এ চিঠি পুলিশের সব ইউনিটে পাঠানো হয়েছে।
পুলিশ সদর দপ্তরের ওই চিঠিতে আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির প্রথম সভার কার্যবিবরণীর বরাত দিয়ে আরও বলা হয়, জুলাই-আগস্টের গণঅভু্যত্থান ঘিরে হত্যাকান্ড ও অন্যান্য মামলায় তদন্ত ছাড়া কোনো সরকারি কর্মকর্তার সম্পৃক্ততার প্রাথমিক সত্যতা পাওয়া না গেলে তাদের নামও প্রত্যাহারের ব্যবস্থা নিতে হবে।
রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর ক্ষমতাচু্যত আওয়ামী লীগ সরকারের মন্ত্রী, সংসদ সদস্য ও দলটির নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে সারা দেশের বিভিন্ন থানা ও আদালতে বহু মামলা হয়েছে। এসব মামলায় নাম উলেস্নখ করে আসামি করা ছাড়া অজ্ঞাতপরিচয় হিসেবেও অসংখ্য আসামি করা হয়েছে। সেইসঙ্গে প্রায় ১শ' সাংবাদিককে এসব মামলায় আসামি করা হয়েছে।
বর্তমানে পিবিআইয়ের প্রধানের দায়িত্বে থাকা ডিআইজি মোস্তফা কামাল চিঠি পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, 'মামলার প্রাথমিক তদন্তে যদি প্রমাণিত হয় যে, সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি জড়িত নয়, তাহলে তাকে কেন গ্রেপ্তার করে হয়রানি করব আমরা?'
আর মামলা থেকে নাম প্রত্যাহার নিয়ে এই পুলিশ কর্মকর্তার ভাষ্য, 'মূল বিষয়টি হচ্ছে, মামলায় যখন পুলিশ রিপোর্ট দেবে, সেখানে তার নাম থাকবে কি থাকবে না।'
এই চিঠির প্রাপ্তির বিষয়ে র?্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মুনীম ফেরদৌসের বলেছেন চিঠির বিষয় তিনি শুনেছেন তবে হাতে পাননি।
তিনি বলেন, র্'যাব সবসময় আইনের মধ্য থেকেই তাদের দায়িত্ব পালন করে থাকে। যাদের গ্রেপ্তার করা হয় তাদের বিরুদ্ধে যথেষ্ট প্রমাণর্ যাবের হাতে থাকে। গ্রেপ্তারের আগে সব তথ্য যাচাই-বাছাই করি আমরা।'
এদিকে, ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে জুলাইয়ের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে গত ৫ আগস্ট পর্যন্ত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে গুলি চালাতে নির্দেশ দিয়ে হত্যা ও নির্যাতন চালানোর অভিযোগ আনা হয়েছে এসব মামলায়। সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নামেই ১৬৫টি মামলার তথ্য পাওয়া গেছে, যার মধ্যে ১৪৭টিতে হত্যার অভিযোগ আনা হয়েছে। বাকি ১৮টি মামলা হয়েছে হত্যাচেষ্টা ও অপহরণের অভিযোগে।
এদিকে, গণ-আসামি করে করা এসব মামলার বিচারের ভবিষ্যৎ কী, তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন বিশ্লেষকরা। তারা বলছেন, জুলাই-আগস্টের গণ-আন্দোলনে হতাহতের বিচার চেয়ে দেশজুড়ে যেসব মামলা হচ্ছে, সেগুলোর ধরন যেন আওয়ামী লীগ আমলের 'গায়েবি' মামলার মতোই। এতে করে ভুক্তভোগীর পরিবার সঠিক বিচার পাবে কি না, তা নিয়ে শঙ্কা থেকে যাচ্ছে।
যাচাই-বাছাই না করে মিথ্যা বা ভুয়া মামলা দিয়ে নিরপরাধ মানুষকে হয়রানি না করার অনুরোধ এসেছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পক্ষ থেকেও।
এমনই একজন ভুক্তভোগী মিরপুরের ব্যবসায়ী আফরোজ উদ্দিন। তিনি বলেন, ২০০৫ সালে চাঁদার জন্য শীর্ষ সন্ত্রাসী শাহাদত ও তার সহযোগীদের হাতে তার ভাই খুন হন। মামলা প্রত্যাহার করানোর জন্য সন্ত্রাসীরা একের পর এক তাকে হয়রানি করে আসছেন। ছাত্র-জনতার অভু্যত্থানের ঘটনায়ও একটি হত্যা মামলায় তাকে আসামি করা হয়েছে। মামলার বাদীর সঙ্গে দেখা করলে তাকে বলা হয়, সন্ত্রাসীরা জোর করে আসামির তালিকায় তাদের চাওয়া অনুযায়ী ব্যক্তির নাম ঢুকিয়ে জোর করে তার কাছ থেকে স্বাক্ষর নিয়েছেন।